ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

চল্লিশ হাজার গাছ লাগিয়ে পার্ক!

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
চল্লিশ হাজার গাছ লাগিয়ে পার্ক!
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের এক ব্যবসায়ী নিজ শহরে প্রায় ২০ বছর ধরে গাছ লাগিয়েছেন। তাও এক-দুই হাজার নয়। প্রায় ৪০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন এই ব্যক্তি। ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে দুটি রাস্তার মাঝখানে প্রায় ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটার প্রশস্ত জায়গায় সবুজের সমারোহ ঘটিয়েছেন তিনি। জীর্ণ এলাকা থেকে সবুজ পার্ক তৈরি হয়েছে জায়গাটিতে।

সাও পাওলো থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে প্রমিসাও শহরের বাসিন্দা হেলিও দা সিলভা বহু বছর ধরে একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু অবসরগ্রহণের পর তিনি টিকাতিরা নদীর তীরকে সবুজ মরুদ্যানে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তিনি ২০০৩ সালে সেখানে গাছ লাগানো শুরু করেন এবং তার পর থেকে আর থামেননি।

৭৩ বছর বয়সী সিলভা কয়েক দশক আগে শহরটির জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি তার উত্তরসূরিদের জন্য কিছু করে যেতে চেয়েছেন। তার এই মহাকাব্যিক প্রকল্পের প্রথম চার বছরের মধ্যে তিনি একাই এমন একটি এলাকায় ৫ হাজার গাছ রোপণ করেছিলেন, যা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল এবং মাদক কারবারিদের আখড়া ছিল। গাছ লাগানোয় এই জায়গাটি একটি পার্কে পরিণত হয়। 

২০২০ সালের মধ্যে সিলভা ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ২৫,০৪৭টিরও বেশি গাছ রোপণ করেছিলেন। প্রতি ১২টি গাছের মধ্যে তিনি তার সবুজ মরুদ্যানে পাখি এবং প্রাণীদের আকর্ষণ করার আশায় একটি ফলের গাছ রোপণ করেছিলেন। প্রায় ৪৫ ধরনের পাখি এখানে এসেছে। বর্তমানে সেখানে ৪১ হাজারের মতো গাছ আছে। এই কাজে তাকে সাহায্য করেছে তার পরিবার।

অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যবসায়ীর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে তিনি প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ প্রচেষ্টায় প্রায় ৭ হাজার ডলার খরচ করেছেন। কিন্তু তিনি যেভাবে দেখেন- এটি তার, তার পরিবারের এবং সমগ্র সাও পাওলোর জন্য একটি মূল্যবান বিনিয়োগ ছিল। এ ছাড়া তিনি নিজে গাছ লাগিয়ে অনেক টাকা সাশ্রয় করেছেন।

এক সময় বেশির ভাগ মানুষ যে এলাকাকে এড়িয়ে চলতো, সেখানে গাছ লাগানোর জন্য বেশির ভাগ সময় ব্যয় করার জন্য পাগল হিসেবে চিহ্নিত সিলভা এখন স্থানীয় নায়ক হিসেবে সমাদৃত। মাঝে মাঝে তিনি সমমনা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছ থেকে সাহায্য পান। প্রতি রবিবার তিনি আরও গাছ লাগানোর জন্য টিকাতিরা পার্কে আসেন।

 

 

তারেক

ঘুড়ি ওড়ালেই জেল!

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
ঘুড়ি ওড়ালেই জেল!
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।

ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা হলেও, এর নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে অনেক দেশে এটি আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ: বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আইন অনুযায়ী, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ লাইন, বিমান চলাচল এবং মানুষের ওপর ঝুঁকি তৈরি করে এমন ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ। কোনো অনুমোদন ছাড়া ঘুড়ি ওড়ানো এবং বিশেষ ধরনের ধারাল সুতা ব্যবহার আইনত অপরাধ। এ কারণে নির্ধারিত জরিমানা বা প্রয়োজনে কারাদণ্ড হতে পারে।

