ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

যে শহরে মানুষের চেয়ে গাছ বেশি

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ পিএম
যে শহরে মানুষের চেয়ে গাছ বেশি
ছবি: সংগৃহীত

গাছ আমাদের পরম বন্ধু, মানুষ ও পরিবেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। খাদ্য, বস্ত্র, পুষ্টি, বাসস্থান, ওষুধপত্র, অর্থের জোগানদাতা হিসেবে বৃক্ষের অবদান যেমন অনস্বীকার্য তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অনেক। বাতাস থেকে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছেড়ে দিই।

অন্যদিকে গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। সুতরাং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছপালার অবদান অপরিসীম। শুনলে হয়তো অবাকই হবেন যে, পৃথিবীতে এমন এক শহর রয়েছে যেখানে মানুষের চেয়ে গাছের সংখ্যা বেশি। 

যুক্তরাজ্যের সাউথ ইয়র্কশায়ার কাউন্টির বৃহত্তম শহর শেফিল্ড। নদী আর উপত্যকায় ঘেরা সবুজময় এক শান্তির শহর। অথচ এ শহরেই রয়েছে ৪২৫ টন ওজন ও ১২ হাজার হর্সপাওয়ারের রিভার ডন ইঞ্জিন। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি কার্যকরী স্টিম ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও শেফিল্ড একটি শীতলতম শহর। যেখানে মানুষের চেয়ে গাছের সংখ্যা অনেক বেশি।

পাহাড়ঘেরা শেফিল্ডের আশপাশ ঘিরে রয়েছে সাতটি চূড়া ও সুদৃশ্য উপত্যকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে এখানে প্রবাহিত হচ্ছে ডন নদী ও এর চারটি উপনদী শেফ, রিভলিন, লক্সলে এবং পোর্টার ব্রুক। এ কারণেই ১২ শতকের প্রথম থেকে শত শত শিল্প-কারখানা এখানে গড়ে ওঠে, যেগুলোয় শেফিল্ড কাটলারি ও ছুরি-ব্লেডের মতো 
ছোট ইস্পাতের উপকরণ উৎপাদন হয়ে আসছে। এ কারণে শহরটির নাম হয়ে ওঠে ‘দ্য স্টিল সিটি’।

শিল্প শহর হওয়া সত্ত্বেও কী করে শহরটি এখনো শীতল! ব্রিটেনের সবুজতম শহরটির কেন্দ্রে রয়েছে ৬১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে পার্ক, বনভূমি আর পরিকল্পিত দর্শনীয় বাগান। শহরজুড়ে সাড়ে ৫ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে রয়েছে ৪৫ লাখের বেশি গাছ। শহরটির এক-পঞ্চমাংশ জুড়ে রয়েছে গাছের বসবাস। শহরের প্রতি বাসিন্দার বিপরীতে রয়েছে কমপক্ষে ৮০টি গাছ। এ কারণে ২০২২ সালে শেফিল্ডকে বিশ্বের অন্যতম আন্তর্জাতিক ট্রি সিটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের সবুজতম শহর হওয়ার পাশাপাশি শেফিল্ডকে অসলোর পরে ইউরোপের দ্বিতীয় সবুজ শহরের তকমা দিয়ে ইয়র্কশায়ারকে গৌরবান্বিত করেছে।

শহরটিতে রয়েছে ৮০০টি সবুজ স্থান, রয়েছে ১৫ মাইল এলাকাজুড়ে গাছবেষ্টিত একটি ওয়াকওয়ে রুট। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশকিছু জলাধার- যেগুলোয় হংসমিথুনের জলকেলি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় দর্শনার্থীদের। অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় ১২ শতকের শুরুর দিকে যে শহরটিকে মনে হয়েছিল ইংল্যান্ডের উষ্ণতম শহর হবে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে আশ্চর্যজনকভাবে এটি হয়ে উঠেছে শীতলতম সবুজ শহর। 

