ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

পাঠকের লেখা : বেদেনির চোখে জল

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১২:২০ পিএম
পাঠকের লেখা : বেদেনির চোখে জল

কমলাঘাট নদীবন্দরে একসময় হাঁকডাক আর কোলাহল লেগেই থাকত। এ বন্দর থেকে সরাসরি স্টিমারে কলকাতায় আসা-যাওয়া করা যেত। তখনকার সময়ে কলকাতা থেকে প্রচুর কমলা এ ঘাটে আসত। তা থেকেই কমলাঘাট নামের উৎপত্তি। এ নদীবন্দরকে কেন্দ্র করে এ খালের মোহনায় বিশাল বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস শুরু হয়।

এ অঞ্চলের বেদেদের জীবন-জীবিকা মূলত নারীকেন্দ্রিক। তাদের বিয়ের সময়ই পুরুষদের কামাই-রুজি করে খাওয়ানোর ওয়াদা করতে হয়। তারপরও বেদে সম্প্রদায়ের অনেক পুরুষ একাধিক বিবাহ করে থাকেন। তাই নারীকে সব সময়ই রুটি-রুজির জন্য লড়াই করে যেতে হয়। পুরুষরা এ সময় নৌকায় অলস সময় কাটিয়ে থাকে। কেউ কেউ নৌকায় করে আবার মাছও ধরে থাকে। কমলাঘাট বন্দর ছাড়াও বিক্রমপুর এলাকা জুড়ে আরও অনেক যাযাবর বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বিশেষ করে লৌহজং এলাকায় বিশাল বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা বিভিন্ন সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়ে কেউ গাওয়াল করছেন। আবার কেউ সাপের খেলা দেখান, শিঙা লাগান। কেউ তাবিজ-কবজও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। 

এখন তপ্ত দুপুর। কমলাঘাট বন্দরে রূপসী জোছনা বেদেনির গগনবিদারী চিৎকারে চারদিকে মানুষজন জড়ো হয়েছে। অভাব আর পেটের ক্ষুধায় তার জীবন থেকে ফুটফুটে বাচ্চাটি অকালে ঝরে পড়েছে। চিৎকার করে কাঁদছে বেদেনি। যে চিৎকার আল্লাহর আরশে গিয়ে মনে হয় পৌঁছাবে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নদীর খাল পাড়ে লোকে লোকারণ্য। খাল পাড়ের শত শত লোক এসে ভিড় করছে বেদে নৌকার কাছে এসে। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই। সবারই চোখে নীরব অশ্রুপাত ঘটে চলেছে। তার কারণ, সান্ত্বনা দেওয়ার যে কোনো ভাষা নেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী এ খাল পাড়ের মানুষ শতবছরেও দেখেনি। 

বেদেনি জোছনার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই। স্বামীর সংসারে খুব ভালোই চলছিল জোছনার জীবন।  জোছনা দেখতে-শুনতে চোখে পড়ার মতো। একহারা গড়ন। কাজল কালো চোখ, ভরাট বক্ষদ্বয়। জোছনা তাদের বেদে সম্প্রদায়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় একটি ছেলের প্রেমে পড়ে। কিন্তু লোকালয়ের ছেলের অভিভাবক তাদের গোপন বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। জোছনার পেটে একটি বাচ্চা রেখেই তাকে ছেড়ে চলে যায় তার স্বামী। মায়ের গর্ভে বাচ্চাটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তা নিয়েই জোছনাকে কাজ করতে যেতে হয়। পেটের ক্ষুধা না বোঝে প্রেম, না ভালোবাসা। ৯ মাস পূর্ণ হলে জোছনার কোল জুড়ে ফুটফুটে একটি ছেলে আসে। শত অভাব থাকলেও ছেলেকে চোখের আড়াল করেনি জোছনা বেদেনি। পিঠে পরনের কাপড়ের সঙ্গে ঝুলিয়েই সাপের খেলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি করতে যেত। সেই রোজগারেই চলছিল জোছনার দিনকাল।

ছেলেটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। কিন্তু জোছনা বেদেনির সে নজরকাড়া রূপের ঝলক এখন আর নেই। রোদে তাপে কাজল কালো মাটির রূপ ধারণ করেছে এখন সে। চোখের নিচে জমেছে কালো কালি। শরীরও অনেকটা রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ এখন আর সাপের খেলা দেখে সেভাবে চাল-ডাল দেয় না। সেরকম তাবিজ কবজেও এখন আর মানুষের বিশ্বাস নেই। কয়েক গ্রাম ঘুরতে পারলে হয়তো চলার মতো কিছু খাবারের পয়সা জোটে। মানুষ কীভাবে তার সাপের খেলা দেখে পয়সা দেবে? এখন তাদেরই কিনে খেতে হয়। নীরব অভাব চারদিক দিয়ে ধেয়ে আসছে মানুষের জীবনে। গ্রামের মানুষের মনে এখন আর সেই আগের মতো আনন্দ-ফুর্তি নেই। একটা নীরব দুর্ভিক্ষ যেন বয়ে যাচ্ছে। আগে ছেলেটিকে কোলে করে কখনো বা পিঠে বেঁধে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে পারত। এখন আর জোছনার শরীরে সেরকম বল-শক্তি নেই। বয়স বেশি না হলেও অভাব তাকে কাবু করে ফেলেছে। নিজে না খেলেও দুধের ছেলেটিকে দুধ কিনে খাওয়াতে হয়। 

তখন বর্ষাকাল ছিল। চারদিকে পানিতে থই থই করছে। নৌকা একটি বাঁশের লগির সঙ্গে বাঁধা। আজ আর শরীরে কুলাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে জ্বরের প্রকোপের কারণে নৌকা থেকে আর নামতে পারেনি। এদিকে ছেলের জন্য দুধ কেনার টাকাও ফুরিয়ে গেছে। জোছনার স্বামী সেই যে ছেড়ে গেছে আর একবারের জন্যও ফিরে তাকায়নি। বাচ্চা বড় হচ্ছে। তাকে লালন পালন করতে একাই লড়ে যাচ্ছে জোছনা। সামনে কোরবানির ঈদ। তাই জ্বর শরীর নিয়েই বের হতে হচ্ছে জোছনাকে। কিন্তু এ জ্বরের শরীরে বাচ্চা নিয়ে রোদের মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতে পারবে না সে। তাই অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করল বাচ্চাটিকে নৌকার ভেতর শিকলে বেঁধে রেখে যাবে। ছেলে একটু একটু হাপুড় দিয়ে এদিক সেদিক যেতে পারে। এটাই জোছনার কাছে সবচেয়ে ভয়ের কারণ। কিন্তু আর কোনো উপায়ও নেই তার কাছে। একটি শিকল কিনে ছেলেটি নৌকার ভেতর বেঁধে রেখে জোছনা বেদেনি গ্রাম ঘুরতে চলে যায়। 

আজ কেন যেন জোছনার পা এগোতে চায় না। হাঁটতে গেলে অবশ অবশ লাগে। তারপরও পেটের ক্ষুধার কাছে তাকে হার মানতে হলো। বাচ্চাটিকে একাই নৌকার ভেতর শিকলে বেঁধে তাকে মাটিতে নামতে হলো। কে জানত তার এমন ভয়াবহ সর্বনাশ ঘটে যাবে। আজ সে বেশি দূর যায়নি। আশপাশের দু-এক গ্রাম ঘুরেই জোছনা চলে এসেছে।

নৌকায় উঠেই জোছনা বেদেনি আর্তচিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়ল। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে গগনবিদারী চিৎকার যেন সাত আসমানে পৌঁছাচ্ছে। বাচ্চাটি শিকলে বাঁধা থাকলেও শিকল ছিল একটু বড়। তাতেই বাচ্চাটি পানিতে পড়ে মারা যায়। শিকলে বাঁধা ছিল বলে নৌকার সঙ্গেই মরে ভাসতে থাকে। জোছনা বেদেনিকে ছেলেটির জন্য আর গ্রাম করতে যেতে হবে না। একটি অভাব জোছনা বেদেনির ভেতরটা সারা জীবন কুরে কুরে খাবে। সাত রাজার ধন হারিয়ে জোছনা এখন নির্বাক। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। নৌকার আশপাশে শত শত লোক। সবার চোখেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই। নীরর অশ্রু ঝরছে সবার চোখ থেকে। এভাবেই নীরব অশ্রুপাতে সমাপ্ত ঘটল একটি অপরিণত ভবিষ্যতের। 