ভারত: ভারতে ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইন রয়েছে। ঘুড়ি একটি এয়ারক্রাফট হিসেবে বিবেচিত এবং এটি ওড়ানোর জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি ঘুড়ি ওড়ানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটায় বা জনসাধারণের ক্ষতি করেন, তবে তাকে জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে। বিশেষ করে মাঞ্জা (ধাতব বা কাচের গুঁড়া মেশানো সুতা) ব্যবহারে অনেক রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কারণ এটি গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

ভারতীয় বিমান চলাচল আইন ১৯৩৪-এর ১১ ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি ৬০ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ ২০০ ফুটের ওপরে ঘুড়ি ওড়াতে চান, তবে তাকে অসামরিক বিমান চলাচলের ডিরেক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া এই উচ্চতায় একটি ঘুড়ি ওড়ানো হলে জেলে যেতে হতে পারে।

পাকিস্তান: পাকিস্তানে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য কঠোর আইন রয়েছে, বিশেষ করে পাঞ্জাব প্রদেশে। ঘুড়ি ওড়ানো বিশেষত বাসন্তী উৎসবে (বসন্তের সময়) খুব জনপ্রিয় হলেও, দুর্ঘটনা এবং বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘ্ন ঘটানোর কারণে এটি নিষিদ্ধ। পাঞ্জাব প্রহিবিশন অব কাইট ফ্লাইং অর্ডিন্যান্স, ২০০১ অনুযায়ী, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য ছয় মাসের জেল বা জরিমানার বিধান রয়েছে। মাঞ্জা সুতা ব্যবহার করা এখানে সম্পূর্ণ বেআইনি।

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) নিয়ম অনুযায়ী, ঘুড়ি ১৫০ ফুটের বেশি উচ্চতায় ওড়ানো যাবে না। বিমানবন্দর বা সামরিক এলাকাগুলোর কাছে ঘুড়ি ওড়ানো বেআইনি। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা বা মামলা হতে পারে।

যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। দ্য এয়ার নেভিগেশন অর্ডার ২০১৬ অনুযায়ী, বিমানবন্দর বা এয়ারস্পেসের কাছে ৬০ মিটারের বেশি উচ্চতায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করে, তবে তার জরিমানা বা জেলের সাজা হতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় খেলা হলেও, এটি নিয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে। ঘুড়ির কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন বা বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হলে দায়ী ব্যক্তিকে জরিমানা বা জেলে পাঠানো হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই): বিমান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে দুবাইয়ে ঘুড়ি ওড়ানো  সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, তবে তাকে  ৫০ হাজার দিরহাম (প্রায় ১২ লাখ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বিভিন্ন দেশে আইন ও বিধিনিষেধ ভিন্ন হতে পারে। তবে এর মূল উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বিমান চলাচল নিশ্চিত করা। তাই যেকোনো দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর আগে স্থানীয় আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

তারেক

একাই গড়েছেন ১৩৬০ একর বনাঞ্চল

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
একাই গড়েছেন ১৩৬০ একর বনাঞ্চল
ছবি: সংগৃহীত

গাছ মানুষের বন্ধু। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তা আমরা গাছ থেকে পেয়ে থাকি। শুধু অক্সিজেন নয়, গাছ নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে যত বেশি গাছ রোপণ করা হবে, তত বেশি আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারব।

বলা হয়, প্রকৃতি যা নেয় ফিরিয়ে দেয় তার শতগুণ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সে কথা ভুলে গিয়ে অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতি। তাই প্রকৃতিও নিজের প্রতিশোধ নিজেই নিয়ে নিচ্ছে। যে কারণে এখন প্রতিবছরই লেগে রয়েছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভূমিকম্পের মতো নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

একটা গাছ থেকে মানুষের যে পরিমাণ উপকার হয়, কেটে ফেললে ক্ষতি হয় আরও বেশি। কিন্তু সব মানুষ তো আর সমান হয় না। তাই আজকের এই অসচেতন সমাজে দাঁড়িয়েও সচেতনতার বার্তা দিয়ে চলেছেন ভারতের অরণ্যমানব যাদব মোলাই পায়েং। শুনতে অবাক লাগলেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় একাই তিনি তৈরি করেছেন একটা আস্ত বন। যদিও সেই কাজ সহজ ছিল না মোটেই। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুচরে ১৩৬০ একর জমিজুড়ে তিনি তৈরি করেছেন এই বনাঞ্চল।

