ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০২:২২ পিএম
আপডেট: ১৪ মে ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক
ছবি : খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। 

উপজেলা প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সজীব কাউসারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আক্তার। 

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদ হাসান, সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজারুল ইসলাম, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মশিউর রহমান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট ৫৪৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩২ টাকা। ৭৬৬ জন কৃষকের থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেক কৃষক তিন টন করে ধান দিতে পারবেন।

ধান দিতে আসা কৃষক তোতা মিয়া খবরের কাগজকে জানান, তিনি বেশ খুশি। খুব সহজেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। দামও ভালো।

জুটন বনিক/জোবাইদা/অমিয়/

মেহেরপুরে বাড়ছে কচুর লতি চাষ

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৬ পিএম
মেহেরপুরে বাড়ছে কচুর লতি চাষ
মেহেরপুরে কচুর লতি খেত পরিচর্যা করছেন একজন কৃষক। বাসস

মেহেরপুরের কৃষকরা কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই কচু চাষ বর্তমানে মেহেরপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হচ্ছে। জেলার অনেক কৃষক কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন, যার ফলে কচুর লতি ও ফুলের বাজারে চাহিদা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কচু এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। জেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, কচুর লতি চাষে কৃষকরা নতুন আশা ও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। খবর বাসসের।

জেলা শহরের উপকণ্ঠে দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫৫) কৃষি কাজ করেন। তার তিন বিঘা জমির মধ্যে ২৪ কাঠা জমি স্যাঁতসেঁতে হওয়ায় ধান চাষে সমস্যায় পড়েন। ২০২১ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ওই জমিতে কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষ শুরু করেন। কচুর ফুলের চাহিদা দেশজুড়ে রয়েছে এবং এর সুস্বাদু সবজি হিসেবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বাবু মিয়া চলতি বছরে ৩ বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করেছেন এবং তার ভাগ্যও ঘুরে গেছে। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

মেহেরপুরের লতিরাজ কচু এখন দেশজুড়ে সুখ্যাতি পেয়েছে। তবে কচুর লতি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল বাবু মিয়ার হাত ধরে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কন্দাল জাতের লতি কচু চাষের ফলে লাভবান হওয়ায় অনেক কৃষক এখন এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাবু মিয়া জানিয়েছেন, তার লাগানো কচু তিন মাস পর থেকে তোলা শুরু হয় এবং খেত থেকে দুই সপ্তাহ পরপর কচুর লতি তোলা হয়। এক মাস পরপর কচুর ফুল সংগ্রহ করা যায় এবং চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের কচুর লতির জন্য জমিতে সবসময় পানি রাখতে হয়।

আরেক চাষি গোলাম হোসেন (৪৫) বলেন, ‘কচুর লতি একবার লাগালে মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায় এবং বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো।’ কৃষি বিভাগের পরামর্শে লতিকচু চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন এবং তার দেখাদেখি অন্যরাও এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

মেহেরপুরের সবজি বাজারের বিক্রেতা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।’ পাইকারি ক্রেতা সামাদ আলী, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী জানান, ‘কন্দাল জাতের কচুর লতি উন্নতমানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, সিলেট এবং চট্টগ্রামে এই কচু পাঠানো হয়।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মেহেরপুরে কন্দাল জাতের কচুর লতি চাষের শুরু হলেও এটি এখনো প্রচলিত নয়। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া কচুর লতি চাষ শুরু করেন। ওই সাফল্য অন্য কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং কচুর লতি চাষের মাধ্যমে পুষ্টিচাহিদা পূরণ সম্ভব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘কন্দাল জাতের কচুর লতি ঘন করে লাগাতে হয় এবং জমিতে সবসময় পানি রাখা প্রয়োজন যাতে লতি ও ফুল বেশি হয়।’ 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মেহেরপুরে সুস্বাদু আমন কচু খুচরা বাজারে ২৮ টাকা থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কচুর মূল্য বেশি হওয়ায় চাষিরা বেশ খুশি। কচুর লতি চাষে কৃষকরা নতুন আশা ও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।

