ঢাকা ৯ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

পাঠকের গল্প : পাড়ার নাম ‘করাকুন’

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পিএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পিএম
পাঠকের গল্প : পাড়ার নাম ‘করাকুন’

কলেজের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম শেষ করতে পারলাম না। মন খারাপ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজ থেকে। নাটকে অভিনয় করার কথা ছিল কিন্তু স্যাররা অভিনয় করতে দিল না কস্টিউম পরে যাইনি বলে।

কলেজ থেকে বের হয়ে সিএনজিতে উঠব, এমন সময় নক দিল নিশু। তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে। লম্বা পথ। এর আগে একবার গিয়েছিলাম। তবে খুব একটা পরিচিত নয় ওই জায়গা আমার। পথটা খুবই নির্জন। রওনা দিলাম তার উদ্দেশে। সিএনজিতে উঠলাম আর কোনো যাত্রী ছিল না সেখানে। ড্রাইভার বলল, তার মা খুব অসুস্থ তাই সে তাড়াহুড়ো করে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। আমিও এবার ফোনের দিকে মনোযোগ দিলাম। মেসেজ চলছে নিশুর সঙ্গে, কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা নারিকেল গাছে মধ্যে আটকে গেছে একটা শিশুর পা। কী চিৎকার করে কাঁদছে সে। কিন্তু আশপাশে কেউ নেই। দুজন লোক তার পা কাটছে তাকে বের করার জন্য সেই আটকে যাওয়া স্থান থেকে। কিন্তু কারও চোখে কোনো চিন্তার ভাঁজ নেই, নেই হাহাকার। শিশুটির লাল রক্ত তাদের চোখ কিংবা শরীরকে লাল করতে পারেনি। সিএনজি ড্রাইভার নামতে চেয়েও নামেনি। আমিও একবার ফোন তুলে দেখার পর আর দেখিনি, দেখার সাহসও হয়নি।

সিএনজি তার গন্তব্যে গিয়ে থামল। আমি নেমে ভাড়াটা দেব তখন ড্রাইভার বলল, না ভাই টাকা লাগবে না। আমি তাড়াহুড়োয় আমার এলাকায় চলে আসছি। আপনি আপনার গন্তব্যে চলে যান। তারপর সে চলে গেল। তখন আমিও তাকিয়ে দেখলাম। এ তো আমার গন্তব্য নয়। কয়েকটা দোকান এখানে। জায়গার নাম করাকুন। দোকানের আশপাশেই আবার কিছু ঘর। যেন নিজস্ব একটি পাড়া। শুনসান নীরবতা। কথাবার্তা কেউ কিছু বলে না। কারও মুখে হাসির চাপ বিন্দু মাত্রও নেই। এটি তাদের একটি পাড়ার মতো নিজেদের বাড়ি, ঘর, দোকান সব এখানে। হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলাম আমি। এ কোন জায়গায় এসেছি। কীভাবে চলে আসলাম। সেই শিশুটির অবস্থা দেখার পর থেকে বাকি পথ আমার আর কিছু মনে নেই। ঘুমিয়ে ছিলাম? তাও মনে পড়ছে না। আমি হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। কীভাবে আমি পৌঁছাতে পারব কাসুকা বাজার। এক নারীকেও জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কেউ যথাযোগ্য উত্তর দিল না। এবার ভয় পেয়ে বুঝতে পারলাম আমি কোনো বিপদে পড়েছি, মহাবিপদ।

নিজের ফোনটা বের করে ফেসবুকে লাইভ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনোভাবেই লাইভ করতে পারলাম না। লাইভ বাটনই খুঁজে পাই না আমি। এবার চেয়েছি নিশুকে ভয়েস মেসেজ দেব। কিন্তু নিশু আমাকে ব্লক করে রেখেছে। কিন্তু কেন? উত্তর খোঁজার মতো মানসিকতা আমার নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে সাহায্য চেয়ে একটা ভয়েস মেসেজ পাঠালাম আমার একটা সংগঠনের সিনিয়র রায়ান ভাইয়ের কাছে। কিন্তু তিনিও সিন করলেন না আমার মেসেজ।

