ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

দেশে দেশে ঈদ উৎসব

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ এএম
দেশে দেশে ঈদ উৎসব
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। মুসলমানদের বড় দুই উৎসব হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। এর মধ্যে ঈদুল ফিতর বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হয় সারা বিশ্বে।

পৃথিবীর নানা দেশে এই ঈদের ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশে যেমন খাবার-দাবার, নিজস্ব রীতিসহ নানা ঐতিহ্য রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন দেশে ঈদ পালিত হয় ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে। কয়েকটি দেশে ঈদুল ফিতর পালনের চিত্র তুলে ধরেছেন টি এইচ মাহির

ইন্দোনেশিয়ার ঈদের কেক

এশিয়ার অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ উদযাপন করা হয় বেশ জাঁকজমকভাবে। সে দেশে ঈদুল ফিতরকে বলা হয় লেবারান। ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে এক ধরনের বিশেষ কেক দেখা যায়। যা সে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। কুয়ে ল্যাপিস লেজিট বা স্পেক্কোয়েক নামে পরিচিত এক ধরনের স্তরযুক্ত কেক পরিবেশন করা হয় ঈদের খাবারে। কেকটিতে এলাচ, লবঙ্গ এবং দারুচিনিসহ আরও বিভিন্ন মসলা থাকে, যা এটিকে সুন্দর স্বাদ এবং সুগন্ধ দেয়। ইন্দোনেশিয়ার লোকেরা ঈদে এই কেক উপভোগ করে। এই স্তরযুক্ত কেক তৈরিতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। কারণ প্রতিটি কেকের স্তর আলাদাভাবে বানানো হয় এবং তার পর কেকের ব্যাটারের একটি নতুন স্তর ঢেলে আরেকটি স্তর তৈরি করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই কেক ঈদ উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে।

তুর্কি চিনির উৎসব

তুরস্কে ঈদকে সেকের বায়রামি বলা হয়। যার অর্থ চিনির উৎসব। কেননা তুরস্কে ঈদে মিষ্টির ছড়াছড়ি দেখা যায়। ঈদের জামাত শেষে সবাই পারিবারিকভাবে মিলিত হয়। একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে। ছোটরা পাড়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানায় এবং ঈদ সালামি ও মিষ্টি উপহার হিসেবে গ্রহণ করে। তুরস্কে বাকলাভা, লোকুম নামে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ঈদে পরিবেশন করা হয়। বাকলাভা ময়দার পাতলা স্তর দিয়ে তৈরি মিষ্টি, যা কাঠ বাদাম দিয়ে ভরা এবং সিরাপ বা মধু দিয়ে তৈরি। লোকুম গোলাপজল, লেবুর মতো উপাদান সঙ্গে বাদাম, গুঁড়া চিনিসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি। ঈদে মিষ্টির ব্যবহার বেশি হওয়ায় এই উৎসবকে তুরস্কে চিনির ভোজ বা চিনির উৎসব বলা হয়। মিষ্টি জাতীয় খাবার এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তুর্কিরা এই উৎসবে তিন দিনের ছুটি কাটায়।

মালয়েশিয়ায় বালিক কাম্পুং

মালয়েশিয়ায় ঈদে এক রীতি আছে। অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। ঈদ এলেই সবাই গ্রামের বাড়ি ফিরে যায়। যা মালেশিয়ায় বালিক কাম্পুং নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘গ্রামে ফিরে যাওয়া’। সেখানে শহুরে বাসিন্দারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য তাদের নিজ শহরে ফিরে যান। গ্রামে ফিরে সেখানে পরিবারগুলো বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী এবং এমনকি অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে। উৎসব করে খাবার-দাবারের আয়োজন করে। তাদের এই ঐতিহ্য জাতীয় ঐক্যকে ধারণ করে। ৮০ এবং ৯০-এর দশকের দ্রুত শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে, মালয়দের একটি নতুন প্রজন্ম এবং অন্য প্রধান শহরগুলোতে সবুজ চারণভূমির সন্ধান করছিল। তবে মালয়রা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না। তাই মালয়রা বিভিন্ন উৎসবে তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার রীতি চালু করে।