জয়পুরহাটে শসা চাষ করে লাভবান চাষিরা

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৬ পিএম
জয়পুরহাটে শসা চাষ করে লাভবান চাষিরা
জয়পুরহাটে খেত থেকে শসা তুলে বাজারজাতের প্রক্রিয়া করছেন কৃষকরা। বাসস

জয়পুরহাটে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য শসা চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভাদসা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে অবস্থিত বৃহত্তম শসার হাট থেকে পাইকাররা নিয়মিত শসা কিনে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। শসার চাহিদা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়ে গেছে এবং পাইকারি বাজারে এর দাম ৩০-৩৫ টাকা কেজি, খুচরা বাজারে ৪০ টাকা। শসা চাষে খরচ কম এবং দ্রুত ফলন পাওয়া যায়, ফলে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এ বছর পাঁচ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। খবর বাসসের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটে পাইকারি বাজারে শসা বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যখন খুচরা বাজারে এর দাম পৌঁছেছে ৪০ টাকা কেজি। প্রতিদিন গোপালপুর বাজার থেকে ৪০ জন পাইকার বিভিন্ন স্থানে শসা সরবরাহ করেন। পাইকারদের মধ্যে হামিদুর রহমান ছানা, জামিল হোসেন, সেলিম, কাওসার আহমেদ ও ফরহাদ উল্লেখযোগ্য। তারা জানান, এখানকার শসার চাহিদা বেশি থাকায় তারা প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক শসা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরে পাঠান।

শসা চাষে খরচ কম এবং ফলন দ্রুত পাওয়া যায়। বীজ লাগানোর পর মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে শসার ফলন পাওয়া যায় এবং তেমন কোনো পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। এ কারণে অন্যান্য ফসলের তুলনায় শসা চাষ অনেক সহজ ও লাভজনক। গোপালপুর এলাকার কৃষকরা এই সুবিধার সদ্ব্যবহার করে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন।

ফরিদপুর গ্রামের কৃষক আজাদুল ইসলাম চলতি বছর ১০ কাঠা জমিতে শসা চাষ করে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। একইভাবে গোপালপুর গ্রামের তারাজুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করে ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন এবং আরও ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হওয়ার মতো শসা খেতে রয়েছে। কোঁচকুড়ি গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেন দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করে ইতোমধ্যে ৮০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, ‘জয়পুরহাটের শসা সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। স্বল্প সময়ের ফসল হওয়ায় এবং লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে শসা চাষের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এ ছাড়া জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি পাঁচ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে হলেও কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ায় তারা খুশি। শসা চাষে লাভবান হয়ে এলাকার কৃষকরা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন এবং এই চাষের প্রতি তাদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

জয়পুরহাটের গোপালপুর গ্রামের শসা চাষ কৃষকদের জন্য একটি সোনালি সুযোগ তৈরি করেছে, যা তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার পথকে সুগম করে দিয়েছে।

ইউটিউবে দেখে তরমুজ চাষে সফল ইকবাল

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
ইউটিউবে দেখে তরমুজ চাষে সফল ইকবাল
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তরমুজের পরিচর্যা করছেন ইকবাল। ছবি: খবরের কাগজ

মহামারি করোনার অভিঘাতের কারণে ব্যবসায় ক্ষতির পর কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন ইকবাল হোসেন। এক সময় প্রসাধনীর ব্যবসা করে আসা ইকবাল এখন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মসজিদিয়া গ্রামে ৫০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। করোনার সংকটকালে কৃষি খাতে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চাষাবাদের অভিজ্ঞতা লাভ করেন তিনি। পরে ইউটিউব দেখে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহী হন। ধীরে ধীরে চাষাবাদ করে সফলতা অর্জন করে চলেছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