ইতোমধ্যে আমিও হাঁটা শুরু করলাম করাকুনপাড়া থেকে বের হওয়ার রাস্তা ধরে। বেরিয়ে দেখি দুই দিকে দুই রাস্তা। কোন দিকে যাব এবার। একজনকে পেলাম। তাকে বললাম, কোন রাস্তায় গেলে কাসুকা বাজারের গাড়ি পাব। সে কোনো উত্তর দিল না। এরা কি বোবা? নাকি বোবা জিনের পাড়া এটি। আরও ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটি আমায় কিছু না বললেও চোখের ইশারায় কাকে যেন কিছু একটা বলল। আমি ডান দিকের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। লোকটির চোখের ইশারায় দানবের মতো ছয়জন লোক রাস্তার পাশ থেকে লাফিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। ওত পেতে ছিল তারা এটা আমার বোঝার বাকি রইল না তাদের হাতের অস্ত্র দেখে। আমি কাল বিলম্ব না করে উল্টো দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম। তারা কী চায় আমার কাছে? আমার টাকা, মোবাইল? নাকি আমাকে? কোনো উত্তর মিলাতে পারি না। তারাও আমাকে ধরতে দৌড়াচ্ছে আমার পিছু পিছু। কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর দেখলাম একটা পাড়ার মুখে একটা ক্রেন, মাইক্রো গাড়িকে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরেকটু দৌড়াতে গিয়ে দেখি আরেকটি পাড়ার সামনের খালে প্রবাহিত হচ্ছে রক্তের স্রোত। এরপর আমি বুঝতে পারলাম আমাকে বাঁচতে হবে।

দৌড়াতে গিয়ে একটা গাড়ি পেলাম। সেখানে লাফ দিয়ে উঠে দেখি চারজন ভদ্রলোক বসে আছেন। তাদের মধ্যে দুজন দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনে কাজ করে। যেখানে আমিও কাজ করি। স্বস্তি পেলাম কিছুটা মনে। তাদের বললাম। আমিও কাজ করি সেসব সংগঠনে, এখন বিপদে আছি। উদ্ধার করুন। তারা কিছু বলল না। ইশারায় বলল, বসো। কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর থেমে গেল। একটা রেলস্টেশনে আমরা পৌঁছে গেছি। আমার ভয় কাটতে শুরু করল আস্তে আস্তে। ট্রেন আসলে আমি চলে যেতে পারব কোথাও। অন্তত এমন ভয়ংকর জায়গা, ভয়ংকর মানুষ থেকে বেঁচে যাব। কিন্তু রেলস্টেশনও বেশ নিরিবিলি। আমরা পাঁচজন ছাড়া আর কেউ নেই। ইতোমধ্যে আমাকে ধাওয়া করতে থাকা সে ছয়জনও হাজির হয়ে গেল স্টেশনে। আমি ভদ্রলোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে আমারই সগোত্রীয় একজন তাদের ইশারা দিয়ে বলল, আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। আমি যেন আর ভাবারও সুযোগ পেলাম না। আবারও দৌড় দেওয়া শুরু করলাম রেল পথ ধরে। কিন্তু বাঁচতে কি পারব? জানা নেই!


এ এস এম সায়েম
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ 
ফেনী সরকারি কলেজ

 

তারেক

 

নারী হয়ে জন্ম, পুরুষ হয়ে মৃত্যু

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
নারী হয়ে জন্ম, পুরুষ হয়ে মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

মহাসাগরের অতল গহ্বরে লুকিয়ে আছে বিস্ময়কর সব রহস্য। যদিও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা সমুদ্রবিজ্ঞানে অনেক দূর এগিয়েছি। তবু অনেক বিষয় রয়েছে যার রহস্যের পর্দা আজও উন্মোচিত হয়নি।

সত্যিকার অর্থে সমুদ্রের বিষয় নিয়ে গবেষণার পরিমাণ অনেকটাই কম। যার কারণে সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানের গভীরতা মাপতে সক্ষম হলেও মানুষ এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে সমুদ্রের তল আমাদের কাছে হয়ে আছে বিস্ময়কর এক রহস্য। বিজ্ঞানী বা গবেষকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও মাঝে মাঝে সমুদ্রের নানা রহস্যের সম্মুখীন হয়েছেন।