 

মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ

 

তারেক

পৃথিবীতে ভিনগ্রহের মতো স্থান

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ পিএম
পৃথিবীতে ভিনগ্রহের মতো স্থান
ছবি: সংগৃহীত

ধরুন আপনি পৃথিবীতে থেকেই কোনো ভিনগ্রহে পা রাখলেন। যার পৃষ্ঠ বা ভূমি অন্যরকম। হয়তো ভাবছেন পৃথিবীতে থেকে কীভাবে ভিনগ্রহে পা রাখা যায়। হয়তো কৃত্রিমভাবে অথবা ভিনগ্রহের মাটি এনে তার ওপরে পা রাখলেই তা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে পৃথিবীতে এমনই এক জায়গা আছে যেখানে গেলে মনে হয় অন্য কোনো গ্রহ।

এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সালফারযুক্ত বুদবুদ, নিয়ন রঙের বিশাল লবণাক্ত সমতল ভূমি অবিরাম সূর্যের নিচে ঝিকিমিকি করে। এটি কোনো কৃত্রিম দৃশ্য বা স্থান নয়। এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশন, যা পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত এবং চরম প্রতিকূল জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। 

ডানাকিল ডিপ্রেশন ইথিওপিয়ার এর্তা আলে পর্বতমালার উত্তর-পূর্বে, ইরিত্রিয়ার সীমান্তে এবং আফার (ডানাকিল) নিম্নচাপ নামক একটি ভূতাত্ত্বিক গঠনের ভেতরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩০ মিটার নিচু এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থান। আফ্রিকান এবং এশীয় টেকটোনিক প্লেটের মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে ডানাকিলে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল।

প্রতি বছর ১-২ সেন্টিমিটার হারে প্লেটগুলো পৃথক হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটি ভূতাত্ত্বিক নিম্নচাপ রেখে যায়, যা ডানাকিল নিম্নচাপ (বা আফার নিম্নচাপ) নামে পরিচিত। এটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে আফার ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়। এখানে বৃষ্টিপাত প্রায় নেই বললেই চলে। তবুও এই ভূমি সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং অদ্ভুত ভূতাত্ত্বিক গঠনের জন্য বিখ্যাত।

এই অপার্থিব ভূখণ্ডে আছে বেশ কিছু জায়গা। এর মধ্যে ডালল হাইড্রোথার্মাল ফিল্ডকে বলা হয় নরকের প্রবেশদ্বার। ডালল হলো অ্যাসিড পুল, সালফার চিমনি এবং নিয়ন সবুজ এবং হলুদ সোপানের ভূখণ্ড। অঞ্চলটি ধাতু দ্রবীভূত করার জন্য যথেষ্ট অ্যাসিডিক এবং আয়রন অক্সাইড এবং সালফারের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা অন্য জগতের রঙের বৈপরীত্য তৈরি করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটি বৃহস্পতির চাঁদ আইও বা মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ডালল তার অনন্য ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে রঙিন ভূমিরূপগুলোর মধ্যে একটি। সাদা লবণাক্ত সমতলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে অন্ধকার আগ্নেয়গিরির পাথরের ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পরে, আপনি যখন উপরে পৌঁছাবেন তখন রঙের এই ভিন্ন জগতের আলোকিত আভা আপনার সামনে আসবে। ‘ধূমপান পর্বত’ নামে পরিচিত, এর্তা আলে নামে একটি আগ্নেয়গিরিও রয়েছে ডানাকিলে। জলন্ত ক্ষতিকারক গ্যাস দিয়ে ভর্তি এই আগ্নেয়গিরি লাল ও কমলা লাভা দিয়ে ভর্তি। তা ছাড়া ডানাকিলে আছে সমতল লবণাক্ত ভূমি। 