আসামের জোরহাট জেলার কোকিলামুখ গ্রামের কাছে ব্রহ্মপুত্রের সেই বনকে বলা হয় ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’। এই বন সৃজনের কর্মকাণ্ডই যাদবকে এনে দিয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি। ২০১৫ সালে যাদবকে বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ প্রদান করেছে ভারত সরকার। ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে ‘Forest Man of India’ শিরোপা দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গাছের প্রতি তার ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যচিত্র।

দক্ষিণ ভারতে যাদবকে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রও বানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে মেক্সিকো এবং দুবাই থেকে একই রকম বনাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যও ডাক পেয়েছেন তিনি। ১৯৫৯ সালে আসামের জোরহাট জেলার কোকিলামুখ গ্রামে রাজ্যের মিসিং জনগোষ্ঠীর এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই যাদব মোলাই পায়েং। আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে এই বনভূমি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। 

তার তৈরি সেই জঙ্গলে এখন হরেকরকম গাছের সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস। এলাকায় বন্যা হলে এই বনেই নাকি আশ্রয় নেয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতি কিংবা বিভিন্ন প্রজাতির সাপও। নিজের বন সম্পর্কে একবার এক সাক্ষাৎকারে যাদব বলেছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গাছ পাখি জীবজন্তু খুব ভালো লাগত। ধীরে ধীরে বুঝলাম, গাছ কাটলে শুধু গাছের ক্ষতি হয় না- আশপাশের পাখি বন্যপ্রাণীরাও বিপদে পড়ে।’

যাদবের বয়স যখন ১৯ বছর, সে সময় তারা থাকতেন ব্রহ্মপুত্রের পার্শ্ববর্তী এক দ্বীপে। কিন্তু ভূমিক্ষয়ের কারণে সেই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হলেও মাঝে মধ্যেই নিজেদের পুরোনো জায়গা দেখে আসতেন যাদব। এরই মধ্যে এক সময়  ভয়ংকর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসামের বিস্তীর্ণ এলাকা। তাতে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ওই দ্বীপ। এই অবস্থা দেখে সে সময় তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেন দ্বীপের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কেউ কথা না শোনায় তরুণ যাদব একাই প্রথমে মাত্র ২০টি বাঁশের বীজ পুঁতে শুরু করেছিলেন বৃক্ষরোপণের কাজ। যা আজ পরিণত হয়েছে বিশাল জঙ্গলে।

গাছ আমাদের অনেক উপকার করে। কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে, ছায়া দেয়, ফল দেয়। সেই ফল থেকে আবার চারাবীজ হয়। এভাবে একটা গাছের মাধ্যমে অনেক গাছের জন্ম হয়। শুধু তাই নয়, গাছপালার ফুল-ফল ও ছায়া আমাদের মনে অনাবিল আনন্দও সৃষ্টি করে। তাই আমাদের প্রত্যেককেই এক একজন যাদব হয়ে উঠা প্রয়োজন। যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে সুস্থ ও সবলভাবে।

 

তারেক

পাঠকের লেখা: অন্ধকার

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
পাঠকের লেখা: অন্ধকার

আনিশার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলে। বাড়ি থেকে কল দিলেই আব্বু-আম্মু বারবার বলবে রমজানের আগেই বাড়িতে চলে যেতে। কিন্তু আনিশার যেতে ইচ্ছে করে না। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে যাওয়া মানেই চাকরি নিয়ে সবার নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। 

এখন পড়াশোনার চাপ নেই। তাই ও ঠিক করল  কয়েকটা দিন হলে কাটিয়ে এরপর যাবে বাড়ি। কিন্তু বুধবার বিকেলেই মায়ের কল এল, ‘কবে আসবি বাড়িতে, তোর বাবার শরীরটা আজ ভালো নেই।’