তেমনই এক রহস্যের সাক্ষী হয়েছিলেন জাপানের একজন পুরোহিত। নাম হিরোইউকি আরাকাওয়া। শুধু পুরোহিতই নন; সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত ডুবুরি। হিরোইউকি জাপানের তাতেয়ামা উপসাগরে একটি ডুবন্ত উপাসনালয় বা মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। ৩০ বছরের বেশি সময় তিনি প্রতিদিন পানির নিচে গিয়ে সেই মন্দিরে ঘণ্টা বাজাতেন।

এর মধ্যেই তার সঙ্গে একটি মাছের পরিচয় হয়। সেই মাছটি প্রথম প্রথম খুব স্বাভাবিক আর দশটা মাছের মতোই ছিল। হিরোইউকি যখন মন্দিরে যেতেন মাছটি তার সঙ্গে প্রতিদিনই দেখা করতে আসত। বেশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দুজনের। হিরোইউকি মাছটির নাম দেন ইয়োরিকো। নাম ধরে ডাকলেই হাজির হয়ে যেত মাছটি।

এসব অবশ্য ৩০ বছর আগের ঘটনা। তবে সময় যতই এগোতে যাতে ইয়োরিকো নামের মাছটি বড় হতে থাকে। একসময় দেখা গেল, মাছটির মাথা ফুলে উঠে একেবারে বিকট আকার ধারণ করেছে। আগের চেহারার সঙ্গে কোনো মিলই ছিল না তার। এমনকি প্রথমে নারী মাছ হলেও পরে সে পুরুষ হয়ে ওঠে।

এই অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হন হিরোইউকি। তবে এ মাছ প্রথম নজরে আসে বিবিসি আর্থের একটি ডকুমেন্টারি তৈরির সময়। জাপানের সাডো দ্বীপের কাছে পানিতে চিত্রগ্রহণের সময় বিবিসি আর্থ ক্রুদের ক্যামেরায় রূপান্তরটি ধরা পড়লে প্রজাতিটি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১৭ সালে এ পর্বটি প্রচারিত হয়েছিল।

যে মাছটির কথা এতক্ষণ বলছিলাম তার আসল নাম হচ্ছে এশিয়ান শিপসহেড র‌্যাসে। প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে মাছটি। জাপানে এটি কোবুদাই নামেও পরিচিত। এরা মূলত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের স্থানীয়, কোরিয়ান উপদ্বীপ, চীন, জাপান এবং ওগাসাওয়ারা দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে পাথুরে প্রাচীর অঞ্চলে বাস করে।

প্রজাতিটির পুরুষদের শারীরিক গড়ন নারী মাছের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। অন্যান্য প্রজাতির মাছের বৈশিষ্ট্য এদের মধ্যে প্রায় ১৫ আনাই বিদ্যমান। এর মোট দৈর্ঘ্য ১০০ সেমি (৩৯ ইঞ্চি) হতে পারে। এই প্রজাতির রেকর্ড করা সর্বাধিক ওজন হলো ১৪.৭ কেজি (৩২ পাউন্ড)।

এ মাছের স্বাদ অনেকটা ঝিনুকের মতো। জাপানে এই মাছের চাহিদা অনেক। তবে এই প্রজাতির মাছের ফোলানো মাথা আর লম্বা চোয়াল এক এলিয়েনের রূপ দিয়েছে এদের। এদের দাঁত দেখতেও বেশ ভয়ংকর। একেবারে সাজানো গোছানো পরিপাটি ছোট ছোট দাঁত নয়। আকারে বড় এবং বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখেই এদের দাঁত গজায়। যা দেখে রীতিমতো গা ছমছম করবে আপনার। 