সোমালিয়ার জালও এবং বুসকুট

আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় ঈদ উৎসব পালিত হয় বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। সে দেশেও ঈদের খাবারে প্রধান আকর্ষণ থাকে মিষ্টি জাতীয় খাবার। সোমালিয়ায় ঈদের খাবারে অন্যতম হলো জালও নামে এক ধরনের মিষ্টান্ন এবং বুসকুট। এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সঙ্গে ঈদের ভোজসভায় পরিবেশন করা হয়। ঈদের আগের দিন রাতে বানানো হয় এই খাবার। চিনি, কর্নস্টার্চ, এলাচ, জায়ফল এবং ঘি দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় বেনাদিরি স্ন্যাক মিষ্টান্ন, কখনো কখনো চিনাবাদাম দিয়ে তৈরি করা হয় সোমালি খাবার জালও। ঈদ উদযাপনে সোমালিরা নারকেল, বাদাম ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করে। মিষ্টি খাবার ছাড়াও সোমালি সাম্বুসা নামে এক ধরনের খাবার পরিবেশন করে। তবে মিষ্টান্ন জালও ও বুসকুট ঈদে তাদের জনপ্রিয় খাবার।

মিসরের কাহক

আরব দেশ মিসরে ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো কাহক। যা ঐতিহ্যবাহী চিনি-গুঁড়া কুকিজ যা বাদাম বা খেজুর দিয়ে ভরা হয়। এটি গুঁড়া চিনি দিয়ে ঢাকা থাকে এবং এতে মধু, বাদাম এবং ঘি লোকুম, আখরোট, পেস্তা বা খেজুরসহ নানা উপাদান থাকে। ঈদের ভোজে এই খাবার প্রস্তুত করা হয়। তা ছাড়া শহরের বাণিজ্যিক রেস্তোরাঁ এবং বেকারিগুলোতেও দেখা মিলে এই খাবারের। এটি দেখতে অনেকটা বিস্কুটের মতো। যার ওপর বিভিন্ন নকশা থাকে। 

ইন্দোনেশিয়া, সুদানসহ বিভিন্ন দেশে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরোনো এই খাবার। ঈদে এই খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদের ভোজে এই খাবার অপরিহার্য। ঈদের দিনে মিসরীয়রা পার্কে ঘুরতে যায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে একত্রিত হয়। শিশুরা সালামি পায় আর ঘুরে বেড়ায়।

 

তারেক

পাঠকের লেখা : বাবা, ফিরে এসে একটিবার বলো- ‘ভয় পাস না’

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১২:২০ পিএম
পাঠকের লেখা : বাবা, ফিরে এসে একটিবার বলো- ‘ভয় পাস না’

ছোটবেলা থেকেই বাবার সান্নিধ্য তেমন একটা মেলেনি। জীবিকার তাগিদে বাবা আমৃত্যু ছিলেন দূর প্রবাসে। তবে কিছু মুহূর্ত তার সঙ্গে কাটানো, কিছু স্মৃতি আজও বুকের মাঝে আগলে রেখেছি। 

হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি হকদার কে?’

তিনি তিনবার মায়ের কথা বলার পর চতুর্থবার বলেছিলেন, ‘তোমার বাবা।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৭১; সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)

এই উপদেশ না জানলে হয়তো জীবনের কোনো কোনো জায়গায় আমি মায়ের থেকে বাবাকেই বেশি এগিয়ে রাখতাম। যাইহোক এবার কিছু স্মৃতি হাতড়াই।
ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছি, বাবা আমার গালের বদলে পায়ে বেশি চুমু দিতেন। কারণ হিসেবে বলতেন তার দাড়ি বা গোঁফের খোঁচা যেন আমার কোমল গালে আঘাত না করে তাই তিনি এই পন্থা অবলম্বন করছেন। 

তখন বাবা নারায়ণগঞ্জের আদনান টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। বাসা এবং মিল কাছাকাছি থাকায় তিনি প্রায়ই কাজের ফাঁকে জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখতেন, কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আবার কাজে ফিরে যেতেন।

পরে আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি পাড়ি জমান সৌদি আরবে। আমি তখন মাত্র দেড়-দুই বছরের শিশু। স্পষ্টভাবে মনে নেই সেই সময়ের কথা, তবে বাবার প্রথমবার দেশে ফিরে আসার কিছু মুহূর্ত মনে আছে। একবার আমরা মংলায় ফুফুর বাসায় বেড়াতে যাই, বাসে আমার ছোট ভাইয়ের প্রিয় জুতা হারিয়ে গেলে বাবা ক্লান্ত শরীর নিয়েও বাস ও জুতা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। এক সাধারণ ঘটনা, কিন্তু বাবার নিঃশব্দ ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে এটুকুই যথেষ্ট। 

২০১৮ সালে বাবা শেষবারের মতো দেশে এসেছিলেন মাত্র তিন মাসের ছুটিতে। আমি তখন ডিপ্লোমার প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক সন্ধ্যায় নারিকেলের শুকনো পাতাকে সাপ ভেবে আঁতকে উঠে বাবা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছিলেন। শেষবারের মতো বাবার শক্ত হাতের স্পর্শ অনুভব করেছিলাম সেদিনই। মনে হয়েছিল, বাবা যেন আমার মধ্যে নির্ভরতা দেখছেন।

ছুটির শেষের দিকে বাবাকে অনুরোধ করেছিলাম, যেন আর প্রবাসে ফিরে না যান। কিন্তু বাবা বললেন, ‘এবার যাই, পরের বার এসে থেকে যাব।’
বিমানবন্দরে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলেছিলাম, ‘না গেলে হয় না?’

