ঢাকা ৩ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
English

কৃষিতে অবদানের জন্য এআইপি সম্মাননা পেলেন ২২ জন

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম
কৃষিতে অবদানের জন্য এআইপি সম্মাননা পেলেন ২২ জন
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজের হাতে সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ

কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২২ গুণী ব্যক্তি ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’-২০২১ সম্মাননা পেয়েছেন। 

রবিবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষকের কল্যাণ ও কৃষির উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বৈশ্বিক নানা সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত বাজেট বরাদ্দ করতে যত সমস্যাই থাকুক না কেন, সব সময়ই প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী সব সময় বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ত্যাগী কৃষকদের অবদানে আমাদের কৃষি এগিয়ে চলেছে। কৃষকের সামাজিক সুনাম ও সম্মান বাড়ানোর জন্যই এআইপি সম্মাননা। এআইপি সম্মাননা প্রদান তাদের কৃষিকাজে আরও উৎসাহিত করবে এবং কৃষির চলমান অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের কৃষিকাজের জন্য তাগিদ দেন এবং তিনি নিজেও গণভবনে কৃষিকাজ করেন। এই সরকার কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েই দেশ পরিচালনা করছে।’

এআইপি সম্মাননাপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এই এআইপি পুরস্কার পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত। ছোট্ট একটা ভূখণ্ডের যে মানুষগুলো তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন তারা সব সময় অবহেলিত ছিলেন।’ 

ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষি শাহিদা বেগম এআইপি সম্মাননা পেয়ে বলেন, ‘কৃষিকাজে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করি। প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে অনেক সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। এআইপি সম্মাননার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। সারে ভর্তুকির কারণে অল্প দামে সার ক্রয় করতে পারছি এবং কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা সব সময় পাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী।

ইউটিউব দেখে কৃষিকাজ, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
ইউটিউব দেখে কৃষিকাজ, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা
নিজ বাগান পরিচর্যা করছেন তৈয়বুর রহমান লাজু। খবরের কাগজ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তৈয়বুর রহমান লাজু (৪৮) নিজের জমিতে কচুরলতি ও সাথি ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিন বছরে কৃষি থেকে বছরে আয় করছেন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। তার দেখাদেখি অনেকেই কৃষিকাজে আগ্রহী হচ্ছেন। যৌথ বাগান, গরুর খামার ও জৈবসার তৈরির হাউজ গড়েছেন। ইউটিউব দেখে শিখে কৃষিকাজে সফল হয়েছেন। কৃষি অফিসের সহায়তায় লাজু এখন এলাকার অনুপ্রেরণা। তিনি তার ফসল নিয়ে ডিজিটাল কনটেন্টও তৈরি করছেন।

লাজুর বাবা আকবর আলী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বাবার অবসরের পর সংসারের হাল ধরেন লাজু। তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কৃষিকাজের প্রতি ভালোবাসা থেকে শুরু করেন চাষাবাদ। প্রথমে তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে কচুরলতি চাষ করেন। রবিশস্যের তুলনায় এই ফসলে বেশি লাভ হয়েছে। তিনি জানান, ‘তিন বছর ধরে কৃষি নিয়ে গবেষণা করছি। ইউটিউব দেখে কচুরলতি চাষ শিখেছি। আমাদের এলাকায় কেউ এই ফসল করে না। তাই আমি চেষ্টা করেছি।’

প্রথমবার ৩০ শতাংশ জমিতে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে লতি চাষ করেন। ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার লতি বিক্রি করেছেন। আরও ২ থেকে ২ দশমিক ৫ লাখ টাকার লতি বিক্রির আশা করছেন। চাষ শেষে অবশিষ্ট গাছ এবং চারা বিক্রিও হবে। তিনি বলেন, ‘লতি চাষে রোগবালাই কম, খরচও কম। প্রতি সপ্তাহে ছয় থেকে সাত মণ লতি বাজারে নিয়ে যাই। পাইকারি বাজারে প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।’