ফাটল ধরা সাদা মরুভূমির মতো বিস্তৃত, ডানাকিলের লবণাক্ত সমতলগুলোর প্রাচীন কৌশল ব্যবহার করে আফার উপজাতির লোকরা প্রতিদিন মাটি খনন করে লবণের জন্য। লম্বা উটের কাফেলা মরুভূমি জুড়ে হাতে কাটা লবণের টুকরো বহন করে। যা সে দেশে ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গ্রহ বিজ্ঞানীদের কাছে ডানাকিল রহস্যময় জায়গা। ২০১৯ সালে গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে ডাললের কিছু অংশে কোনো পরিচিত জীব টিকে থাকতে পারেনি। অদ্ভুত সুন্দর এই জায়গা যদিও পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান নয়। তবুও অসংখ্য রহস্যপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী ডানাকিলে ঘুরতে আসেন।

 

তারেক

গাছ যখন বার্তাবাহক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
গাছ যখন বার্তাবাহক
ছবি: সংগৃহীত

আচ্ছা গাছেরা কি একে অপরের সঙ্গে কথা বলে? একটি গাছেরও কি ভাষা থাকতে পারে? আর যদি কথা বলেই থাকে, তা হলে তারা ঠিক কী কী কথা বলে? বিপদের সময় কি এক গাছ অন্য গাছকে সাবধান করে দেয়?

ছেলেমানুষী মনে হলেও গবেষণার ফল বলছে— হ্যাঁ! পৃথিবীর কিছু গাছ সত্যিই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যা আমাদের মানুষদের রীতিমতো চমকে দেয়। 

আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের কথাই ধরা যাক। সেখানকার অ্যাকাসিয়া (Acacia) গাছ যখন বিপদের সম্মুখীন হয় অর্থাৎ কোনো প্রাণী যেমন বন্য হরিণ বা জিরাফ যখন তার পাতা খেতে আসে, তখন গাছটি অবিশ্বাস্য এক কাজ করে বসে। সে তার পাতায় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যেটি অন্য প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। একই সঙ্গে গাছটি বাতাসে ছেড়ে দেয় এক প্রকার গ্যাস, যার নাম ইথাইলিন। এই গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গাছগুলোর কাছে এবং তখনই অন্য গাছগুলোও সতর্ক হয়ে যায় এবং আগেই নিজেদের পাতায় বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে মজুত করে রাখে।

এ যেন এক নিঃশব্দ সতর্কবার্তা- ‘সাবধান! শত্রু খুব নিকটে, প্রস্তুত হও আত্মরক্ষা কর।’ বিজ্ঞানীরা এই অনন্য যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে নাম দিয়েছেন ‘Plant-Communication’ বা উদ্ভিদের আন্তঃযোগাযোগ। গাছেরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও, তারা একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে খুব নীরবেই। এই কমিউনিকেশন ঠিক আমাদের কথা বলার মতো না। শ্রবণশক্তিতে তা বুঝতেও পারা যাবে না। কারণ গাছপালা শব্দ করে কথা বলতে পারে না। তারা রাসায়নিক সংকেত, বৈদ্যুতিক সিগন্যাল এবং শিকড়ের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। এটি প্রমাণ করে যে গাছ কেবল নির্জীব, নীরব বস্তু নয়- তাদের আছে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া, স্মৃতি, এমনকি শেখার ক্ষমতাও। 

বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, গাছেরা কেবল বাতাসেই নয়, শিকড়ের নিচে মাটির গভীরেও এক ধরনের ‘ইন্টারনেট’ বা যোগাযোগ গড়ে তোলে। এটিকে বলা হয় ‘Wood Wide Web’। এখানে মাইক্রোফাঙ্গাসের মাধ্যমে এক গাছ অন্য গাছের সঙ্গে তথ্য ও পুষ্টি আদান-প্রদান করে। 

এক গাছ দুর্বল হলে, আশপাশের গাছরা তাকে সাহায্য পাঠায়। কানাডিয়ান বিজ্ঞানী সুজান সিমার্ডের মতে, গাছেরা একে অপরকে চেনে, মনে রাখে এবং প্রয়োজনে সাড়া দেয়। গাছেরা মায়া, বন্ধুত্ব, এমনকি আত্মত্যাগও করে থাকে প্রয়োজনসাপেক্ষে। এই তথ্যগুলো জানার পর প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি গাছ কাটার আগে তারা একে অপরকে জানায়? সতর্ক করে দেয় যে সামনে খুব বিপদ? 