বাবা একই কথা বলেছিলেন, ‘পরেরবার থেকে যাব।’

জানি না কেন, তখনই মনে হয়েছিল বাবার সঙ্গে হয়তো এটাই শেষ দেখা। 

২০১৯ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাৎ একদিন মা ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকলেন। জানতে পারলাম, বাবা অসুস্থ। বাবার সঙ্গে কথা হলো। বললেন, ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি, পরে কথা বলি। কিন্তু সেই পরে আর কখনো আসেনি।

পরে জানলাম, তিনি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে কোমায় চলে গেছেন। দুদিনের ব্যবধানে খবর এল বাবা আর নেই।

আমার বা আমাদের ওপর বাবার যে অধিকার ছিল তা পূরণ করার সুযোগ না দিয়ে তিনি আমাদের দায়িত্বমুক্ত করলেন। আমরা হারালাম  ছায়া দেওয়া বাবা নামক বটবৃক্ষ।

বাবা সৌদির মাটি ভালোবাসতেন, মাকে প্রায়ই বলতেন সৌদিতে তার মৃত্যু হলে যেন তাকে সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই তার কবর হয়েছে মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে। শুনেছি, তার কবর ঠিক সাহাবিদের কবরের পাশে। এটা হয়তো মহান আল্লাহর সুন্দর পরিকল্পনার একটি অংশ। 

তরুণ বাঙালি লেখক কাইকর একবার লিখেছিলেন ‘কেউ একজন কইছিল, পৃথিবী শূন্যস্থান বেশিদিন পছন্দ করে না। তাইলে আব্বা মইরা যাওনের পর পৃথিবী কার শূন্যস্থান পূরণ করতে হারায় গ্যাছে?’

আমার পৃথিবীও সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মুখোমুখি হই কঠিন বাস্তবতার। আমার মেজো ভাইয়ের এসএসসি পরীক্ষা ছিল বাবার মৃত্যুর দুদিন পরেই। ছোট ভাইয়ের বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর।

বাবা শেষবার যখন আমার কাঁধে হাত রেখেছিলেন, সেদিনই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন এবার দায়িত্ব তোর। 

আজ আর শুধু হাত নয়, শক্ত কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে বাবার সব দায়িত্ব। 

তবুও প্রতি রাতে ঘরে ফিরে মনে হয়, কোথায় যেন কিছু বাকি রয়ে গেছে। কাউকে হয়তো তার অধিকারটা পুরোপুরি দিতে পারিনি।

বাবা বলেছিলেন, ‘ভয় পাস না, আমি আছি’।

আজও তোমার সেই কথার ভরসায় সব ভয়কে জয় করি, বাবা।

মনে আছে বাবা প্রায়ই ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি শুনতেন।

তখন আমার কাছে সেটা ছিল এক সাধারণ গান, এখন জীবনের বাঁকে সেই গানের অর্থ বুঝতে পারি-
‘বাবারা এমন হয়, 
কাছের মানুষ দূরে থুইয়া
তারা অন্তরে দারুণ জ্বালা লইয়া
ধরফরাইয়া মরেন…’
এই গানেরই আরেকটা চরণ
‘এই না পথ ধরিয়া
আমি কত না গেছি চইলা’

এই চরণটির মতো বাবা আজ অনেক দূরে চলে গেছেন। তবে বাস্তবে বাবারা দূরে হারিয়ে যান না, তারা থেকে যান প্রতিটি সন্তানের অন্তরে। 

মুখ ফুটে কখনো বলা হয়নি তোমায় অনেক ভালোবাসি বাবা। তোমার দেওয়া সাহস নিয়ে বেঁচে আছি বাবা।

বাবা কতদিন, কতদিন দেখি না তোমায়।

 

দত্তপাড়া, বাইশারী, বানারীপাড়া, বরিশাল

 

তারেক

প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার রব্বানী

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ১২:৩২ পিএম
প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার রব্বানী
ছবি: খবরের কাগজ

মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কোনো বাধা নয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার গোলাম রব্বানী তারই এক উজ্জ্বল প্রমাণ। জন্ম থেকে তিনি হাঁটতে পারেন না। হাত, পায়ে জোর কম। উঠে বসতে হলেও কারও না কারও সাহায্য লাগে। তাই বলে তার জীবন থেমে থাকেনি।