কোবুদাই পৃথিবীর আদিম মাছদের মধ্যে অন্যতম। কোরাল মাছ অধ্যুষিত সামুদ্রিক অঞ্চলেই এদের বসবাস। এই প্রজাতির নারী মাছেরা পুরুষ মাছের তুলনায় আকারে ছোট। শারীরিক গড়নও অন্যান্য সাধারণ মাছের মতোই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রতিটি পুরুষ মাছের উত্থান ঘটে নারী মাছের থেকেই। তবে বিস্ময়কর পরিবর্তনটি কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করে পার করছে দিনের পর দিন।

গ্রীষ্মের তাপমাত্রা চরমে পৌঁছালে, কোবুদাই প্রজননে মেতে ওঠে। প্রতিটি পুরুষ মাছ একটি নির্দিষ্ট এলাকা দখল করে রাখে। দখল করা প্রতিটি নারী মাছই তার অনুগত। পুরুষ মাছটি তার এলাকার সব নারী মাছের সঙ্গেই মিলনের সুযোগ পায়। এই অঞ্চলে অন্য কোনো পুরুষ মাছের ঢোকার অনুমতি নেই।

তবে কোনো নারী মাছের বয়স ১০ পেরোলেই সে মিলনে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ এই সময় তার শরীরের নাটকীয় এক পরিবর্তন শুরু হয়। দেহে নারী হরমোনগুলো নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে পুরুষ হরমোন সঞ্চালন হতে শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তার মাথা এবং থুতনি ফুলে ওঠে। নারী মাছটি পরিণত হয় এক দাপুটে পুরুষে।

এই পরিবর্তন কোবুদাই রাজ্যে এক মল্লযুদ্ধের সূচনা করে। নতুন পুরুষ বয়স্ক পুরুষ মাছটির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কারণ একটি অঞ্চলে একটি পুরুষই রাজত্ব করতে পারে। মাথা যত বড় প্রতিপক্ষ ভয় দেখানো তত সহজ। সম্মুখযুদ্ধে জয় পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই রাজ্যের অধিপতি নির্ধারিত হয়। সব অধিকার ছেড়ে পরাজিত পুরুষ মাছটি প্রস্থান করে।

কোবুদাই রাজ্যে কোনো পুরুষেরই ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত নয়। কারণ প্রতিটি নারীর অভ্যন্তরেই একেকটি দাপুটে পুরুষের বাস। সময়ের পরিক্রমায় যার আত্মপ্রকাশ ঘটে। 
এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোবুদাই মাছ পুরুষ হয়েই বেঁচে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে যুগের পর যুগ। ইন্টারনেট অবলম্বনে

 

 

তারেক

গ্রিসের জাতীয় পুরাতত্ত্ব জাদুঘর

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৭ পিএম
গ্রিসের জাতীয় পুরাতত্ত্ব জাদুঘর
ছবি: সংগৃহীত

গ্রিসের জাতীয় পুরাতত্ত্ব জাদুঘর- সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ জাদুঘরগুলোর ভেতর একটি। গ্রিক সভ্যতার সেরা পুরাকীর্তিগুলো এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরটি ১৮৬৬ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল। পরে ১৯২৫-৩৯ সাল পর্যন্ত এটিকে আরও বিস্তৃত পরিসরে রূপ দান করা হয়।

জাদুঘরটির প্রাথমিক নাম ছিল সেন্ট্রাল মিউজিয়াম। ১৮৮১ সালে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী চ্যারিলাওস ট্রাইকোপিস এটির বর্তমান নামকরণ করেন। জাদুঘরটিতে এত বেশি নিদর্শন আছে যে, শুধু মূল্যবান নিদর্শনগুলো হালকাভাবে চোখ বুলিয়ে দেখতে চাইলেও পুরো একটা দিন যথেষ্ট নয়!