আজ সময় এসেছে প্রকৃতিকে নতুন করে শোনার, দেখার ও জানার মধ্য দিয়ে রহস্য উন্মোচন করার। প্রচুর গবেষণাই পারে এসবের সুস্পষ্ট ধারণা দিতে। তার জন্য হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা আমাদের করতেই হবে।

 

তারেক

আম্রপালি আমের নামকরণ যেভাবে হলো

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
আম্রপালি আমের নামকরণ যেভাবে হলো
ছবি: সংগৃহীত

স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টিগুণের জন্য আমকে বলা হয় ফলের রাজা। দেশে হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আম দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে বিশেষ করে আম্রপালি আম রঙে, গন্ধে, স্বাদে একেবারে অনন্য।

বিজ্ঞান প্রকৃতির মিলনে জন্ম নেওয়া আম্রপালি আমের গল্পটি একটু ব্যতিক্রম, একটু রোমাঞ্চকর। যার ইতিহাস অনেক আমপ্রেমীরই অজানা।

চলুন জেনে নেওয়া যাক আঁশহীন, সুমিষ্ট রসালো এই আমের নামকরণের পেছনের রোমাঞ্চকর ইতিহাসটি-

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কথা। প্রাচীন ভারতে বৈশালী নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের এক আমবাগানে এক ব্যক্তি একটি বাচ্চাকে আমগাছের নিচে খুঁজে পান। যেহেতু তাকে আমগাছের নিচে পাওয়া যায়, তাই তার নাম রাখা হয় আম্রপালি। আম্রপালি মেয়েটি কেবল রূপে নয়, গুণেও ছিলেন অনন্য। তিনি গান গাইতেন, নাচতেন, বীণা বাজাতেন এবং কবিতা লিখতেন। এক সময় হয়ে ওঠেন বৈশালীর সেরা নর্তকী। তার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয় দেশ-বিদেশের রাজা-রাজপুত্র সাধারণ মানুষ। শুরু হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত। কারণ সবাই তাকে দেখতে বিয়ে করতে চায়।

অবস্থায় তার পালক মা-বাবা চিন্তিত হয়ে বৈশালীর গণ্যমান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেন তা হলো, আম্রপালিকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। সে হবে একজন নগরবধূ। মানে সোজা বাংলায় পতিতা। ইতিহাসে এভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কাউকে পতিতা বানানো হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিরল। আম্রপালি সে সভায় ৫টি শর্ত রাখেন। শর্তগুলো হলো-

-নগরের সবচেয়ে সুন্দর ঘরটি হবে তার।

-প্রতি রাতের জন্য মূল্য পাঁচ শত স্বর্ণমুদ্রা।

-একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবে।

-শত্রু বা কোনো অপরাধীর সন্ধানে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে।

-কে এলেন আর কে গেলেন নিয়ে কোনো অনুসন্ধান করা যাবে না।

সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেন।

প্রাচীন ভারতের মগধ রাজা ছিলেন বিম্বিসার। নর্তকীদের নাচের অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচ দেখে বলেছিলেন, নর্তকী বিশ্বসেরা। তখন তার একজন সভাসদ বলেন,  মহারাজ নর্তকী আম্রপালির নখের যোগ্য নয়। তিনি তার সেই সভাসদের থেকে আম্রপালি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাওয়ার বাসনা করেন। কিন্তু তার সভাসদ বলেন, তা হলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালিকে দেখে আসবেন।

দেখা করতে গিয়ে রাজা চমকে ওঠেন- তো কোনো নারী নয়, যেন সাক্ষাৎ পরী!  কিন্তু আম্রপালি প্রথম দেখাতেই তাকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান তিনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই। কিন্তু আম্রপালি জানান, তার রাজ্যের মানুষ কখনোই এটা মেনে নেবেন না। ওদিকে আম্রপালি তার নিজের রাজ্যর কোনো ক্ষতি চান না। তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান। 

এদিকে বিম্বিসারের সন্তান অজাতশত্রুও আম্রপালির প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তিনি আম্রপালিকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি এবং খুব বাজেভাবে আহত হন। এত নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কী হলো?

অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধ তার কয়েক সঙ্গী নিয়ে একদিন বৈশালী রাজ্যে এলেন। সেখানের এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালির মনে ধরে গেল। তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন। সবাই ভাবলেন বুদ্ধ কখনোই রাজি হবেন না। গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন এবং এটাও বললেন, সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে এটা আমি নিশ্চিত! চার মাস শেষ হলে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আম্রপালির রূপের কাছে শ্রমণ হেরে গেলেন কি না তা জানার জন্য? কিন্তু না, সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন। আম্রপালি তখন বুদ্ধকে বলেন, এই প্রথম কোনো পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালী নগরবধূ আম্রপালি।

পরে সবকিছু দান করে বাকি জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালি।

প্রশ্ন হচ্ছে, আম্রপালি আমের নাম কীভাবে হলো? উত্তর ভারতের দশেরি জাতের পুরুষ পরাগ এবং দক্ষিণ ভারতের নীলম জাতের স্ত্রী পরাগের সংকরায়ণের মাধ্যমে ভারতের গবেষকরা একটি নতুন আমের জাত উদ্ভাবন করেন। এই আম স্বাদে, গন্ধে এবং গঠনে ছিল ব্যতিক্রমী। আর তাই এই বিশেষ জাতের নাম রাখা হয় ইতিহাসখ্যাত নগরবধূআম্রপালি নামে।

প্রথমবারের মতো এই জাতের চারা রোপণ করা হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার চাকদহে। জাতটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৪ সালে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ এনামুল হক এবং চুয়াডাঙ্গার আজাদ হাইব্রিড নার্সারির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে এই জাতটি আমদানি করা হয়।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এই জাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করে এবং নাম দেয়বারি আম- বর্তমানে কেউ কেউ এই আমকেআম রুপালিনামেও ডাকেন।

আম্রপালি আমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই আম দেখতে ছোট থেকে মাঝারি আকারের, নিচের দিকে সুঁচালো এবং উপরের দিকে গোলাকার। পাকা আমের রং হয় হলুদাভ সবুজ, কখনো লালচে কমলা। খোসা কিছুটা মসৃণ তেলতেলে।

এই আমের মিষ্টতার মাত্রা ল্যাংড়া বা হিমসাগরের চেয়েও বেশি। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় বিটা ক্যারোটিন, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আম্রপালি গাছে গুচ্ছ ধরে অনেকগুলো আম একসঙ্গে হয়। তবে গাছটির আয়ু তুলনামূলকভাবে কম। পাকা আম্রপালি সাধারণত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে বাজারে আসে এবং বেশ কয়েকদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায়।

 

তারেক

টাইম ফুল

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
টাইম ফুল
ছবি: সংগৃহীত

মস রোজ অথবা পর্তুলিকা, টাইম ফুল, ঘাস ফুল, নয়টার ফুল। অনেক নামেই এই ফুল পরিচিত। এ ফুল প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ফোটে এবং ঝিমিয়ে যায় দুপুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। 

স্থানভেদে এই ফুল পর্তুলিকা, মসরোজ, টায়রা, জায়েন্ট, ঘাসফুল, টাইম ফুল, এগারোটার ফুল, মেক্সিকান রোজ, ভিয়েতনামের রোজ, সান রোজ, পাথর গোলাপ, মস রোজ পার্সলে, গুল দোপেহেরি, ফুলকুমারী, পিলো প্ল্যান্ট, নয়টার ফুল, দশটার ফুল, অফিস ফুল, হুক ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত।

তবে আমাদের দেশে ‘টাইম ফুল’ নামে ফুলটি বেশি পরিচিত। নির্দিষ্ট সময়ে ফোটার কারণে এই নামকরণ। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Portulaca grandiflora।

দেখতে খুব সুন্দর এই ফুল। চিকন চিকন পাতায় ঘেরা, মাঝখানে ছোট্ট ফুলটি ফুটে থাকে। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। নানান রঙের পাপড়িতে বেষ্টিত এই ফুলের পাপড়িগুলো খুবই পাতলা।

এটা বর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ। কোনো স্থানে দু-চারটি লতা কাটিং রোপণ করলে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে অসংখ্য গাছ জন্ম নেয় এবং গাছের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
এই ফুল সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা, বেগুনি ও ম্যাজেন্টা রঙের হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাদা, গোলাপি ও বেগুনি রঙের ফুল বেশি ফোটে। 

