
ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। মুসলমানদের বড় দুই উৎসব হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। এর মধ্যে ঈদুল ফিতর বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হয় সারা বিশ্বে।
পৃথিবীর নানা দেশে এই ঈদের ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশে যেমন খাবার-দাবার, নিজস্ব রীতিসহ নানা ঐতিহ্য রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন দেশে ঈদ পালিত হয় ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে। কয়েকটি দেশে ঈদুল ফিতর পালনের চিত্র তুলে ধরেছেন টি এইচ মাহির
ইন্দোনেশিয়ার ঈদের কেক
এশিয়ার অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ উদযাপন করা হয় বেশ জাঁকজমকভাবে। সে দেশে ঈদুল ফিতরকে বলা হয় লেবারান। ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে এক ধরনের বিশেষ কেক দেখা যায়। যা সে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। কুয়ে ল্যাপিস লেজিট বা স্পেক্কোয়েক নামে পরিচিত এক ধরনের স্তরযুক্ত কেক পরিবেশন করা হয় ঈদের খাবারে। কেকটিতে এলাচ, লবঙ্গ এবং দারুচিনিসহ আরও বিভিন্ন মসলা থাকে, যা এটিকে সুন্দর স্বাদ এবং সুগন্ধ দেয়। ইন্দোনেশিয়ার লোকেরা ঈদে এই কেক উপভোগ করে। এই স্তরযুক্ত কেক তৈরিতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। কারণ প্রতিটি কেকের স্তর আলাদাভাবে বানানো হয় এবং তার পর কেকের ব্যাটারের একটি নতুন স্তর ঢেলে আরেকটি স্তর তৈরি করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই কেক ঈদ উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে।
তুর্কি চিনির উৎসব
তুরস্কে ঈদকে সেকের বায়রামি বলা হয়। যার অর্থ চিনির উৎসব। কেননা তুরস্কে ঈদে মিষ্টির ছড়াছড়ি দেখা যায়। ঈদের জামাত শেষে সবাই পারিবারিকভাবে মিলিত হয়। একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে। ছোটরা পাড়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানায় এবং ঈদ সালামি ও মিষ্টি উপহার হিসেবে গ্রহণ করে। তুরস্কে বাকলাভা, লোকুম নামে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ঈদে পরিবেশন করা হয়। বাকলাভা ময়দার পাতলা স্তর দিয়ে তৈরি মিষ্টি, যা কাঠ বাদাম দিয়ে ভরা এবং সিরাপ বা মধু দিয়ে তৈরি। লোকুম গোলাপজল, লেবুর মতো উপাদান সঙ্গে বাদাম, গুঁড়া চিনিসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি। ঈদে মিষ্টির ব্যবহার বেশি হওয়ায় এই উৎসবকে তুরস্কে চিনির ভোজ বা চিনির উৎসব বলা হয়। মিষ্টি জাতীয় খাবার এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তুর্কিরা এই উৎসবে তিন দিনের ছুটি কাটায়।
মালয়েশিয়ায় বালিক কাম্পুং
মালয়েশিয়ায় ঈদে এক রীতি আছে। অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। ঈদ এলেই সবাই গ্রামের বাড়ি ফিরে যায়। যা মালেশিয়ায় বালিক কাম্পুং নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘গ্রামে ফিরে যাওয়া’। সেখানে শহুরে বাসিন্দারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য তাদের নিজ শহরে ফিরে যান। গ্রামে ফিরে সেখানে পরিবারগুলো বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী এবং এমনকি অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে। উৎসব করে খাবার-দাবারের আয়োজন করে। তাদের এই ঐতিহ্য জাতীয় ঐক্যকে ধারণ করে। ৮০ এবং ৯০-এর দশকের দ্রুত শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে, মালয়দের একটি নতুন প্রজন্ম এবং অন্য প্রধান শহরগুলোতে সবুজ চারণভূমির সন্ধান করছিল। তবে মালয়রা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না। তাই মালয়রা বিভিন্ন উৎসবে তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার রীতি চালু করে।
সোমালিয়ার জালও এবং বুসকুট
আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় ঈদ উৎসব পালিত হয় বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। সে দেশেও ঈদের খাবারে প্রধান আকর্ষণ থাকে মিষ্টি জাতীয় খাবার। সোমালিয়ায় ঈদের খাবারে অন্যতম হলো জালও নামে এক ধরনের মিষ্টান্ন এবং বুসকুট। এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সঙ্গে ঈদের ভোজসভায় পরিবেশন করা হয়। ঈদের আগের দিন রাতে বানানো হয় এই খাবার। চিনি, কর্নস্টার্চ, এলাচ, জায়ফল এবং ঘি দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় বেনাদিরি স্ন্যাক মিষ্টান্ন, কখনো কখনো চিনাবাদাম দিয়ে তৈরি করা হয় সোমালি খাবার জালও। ঈদ উদযাপনে সোমালিরা নারকেল, বাদাম ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করে। মিষ্টি খাবার ছাড়াও সোমালি সাম্বুসা নামে এক ধরনের খাবার পরিবেশন করে। তবে মিষ্টান্ন জালও ও বুসকুট ঈদে তাদের জনপ্রিয় খাবার।
মিসরের কাহক
আরব দেশ মিসরে ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো কাহক। যা ঐতিহ্যবাহী চিনি-গুঁড়া কুকিজ যা বাদাম বা খেজুর দিয়ে ভরা হয়। এটি গুঁড়া চিনি দিয়ে ঢাকা থাকে এবং এতে মধু, বাদাম এবং ঘি লোকুম, আখরোট, পেস্তা বা খেজুরসহ নানা উপাদান থাকে। ঈদের ভোজে এই খাবার প্রস্তুত করা হয়। তা ছাড়া শহরের বাণিজ্যিক রেস্তোরাঁ এবং বেকারিগুলোতেও দেখা মিলে এই খাবারের। এটি দেখতে অনেকটা বিস্কুটের মতো। যার ওপর বিভিন্ন নকশা থাকে।
ইন্দোনেশিয়া, সুদানসহ বিভিন্ন দেশে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরোনো এই খাবার। ঈদে এই খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদের ভোজে এই খাবার অপরিহার্য। ঈদের দিনে মিসরীয়রা পার্কে ঘুরতে যায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে একত্রিত হয়। শিশুরা সালামি পায় আর ঘুরে বেড়ায়।
তারেক