এই জাদুঘরের সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শনগুলোর একটি হচ্ছে তথাকথিত আগামেমননের সোনার মুখোশ। মুখোশটি ট্রয় নগরীর একজন আবিষ্কারক হাইনরিখ স্লিম্যান ১৮৭৬ সালে মাইসিন নামক এলাকায় আবিষ্কার করেন। আগামেমনন ছিলেন বিখ্যাত গ্রিক রাজা; যার নেতৃত্বে গ্রিকরা ট্রয় নগরী আক্রমণ করেছিলেন। পরে জানা যায়, মুখোশটি ৩ হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো, যা ট্রয়ের যুদ্ধেরও কয়েক শতক আগে। তাই মুখোশটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তবে মুখোশটি আগামেমননের মুখোশ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। 

জাদুঘরটিতে স্বর্ণের তৈরি অনেক প্রাচীন নিদর্শন, ছুরি, বিভিন্ন ধরনের তরবারি, তীরের ফলা, গহনা, পানপাত্র ইত্যাদি রয়েছে। হাইনরিখ দাবি করেছিলেন, পানপাত্রটি মহাকবি হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডে বর্ণিত পিলোসের রাজা নেস্টরের। 

গ্রিসের জাতীয় পুরাতত্ত্ব জাদুঘরটিতে এত বেশি নিদর্শন আছে যে, শুধু মূল্যবান নিদর্শনগুলো হালকাভাবে চোখ বুলিয়ে দেখতে চাইলেও পুরো একটা দিন যথেষ্ট নয়!

 

গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আনা অনেক নিদর্শন স্থান পেয়েছে জাদুঘরটিতে। রয়েছে মৃৎপাত্রের বিশাল সংগ্রহ। পাত্রগুলোতে আজও অম্লানভাবে ফুটে আছে গ্রিক পুরাণের কল্পকথা, তৎকালীন জীবনধারা, পশুপাখির অবয়ব ইত্যাদি। কিছু কিছু পাত্র আকারে বেশ বড়। পাত্রগুলো খুব আকর্ষণীয়। 

জাদুঘরে আরও আছে ৩ হাজার বছরের পুরোনো বাথটাব, হাড়ের তৈরি শিরস্ত্রাণ, বর্ম, আড়াই হাজার বছরের পুরোনো বিশালাকার ব্রোঞ্জ দেবতা মূর্তি। সবগুলো নিদর্শনের সঙ্গে সুন্দর করে বর্ণনা দেওয়া আছে। সেসব বর্ণনা পড়ে নিদর্শনগুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যায়। ব্রোঞ্জের মূর্তিটি দেবরাজ জিউসের নাকি সাগর দেবতা পসাইডেনের তা নিয়ে এখনো কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি, তবে গবেষণা চলমান। ভাস্কর্যটি এত জীবন্ত, দেখলে মনে হবে একজন মানুষই যেন নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সাগরের গহীন তল থেকে উদ্ধার করা ২ হাজার বছর আগের অ্যান্টিকিথেরা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। অতি প্রাচীন হওয়ায় এবং সাগরতলে দীর্ঘদিন থাকায় সেটির অবস্থা ছিল খুব করুণ। পরে যতটা সম্ভব অবিকৃত রেখে সূক্ষ্মভাবে তা মেরামত করা হয়েছে। 

২ হাজার ২০০ বছর আগের ‘আর্তেমিসের অশ্বারোহী’ নামের একটি বিশাল ভাস্কর্যও আছে এখানে। দেখলে মনে হবে, ঘোড়াটি দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে আর তাতে সওয়ার এক ছোট্ট বালক। আরও আছে অর্ধেক ষাঁড়, অর্ধেক মানুষ এর অদ্ভুত ভাস্কর্য।

জাদুঘরে যে শুধু গ্রিক সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে তা নয়, মিসরীয় সভ্যতারও বেশ সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে। কিছু সুন্দর মমি আছে। ৩ হাজার বছরের পুরোনো একখণ্ড রুটি আছে, রুটির একটি অংশ কামড় দিয়ে ছিঁড়ে নেওয়া। 

স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল খুঁড়ে এত অমূল্য সব নিদর্শন জোগাড় করে কীভাবে এমন মহামূল্যবান একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা সম্ভব হলো, তা দর্শনার্থীদের রীতিমতো ভাবিয়ে তোলে!

