মেহেরপুরের কৃষকরা কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই কচু চাষ বর্তমানে মেহেরপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হচ্ছে। জেলার অনেক কৃষক কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন, যার ফলে কচুর লতি ও ফুলের বাজারে চাহিদা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কচু এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। জেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, কচুর লতি চাষে কৃষকরা নতুন আশা ও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। খবর বাসসের।
জেলা শহরের উপকণ্ঠে দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫৫) কৃষি কাজ করেন। তার তিন বিঘা জমির মধ্যে ২৪ কাঠা জমি স্যাঁতসেঁতে হওয়ায় ধান চাষে সমস্যায় পড়েন। ২০২১ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ওই জমিতে কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষ শুরু করেন। কচুর ফুলের চাহিদা দেশজুড়ে রয়েছে এবং এর সুস্বাদু সবজি হিসেবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বাবু মিয়া চলতি বছরে ৩ বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করেছেন এবং তার ভাগ্যও ঘুরে গেছে। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
মেহেরপুরের লতিরাজ কচু এখন দেশজুড়ে সুখ্যাতি পেয়েছে। তবে কচুর লতি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল বাবু মিয়ার হাত ধরে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কন্দাল জাতের লতি কচু চাষের ফলে লাভবান হওয়ায় অনেক কৃষক এখন এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাবু মিয়া জানিয়েছেন, তার লাগানো কচু তিন মাস পর থেকে তোলা শুরু হয় এবং খেত থেকে দুই সপ্তাহ পরপর কচুর লতি তোলা হয়। এক মাস পরপর কচুর ফুল সংগ্রহ করা যায় এবং চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের কচুর লতির জন্য জমিতে সবসময় পানি রাখতে হয়।
আরেক চাষি গোলাম হোসেন (৪৫) বলেন, ‘কচুর লতি একবার লাগালে মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায় এবং বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো।’ কৃষি বিভাগের পরামর্শে লতিকচু চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন এবং তার দেখাদেখি অন্যরাও এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মেহেরপুরের সবজি বাজারের বিক্রেতা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।’ পাইকারি ক্রেতা সামাদ আলী, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী জানান, ‘কন্দাল জাতের কচুর লতি উন্নতমানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, সিলেট এবং চট্টগ্রামে এই কচু পাঠানো হয়।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মেহেরপুরে কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষের শুরু হলেও এটি এখনো প্রচলিত নয়। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া কচুর লতি চাষ শুরু করেন। ওই সাফল্য অন্য কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং কচুর লতি চাষের মাধ্যমে পুষ্টিচাহিদা পূরণ সম্ভব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘কন্দাল জাতের কচুর লতি ঘন করে লাগাতে হয় এবং জমিতে সবসময় পানি রাখা প্রয়োজন যাতে লতি ও ফুল বেশি হয়।’
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মেহেরপুরে সুস্বাদু আমন কচু খুচরা বাজারে ২৮ টাকা থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কচুর মূল্য বেশি হওয়ায় চাষিরা বেশ খুশি। কচুর লতি চাষে কৃষকরা নতুন আশা ও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।