প্রথমদিকে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি থামেননি। এখন লাজুর দেখাদেখি অনেকেই লতি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তার স্ত্রী তৌহিদা বেগম ও ছেলে তৌফিক এলাহী সব সময় পাশে থাকেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও নিয়মিত পরামর্শ পান তিনি। লাজুর খামারে এখন সাথি ফসলের যৌথ বাগান রয়েছে। ৭৭ শতক জমিতে ২৩০টি গৌরমতি আমগাছ ও ৬০০ পেয়ারা গাছ লাগিয়েছেন। কিছু আমগাছ বিদেশি উন্নত জাতের। ৭৫ শতক জমিতে ৩৬০টি বারি-৪ জাতের আমগাছের মাঝে ১ হাজার ২০০ বস্তায় আদা চাষ করছেন। এ মৌসুমে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন।

অন্যদিকে ২০ শতক জমিতে ৪৬টি শরিফা গাছের মাঝে ১৬১টি পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন। এ ছাড়া ২০০টি বরই গাছ ও কলাগাছের বাগান করেছেন। পাশাপাশি একটি গরুর খামার গড়েছেন, যাতে ছয়টি গরু রয়েছে। গরুর গোবর থেকে ভার্মিকম্পোস্ট সার তৈরি করছেন।

বাগানের নিরাপত্তায় বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এলাকার কৃষকদের নিয়ে গোষ্ঠীগত উদ্যোগ গড়ার চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, ‘একই ধরনের ফসল একত্রে ঢাকায় পাঠালে সরাসরি ভালো দাম পাওয়া যাবে। এতে সবাই লাভবান হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে ছুটছে, তারা চাইলে উদ্যোক্তা হতে পারে। এতে পরনির্ভরশীল হতে হবে না, স্বাধীনভাবে কাজ করা যাবে।’

লাজুর উৎসাহে এলাকার অনেকে কৃষিকাজে এগিয়ে আসছেন। সাবেক ইউপি সদস্য নুরবানু জানান, ‘লাজু ভাইয়ের দেখাদেখি আমি ২০ শতক জমিতে মালটা, আমসহ পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছি। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছি।’

এলাকার কৃষক আবুল কালামও একই কথা বলেন। তরুণ কৃষকদের নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপ গড়েছেন লাজু। সেখানে সবাই কৃষি বিষয়ে তথ্য শেয়ার করেন। ডিজিটাল মাধ্যমেও সফল লাজু। ফসল ফলানোসহ খামারের নানা কাজের ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে দেন। সেখান থেকেও আয় হচ্ছে।

ফুলবাড়ী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘তৈয়বুর রহমান লাজু একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার প্রজেক্ট পরিদর্শন করেছি। সাথি ফসল ও যৌথ বাগান লাভজনক এবং জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’

চট্টগ্রামে লাম্পি স্কিন ডিজিজ  আতঙ্কে খামারিরা

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:১৫ এএম
চট্টগ্রামে লাম্পি স্কিন ডিজিজ  আতঙ্কে খামারিরা
খবরের কাগজ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অসংখ্য খামারি গবাদি পশু মোটাতাজা করছেন। গত বছর লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গরু ও বাছুরের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা কম হলেও বর্তমানে পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। কোরবানিযোগ্য পশুর শরীরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাধারণত এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। অস্বাভাবিক গরম ও মশা-মাছির বংশবিস্তারের ফলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর ওঠে। এরপর শরীরের কয়েক জায়গায় ছোট ছোট গুটি উঠতে শুরু করে, যা একপর্যায়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়া শুরু হয় এবং গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে লোম উঠে যায় ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপর এ রোগের প্রভাব পড়ায় গবাদি পশু মারাও যায়।

সাতকানিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে গবাদি পশুর মধ্যে এলএসডি ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমাদের কাছে এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই।’ 

যশোরে কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে খামারি অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৪২ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
যশোরে কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে খামারি অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং
‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা।রবিবার (১ জেুন) যশোরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কার্যালয়ে।খবরের কাগজ

‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে একদিকে যেমন উৎপাদন বহু গুণ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

