ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কৃষিক্ষেত্রে ২২ জন পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
কৃষিক্ষেত্রে ২২ জন পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন। এআইপি নীতিমালা ২০১৯-এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

রবিবার (৭ জুলাই) সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার দেওয়া হবে। 

এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

 ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান আছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এআইপিরা সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র, সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ এবং বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার। এ ছাড়া নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে ৩ জন
কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশবিষয়ক সংগঠক চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানি চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে ৪ জন
নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন, এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এম এ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন
উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম, মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষি কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ, বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে ২ জন
বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারির জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কে এম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে ৩ জন
জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানি বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

কৃষি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তার আলোকে ২০২০ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি পেয়েছিলেন ১৩ জন। খবর বাসসের।

আখ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
আখ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রেজ আন উল বাশার তাপসের আখ খেত। ছবি খবরের কাগজ

মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে আখের চাষ বাড়ছে। বাজারে আখের চাহিদা থাকায় জেলার কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। লাভজনক হওয়ায় আখ চাষ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। দেশি জাতের আখ চাষে ফলন কম হওয়ায় বিদেশি জাতের আখ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। ঝুঁকি কম হওয়ায় কৃষি বিভাগও এ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।

মেহেরপুর জেলায় ফিলিপিন্সের ব্ল্যাক সুগার কেইন ও পাকিস্তানি আখ বেশি চাষ হয়েছে। সাধারণত উঁচু জমিতে এ জাতের আখ চাষ করলে ফলন ভালো হয়। প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ২ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এই আখ মিষ্টি, রসালো ও নরম। বাজারে প্রচলিত আখ থেকে ভিন্ন হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি। আখ লম্বা হওয়ায় বাঁশের মাচা দিতে হয়। প্রতি পিস আখ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকা দরে। মেহেরপুরে আখের চাহিদা মিটিয়ে মাঠ থেকে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী জেলার ক্রেতারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। গাছ লাগানোর পর একটি আখ লম্বায় ১৫-২০ ফুট হয়। আখ যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ, সুতা ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচা না দিলে ঝড় ও বাতাসে আখ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। জেলায় এখন অনেক কৃষক আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার রেজ আন উল বাশার তাপস এবার নিজ জমিতে ফিলিপিন্স ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের আখ চাষ করেছেন। তিনি জানান, প্রতিটি আখের চারা ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে আখ চাষের জন্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ চারা রোপণ করতে হয়। এখান থেকে প্রায় ৯-১০ হাজার আখ পাওয়া যায়। একটি আখ গাছ থেকে ৯-১১টি আখ পাওয়া যায়। আখ চাষ করতে হয় উঁচু জমিতে। প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হয়, তারপর লম্বা সারি করে আখের চারা রোপণ করতে হয়। নিয়মিত আখ খেত পরিচর্যা করতে হয়। এ আখের রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম। আখ রোপণের ৭ থেকে ১০ মাস পর বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।

সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের আলামিন বলেন, ‘আমি পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আখ কিনে নিয়ে এসে আখের রস বিক্রি করতাম। এবার নিজেই এক বিঘা জমিতে আখ লাগিয়েছি। ভালো ফলন হয়েছে।’ গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের কৃষক রেজ আন উল বাশার তাপস বলেন, ‘প্রথমে ৩ বিঘা আখের চাষ শুরু করি। আখের ফলন ভালো হওয়ায় চাষে আগ্রহ দেখাই। বড় পরিসরে আখ চাষ করার জন্য নিজেই চারা তৈরি করে ৬ বিঘা জমিতে এ মৌসুমে আখ লাগিয়েছি। আখ চাষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন করছি।’ আখ খেতের একজন শ্রমিক বলেন, ‘তাপস ভাইয়ের আখ খেতে নিয়মিত কাজ করি। আগাছা পরিষ্কার, পাতা কাটা, সার ও কীটনাশক ছিটাই। এতে এক দিনে ৪০০ টাকা হাজিরা পাই।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার পাটকেলপোতা গ্রামের সালাম হোসেন বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিলাম। দেশে এসে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই বিদেশ থেকে ফিরে দেশে এসে কৃষি মিশ্র প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সুস্বাদু পিয়ারা বাগান, মালটা বাগান, কমলা লেবুর চাষের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকে আখের চারা নিয়ে প্রথমে প্রায় দুই বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করি। তাতেই আমি সফল হই। বর্তমানে আখের চারা নার্সারিতে তৈরি করে জেলার অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।’