মা, বাবা, দুই বোনসহ গোটা পরিবারের খরচের উৎস তার ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়ের টাকা। লিখেছেন- মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

পরিবার

বাবা দর্জির কাজ করতেন। দুই বোন। তার মধ্যে একজন আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড় বোনকে রব্বানী ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। স্কুল, কলেজে রব্বানীর পড়াশোনা হয়নি। তবে ইউটিউব দেখে এবং তিনটি কোর্স করার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষা শিখেছেন তিনি।

অসুস্থতার শুরু

মেরুদণ্ডের ভেতরে একটি শিরা আছে। সেটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই রব্বানী হাঁটতে পারেন না। তার দুই পা চিকন হয়ে গেছে, যাতে জোর নেই বললেই চলে। চিকিৎসক বলেছিলেন, বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে। অর্থাভাবে তা আর সম্ভব হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে অসুস্থতা বাড়ছে। বাথরুমসহ উঠে বসার জন্যও তার অন্যের সাহায্য লাগে। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভাবনা

২০১৮ সালে মোবাইলে ইউটিউব দেখতে গিয়ে জানতে পারেন, মোবাইল থেকেও ইন্টারনেটে কাজ করে আয় করা যায়। প্রথম মাসে ১০০, পরের মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকায় আয় করে পরিবারকে দেন। মা-বাবার কাছে একটি কম্পিউটার কিনে দেওয়ার আবদার করেন। তার বাবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ৩৮ হাজার টাকায় একটি কম্পিউটার কিনে দেন। 

প্রথম আয়

২০২৩ সালে ফাইবার মার্কেটপ্লেস থেকে ১৫ ডলারের কাজের মাধ্যমে প্রথম মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করেন। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনি ৩০০টিরও বেশি অর্ডার সম্পন্ন করেছেন। শিগগিরই তিনি ফাইবারে টপ রেটেড সেলার হবেন বলে আশা করেন। 

শিখেছেন যেভাবে

রব্বানী মূলত ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখেছেন। তবে একপর্যায়ে কোডম্যান বিডি থেকে তিনটি স্কিলের ওপর কোর্স করেন। বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সার মিনহাজুল আসিফসহ অনেকেরই পরামর্শ নেন। এমনকি অনলাইন কোর্সে তার ব্যাচমেটরাও তাকে সহযোগিতা করে। 

কাজের গল্প

প্রথমদিকে সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার কারণে লক্ষ্য স্থির করা হয়নি তার। প্রথমে গ্রাফিক্স ডিজাইন তারপরে ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং শেখেন। তবে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত তিনি। ফাইবারের লেভেল টু সেলার রব্বানী। 

অসুস্থতা বাধা নয়

রাতে বায়ার ম্যাসেজ দিয়ে স্যাম্পল কিংবা অন্য কোনো কিছু দেখতে চাইলে বিছানা থেকে উঠে পিসি অন করে তা দেখানোর শক্তিটুকু রব্বানীর নেই। বাবা-মাকে বললে তারা রব্বানীকে বিছানায় উঠিয়ে বসিয়ে দেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করেন রব্বানী। রাতে মা-বাবাকে ডেকে তুললে তাদের কষ্ট হবে এই ভেবে অনেক রাতই কাজের মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। 

পরিবারের কর্তা

রব্বানী পরিবারের ৫ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন। নতুন কম্পিউটার, মোবাইল কিনেছেন। বর্তমানে তার মাসে আয় ৫০ হাজার টাকার মতো। ওয়েব লার্নিং ইনস্টিটিউট নামে একটি এজেন্সি আছে রব্বানীর। সেখানে তিনজন কাজ করে। রব্বানী জানান, প্রায় ১০ জনকে তিনি ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। তারা এখন ভালো আয় করছে। 

এত আনন্দ বলে বোঝানোর নয়

প্রথমবার যখন ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করেন। আয়ের টাকা বাবা-মার হাতে তুলে দেন। সেদিনের মতো আনন্দ রব্বানীর কখনো হয়নি। পরিবারে ঈদের মতো খুশির ঝিলিক বয়ে গিয়েছিল। মাকে বলেছিলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় স্বর্ণের চেইন কিনে দেবেন। যখন মাকে সত্যিই স্বর্ণের চেইন কিনে দিতে পেরেছেন তখন তার খুব আনন্দ হয়েছিল।

ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার 

রব্বানীর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার। ২০ বছর ঘরের একটি রুমের মধ্যে তিনি থাকতেন। যেন এ এক বন্দি জীবন। খোলা আকাশ, বাইরের পৃথিবী দেখার তেমন সুযোগই ছিল না তার। ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার কেনার পর তিনি যেন এক নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেলেন। চেয়ারে বসে এখন ঘুরতে যেতে পারেন। তার মনে এখন মুক্তির আনন্দ।