 

 

তারেক

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফল

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফল
ছবি: সংগৃহীত

ফল আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। তবে কিছু ফল আছে যেগুলো এতই দামি যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে সেগুলোর স্বাদ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। আজকে জানাব তেমনই কিছু দামি ফল সম্পর্কে।

হেলিগান আনারস

হেলিগান আনারস আমাদের পরিচিত আনারসের চেয়ে ভিন্ন। এর প্রতি পিসের দাম প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই আনারস চাষ করা হয় ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের হেলিগান বাগানে। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় এই ফল চাষ সম্ভব নয় বলে মাটিতে তাপ দিয়ে বিশেষ পাত্রে কৃত্রিম উপায়ে এটি চাষ করা হয়। আনারসটি তুলতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন বছর। এর পরিচর্যা ও সংরক্ষণ খরচ অনেক বেশি হওয়ায় এর দামও বেশি। ফলটি হেলিগান বাগান থেকে নিলামে বিক্রি করা হয়।

তাইয়ো নো তামাগো আম 

জাপানের এই বিশেষ আমকে বলা হয় ‘সূর্যের ডিম’। এর রং সূর্যের আলোয় ঝলমল করে এবং প্রতিটি আমের ওজন অন্তত ৩৫০ গ্রাম হয়। চিনির মাত্রা স্যাকারিমিটারে ১৫ ডিগ্রির বেশি হওয়ায় এটি খুবই মিষ্টি। ২০১৭ সালে এই আমের দুটি জোড়া বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৭৪৪ ডলারে। সাধারণ দোকানে এক জোড়া আম ৫ হাজার ইয়েনের মতো দামে বিক্রি হয়।

ডেনসুক তরমুজ

উত্তর জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে চাষ হওয়া এই কালো রঙের তরমুজ বিশ্বের অন্যতম দামি ফল। এর স্বাদ অত্যন্ত রসাল এবং মিষ্টি। চাষের জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট জলবায়ু এবং খনিজসমৃদ্ধ আগ্নেয়গিরির মাটি। একটি ডেনসুক তরমুজের দাম নিলামে উঠেছিল ৬,১০০ ডলার পর্যন্ত। সাধারণ দোকানগুলোতে এটি ১৯০ থেকে ৩০০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়।

রুবি রোমান আঙুর

জাপানের ইশিকাওয়ায়  চাষ হওয়া রুবি রোমান আঙুর বিশ্বের সবচেয়ে দামি আঙুর হিসেবে পরিচিত। প্রতি গুচ্ছ আঙুরের দাম প্রায় ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে একটি আঙুরের দামই ৪০০ ডলার। এই আঙুর উপহার হিসেবে গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা অতিথিদের দেওয়া হয়। হালকা টক স্বাদের সঙ্গে রসাল মিষ্টি এই ফলটি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে চাষ করা হয়।

ইউবারি কিং মেলন

জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের ইউবারি শহরের পাহাড়ে চাষ হওয়া এই তরমুজ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফল। এর দাম ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সাধারণ দোকানে ২০০ ডলারেও এটি পাওয়া যায়। এর গোলাকার আকার, কমলা রঙের শাঁস এবং ১৩ শতাংশ চিনি মিশ্রিত রসাল স্বাদ এটিকে ধনী এবং অভিজাতদের বিশেষ খাবার হিসেবে পরিচিত করেছে।

বিশ্বের এসব ব্যয়বহুল ফল শুধু তাদের স্বাদ নয়, চাষের প্রক্রিয়া ও যত্নের কারণেও এত দামি। এগুলোর চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আলাদা নজর দেওয়া হয়।

 

তারেক

পাঠকের লেখা: নদীর চোখে অশ্রু ঝরে

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
পাঠকের লেখা: নদীর চোখে অশ্রু ঝরে

আমার সঙ্গে দেখা হয়নি তবে শুনেছি এবং জেনেছি বিভিন্ন মাধ্যমে, রাখাইনদের সঙ্গে  নাফ নদীর ছিল ভীষণ সখ্য। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নাফ নদীর বহু যুগের প্রেম-ভালোবাসা আষাঢ়ের যৌবনকালে নদীর সঙ্গে আবার মাঝে মাঝে খুনসুটি হতো। এক তীর ভেঙে অন্য তীরে পাড়ের বসতিদের স্থানান্তর করা ছিল নাফ নদীর চরিত্র।