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর মেহেরপুরে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হেক্টর। তবে কৃষকরা বেশি করে চাষ করায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অধিদপ্তর থেকে আখ চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘জেলায় এখন আখ চাষে বেশি ঝুঁকছেন কৃষকরা। আখ চাষে নানা রোগবালাই প্রতিরোধ করতে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে।’

বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাহিদা বেড়েছে

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাহিদা বেড়েছে
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করা হচ্ছে। খবরের কাগজ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। পেঁপে কাঁচা সবজি ও পাকা ফল হিসেবে স্থানীয় বাজারসহ ঢাকার আশপাশে দিন দিন চাহিদা বেড়েছে। তাই অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পাইকাররা এখন বাগান থেকেই পেঁপে কিনছেন, যার ফলে কৃষকদের বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকছে না। এ ছাড়া যাতায়াত খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি লাভের পরিমাণ বেড়েছে।

উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বির্তুল গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব কৃষক মো. মাসুদ সরকার গত বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে এক বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গত বছরের সফলতায় এ বছর তিনি আরও লাভের আশায় তিন বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি দামও পাচ্ছেন ভালো।

শুধু মাসুদ সরকারই নন, একই গ্রামের যুবক রনি সরকার ও সম্রাট সরকারও পেঁপে চাষ করছেন। স্থানীয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পেঁপে চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

গাজীপুরের পূবাইলের ফেরদৌস মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রবাস থেকে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালে নিজের পৈতৃক জমিতে ১০৫টি পেঁপের চারা লাগিয়ে কৃষিকাজের যাত্রা শুরু করেন। প্রথমবারেই সফল হন ফেরদৌস এবং আয় করেন ১ লাখ টাকার বেশি। এরপর জমির পরিধি ও চারার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। ২০১৭ সালে ৫০০ পেঁপে চারা রোপণ করেন, সেখান থেকে তার আয় হয় ৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধারাবাহিকভাবে আয় বাড়াতে থাকেন। 

২০২৪ সালে সাত বিঘা জমিতে দুটি ঘেরের পাড়ে ১ হাজার ৭০০ সারি সারি পেঁপেগাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। ফেরদৌসের বাগানে কিং, থাই, দেশি চারা ও টপ লেডি জাতের পূর্ণবয়স্ক পেঁপেগাছ রয়েছে। প্রতিটি পেঁপেগাছে ৩০-৩৫ কেজি পেঁপে ধরে। ফেরদৌস মিয়া এখন এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেঁপে চারা ফ্রি লাগিয়ে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করছেন। উন্নত জাতের এই পেঁপে চারা প্রতিবেশীদের বাড়ির আঙিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোয় উদ্বুদ্ধ করছেন এবং নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে এলাকার এতিমখানায় দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপেগাছ লাগায় এবং যত্ন করে, তাহলে ওই গাছ থেকে মৌসুমে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ধরনের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগিতা করব। বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপণ করে পরিচর্যা করলে সফলতা নিশ্চিত।’

এদিকে গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাগদি এলাকার মনির হোসেন জানান, গত তিন বছর ধরে পেঁপে চাষ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। পরিবারের পাঁচ সদস্যদের সহযোগিতায় মনির হোসেন এখন সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন বাগদি ও নাগরী এলাকায়। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে তিনি আরও এগিয়ে যেতে চান।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানিয়েছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। কৃষকরা উৎপাদিত সবজি পাইকারি ও স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করছেন। উপজেলার উলুখোলা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে পেঁপে চাষে বির্তুল গ্রামের কৃষকদের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘পেঁপে চাষে খরচ কম, রোগবালাইয়ের ঝামেলা নেই এবং ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা কম। বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে আগ্রহী হন, তবে তারাও লাভবান হবেন।’

নাটোরে ভুট্টাচাষ ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা
নাটোরে ভুট্টাখেত পরিচর্যা করছেন একজন কৃষক/ খবরের কাগজ

চলতি মৌসুমে নাটোরে মোট ৮৪ হাজার ৭০২ টন ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে ভুট্টার বাজার মূল্য ২৭-২৮ টাকা কেজি। এ দাম পেয়ে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা খুব খুশি।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নাটোরে মোট ১১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টাচাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৪৩ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, সিংড়ায় ২০০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ১৮০ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ২ হাজার ১৩৭ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ৬৮৫ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। চাষাবাদ শেষে মোট উৎপাদন হয়েছে ৮৪ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন। গড় ফলন হয়েছে ২৪-২৫ মণ প্রতি হেক্টর।

সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক দুলাল উদ্দিন জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টাচাষ করেছিলেন এবং বিঘাপ্রতি ২৫ মণ ফলন পেয়েছেন। এতে তিনি বিঘাপ্রতি প্রায় ২৪ হাজার টাকা লাভ করেছেন। এ দাম পেয়ে তিনি খুশি এবং আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ভুট্টাচাষের পরিকল্পনা করছেন। 

নলডাঙ্গা উপজেলার পাটুল এলাকার কৃষক আরিফ জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে ভুট্টাচাষ করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন। আগামীতে আরও বেশি জমিতে ভুট্টাচাষে আগ্রহী তিনি।

দিঘাপতিয়া এলাকার পাইকারি ভুট্টা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মিঠু জানান, বর্তমানে ২৭-২৮ টাকা কেজি দরে ভুট্টা কিনছেন তিনি। কৃষকদের কাছ থেকে ভুট্টা কিনে ট্রাকে লোড করে সিরাজগঞ্জ ও ঢাকায় ফিড তৈরির কোম্পানিতে বিক্রি করছেন। এতে তার ভালো লাভ হচ্ছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। এই ফসল চাষে খরচ কম হয়। দেশের মাছ ও পোলট্রি খাবার তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার হয়। ফলে সব সময়ই দাম ভালো পাওয়া যায়। এতে লাভবান হয়ে দিন দিন অধিক ভুট্টাচাষে মনোযোগী হচ্ছেন কৃষকরা।

কুমিল্লায় ৮৫০ কোটি টাকার ক্ষতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কৃষকদের

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কৃষকদের
কুমিল্লায় চাষাবাদে ফিরছেন কৃষকরা। খবরের কাগজ

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। তারা আবারও চাষাবাদে ফিরছেন। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর তারা আমন ধানের মৌসুম কাজে লাগাতে বীজতলা তৈরি ও বেশি দামে চারা সংগ্রহ করছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে এবং নদী ভাঙনের পলিমাটি ফসলের ফলন উন্নত করতে সহায়তা করবে। এবারের বন্যায় কৃষিখাতে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ৬৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে রয়েছে।

গত ২০ আগস্ট থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, বন্যার ভয়াবহতাও তত বেড়েছে। ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর একে একে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪ উপজেলা প্লাবিত হয়ে যায়। এর ফলে তলিয়ে যায় কৃষকের ফসলি জমি এবং জমির ফসল। বন্যাকবলিত কুমিল্লার ১৪ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার ফসল প্রায় পুরোপুরি ডুবে গেছে। বাকি ৭ উপজেলায় ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এখনো পুরোপুরি জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে মনোহরগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠ। এ ছাড়া অন্যান্য আরও কয়েকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিও পানির নিচে ডুবে আছে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রোপা আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর, ধান ২৩ হাজার ৩০৯ হেক্টর, শাকসবজি ২ হাজার ১৯ হেক্টর, রোপা আউশ ৩৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর, আমন ৩৩৫ হেক্টর এবং ২১৬ হেক্টর আখ খেত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬৪১ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর শাকসবজি, ২০ হাজার হেক্টর রোপা আউশ এবং ১১ হেক্টর আখ ফসলের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৪ হেক্টর শাকসবজি, ১৩ হাজার ৪৩২ হেক্টর রোপা আউশ এবং ২০৫ হেক্টর আখ ফসলের জমি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কুমিল্লার কৃষি। আউশের পাকা ধান আর রোপা আমনের বীজতলা ও চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কোথাও পলিমাটির তলায় চাপা পড়েছে পাকা ধান, আবার কোথাও দীর্ঘদিন পানিবন্দি থেকে জমিতেই পচে গেছে ফসল। বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে শাকসবজির খেত। মাচায় মাচায় ঝুলছে মৃত সবজির গাছ। এখনো কোথাও কোথাও বানের পানি জমে থাকায় জমিতে চাষাবাদ শুরু করা যাচ্ছে না। একদিকে ঘরবাড়ি, অন্যদিকে জমির ফসল হারিয়ে নিঃস্ব অনেক কৃষক। তবুও অনেকেই আবার আশায় বুক বেঁধেছেন- পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জমি তৈরি করে চারা রোপণ শুরু করেছেন। 
বন্যার কারণে বীজতলা বিনষ্ট, চারার সংকট এবং বেশি দামে চারা সংগ্রহ করতে হলেও মৌসুম ধরতে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রত্যাশা, সঠিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ২৩ আগস্ট ধান কাটার কথা ছিল। আগের দিন ২২ আগস্ট রাতেই সব শেষ। গোমতী নদীর ভাঙনের ফলে পুকুরের মাছও শেষ, জমির ধানও নেই। ঘরবাড়ি, ধান, মাছ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব কিছুই মাথায় আসছে না।’

জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জমিতে পানি জমে সব চারা নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে আসায় আবার নতুন করে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। জমির পাশেই চারা এনে মজুত রেখেছি। যদিও দ্বিগুণ দামে অনেক দূর থেকে চারা আনতে হয়েছে, তাও মৌসুমটা ধরার চেষ্টা করছি।
এদিকে বন্যার দুর্দশার মধ্যেও প্লাবনের পলিমাটি আশীর্বাদ হতে পারে কৃষকের, এমনটি জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। তবে সে ক্ষেত্রে মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লায় কৃষি খেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমন ও রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন রোপা আমনের মৌসুম পেতে হলে দ্রুত চারা তৈরি করে চারা রোপণ করতে হবে। আমরা সরকারিভাবে বীজ সংগ্রহ ও বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কুমিল্লা সেনানিবাসে বীজতলা তৈরি করে আমনের চারা তৈরি করা হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এসব চারা দ্রুত কৃষককে সরবরাহ করতে পারব। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সারও দেওয়া হবে।’

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় কুমিল্লার প্রধান জানান, কৃষিখাতে মোট ক্ষতি ও পুনর্বাসনেও সচেষ্ট রয়েছে সরকার। কৃষি বিভাগ তাদের কাজ শুরু করেছে। আশা করছি কৃষকরা খুব দ্রুত মাঠে ফিরতে পারবেন।

মেহেরপুরে শঙ্কায় মরিচচাষিরা

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম
মেহেরপুরে শঙ্কায় মরিচচাষিরা
মেহেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মরিচখেত খবরের কাগজ

মেহেরপুরে মরিচচাষিরা বর্তমানে শঙ্কিত। চলতি বর্ষায় ঘন ঘন বৃষ্টি ও তীব্র গরমের কারণে খেতের মরিচগাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। এর ফলে কাঁচা মরিচ ঝরে পড়ছে এবং বাজারে অপরিপক্ব মরিচ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেক কৃষক দাবি করছেন, সার-কীটনাশক কিংবা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর মেহেরপুরে মরিচ চাষে ৪০০ হেক্টর বেশি জমি ব্যবহৃত হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। গত বছর দাম ভালো হওয়ায় মরিচ চাষে লাভবান হয়েছিল মেহেরপুরের কৃষকরা। বর্তমানে মরিচের দাম স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ ৪ হাজার ৫০০ টাকা হলেও কাঁচা মরিচের সংকট রয়েছে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাউট গ্রামের মোখলেসুর রহমান দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। গত বছর এক বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বছর মরিচের জমি থেকে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে শঙ্কিত তিনি। অতিবৃষ্টি ও গরমের কারণে মরিচ গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে এবং মরিচ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের আকাশ হোসেন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। শীতকালে মরিচ চাষ করলে ফলন ভালো হয় কিন্তু দাম কম থাকে। বর্তমানে মরিচের দাম বেশি, তবে এ বছরে এক বিঘা জমি থেকে সর্বোচ্চ ৪ মণ মরিচ ওঠানো সম্ভব হবে, যেখানে সাধারণত ১৫-১৮ মণ মরিচ পাওয়া যায়।

জেলার অধিকাংশ মরিচচাষিই একই পরিস্থিতির শিকার। বাজারজাত করার আগে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মরিচগাছ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই অপরিপক্ব মরিচ তুলে বাজারে বিক্রি করলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। নানা ধরনের ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

কিছুদিন আগে মরিচের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কেজি ২০০ টাকা থেকে কমে এখন ১১০ টাকায় নেমেছে। চাহিদা থাকলেও ভালো মরিচের অভাবের কারণে কাঁচা মরিচের আড়তগুলো এখনো জমে ওঠেনি।

মেহেরপুর বড়বাজারের বিশিষ্ট আড়তদার আবু হানিফ জানান, প্রতিবছর কাঁচা মরিচের সিজনে জেলা থেকে শতাধিক ট্রাকভর্তি কাঁচা মরিচ রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো বড় শহরগুলোতে রপ্তানি হয়। বর্তমানে কাঁচা মরিচ খুব বেশি উঠছে না। প্রতিদিন তিন থেকে চার ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, বর্তমান আবহাওয়ায় মরিচ গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। মরিচগাছ টিকিয়ে রাখতে জৈবসার ব্যবহারের পাশাপাশি চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গাছের গোড়া পচা রোগ হলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মরিচগাছ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীতকাল এলে যে গাছ টিকে যাবে, সেখান থেকে চাষিরা মরিচের ভালো ফলন পাবেন। বাজারে মরিচের ভালো দাম রয়েছে। ফলে চাষিরা লাভবান হবেন।