যদিও কয়েকদিন পরে যাবে ভেবেছিল, বন্ধুদের সঙ্গে একটু সময় নিয়ে টিএসসিতে বের হয়েছিল। কিন্তু বাবার অসুস্থতার কথা শুনে মনটা অস্থির হয়ে গেল। তানিয়া আর রাফির থেকে বিদায় নিয়ে উঠল। এর মধ্যেই ‘মৌ পরিবহনে’ কল দিয়ে রাতের একটা ফিমেল টিকিট কনফার্ম করল। এখন যে দিনকাল পড়েছে, পাশে মেয়ে মানুষ নিশ্চিত হয়ে টিকিট কনফার্ম করল।

হলে ফিরতে ফিরতে ৭টা বেজে গেল। বাস সাড়ে ১০টায়। দ্রুত হালকা-পাতলা কাপড় নিয়ে ডাইনিংয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিল। এর মধ্যে রাফির কল এল। 

- তুই এত রাতে একা যেতে পারবি? আমি যাব তোকে দিতে?

- নারে, লাগবে না। চিন্তা করিস না। তানিয়াকেও বলে দিস আমি সিএনজি নিয়ে চলে যাব। হালকা একটা ছোট ব্যাগ নেব শুধু। বের হব সাড়ে ৯টার দিকে।

- পৌঁছে কল দিস। 

- আচ্ছা।

রাফির সঙ্গে কথা শেষ করেই বাবার খোঁজ নিতে বাড়িতে কল দিল। মা জানালেন এখন একটু সুস্থ আছেন। পাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 

একটু চিন্তামুক্ত হয়ে রেডি হওয়া শুরু করল। টিউশনির বাসায় জানিয়ে দিল। বাবার অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিল ঈদ পর্যন্ত।

বাস ছাড়ল রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। ঘুম যখন ভাঙল তখন বাস দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে বাইরে ভালো করে দেখা যায় না। সিটে বসেই ও জানালা লাগিয়ে দিয়েছিল। বাসের সামনে গুটিকয়েক অবয়ব দেখা যাচ্ছে আবছা। অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা না খুললে সোজা গুলি চালিয়ে দেবে।

বাধ্য হয়ে বাসের কন্ডাক্টর দরজা খুলে দিল। যাত্রীদের যার কাছে যা পেল তাই কেড়ে নিল অস্ত্রের মুখে। টাকা-পয়সা, মোবাইল। নতুন বউয়ের হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি, গলার চেইন। জানের ভয়ে শব্দ করা ছাড়াই সবাই বের করে দিল সবকিছু। 

হঠাৎ ডাকাতদলে থাকা কনিষ্ঠ ছেলের চোখ গেল আনিশার দিকে। টিকিট দেরিতে পাওয়ায় আজ জানালার পাশে সিট পায়নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অভুক্ত শকুনের মতো আনিশার শরীরে হাত বোলাতে লাগল বারবার। চিৎকার করতে লাগল আনিশা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু ষাঁড়ের মতো দুটি পেশিবহুল হাত তাকে যুদ্ধ ময়দানের মতো বিধ্বস্ত করে দিয়ে গেল। 

কিরামান-কাতিবিন কী ছিল সেখানে পাপ আর পুণ্য লেখার জন্য? কার বাহুতে তবে পাপ লিখলেন আর কার বাহুতে পুণ্য?

ওদিকে আনিশার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় ডাকাতদলের আরেক লোক নতুন বধূর গহনা খুলে নিয়েও ক্ষান্ত হলো না। টেনেহিঁচড়ে তাকে নিয়ে গেল বাসের একদম শেষের সিটে। পাশে থাকা স্বামী বাধা দিতে গেলে তাকে রামদা উঁচিয়ে কল্লা কাটার ভয় দেখানো হলো। চারপাশে কেবলই শোনা গেল দুটি শব্দ ‘আমাকে বাঁচাও’। এরপর সবই নিস্তব্ধ। 

৪৪ সিটের বাস। ৪০ জনই পুরুষ যাত্রী। বন্দুকের সামনে সবারই মাথা নিচু। তারা শুনলেন গোঙানির আওয়াজ। তারা শুনলেন ধস্তাধস্তির শব্দ। কিন্তু কারও চোখ তুলে তাকানোর অনুমতি নেই। এতগুলো পুরুষের সম্মিলিত শক্তি জ্বলে উঠতে পারল না! কয়েকটি চিৎকার পারেনি কারও অন্তরে প্রতিবাদের আগুন জ্বালাতে! 