 

তারেক

বধিরদের গ্রাম

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ পিএম
বধিরদের গ্রাম
বেংকালা গ্রামে আসা পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ হলো ‘জাঞ্জের কোলক’ বা বধিরদের নৃত্য। ছবি: সংগৃহীত

গল্প-উপন্যাসে আমরা বিভিন্ন সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের গ্রাম বা বধিরদের গ্রাম সম্পর্কে পড়েছি, যেখানে সবাই থাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা বধির। কিন্তু বাস্তবে ইন্দোনেশিয়াতেই এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে সব বাসিন্দা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে। শত শত বছর ধরে গ্রামে চলছে ইশারা ভাষা। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় ভাষা প্রচলিত নয়। সবাই ভাব আদান-প্রদান করে ইশারা ভাষায়।

উত্তর বালির সুন্দর গ্রামীণ জঙ্গলে বধিরদের একটি গ্রাম আছে, নাম- বেংকালা। বিশ্বে অনেক মানুষই একে বধিরদের গ্রাম বা ‘The Village Of Deaf’ বলেই চেনেন। চাষাবাদ আর পশুপালনই এই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। পর্যটন থেকেও আংশিক উপার্জন হয় গ্রামবাসীদের।

এই গ্রামের নিজস্ব ইশারা ভাষা রয়েছে, যা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পুরো গ্রামে যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। এই সাংকেতিক ভাষা ‘কা’তা কোলোক’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘বধিরদের কথা’। এটি ভৌগোলিকভাবে অনন্য, আন্তর্জাতিক বা ইন্দোনেশিয়ান সাংকেতিক ভাষা থেকে ভিন্ন। এই গ্রামের অধিকাংশ লোক বধির। সাত প্রজন্মের বেশি সময় ধরে এই গ্রামের মানুষ বধির। এই বধিরতা যদি ভৌগোলিক-কেন্দ্রিক রিসেসিভ জিন দ্বারা সৃষ্টি হয়, যাকে DFNB3 বলা হয়, যা বংশপরম্পরায় প্রচলিত। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের এই গ্রামে প্রায় ৩ হাজার লোক বসবাস করে।

বেংকালা নামের এই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের সন্তানদেরও সাংকেতিক ভাষা শেখান। বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষকরা সাংকেতিক ভাষায় পড়ান। শিক্ষার্থীরাও সাংকেতিক ভাষায় একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন। এই গ্রামের কেউ এই বধিরতাকে অস্বাভাবিকতা হিসেবেও দেখেন না, তারা মনে করেন এটি বধিরদের দেবতার দেওয়া উপহার হিসেবে। এটি একটি স্থানীয় কবরস্থানে বসবাস করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে, অন্য স্থানীয় লোককথা অনুসারে, বধিরতা একটি অভিশাপ। এই গ্রামের মেয়র ইদা মারদানা বলেন, বিখ্যাত গল্পটি হলো যে দুটি জাদুশক্তির লোক একে অপরের সঙ্গে লড়াই করেছিল এবং তারপর একে অপরকে বধির হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিল।

নিওমান সান্তিয়ার নেতৃত্বে এই গ্রামে একটি শক্তিশালী বাহিনী আছে। এই বাহিনী অনেক শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল। তাদের গুণাবলি বালিতে এতই বিখ্যাত যে, প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রায়শই তাদের কাছে কঠিন সময়ে আশ্রয় এবং সুরক্ষার জন্য আসে। তারা ‘হ্যান্সিপ’ (বেসামরিক রক্ষী) এবং ‘পেকালাং’ (ঐতিহ্যবাহী বালিনিজ নিরাপত্তা রক্ষী) হিসেবেও নিয়োগ পায়।