নদীর সঙ্গে যুদ্ধও কম করেনি রোহিঙ্গারা। তবু  নাফ নদীর সঙ্গে হারানো প্রেম ফিরে পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে লাখ লাখ আরাকানবাসী। নদীর শীতল জলে প্রত্যহ গোসল করা, মাছ ধরা,অবসরে নৌকায় ভ্রমণ করে মনের দুঃখ-কষ্ট ক্লান্তি ধুয়ে ফেলা ছিল তাদের বংশানুক্রমে জীবনের অনন্য চাহিদা। যা নির্ধারিত শিবিরে থেকে চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে অনুভব করছে বিতাড়িত সব রাখাইন জনগোষ্ঠী। সকাল-সন্ধ্যা রাতের গভীরে নিদ্রা অনিদ্রাকালে স্মৃতিচারণ করে ভিনদেশের মাটিতে।

অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়া বসতবাড়ির স্বস্তির ঠিকানায় ফিরে প্রাণ শীতল করতে আকুলতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আরাকানের রোহিঙ্গা সাধারণের। যে নাফ নদী আজ তাদের শুধুই স্মৃতির যন্ত্রণা, সে নাফ নদীও অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ। কখন আসবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী! তীরে বসে টান দিতে প্রাণহরা বাঁশির সুমধুর সুর! অনেক দিন থেকে শোনা হয় না দরদমাখা প্রেমের সরল আহ্বান বাঁশির সুরে সুরে। 

প্রতারণা করেনি কেউ নাফ নদীর সঙ্গে, নদী দিয়েছে সেকালে রোহিঙ্গাদের প্রাণের চাহিদা। মায়ানমারের রক্তখেকো নির্মম জান্তা সরকারের বাহিনীর বুলেটের আঘাতে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গার। জান্তা সরকারের নির্লজ্জ তাণ্ডবের দৃশ্য অশ্রু ঝরা চোখে নীরবে বহন করে চলেছে আজও নাফ নদী। নাফ করেছে গোসল নিরুপায় রোহিঙ্গাদের তাজা রক্ত ঝরা গরম জলে। সেই তখনই নাফ নদী তরল আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলেছিল –

এখন থেকে ডাকবে না কেউ
নাফ নদী নাম ধরে, 
তাকিয়ে দেখো গায়ের বসন 
দিয়েছে রাঙা করে। 
এখন থেকে ডাকবে সবে
রক্ত নদী বলে, 
বিশ্বাস যদি না হয় কারও
দেখতে আসো চলে।

 


মো.আশতাব হোসেন

ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম 

 

তারেক

গ্রাফোলজি: মানুষ চেনাবে হাতের লেখা

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২০ পিএম
গ্রাফোলজি: মানুষ চেনাবে হাতের লেখা
ছবি: আদিব আহমেদ

নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত ‘যে আগুনে পুড়ি’ সিনেমার জনপ্রিয় ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ গানটির কথা মনে আছে? আসলেই কি চোখ মনের কথা বলতে পারে? সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞানের ভাষায় হয়তো পারে কিন্তু চোখ মনের কথা বলতে পারুক আর না পারুক আপনার হাতের লেখা আপনার সম্পর্কে অনেক কথাই বলে দিতে পারে। বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় গ্রাফোলজি। আধুনিক বিজ্ঞানে যাকে নিউরোসায়েন্স বলা হয় যদিও সায়েন্স তকমা দেওয়া নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। 

যারা আগে থেকে ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নন তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ‘বলা নেই কওয়া নেই এ আবার কোন বিজ্ঞান?’ কিন্তু আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, এটি হাজার বছরের পুরোনো একটি কৌশল। শত শত বছরের হাতের লেখা গবেষণার ফসল আজকের এই গ্রাফোলজি।

গ্রাফোলজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে। গ্রাফ অর্থ লেখা আর লোজি অর্থ বিশ্লেষণ। গ্রাফোলজি অর্থ হস্তলেখা বা হাতের লেখা বিশ্লেষণ। 