শীতকাল বাদে প্রায় সারা বছর এই ফুল ফুটলেও গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকাল এই ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম। এ সময়ে গাছে প্রচুর ফুল ফোটে। ফুল গন্ধহীন। আমাদের দেশে বাসাবাড়ির বাগান, ছাদবাগান, পার্ক ও উদ্যানে এই ফুল চোখে পড়ে।

 

তারেক

 

রঙে আঁকা রঙিন গাছ

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:২২ পিএম
রঙে আঁকা রঙিন গাছ
ছবি: সংগৃহীত

বিচিত্র পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। এখানে আছে নানা রকম জায়গা, দেশ, জাতি ও সংস্কৃতি। আছে প্রাকৃতিক নানা বিচিত্র উপাদান। তেমনি এক উপাদান ডিগলুপ্তা ইউক্যালিপটাস। যা রেইনবো ইউক্যালিপটাস নামেও পরিচিত। এটি অত্যাশ্চর্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ, যা তার বাকলের জন্য বিখ্যাত। এর অদ্ভুদ সুন্দর বাকলের জন্য এর নাম রেইনবো ইউক্যালিপটাস বা রংধনু ইউক্যালিপটাস।

এই গাছের বাকল সবুজ থেকে নীল, বেগুনি, কমলা, লাল এবং ধূসর রঙে পরিবর্তিত হতে থাকে। যা দেখতে প্রাণবন্ত রংধনুর মতো মনে হয়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ গাছে তেলরং মেখে দিয়েছে। সারি সারি লম্বা রংমাখা গাছ দাঁড়িয়ে আছে।

ইউক্যালিপটাস গাছ প্রায় সব মহাদেশেই দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এর প্রায় ৭০০ প্রজাতি আছে। বেশ লম্বা এই গাছ সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে। তবে গাছটি পানি শোষণকারী এবং শুষ্ক জলবায়ুর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা এই গাছের একটি প্রজাতি রেইনবো ইউক্যালিপটাস। এই অদ্ভুত ইউক্যালিপটাস তার গায়ের জন্য বিখ্যাত। তার কাণ্ডে রং-বেরঙের বাকল দেখা যায়। ডোরাকাটা দাগে রঙিন প্রাণবন্ত এক শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ডিগলুপ্তা ইউক্যালিপটাস।

এই গাছ মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। গাছটি প্রায় ৬০-৭৫ মিটার উচ্চতায় আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে এবং এর কাণ্ড ২.৪ মিটারেরও বেশি ব্যাস ধারণ করে। এটি প্রতি বছর ১.৮ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এই ইউক্যালিপটাস প্রজাতি ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি এবং পূর্ব তিমুরে পাওয়া যায়। তা ছাড়া এটি  হিমমুক্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে (যেমন- হাওয়াই, ফ্লোরিডা, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়) ব্যাপকভাবে রোপণ করা হয়। 

এর কাঠ কাগজ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং আফ্রিকার কিছু অংশে হিমমুক্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয়/উপক্রান্তীয় অঞ্চলে নান্দনিক মূল্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়। কাগজ ছাড়াও এটি আসবাবপত্র, প্লাইউড, মেঝে, খুঁটি, কাঠকয়লা এবং পুনর্বনায়নের জন্যও ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া বাগান, পার্ক এবং উদ্ভিদ সংগ্রহে রোপণ করার জন্য এই গাছ একটি ‘জীবন্ত শিল্পকর্ম’। এটি সিঙ্গাপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রজাতিও। তেলরঙের আস্তরণের মতো এই গাছ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য শিল্পকর্ম।

রেইনবো ইউক্যালিপটাসের বাইরের বাকল বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লম্বভাবে খোসা ছাড়ানোর সময় এটি উজ্জ্বল সবুজ রঙের ভেতরের স্তরগুলো প্রকাশ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরগুলো নীল, বেগুনি, কমলা এবং মেরুন রঙে পরিণত হয়। একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া, যা রংধনুর প্রভাব তৈরি করে। তাই একে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। এই গাছের বাকল বেশ পাতলা, যা এটিকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাকের সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে এই গাছ শোভাবর্ধনে বেশি ব্যবহৃত হয়।

 

তারেক