বেংকালা গ্রামের প্রহরীরা অন্য প্রহরীদের চেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ। চোর ধরতে পারলে তারা আঘাত করতে দ্বিধা করেন না। কেননা তারা চিৎকার কানে শোনেন না। তবে বেংকালা গ্রামের মানুষ অত্যন্ত ধৈর্যশীল এবং শান্ত স্বভাবের। তাদের কেউ পীড়িত করলে সহজে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। বর্তমানে এই গ্রামের তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোনসহ নানা আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও আছে। দেশ-বিদেশ থেকে এই গ্রামে আসা পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ হলো ‘জাঞ্জের কোলক’ বা বধিরদের নৃত্য। তারা সব সময়ই চায়, তাদের গ্রামে যেন পর্যটকের ঢল নামে।

 

তারেক

বলছি চে গুয়েভারার জন্মভূমির কথা

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
বলছি চে গুয়েভারার জন্মভূমির কথা
ছবি: সংগৃহীত

ভাবুন তো, এমন একটা দেশে ঘুরতে গেলেন, যে দেশ এতটাই নিরাপদ যে সেখানে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ঘোরার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকরা ইচ্ছামতো যখন-তখন যেখানে খুশি ঘুরতে পারেন। হ্যাঁ, বলছিলাম ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র চে গুয়েভারার জন্মভূমি কিউবার কথা।

কিউবার সরকারি নাম ‘রিপাবলিক অব কিউবা’। দেশটি আশপাশের অনেকগুলো ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।

কিউবা একটি কমিউনিস্ট দেশ। সেখানে একই বাসায় ডাক্তার বসবাস করেন, আবার পরিচ্ছন্নতাকর্মীও বসবাস করেন। সমাজে যেন শ্রেণিবৈষম্য তৈরি না হয়, তাই সরকারই নির্ধারণ করে দেন কোন বাসায় কে কে থাকবে এবং তাদের মাসিক উপার্জনও প্রায় কাছাকাছি। 

কিউবার হাসপাতালগুলোতে প্রতিটি রোগী একই ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। কোনো বৈষম্যের সুযোগ নেই। এমনকি রোগীপ্রতি ডাক্তারের সংখ্যা বিশ্বের যে দুটি দেশে সবচেয়ে বেশি, তার একটি হচ্ছে এই কিউবা।

সেখানে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা নিষেধ। যদি কেউ বিনা অনুমতিতে গাছ কাটে, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর এই কঠোর নিয়মের জন্যই কিউবা এখনো সবুজ শ্যামল একটি দেশ। কিউবার কৃষিব্যবস্থাও আদিম। চাষাবাদে এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি কোনো রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা হয় না।

কিউবায় প্রতি বছর অনেক পর্যটক ঘুরতে যান। কিন্তু সেখানে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। আসলে কিউবার প্রতিটি বাড়িই এক একটা হোটেল। সরকারিভাবে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, প্রতিটি বাড়িতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিউবার নাগরিকরা সেখান থেকে একটা বাড়তি রোজগার করার সুযোগ পান।

কিউবার ভূমি খুব উর্বর। সেখানে আখ ও তামাকের প্রচুর ফলন হয়। আর এই ফলনের জন্যই দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো। এ ছাড়া কিউবা বনজ সম্পদেও সমৃদ্ধ। দেশটিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে বিধায় সেখানে সংস্কৃতিরও অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়।

উর্বর ভূমি আর খনিজ সম্পদের জন্য স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র কিউবাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে বিভিন্ন সময়। এমনকি কিউবা টানা ৪০০ বছর স্পেনের অধীনে ছিল। পরবর্তী সময়ে উনিশ শতকের মধ্যভাগে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় কিউবা স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে, কিউবার সরকারি ভাষা স্প্যানিশ এবং দেশটির বেশির ভাগ মানুষ স্প্যানিশ ভাষাতেই কথা বলে। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অনেকে ইংরেজি ভাষাও ব্যবহার করে থাকে।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো হাভানা, যা কিউবার রাজধানী। এটিই প্রধান বাণিজ্যিক শহর এবং সমুদ্রবন্দর। হাভানায় রয়েছে কয়েক শ বছরের পুরোনো বাড়িঘর, ভিনটেজ গাড়ি আর খোয়া বিছানো রাস্তা। তাই হাভানায় গেলে পুরোনো দিনে হারিয়ে যেতে হয়। তবে, ছবির মতো সুন্দর এই গণতান্ত্রিক দেশটায় চাইলেই যাওয়া সম্ভব হয় না। এর জন্য পর্যটকদের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।