অন্ধকার কেটে গেলে সকালেই বড় করে দৈনিক পত্রিকায় ভেসে উঠল আনিশা আর গৃহবধূর ছবি। ধর্ষকদের কোনো ছবি নেই সেখানে। ধর্ষকদের কোনো ছবি থাকে না। 
তারা আসে অন্ধকারের রূপ নিয়ে। যেখানে একটা নতুন ভোর আসার কথা ছিল আনিশার জীবনে, সেখানে এল আজন্ম অন্ধকার। এই অন্ধকার কি কখনো কেটে যাবে? 

 

আফিয়া সুলতানা আশা 
উলিপুর, কুড়িগ্রাম

 

তারেক

পাখির বাসা যেন প্রকৃতির বিস্ময়

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
পাখির বাসা যেন প্রকৃতির বিস্ময়
ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতি বরাবরই আমাদের আশ্চর্য করার ক্ষমতা রাখে, তা আমরা নানা সময়ে বুঝতে পারি। তবে আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে সোশ্যাবল উইভার পাখির তৈরি বিশাল আকৃতির বাসা এক ভিন্নমাত্রার বিস্ময় সৃষ্টি করে।

পাখির বাসা বলতে আমরা মূলত বুঝি অল্প পরিসরে খড়কুটো দিয়ে তৈরি ছোট্ট খোঁপ। কিন্তু সোশ্যাবল উইভার পাখিরা এই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এই পাখিরা দলবদ্ধভাবে এমন বাসা তৈরি করে যা আকারে বিশাল। 

প্রথমেই জানা যাক এই উইভার পাখির পরিচয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Philetairus socius. একটি ছোট, বাদামি রঙের পাখি। যা মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া এবং বতসোয়ানার কালাহারি অঞ্চলে দেখা যায়। এদের দৈহিক আকার খুব সাধারণ– প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং গড়পড়তা ওজন ২৫-৩০ গ্রাম। তবে এদের আসল বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে তাদের আচরণে ও গোষ্ঠীগত জীবনধারায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, এই পাখিরা অত্যন্ত সামাজিক এবং এদের জীবনযাপন ও বাসা নির্মাণের পদ্ধতিও সমাজভিত্তিক।

‘’সোশ্যাবল" শব্দটিও এসেছে তাদের দলবদ্ধ থাকার প্রবণতা থেকেই। এরা একসঙ্গে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সোশ্যাবল উইভার পাখির বাসা দেখতে অনেকটা ছাউনি বা খড়ের তৈরি বিশাল ছাদের মতো, যার নিচে অসংখ্য ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ থাকে। একটি বাসার ওজন কয়েক শ কিলোগ্রাম হতে পারে এবং এটি ৭-১০ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। এই বাসাগুলো অনেকগুলো ছোট ছোট ঘরের সমন্বয়ে গঠিত, যেখানে প্রতিটি ঘর একেকটি  জোড়া পাখির জন্য নির্ধারিত থাকে। প্রতিটি বাসা গড়ে তোলা হয় শুকনো ঘাস, ডালপালা এবং গাছের ছাল দিয়ে।  সোশ্যাবল উইভার পাখির একটা বাসা বহু বছর টিকে থাকে। এটি কেবল একটি বসবাসের স্থান নয়, বরং এক ধরনের প্রজন্মান্তরীয় বসতিও হয়ে ওঠে। এক প্রজন্মের পর পরবর্তী প্রজন্মও সেই বাসায় থাকে এবং তার সঙ্গে নতুন অংশ যুক্ত করে। 