অন্যরাও করতে পারেন

প্রায় অচল জীবনে এক সফল সচল জীবনের দৃষ্টান্ত রব্বানী। তিনি মনে করেন, মানুষ চাইলে অবশ্যই সব সম্ভব। তার মতো অসুস্থরাও ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে পারে। এ জন্য রব্বানী সরকারিভাবে প্রতিবন্ধীদের ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য সহযোগিতা করার দাবি জানান। প্রতিবন্ধীরা ফ্রিল্যান্সিং শিখে দেশের জন্য হাজার হাজার ডলার রেমিট্যান্স আনতে পারবে এমনটাই তার দৃঢ় বিশ্বাস।

আগামীর ভাবনা

ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় ব্যবসা করে উদ্যোক্তা হবেন। অন্যদের চাকরির ব্যবস্থা করবেন। যারা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আগ্রহী তাদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাবেন। এসবই তার আগামী দিনের ভাবনা। 

 

তারেক

পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত জিনিস

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:২১ পিএম
পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত জিনিস
গবলিন হাঙর। ছবি: সংগৃহীত

এ পৃথিবীতে নানা অদ্ভুত জিনিস, প্রাণী ও স্থান আছে। সেসবের খবরাখবর নিয়েই এবারের আয়োজন। জানাচ্ছেন- গাজী তাহির

সবচেয়ে কুৎসিত হাঙর

সাধারণত হাঙর দেখতে খুব ভয়ংকর হয়। তবে পৃথিবীতে এমন এক প্রজাতির হাঙর রয়েছে যা দেখতে অত্যন্ত কুৎসিত ও খুবই ভয়ংকর। এদের বলা হয় ‘গবলিন হাঙর’। গবলিন হাঙর দেখতে অনেকটা ‘জীবন্ত ফসিল’-এর মতো।

নীল লাভা

লাল বা হলুদ লাভার কথা সবাই কমবেশি জানেন। কিন্তু কখনো কি নীল লাভার কথা শুনেছেন? আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ইন্দোনেশিয়ার কাওয়াহ ইজেন আগ্নেয়গিরিটি খুবই অনন্য। কারণ, এটি নীল লাভা উৎপন্ন করে। এ আগ্নেয়গিরিতে সালফিউরিক গ্যাস নির্গত হওয়ায় নীল রঙের সৃষ্টি হয়। এ গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এলে নীল রঙের শিখা বের হয়। যার কারণে লাভার রং নীল দেখায়।

সবচেয়ে দুর্গম স্থান

আমরা অ্যামাজন জঙ্গলকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থান মনে করি। কিন্তু এ অ্যামাজনের চেয়েও দুর্গম স্থান পৃথিবীতে রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থানটি অ্যান্টার্কটিকার দুসি দ্বীপ, মোতু নুই এবং মাহের দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। জায়গাটি ‘পয়েন্ট নিমো’ নামে বিখ্যাত। দুর্গম এ জায়গা থেকে মানুষের বসতি ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ভ্যানটাব্ল্যাক

এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে কালো উপাদান হচ্ছে ভ্যানটাব্ল্যাক। এটি পৃথিবীর যেকোনো কালো জিনিসের চেয়েও বেশি কালো। ভ্যানটাব্ল্যাক কার্বন ন্যানোটিউবের তৈরি। এটি দৃশ্যমান আলোর ৯৯.৯৬৫% পর্যন্ত শোষণ করতে পারে।

ব্লু অ্যাঞ্জেল সি স্লাগ

সমুদ্রে এমন অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, যা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। আর তাই সমুদ্র নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিজ্ঞানীদেরও কৌতূহলের শেষ নেই। সমুদ্রের এমনই এক রহস্যময় প্রাণী ব্লু  অ্যাঞ্জেল সি স্লাগ। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া এ সি স্লাগ অত্যন্ত বিষাক্ত একটি প্রাণী। এটি অন্যান্য ছোট বিষাক্ত জীবকেও খেয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, খেয়ে নেওয়া ছোট বিষাক্ত জীবের বিষ সি স্লাগ নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখে। পরবর্তী সময়ে শিকারে এ বিষ ব্যবহার করে সে।

হাতে ধরা মেঘ

পৃথিবীর অন্যতম একটি রহস্যময় জিনিস হলো অ্যারোজেল। জেল ও গ্যাসের তৈরি এ অ্যারোজেল একটি আলট্রালাইট পদার্থ। এ পদার্থ দেখতে অনেকটা মেঘের মতো। এটি হাত দিয়েও ধরে রাখা যায়। অনেকে একে হিমায়িত ধোঁয়াও বলে থাকে। অ্যারোজেলের ৯৯ শতাংশ অংশই বাতাস দিয়ে গঠিত।