 

তারেক

পাঠকের লেখা: স্বপ্নদর্শন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫ এএম
পাঠকের লেখা: স্বপ্নদর্শন

১.
মা দুপুরের রান্না এখনো শেষ করতে পারেনি, আরও আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। পুরোনো বই আমার কাছে নতুনের মতোই লাগে। বই মানে জ্ঞান, জ্ঞান কখনো পুরোনো হয় না। তাই সময় কাটানোর জন্য, বুক শেলফ থেকে একটি বই নিয়ে চেয়ারে বসলাম। এদিক-ওদিক পাতা উল্টিয়ে বিশেষ একটা অধ্যায় খুঁজে পড়তে লাগলাম।

পড়তে পড়তে মনে হলো কোনো বুড়ো ব্যক্তি হেঁটে আসছে, হ্যাঁ লাঠির শব্দ পাচ্ছি। সে দিকে না তাকিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু লাঠির শব্দটা ধীরে ধীরে আমার দরজার সামনে এসে থেমে গেল। আমি গর্দান ঘুরিয়ে নির্বাক হয়ে গেলাম, বলে উঠলাম কবিজি! কবি একগাল হাসি দিয়ে বলল—আয় ঘুরে আসি।

২.
সিমেন্টের পাটা বিছানো রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় মেহগনি গাছ, আর সারি সারি কবর। কত বছরের পুরোনো কবরস্থান জানি না। আমি কবির হাত ধরে হাঁটছি। যেমন গপ্প করতে করতে হেঁটে যায় দাদুর হাত ধরে প্রিয়তম নাতি। গাছের ডালে পাখির নাচন দেখে কবি আমাকে বলল—দেখো দেখো দাদু পাখির নাচন। আমি ভীষণ আনন্দের সঙ্গে হাঁটছি। সুন্দর, উজ্জ্বল, নির্মল একটা পরিবেশ। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে মুখ দেখিয়ে যাচ্ছে সূর্যদেব।

কবিজি আমাকে বললেন—জানি তুমি একদিন এই বিশাল গাছের মতো বড় হবে, গাছের পাতার মতো তোমাকে মানুষ চোখ বুলিয়ে দেখবে, পড়বে। তোমাকে দেখে তৃপ্তি পাবে। বলো তো দাদু মানুষ কীসের তৈরি? আমি বললাম—মাটির। না মানুষ মাটির নির্যাসে তৈরি। মানুষ যদি মাটির তৈরি হতো, তাহলে এত শত মানুষ মাটি দিচ্ছে, কই এই জায়গায়গুলো তো পাহাড়ের মতো উঁচু হচ্ছে না। তুমি যদি এক জায়গায় প্রতিদিন এক টুকরি করে মাটি ফেলো, জায়গাটা তো উঁচু হবে তাই নয় কি? আমি বললাম—হ্যাঁ তাই। তাহলে এত শত মাটির লাশ মাটি দিচ্ছে, কই উঁচু তো হচ্ছে না, তার মানে মানুষ মাটির তৈরি নয়। মাটির নির্যাসে তৈরি।