এই বাসাগুলো সাধারণত প্রাচীন বড় গাছের ডালে কিংবা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে হয়ে থাকে। ফলে শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে নিরাপদ থাকা যায়। একটি বাসায় শতাধিক পৃথক প্রকোষ্ঠ থাকে এবং এক সঙ্গে প্রায় ২০০-৩০০টি পাখি এতে বাস করে। বাসার নিচের দিকে থাকে অসংখ্য প্রবেশপথ, যেগুলো সোজা ভিতরের প্রকোষ্ঠগুলোতে পৌঁছে দেয়। এই প্রবেশপথগুলো সাধারণত সরু এবং গোলাকৃতির, যাতে শত্রু বা শিকারি সহজে ঢুকতে না পারে। বাসার ভিতরের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ আলাদা হলেও, বাইরে থেকে এটি সমন্বিত ও একীভূত গঠন দেখায়। 

কালাহারি মরুভূমিতে দিনে প্রচণ্ড গরম এবং রাতে তীব্র ঠাণ্ডা পড়ে। এই কঠিন আবহাওয়ায় টিকে থাকতে হলে বাসাকে হতে হয় জলবায়ু-সহনশীল। সোশ্যাবল উইভারদের বাসাগুলো এই দিক থেকে অসাধারণ। বাসার গঠন এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, দিনের তাপ ভিতরে প্রবেশ করে না এবং রাতে ঠাণ্ডা বাতাস ভিতরে আসতে পারে না। এর ফলে বাসার ভিতরের তাপমাত্রা প্রায় সারা দিন ধরে স্থিতিশীল থাকে। এটি প্রাকৃতিক তাপ নিরোধক ব্যবস্থার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

এই পাখিদের আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় হলো এদের সামাজিক আচরণ ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার ব্যাপার। সোশ্যাবল উইভার পাখিদের মধ্যে অসাধারণ সামাজিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তারা শুধু একসঙ্গে বাসা বানায় না, বরং বাসার রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, নতুন প্রকোষ্ঠ নির্মাণ, খাদ্য খোঁজা এবং বাচ্চাদের লালন-পালনে একে অপরকে সাহায্য করে। বাসার পুরাতন অংশগুলো সময়ের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন করে তা মেরামত করা হয় দলগতভাবে। কোনো একটি জোড়া নতুন বাসিন্দা হলে তারা পুরোনো বাসাসংলগ্ন একটি নতুন প্রকোষ্ঠ তৈরি করে সংযুক্ত করে ফেলে। এভাবে একটি বাসা বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে বিশাল আকার ধারণ করে এবং এক ধরনের ‘পাখিদের শহর’ তৈরি হয়। 

এতকিছুর পরও বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়; যেমন- অনেক সময় কিছু শিকারি পাখি সুযোগ বুঝে বাসায় ঢুকে ডিম বা ছানা খেয়ে ফেলে। তখন সোশ্যাবল উইভাররা দলবদ্ধভাবে এসব বিপদের মোকাবিলা করে এবং পরস্পরকে সতর্ক করে দেয়। সোশ্যাবল উইভার পাখির বাসা শুধু একটি আশ্রয়ের স্থান নয়, এটি একটি সামাজিক 
ব্যবস্থা, একটি প্রকৃতিক প্রকৌশল এবং এক নিখুঁত স্থাপত্য কাঠামো। 

কালাহারি মরুভূমির এই পাখিরা প্রমাণ করে, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণী তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে এবং এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারে-  যা শুধু তাদেরই নয়, মানুুষদেরও অনুপ্রেরণা দেয়।


তারেক

লুকিয়ে রাখা জাপান সম্রাটের তিন সম্পদ

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
লুকিয়ে রাখা জাপান সম্রাটের তিন সম্পদ
জাপান সম্রাটের অতি প্রাচীন তিনটি রাজকীয় সম্পদ হচ্ছে তলোয়ার, মূল্যবান পাথর এবং একটি আয়না। ছবি: সংগৃহীত

জাপান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত।

ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার দ্বীপ নিয়ে জাপান গঠিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ ‘সূর্য উৎস’। জাপানকে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে অভিহিত করা হয়।

নারুহিতো জাপানের বর্তমান সম্রাট। তিনি ১৯৬০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সাবেক সম্রাট আকিহিতো স্বাস্থ্যগত কারণে সিংহাসন ত্যাগ করার পর ২০১৯ সালের ১ মে  তিনি সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। সে বছরই ২২ অক্টোবর এক জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জাপানের সিংহাসনে তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়।