ইকবাল হোসেন জানান, এই মৌসুমে ৯-১০ টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করলেও বর্তমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৬-৭ টন উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন তিনি। ২৫ শতক জমি থেকে তরমুজ তোলার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং এক-একটি তরমুজের ওজন ৫ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি জানান, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে পরিশ্রম ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়, যা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তবে এবারের মৌসুমে কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে কিছু তরমুজের চামড়ায় পচন ধরার শঙ্কা রয়েছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবুও, এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ অন্যান্য চাষের তুলনায় লাভজনক বলেই দাবি করেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, মালচিংসহ অন্যান্য সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান ইকবাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইকবালের চাষ করা তরমুজের মধ্যে সূর্যডিম, স্মার্টবয়েজ, ল্যান্ডফাই, ইয়েলো কিং, ব্ল্যাকবেবি ও রবি জাতের তরমুজ রয়েছে। এসব তরমুজ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে, যার ফলে জল ধরে রাখতে সুবিধা হয়েছে এবং পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। তরমুজের পরিচর্যার জন্য মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে ও মাচা দিয়ে নেটের প্যাকেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তরমুজগুলো।

গত বছর প্রথমবারের মতো মিরসরাই উপজেলায় ৮ জন কৃষকের মাধ্যমে ১ একর জমিতে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়। স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় ৫০ শতক জমিতে প্রদর্শনী করা হয় এবং ফলন ভালো হওয়ায় এই বছর চাষ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ একর জমিতে করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছে।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শাহজাহান জানান, ‘আমরা সব সময় চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। বৃষ্টির কারণে কিছু গাছের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তবে নতুন চারা গাছগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে। চাষিদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।’ মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব খেতের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমান বৃষ্টির কারণে ফলনে কিছুটা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে আমরা চাষিদের সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ইকবাল হোসেনের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই সফলতা মিরসরাইয়ের কৃষি খাতে একটি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় স্থানীয় কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণ করে নিজেদের জীবিকা উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছেন।

ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান রুবেল

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান রুবেল
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা গ্রামে কৃষক রুবেল ইসলাম ভাসমান সবজি খেত পরিচর্যা করছেন। ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক রুবেল ইসলাম ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন। বর্ষাকালে জলাবদ্ধ জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে লাউ চাষ শুরু করে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন এবং জৈব সার ব্যবহার করছেন। তার উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে কম খরচে লাভ বেশি হচ্ছে এবং এলাকার অন্যান্য কৃষকও এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক রুবেল ইসলাম তার নিচু ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করতে পারেননি। ইউটিউব দেখে ভাসমান পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বস্তা পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ জমিতে লাউ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে পানির ওপরে বাঁশের মাচায় ঝুলছে শত শত লাউ। তিনি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধুমাত্র জৈব সার ব্যবহার করে এসব সবজি উৎপাদন করছেন। 

২৫ শতক জমিতে এবার পরীক্ষামূলকভাবে লাউ চাষ করেছেন রুবেল ইসলাম। এতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫০ হাজার টাকার ওপরে লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। 

রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি অনেক নিচু সেই সঙ্গে নদীর তীরবর্তী। তাই বর্ষাকালের বেশ কয়েক মাস আমাদের জমিগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যে কারণে আমরা প্রতি বছরই ওই কয়েক মাস চাষাবাদ করতে পারি না। কিন্তু ওই পতিত জমিগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার ওপায় খুঁজতে থাকি। এর একপর্যায়ে ইউটিউব দেখে জানতে পারি ভাসমান পদ্ধতি সম্পর্কে। এরপর বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ কীভাবে করা যায় ওই সম্পর্কে ধারণা পাই। পরে প্রথমবারের মতো শুধু লাউ চাষ করেছি। পরবর্তী সময় লাউয়ের সঙ্গে অন্যান্য সবজি আবাদ করার ইচ্ছা আছে। চলতি বছর যে সবজি চাষ করছি তা থেকে অনেক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