গ্রাফোলজির ইতিহাস অনেক পুরোনো। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দীতে চীনা দার্শনিক কুও জো সু একটি মহামূল্যবান উক্তি করেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে হাতের লেখা দাও, আমি বলে দেব সেটা মহান ব্যক্তির না অমার্জিত ব্যক্তির।’ গ্রাফোলজি নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণা থাকলেও ১৬২২ সালে ইতালির প্রফেসর ড. ক্যামিলো বাল্ডি তার বই প্রকাশের মাধ্যমে গ্রাফোলজিকে সংগঠিত করেন। 

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমরা যখন কিছু লিখি তা মূলত নির্দেশনা আসে মস্তিষ্ক থেকে, যার ফলে আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে যা ঘুরপাক খাচ্ছে তার একটা প্রতিফলন ঘটে লেখার মাধ্যমে। গ্রাফোলজি গবেষকদের মতে নির্দিষ্ট কিছু আচরণের মানুষের মধ্যে একই রকমের লিখার ধরনের মিল থাকে। যেমন- ইংরেজি ছোট হাতের t-এর ক্রস যারা একদম উপরে দেয় তারা মূলত উচ্চাভিলাষী এবং সবকিছুতে আশাবাদী হয়ে থাকে। তাদের আত্মসম্মানবোধ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি হয়। আবার যাদের ইংরেজি হাতের অক্ষর a, o-এর মুখ খোলা থাকে তারা একটু বাঁচাল প্রকৃতির হয়ে থাকে। আবার যাদের ইংরেজি d বর্ণের লুপ (d-এর উপরের গোলাকার অংশটিকে লুপ বলা হয়) বেশি তারা সমালোচনা নিতে পারেন না।

হাতের লেখার কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন- Margin, Baseline, Slant, Size, Pastocity, Connection, Spacing, Zones, Pressure, Speed, Individual Letters ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি অতীত, পরিবার ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে কতটুকু ভাবেন তা নির্ণয় করা সম্ভব। কেউ কতটুকু আবেগপ্রবণ বা বাস্তববাদী তাও হাতের লেখা দেখে বলা সম্ভব। এই রকম একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের অনেকগুলো বিষয় ইনট্রোভার্ট না এক্সট্রোভার্ট, রাগী না শান্ত, সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী, ধৈর্যশীল না অধৈর্যশীল ইত্যাদি গ্রাফোলজির মাধ্যমে জানা সম্ভব।

গ্রাফোলজি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো-


১. মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থান
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় গ্রাফোলজি, বিশেষত যখন কোনো প্রার্থীচাকরির জন্য উপযুক্ত কি না, তা মূল্যায়ন করা হয়। হাতের লেখার মাধ্যমে প্রার্থীর মনোভাব, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা এবং মানসিক গঠন বোঝা যায়।

২. শিক্ষা ও ক্যারিয়ার পরামর্শ
ছাত্রছাত্রীদের হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে তাদের মানসিক প্রবণতা, শক্তি এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়। এর মাধ্যমে সঠিক পেশা বা শিক্ষার দিক নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য এবং থেরাপি
মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন ইত্যাদি মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য গ্রাফোলজি ব্যবহার করা হয়। এটি একজন ব্যক্তির আবেগীয় অবস্থা এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।

৪. ফরেনসিক এবং তদন্ত (ফরেনসিক গ্রাফোলজি)
অপরাধ তদন্তে ফরেনসিক গ্রাফোলজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো নথি বা চিঠি আসল কি না বা অপরাধীর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা যায়।

৫. ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন
ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আত্মোন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রাফোলজি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

৬. ব্যক্তিগত উন্নতি
নিজের লেখার ধরন বিশ্লেষণ করে আচরণগত পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায়। এর মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। হাতের লেখা শুধু শব্দ নয় বরং আমাদের মনের এক গভীর প্রতিচ্ছবি। আপনি যদি এই গ্রাফোলজি বিদ্যা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে একজন দক্ষ গ্রাফোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে গ্রাফোলজি কোর্স করতে পারেন। 


লেখক: গ্রাফোলজিস্ট ও ফরেনসিক ডকুমেন্ট এক্সামিনার

 

তারেক