লবণের তৈরি চার্চ

‘সল্ট ক্যাথেড্রাল অব জিপাকুইরা’ একটি রোমান ক্যাথলিক গির্জা। এটি কলম্বিয়ায় অবস্থিত। এ গির্জা মাটির ১৮০ মিটার নিচে অবস্থিত। এর গির্জার অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এটি সম্পূর্ণ লবণ দিয়ে তৈরি। লবণের তৈরি একটি ক্রুশও রয়েছে এ গির্জায়। এ গির্জায় একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রবেশ করতে পারে।

ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি

বর্তমান পৃথিবীতে এমন একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে যার ভাষা এখনো কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেননি। ২৪০ পৃষ্ঠার এ পাণ্ডুলিপির নাম ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি। 
১৪০৪ থেকে ১৪৩৮ সালের মধ্যে এটি লেখা হয়েছিল। যার ফলে এ পাণ্ডুলিপিতে কী লেখা আছে তা আজও মানুষের অজানা রয়ে গেছে। এ পাণ্ডুলিপিতে গাছপালা ও নারী সম্পর্কিত কিছু অদ্ভুত ছবিও আঁকা রয়েছে।

ভিনগ্রহের দেশ

পৃথিবীতে এমন একটি অদ্ভুত জায়গা রয়েছে, যা দেখলে মনে হবে সেখানে এলিয়েনরা থাকে। এটি ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশনে অবস্থিত। লাভাতে ভরা পুল ও উষ্ণ প্রস্রবণ ইত্যাদির জন্য এ জায়গাটিকে দেখলে অন্য জগতের বলে মনে হয়। এ জায়গায় প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস এবং পুকুরের পানিতে অ্যাসিড থাকে।

 

তারেক

পাঠকের লেখা : বেদেনির চোখে জল

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১২:২০ পিএম
পাঠকের লেখা : বেদেনির চোখে জল

কমলাঘাট নদীবন্দরে একসময় হাঁকডাক আর কোলাহল লেগেই থাকত। এ বন্দর থেকে সরাসরি স্টিমারে কলকাতায় আসা-যাওয়া করা যেত। তখনকার সময়ে কলকাতা থেকে প্রচুর কমলা এ ঘাটে আসত। তা থেকেই কমলাঘাট নামের উৎপত্তি। এ নদীবন্দরকে কেন্দ্র করে এ খালের মোহনায় বিশাল বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস শুরু হয়।

এ অঞ্চলের বেদেদের জীবন-জীবিকা মূলত নারীকেন্দ্রিক। তাদের বিয়ের সময়ই পুরুষদের কামাই-রুজি করে খাওয়ানোর ওয়াদা করতে হয়। তারপরও বেদে সম্প্রদায়ের অনেক পুরুষ একাধিক বিবাহ করে থাকেন। তাই নারীকে সব সময়ই রুটি-রুজির জন্য লড়াই করে যেতে হয়। পুরুষরা এ সময় নৌকায় অলস সময় কাটিয়ে থাকে। কেউ কেউ নৌকায় করে আবার মাছও ধরে থাকে। কমলাঘাট বন্দর ছাড়াও বিক্রমপুর এলাকা জুড়ে আরও অনেক যাযাবর বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বিশেষ করে লৌহজং এলাকায় বিশাল বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা বিভিন্ন সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়ে কেউ গাওয়াল করছেন। আবার কেউ সাপের খেলা দেখান, শিঙা লাগান। কেউ তাবিজ-কবজও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। 

এখন তপ্ত দুপুর। কমলাঘাট বন্দরে রূপসী জোছনা বেদেনির গগনবিদারী চিৎকারে চারদিকে মানুষজন জড়ো হয়েছে। অভাব আর পেটের ক্ষুধায় তার জীবন থেকে ফুটফুটে বাচ্চাটি অকালে ঝরে পড়েছে। চিৎকার করে কাঁদছে বেদেনি। যে চিৎকার আল্লাহর আরশে গিয়ে মনে হয় পৌঁছাবে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নদীর খাল পাড়ে লোকে লোকারণ্য। খাল পাড়ের শত শত লোক এসে ভিড় করছে বেদে নৌকার কাছে এসে। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই। সবারই চোখে নীরব অশ্রুপাত ঘটে চলেছে। তার কারণ, সান্ত্বনা দেওয়ার যে কোনো ভাষা নেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী এ খাল পাড়ের মানুষ শতবছরেও দেখেনি। 