৩.
ফাতিহা মক্তবে যাবি না? কচি কণ্ঠের ডাক শুনতে পেয়ে চোখ খুললাম, বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন দেখেছি। শোয়া থেকে উঠে বসে দেয়ালে ঝুলানো ছবিটির দিকে তাকালাম। ওই তো ঝাঁকড়া চুলগুলো, পূর্ণিমার চাঁদের মতো ভরা দুটি গাল, নীহারের মতো টলোমলো দুটি চোখ। ওই তো কবি নজরুল, ছবি হয়ে ঝুলে আছে আমার ঘরের দেয়ালে। ভোর হলো, দোর খোলো, খুকুমনি ওঠো রে… বলতে বলতে উঠে এসে দরজাটা খুললাম। ভোরের সূর্য কেবল ফেটে গিয়ে আলো ছড়াচ্ছে। আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে, ঠোঁটের কোণে একটু আনন্দের হাসি হাসলাম।

দারুণ একটি স্বপ্ন দেখলাম আজ। ফাতিহা আর রুকু বুকে কোরআন শরিফ জড়িয়ে, বাসিমুখে রওনা দিল মক্তবের উদ্দেশ্যে। আজ ভোরের আলো দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর জন্ম কেবলই হলো। জেগে জেগে আশা প্রত্যাশার স্বপ্ন দেখলে সফল বা বড় হবেন। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতে পেলে, আপনি পবিত্র রুহের অধিকারী ভেবে নেবেন।


ফকির শাহিন শাহ 
বিলাশপুর, জাজিরা
শরীয়তপুর

 

তারেক

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতি

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২০ এএম
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতি
ছবি: সংগৃহীত

স্থলে-জলে, বনে-জঙ্গলে অনেক গাছই তো আমরা দেখতে পাই। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতির নামটি কি আমরা জানি? এই বৃক্ষটি উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত।

গাছটির উচ্চতা এতটাই সুবিশাল যে, এর আশপাশে পৃথিবীর বিখ্যাত স্থাপনাগুলোকেও অত্যন্ত ক্ষুদ্র মনে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বনস্পতিটির নাম হলো হাইপরিয়ন। কোস্ট রেডউড প্রজাতির এই গাছটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক পুরাণের দেবতা হাইপরিয়নের নামে। যার অর্থ, ‘উচ্চ স্থানের অধিকারী।’

গাছটির উচ্চতা প্রায় ১১৫.৮৫ মিটার। বৃক্ষটির মূল অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত এবং এর কোনো শাখা-প্রশাখা  নেই। ২০০৬ সালে এক দম্পতি এই গাছটি আবিষ্কার করেন। এর পর বৃক্ষটি বৈজ্ঞানিক, পরিবেশবিদ এবং দর্শনার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। গাছটি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কের নিয়ম অনুযায়ী, এর আশপাশে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। 

ক্যালিফোর্নিয়ার জাতীয় উদ্যানের কর্মীদের ভাষ্যমতে, ‘নিয়ম অনুযায়ী গাছটিকে অনেক দূর থেকে দর্শন করতে হয়। কেউ যদি গাছের কাছে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তা হলে তার ৬ মাসের জেল এবং ৪ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।’ এই গাছটি বছরে প্রায় ৭০০ কেজি অক্সিজেন উৎপন্ন করে। যা বায়ুদূষণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও গ্রীষ্মকালে এই গাছটির নিচে অবস্থান করলে তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম অনুভূত হয়। 

এই বৃক্ষটি প্রকৃতির এক বিরল উপহার। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই গাছটি কেবল উচ্চতার জন্য নয়, পরিবেশ রক্ষায় এর অনন্য অবদানের জন্যও প্রশংসিত।

 

তারেক

পাঠাগারে বই বিলি করেন তিনি

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২২ পিএম
পাঠাগারে বই বিলি করেন তিনি
ছবি: লেখক

যুক্তরাষ্ট্রের ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি তার একটি উক্তিতে বলেছেন, ‘উপর মহলের মানুষ থেকে আমরা খুব কমই উপহার পাই। এগুলো আসে নিচু স্তরের মানুষের কাছ থেকে’। উক্তিটি পর্যালোচনা করলে এমন অসংখ্য মানুষের চেহারা ভেসে উঠবে আমাদের চোখে। বড় বড় দালান আর বাড়ি-গাড়ি থাকলেই মানুষ মহৎ হয় না, যদি মানুষের আদর্শ ঠিক না থাকে।