জাপানের সম্রাটের অতি প্রাচীন তিনটি রাজকীয় সম্পদ আছে, যা রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক। এ তিন সম্পদ কাউকে দেখতে দেওয়া হয় না। এগুলো হচ্ছে একটি আয়না, একটি তলোয়ার এবং একটি মূল্যবান পাথর।

রহস্য ও গোপনীয়তা

এই তিনটি বস্তু কীভাবে জাপানের সম্রাটের রাজকীয় ঐশ্বর্যের মর্যাদা পেল- সে ইতিহাস কঠোর গোপনীয়তায় ঘেরা।
শিন্টো ধর্মমতে, অতীত এবং মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী অশরীরী আত্মার সঙ্গে সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিনটি রাজকীয় সম্পদ এরই একটা অংশ।
মনে করা হয়, জাপানের সম্রাটরা ঈশ্বরের বংশধর এবং দেবতারাই এগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছেন। এগুলো এতই পবিত্র যে, জাপানের বিভিন্ন মন্দিরে সর্বদা লোকচক্ষুর অন্তরালে এসব রাখা হয়। এমনকি জাপানের সম্রাটও কখনো এগুলো দেখেননি।

ইয়াতা নো কাগামি: পবিত্র আয়না

মনে করা হয়, এই আয়না ১ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো এবং এটি রাখা হয়েছে ইসে জিঙ্গু মন্দিরে। সম্রাটের রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মূল্যবান।
জাপানি উপকথায় বলা হয়, আয়নার স্বর্গীয় ক্ষমতা আছে এবং তা সত্য প্রকাশ করতে পারে।

জাপানের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী ইয়াতা নো কাগামি নামের এই আয়না তৈরি করেছিলেন দেবতা ইশিকোরিদোম। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সূর্যের দেবী আমাতেরাসুর নাম।

কুসানাগি নোৎসুরুগি: পবিত্র তলোয়ার

এর অর্থ হচ্ছে ‘ঘাস কাটা তলোয়ার’ এবং সম্ভবত এটা রাখা আছে নাগোইয়ার আৎসুতা মন্দিরে। একে ঘিরে কাহিনি রয়েছে যে, আটটি মাথাওয়ালা এক মানুষখেকো সাপের লেজে এই তলোয়ার ছিল।

সমুদ্র ও ঝড়ের দেবতা সুসানু ওই সাপকে কৌশলে মদ্যপান করিয়ে মাতাল করে তাকে হত্যা করেন এবং তার লেজ কেটে ভেতর থেকে ওই তরবারি বের করেন। গুজব রয়েছে—আসল তলোয়ারটি দ্বাদশ শতাব্দীতে এক যুদ্ধের সময় সমুদ্রে পড়ে হারিয়ে গেছে।

ইতিহাসবিদদের মতে, এখন যেটি আছে তা নকল। তারও একটি নকল রাজার অভিষেকে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৯ সালে সম্রাট আকিহিতোকে একটি বাক্সে করে এই তলোয়ার দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়, কিন্তু তা কখনো খোলা হয়নি।

ইয়াসাকানি নো মাগাতামা: পবিত্র রত্ন

মাগাতামা হচ্ছে এক রকম খোদাইয়ের কাজ করা ছিদ্রবিশিষ্ট পাথর- যা দিয়ে মালা বানানো যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সাল থেকে জাপানে এরকম পাথর তৈরি হতো। বলা হয়, ইয়াসাকানি নো মাগাতামা হচ্ছে এমন একটি নেকলেসের অংশ যা দেবী আমে-নো-উজুমের জন্য বানিয়েছিলেন তামানুয়া-নো-মিকোতো।

বলা হয়, এটি সবুজ জেড পাথরের তৈরি এবং রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই একমাত্র- যার আসলটিই এখনো টিকে আছে। এটি রাখা আছে টোকিওর রাজকীয় প্রাসাদে।
জাপানের সম্রাটরা আমাতেরাসুর বংশধর বলে মানা হলেও, তারা এখন নিজেদের দেবতা বলে দাবি করেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের সম্রাট হিরোহিতো তার দেবতার মর্যাদা ত্যাগ করেছিলেন।

 

তারেক