বেদেনি জোছনার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই। স্বামীর সংসারে খুব ভালোই চলছিল জোছনার জীবন।  জোছনা দেখতে-শুনতে চোখে পড়ার মতো। একহারা গড়ন। কাজল কালো চোখ, ভরাট বক্ষদ্বয়। জোছনা তাদের বেদে সম্প্রদায়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় একটি ছেলের প্রেমে পড়ে। কিন্তু লোকালয়ের ছেলের অভিভাবক তাদের গোপন বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। জোছনার পেটে একটি বাচ্চা রেখেই তাকে ছেড়ে চলে যায় তার স্বামী। মায়ের গর্ভে বাচ্চাটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তা নিয়েই জোছনাকে কাজ করতে যেতে হয়। পেটের ক্ষুধা না বোঝে প্রেম, না ভালোবাসা। ৯ মাস পূর্ণ হলে জোছনার কোল জুড়ে ফুটফুটে একটি ছেলে আসে। শত অভাব থাকলেও ছেলেকে চোখের আড়াল করেনি জোছনা বেদেনি। পিঠে পরনের কাপড়ের সঙ্গে ঝুলিয়েই সাপের খেলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি করতে যেত। সেই রোজগারেই চলছিল জোছনার দিনকাল।

ছেলেটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। কিন্তু জোছনা বেদেনির সে নজরকাড়া রূপের ঝলক এখন আর নেই। রোদে তাপে কাজল কালো মাটির রূপ ধারণ করেছে এখন সে। চোখের নিচে জমেছে কালো কালি। শরীরও অনেকটা রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ এখন আর সাপের খেলা দেখে সেভাবে চাল-ডাল দেয় না। সেরকম তাবিজ কবজেও এখন আর মানুষের বিশ্বাস নেই। কয়েক গ্রাম ঘুরতে পারলে হয়তো চলার মতো কিছু খাবারের পয়সা জোটে। মানুষ কীভাবে তার সাপের খেলা দেখে পয়সা দেবে? এখন তাদেরই কিনে খেতে হয়। নীরব অভাব চারদিক দিয়ে ধেয়ে আসছে মানুষের জীবনে। গ্রামের মানুষের মনে এখন আর সেই আগের মতো আনন্দ-ফুর্তি নেই। একটা নীরব দুর্ভিক্ষ যেন বয়ে যাচ্ছে। আগে ছেলেটিকে কোলে করে কখনো বা পিঠে বেঁধে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে পারত। এখন আর জোছনার শরীরে সেরকম বল-শক্তি নেই। বয়স বেশি না হলেও অভাব তাকে কাবু করে ফেলেছে। নিজে না খেলেও দুধের ছেলেটিকে দুধ কিনে খাওয়াতে হয়। 

তখন বর্ষাকাল ছিল। চারদিকে পানিতে থই থই করছে। নৌকা একটি বাঁশের লগির সঙ্গে বাঁধা। আজ আর শরীরে কুলাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে জ্বরের প্রকোপের কারণে নৌকা থেকে আর নামতে পারেনি। এদিকে ছেলের জন্য দুধ কেনার টাকাও ফুরিয়ে গেছে। জোছনার স্বামী সেই যে ছেড়ে গেছে আর একবারের জন্যও ফিরে তাকায়নি। বাচ্চা বড় হচ্ছে। তাকে লালন পালন করতে একাই লড়ে যাচ্ছে জোছনা। সামনে কোরবানির ঈদ। তাই জ্বর শরীর নিয়েই বের হতে হচ্ছে জোছনাকে। কিন্তু এ জ্বরের শরীরে বাচ্চা নিয়ে রোদের মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতে পারবে না সে। তাই অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করল বাচ্চাটিকে নৌকার ভেতর শিকলে বেঁধে রেখে যাবে। ছেলে একটু একটু হাপুড় দিয়ে এদিক সেদিক যেতে পারে। এটাই জোছনার কাছে সবচেয়ে ভয়ের কারণ। কিন্তু আর কোনো উপায়ও নেই তার কাছে। একটি শিকল কিনে ছেলেটি নৌকার ভেতর বেঁধে রেখে জোছনা বেদেনি গ্রাম ঘুরতে চলে যায়। 

আজ কেন যেন জোছনার পা এগোতে চায় না। হাঁটতে গেলে অবশ অবশ লাগে। তারপরও পেটের ক্ষুধার কাছে তাকে হার মানতে হলো। বাচ্চাটিকে একাই নৌকার ভেতর শিকলে বেঁধে তাকে মাটিতে নামতে হলো। কে জানত তার এমন ভয়াবহ সর্বনাশ ঘটে যাবে। আজ সে বেশি দূর যায়নি। আশপাশের দু-এক গ্রাম ঘুরেই জোছনা চলে এসেছে।

