অদম্য মেধাবী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সিয়াম মিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সারথি হতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দৈনিক খবরের কাগজের পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুজন’।
চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন (সিডব্লিউএফ)-এর আর্থিক সহায়তায় ‘অদম্য মেধাবীদের পাশে আছি’ এই মূলমন্ত্র নিয়ে খবরের কাগজ বন্ধুজন-সিডব্লিউএফ ‘অদম্য মেধাবী বৃত্তি ২০২৪’-এর আওতায় সিয়াম মিয়াকে এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে জামালপুরের সরিষাবাড়ী প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তাকে সহায়তা দেওয়া হয়।
সরিষাবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সোলায়মান হোসেন হরেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী।
এ ছাড়া সাংবাদিক এ এস এম জুলফিকুর রহমান, জহুরুল ইসলাম ঠান্ডু, মিজানুর রহমান, এম এ রউফ, মোস্তাক আহমেদ মনির, বাদশা ভূঁইয়া, সরিষাবাড়ী রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সিয়াম মিয়া ও তার মা জোসনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘অদম্য মেধাবী সিয়াম মিয়া প্রমাণ করেছে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে আর্থিক অনটন, প্রতিবন্ধিতা বা যেকোনো বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। সিয়াম অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’ তবে সিয়ামের পাশাপাশি তার মতো আরও যারা সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন রয়েছে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সিয়ামের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করে তাকে আর্থিক সহায়তার জন্য খবরের কাগজ বন্ধুজন ও সিডব্লিউএফের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন বক্তারা।
পরে লেখাপড়ায় খবরের কাগজ বন্ধুজন-সিডব্লিওএফের সহায়তা হিসেবে অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, সোলায়মান হোসেন হরেকসহ অন্যরা সিয়াম ও তার মায়ের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খবরের কাগজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি আসমাউল আসিফ।
জন্মগতভাবে দুটি হাত নেই উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়া-জোসনা বেগমের তৃতীয় সন্তান সিয়াম মিয়ার। শৈশবে ভাই, বোন ও বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাতায়াত করতে করতে আগ্রহ জন্মায় লেখাপড়ার প্রতি। শিক্ষকদের সহায়তায় সিয়াম পা দিয়ে লেখা শিখতে থাকে। উপজেলার উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সিয়াম। ২০২১ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় সে, এতে করে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে তার।
আরও পড়ুন : পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে উত্তীর্ণ সিয়াম
এবার একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় কারও কোনো সহায়তা ছাড়া অংশ নেয় সিয়াম। মনের অদম্য শক্তি, স্বপ্ন পূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, দারিদ্রতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে পা দিয়ে লিখে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় সিয়াম, মানবিক বিভাগ থেকে অর্জন করে জিপিএ ৩.৮৩।
শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে সিয়াম বলে, ‘জন্ম থেকেই আমার হাত নেই। বাবা-মা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেত, শিক্ষকদের সহায়তায় পা দিয়ে লেখা শিখি। পা দিয়ে লিখে আমি এবার এসএসসি পাস করেছি, আমার স্বপ্ন একজন সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়া।’ এই প্রথম খবরের কাগজ থেকে বৃত্তি পেয়ে সে খুব খুশি বলে জানায় সিয়াম।
সিয়ামের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। অসহায় সন্তানের হাত না থাকলে একমাত্র মা জানে তার ছেলের কষ্ট। পা দিয়ে লিখে সে এসএসসি পাস করেছে, এখন কলেজে ভর্তি হবে এতে আমি খুবই খুশি, আমার অনেক আনন্দ লাগছে। আমার ছেলে সিয়ামের ইচ্ছা বড় হয়ে সে সরকারি চাকরি করবে।’
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রাথমিকের মাঝপথে সিয়ামের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিদ্যালয় থেকে বেতন মওকুফ করলে আবার পড়ালেখা শুরু করে সিয়াম। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সিয়ামের বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনের জন্য পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ও শিক্ষকরা অনেক খুশি। তবে কলেজে ভর্তিচ্ছু সিয়ামের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ায় জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন সবাই।
আসমাউল আসিফ/সাদিয়া নাহার/