রুবেলের ওই বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষে পরিচর্যা ছাড়া তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। কম খরচে বেশি লাভও হয়। তাকে দেখে পরিত্যক্ত ডোবা জলাশয় বা অনাবাদি জমিতে ভাসমান বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও। 

উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষাকালে আমরা কোনো চাষাবাদ করতে পারি না। রুবেল এবার অভিনব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছে এবং ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তার সবজি খেত দেখে এসেছি। পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। আমিও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করব।’ 

একই গ্রামের আরেক কৃষক ইসমাইল হোসেনের বলেন, আমার কিছু জমি পতিত পড়ে রয়েছে। রুবেলের ওই সবজি খেত দেখে আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে। এরপর থেকে আমাদের জমি আর পতিত পড়ে থাকবে না। ভাসমান পদ্ধতিতে আমরাও লাউসহ নানান ধরনের সবজি চাষ করব।’ 

রুবেল ইসলাম তার ভাসমান পদ্ধতিতে মাচায় সবজি চাষ করে এলাকায় একটি সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির জানান, রুবেলের উদ্ভাবনী পদ্ধতি দেখে অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রুবেলকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে আসছি। জলাবদ্ধ জমিগুলো কাজে লাগিয়ে অন্য কৃষকরা যদি রুবেলের মতো ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করে, তবে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন ও সবজির চাহিদা পূরণ হবে।’

পিরোজপুরে আমন চারার ঘাটতি নেই

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৩ পিএম
আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
পিরোজপুরে আমন চারার ঘাটতি নেই
পিরোজপুরে আমন ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাসস

পিরোজপুরে বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। উফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের আমন চাষে কৃষকরা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার ফলে চাষাবাদের কাজ কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। তবে, মাঠের পানি কমে যাওয়ার পর কৃষকরা পুনরায় জমি চাষের কাজ শুরু করেছেন এবং চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আমন চারার কোনো ঘাটতির খবর পাওয়া যায়নি, যা এই মুহূর্তে কৃষকদের জন্য একটি স্বস্তির খবর। সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। খবর বাসসের।

চলতি মৌসুমে পিরোজপুরের আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৬ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলা, ৫৩টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌর এলাকায় মোট ৬৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলা আমন চাষ ও চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ২০৯ হেক্টর জমিতে ১৯ হাজার ১৬ টন। ইন্দুরকানী ৫ হাজার ৩৫৩ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ২৬১ টন। কাউখালী ৪ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৩৭৪ টন। নেছারাবাদ ৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ৪১৫ টন। নাজিরপুর ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৭৪০ টন। ভাণ্ডারিয়া ১০ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে ২১ হাজার ১২৮ টন। মঠবাড়িয়ায় ২২ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমিতে ৫১ হাজার ৪৬২ টন আমন চাষ হয়।

বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ কৃষক ছোট ট্রাক্টর ব্যবহার করে জমি চাষ করছেন। কিছু কিছু মাঠে গরু ও মহিষ দিয়ে চাষের কাজও চলছে। সার ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা আমন চাষে চাষিদের আকৃষ্ট করছে এবং চাষের কাজকে আরও সহজ করছে। 

সদর উপজেলার টোনা গ্রামের আমন কৃষক নারায়ণ দাস বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মূলত আমন ধানের চাষ হয়। যদি প্রকৃতি সহায়তা করে, তবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ধান ও চাল উৎপাদন সম্ভব হবে। আমরা আশা করছি ভালো ফলন হবে এবং আমরা লাভবান হব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অরুণ রায় জানিয়েছেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বীজতলার চারা কিছুটা তলিয়ে গিয়েছিল, তবে পানি নেমে যাওয়ার পর রৌদ্রের তাপ চারা দ্রুত সুস্থ করতে সহায়তা করবে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা কম বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলার উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন চাষের ও চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের মতো চলতি বছরেও অতিক্রম করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও জানান, চাষিরা বর্তমানে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের জমি প্রস্তুত করছেন। চাষিদের প্রতিদিনের চেষ্টা ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৃষকরা দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।