নৌকায় উঠেই জোছনা বেদেনি আর্তচিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়ল। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে গগনবিদারী চিৎকার যেন সাত আসমানে পৌঁছাচ্ছে। বাচ্চাটি শিকলে বাঁধা থাকলেও শিকল ছিল একটু বড়। তাতেই বাচ্চাটি পানিতে পড়ে মারা যায়। শিকলে বাঁধা ছিল বলে নৌকার সঙ্গেই মরে ভাসতে থাকে। জোছনা বেদেনিকে ছেলেটির জন্য আর গ্রাম করতে যেতে হবে না। একটি অভাব জোছনা বেদেনির ভেতরটা সারা জীবন কুরে কুরে খাবে। সাত রাজার ধন হারিয়ে জোছনা এখন নির্বাক। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। নৌকার আশপাশে শত শত লোক। সবার চোখেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই। নীরর অশ্রু ঝরছে সবার চোখ থেকে। এভাবেই নীরব অশ্রুপাতে সমাপ্ত ঘটল একটি অপরিণত ভবিষ্যতের। 

 

মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ

 

তারেক

হারাবে না একটি বীজও

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
হারাবে না একটি বীজও
ছবি: সংগৃহীত

কী হবে যদি পৃথিবীর সব বীজ ফুরিয়ে যায়? যদি পৃথিবী থেকে কোনো কারণে শস্যের বীজ হারিয়ে যায় তাহলে কীভাবে রোপণ হবে শস্য? যদিও তা অলৌকিক ব্যাপার। তবে কোনো নির্দিষ্ট গাছ বা শস্যের বীজ হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পৃথিবীতে আছে এক বীজ সংরক্ষণাগার। যেখানে মজুত আছে পৃথিবীর হাজার হাজার উদ্ভিদের বীজ।

কোনো কারণে যদি কোনো উদ্ভিদের বীজ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তবে সেখান থেকে বীজ এনে আবার রোপণ করা হবে। নরওয়ে ও উত্তর মেরুর মধ্যে অবস্থিত  সোয়ালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট নামের এই বীজ সংরক্ষণাগার।

নরওয়ে এবং উত্তর মেরুর মধ্যে আর্কটিক সার্কেলের ওপরে একটি দ্বীপে বরফের পাহাড়ে মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রাখা আছে। নরওয়েজিয়ান দ্বীপ স্পিটসবার্গেনে অবস্থিত এই সিড ভল্ট। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষিত আছে। ৯ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি খাদ্য শস্যের লাখ লাখ বীজ আছে এই সিড ভল্টে। এটি মূলত একটি বিশাল সংরক্ষণাগার, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম কৃষির জীববৈচিত্র্যের সংগ্রহ রয়েছে।

এই ভবনের ভেতরে ১৩ হাজার বছরের কৃষি ইতিহাস রয়েছে বলে জানান এর পরিচালকরা। প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে সংগ্রহ করা বীজ জমা আছে এই সিড ভল্টে। সিড ভল্টটি একটি পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত, যা ইস্পাতের দরজা দিয়ে আটকানো। বীজ সংরক্ষণাগারের আশপাশে বিশাল এলাকা আছে এবং তা বরফে ঢাকা।

প্রতিনিয়ত বিশ্বে জিনগত উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বীজ ভল্টের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো অব্যবস্থাপনা, দুর্ঘটনা, সরঞ্জাম ব্যর্থতা, তহবিল হ্রাস, যুদ্ধ, নাশকতা, রোগ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শস্য নষ্ট হয়ে গেলে এখান থেকে বীজ সরবরাহ করা।

সোয়ালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট প্রাকৃতিক হিমায়িত ভল্ট হিসেবে কাজ করে। যেহেতু এটি পাহাড়ের ভেতরে বরফের আবরণে গঠিত। এর প্রবেশপথটি একটি ছোট সুড়ঙ্গের মতো, যেখানে বিদ্যুতের তীব্র ঘূর্ণন এবং ভল্টের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শীতল ব্যবস্থা থাকে। একটি দরজা দিয়ে ৪৩০ ফুট নিচে একটি প্রশস্ত কংক্রিটের সুড়ঙ্গ রয়েছে। এর শেষে পাওয়া যাবে বীজ সংরক্ষণাগার। এখানে বীজগুলো ভ্যাকুয়াম-প্যাক করা রুপালি প্যাকেট এবং টেস্টটিউবে বড় বাক্সে সংরক্ষণ করা হয়, যা মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত তাকে সুন্দরভাবে সাজানো। এখানে মজুত করে রাখা আছে বিভিন্ন প্রজাতির ধান, শস্য ও গমের চারা। 

২০০৮ সালে চালু হওয়া এই সিড ভল্ট বর্তমানে নরওয়েজিয়ান সরকার ক্রপ ট্রাস্ট, নর্ডিক জেনেটিক রিসোর্স সেন্টারের (নর্ডজেন) মাধ্যমে পরিচালিত।

 

তারেক