মানুষকে বইমুখী করতে বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পরিচালক, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার যা করেছেন তা বইপ্রেমীরা আজীবন মনে রাখবেন। সমাজকে আলোকিত করতে মানুষকে বইয়ের দিকে অগ্রসর করতে এরপর যাদের নাম আসবে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই নিম্নমধ্যবিত্ত। মানুষগুলো দারিদ্র্য আর কষ্টে নিমজ্জিত হলেও তাদের স্বপ্ন ছিল সমাজকে সুন্দর করার। যাদের মধ্যে আছে, একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণিজন বইয়ের ফেরিওয়ালা পলান সরকার। যিনি রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২০টিরও গ্রামে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। গুণী এই মানুষ ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করলেও পরবর্তী সময়ে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে আরেক গুণিজনের ভালো কাজটি। যিনি বইপ্রেমীদের কাছে ‘বেচি দই কিনি বই’ নামে সুপরিচিত মানুষ। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। যাকে ইতোমধ্যে সামাজিক কাজে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। 

নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ ছাড়াও সামাজিক কাজকর্মে ধনী শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি আমাদের চোখে ভেসে না উঠলেও বংশপরম্পরায় ভালো মানুষের সন্ধান মিলে। তেমনি একজন মানুষ হলেন কাজী এমদাদুল হক খোকন। যিনি কারও কাছে বইবন্ধু কারও কাছে বইয়ের ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত। তবে তার কাজ সবার চাইতে আলাদা। কেউ কেউ পাঠাগার তৈরি করে মানুষকে বইমুখী করার চেষ্টা করছে আবার কেউ কেউ পাঠাগারে বই বিলি করছেন। কাজী এমদাদুল হক খোকন তাদেরই একজন। তবুও উনি সবার চাইতে ভিন্ন। বাংলাদেশের পাঁচ শতাধিকেরও বেশি পাঠাগারে নিজস্ব অর্থায়নে বই বিলি করেন তিনি।

কাজী এমদাদুল হক খোকনের দেশের বাড়ি শরীয়তপুরে। জন্ম ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে। বাবা ময়মনসিংহে চাকরি করার সুবাদে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন এই জেলাতেই। বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বিএ পাস করেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা কলেজ থেকে। পৈতৃক বসতবাড়ি ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের প্রিয়কাটি গ্রামে। শিক্ষাজীবন পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন স্টেনোগ্রাফার হিসেবে। অবসরে যান ২০১৫ সালে। শরীয়তপুর দেশের বাড়ি হলেও মিরপুরে থাকেন ভাড়া বাসায়। তার বাবা জীবিত থাকাকালীন থাকে পরামর্শ দেন নিজেকে যেন সব সময় ভালো কাজে জড়িয়ে রাখেন। সেই থেকে তিনি মানুষের পরোপকারী বন্ধু। মানুষকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে গ্রাম থেকে শহরে দেশের নানা প্রান্তে নিজস্ব অর্থায়নে বই বিলি করছেন। এমদাদের বাবা কাজী আব্দুল গণী ১৯৮০ সাল মৃত্যুবরণ করেন। মাতা আবেদা খাতুন মারা যান ২০১০ সালে। এরপর থেকে তিনি বাবার কথায় নিজেকে ভালো কাজে জড়িয়ে রেখেছেন। ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীসহ পারিবারিক সদস্য মোট চারজন। ছেলেমেয়ে দুজনেই পড়াশোনা করছেন। বইবন্ধুর সময় কাটে নামাজ আর বই বিলি করেই। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী পাঠাগারের সংখ্যা কম থাকলেও তার সহযোগিতা আর বই পেয়ে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন পাঠাগার। একেক পাঠাগারে বই দিয়েছেন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে অবিরত বই পাঠিয়ে চলছেন। পাঠাগারের বইয়ের চাহিদা আর পাঠকের বই শূন্যতা পূরণে পাঠাগারপ্রেমীদের অপর নাম কাজী এমদাদুল হক। এ পর্যন্ত দেশের ৫২০টি পাঠাগারে বই পাঠিয়েছেন ৩০ হাজারের মতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকা। এক পাঠাগারেই দিয়েছেন ৩ হাজার বই।

ময়মনসিংহের রানীগঞ্জ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি রোবায়েত হোসেন বলেন, আমাদের পাঠাগারে ৫ হাজারেরও বেশি বই থাকলেও ৩ হাজারই দিয়েছেন কাজী এমদাদুল হক খোকন। পাশাপাশি দিয়েছেন নগদ অর্থ সহায়তা। তিনি আরও বলেন, তার বই পেয়েই আজ রানীগঞ্জ পাঠাগার একটি সমৃদ্ধশীল পাঠাগারে রূপান্তরিত হয়েছে। স্যারের মতো মানুষ আছেন বলেই আমরা ভরসা পাই সামাজিক কাজ করতে। ঝালকাঠি সদরে অবস্থিত নারায়ণ মিস্ত্রি গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ চন্দ্র হালদার বলেন, এমদাদ ভাইয়ের মতো এমন মানুষ বাংলাদেশে আমি দেখি না। তিনি বাংলাদেশের পাঠাগারগুলো সমৃদ্ধিকরণে যা করছেন, তা আমাদের মনে থাকবে সারা জীবন। আমি চাই তিনি দীর্ঘজীবী হোন।

কুড়িগ্রাম উপজেলার সাতভিটা গ্রন্থনীড়ের প্রতিষ্ঠাতা দিনমজুর জয়নাল আবেদিন বলেন, স্যার আমার পাঠাগারেও দিয়েছেন তিন শতাধিক বই। তিনি বলেন, এমন মানুষ বাংলাদেশে আছে ভাবতে আমার অবাক লাগে। সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের সভাপতি আব্দুস ছাত্তার খান বলেন, নিজ উদ্যোগে দেশের পাঠাগারগুলোতে তিনি বই দিচ্ছেন। পাশাপাশি বুক শেলফ, আলমারি এবং নগদ অর্থ সহায়তা। তিনি যে বইগুলো পাঠান পাঠাগারগুলোতে সবগুলো বইয়েই নামি-দামি প্রকাশনীর এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন। তিনি যে পরিমাণ অনুদান এবং বই দেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রও তেমন সহযোগিতা করে না। 

তিনি আরো বলেন, কাজী এমদাদুল হক খোকন রাষ্ট্রের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আট বছর ধরে তিনি যে কাজটি করছেন সেজন্য তার নাম পাঠাগার আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। চাকরিকালীন অবসরে পাওয়া এককালীন টাকা স্ত্রী এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সম্পদের লভ্যাংশ থেকে তিনি বছরের পর বছর ধরে নিজেকে ভালো কাজে জড়িয়ে রেখেছেন। 

সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের বিভাগীয় সম্মেলনগুলোতেও তিনি উপস্থিত থাকেন বিশেষ অতিথি হিসেবে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত পাঠাগার সম্মেলনেও তিনি উপস্থিত থেকেছেন। প্রত্যেকটি বইবিষয়ক আয়োজনে সঙ্গে করে বই নেন তিনি। উপহার হিসেবে দেন সম্মেলনে আসা পাঠাগারগুলোর প্রতিনিধিদের। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী এমদাদুল হক খোকন বলেন, ‘বাবার দেওয়া উপদেশ অনুযায়ী যাতে সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারি এবং আমি যেন মানুষের কল্যাণে এই কাজগুলো করে যেতে পারি সেটাই সবচেয়ে বড় আশা।’ 

 

 

তারেক