রবিবার (১ জুন) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) যশোর অঞ্চলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। 
কর্মশালায় বলা হয়, ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ হচ্ছে একটি আধুনিক কৃষি পরিকল্পনা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে মাটি, আবহাওয়া, পানির প্রাপ্যতা এবং স্থানীয় কৃষি বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে কোন অঞ্চল কোন ফসল চাষে উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করা যায়। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হন।

অন্যদিকে ‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ একটি স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, যা কৃষকদের সরাসরি কৃষি তথ্য, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সারের সুপারিশ, ফসল বিমা ও নিকটবর্তী বাজারমূল্যের তথ্য দেয়। এ অ্যাপ কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে বাস্তব সময়ের সহায়তা প্রদান করে। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলমগীর বিশ্বাস কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণেই কৃষি আজ আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) আয়োজিত এই কর্মশালায় ডিএই যশোর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের খামারি মোবাইল অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং সিস্টেমবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ক্রপ জোনিং প্রকল্প, বিএআরসির সদস্য পরিচালক (শস্য) ও কো-অর্ডিনেটর ড. আবদুছ ছালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএই খামারবাড়ি ঢাকার অতিরিক্ত পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন।

কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্রপ জোনিং প্রকল্পের ক্রপ এক্সপার্ট ড. আজিজ জিলানী চৌধুরী। আর ক্রপ জোনিং সিস্টেমের ওপর বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন ক্রপ জোনিং প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবিদ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া খামারি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের বিস্তারিত তুলে ধরেন ক্রপ জোনিং প্রকল্প পরিচালক (কম্পিউটার ও জিআইএস ইউনিট) হাসান হামিদুর রহমান। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের কৃষিতে টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

যশোরে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৩২ এএম
যশোরে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক
যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া এলাকা খেত ধান কাটছেন কৃষিশ্রমিকরা। খবরের কাগজ

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকা কেশবপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ না হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার ধান উৎপাদন কম হয়েছে। তবে এ উপজেলার শতাধিক জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন করে যে বোরো আবাদ করা হয়েছে, সেসব খেতে শেষ মুহূর্তে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে ওইসব কৃষক খুশি। এর মধ্যে ‘ভারতীয় রড মিনিকেট’ নামে ধান আবাদকালে একই সময়ে সব ধানের শীষ বের না হওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েন কৃষক। আর যারা জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ধান চাষ করতে পারেননি, তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। 

কৃষকরা জানান, দেশের মধ্যে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত উপজেলা হিসেবে কেশবপুরের খ্যাতি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখানকার প্রধান নদনদী পলিতে ভরাট হওয়ায় ২০ বছর ধরে ৭ ইউনিয়নের শতাধিক বিলে প্রায় প্রতিবছরই বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ বছরও একই অবস্থায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়নি। এর মধ্যে বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের জন্য কৃষকরা আগেভাগেই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শতাধিক বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়ে আবাদ করেন। বিলের ধানখেতের মাঠগুলো সোনালি রঙের আভায় এক অপরূপ গড়ে ওঠে। সেচ, আগাছা পরিষ্কারসহ সব কাজ সম্পন্ন করে এখন অধিকাংশের ধান ঘরে তোলা হয়েছে। তবে এখনো মাড়াইয়ের কাজ অল্পকিছু বাকি আছে। 

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৭৯০ হেক্টর। জলাবদ্ধতার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০ হেক্টর কম জমিতে ধানের চাষ হয়। পুরো উপজেলায় এবার হাইব্রিড, উফশী জাতের ব্রি-২৮, ব্রি-৫০, ব্রি-৬৩, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৮ ও ব্রি-ধান-১০০ এবং ভারতীয় রড মিনিকেট ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড-৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও উফশী-৮ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। 

সূত্র আরও জানায়, উপজেলায় ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছিল ৮৫ হাজার ৯৯৮ টন। কিন্তু ২ হাজার ৫০ হেক্টর কম জমিতে চাষ না হওয়ায় ৩৩ কোটি ৫৭ হাজার টাকার ধান উৎপাদন হয়নি। উপজেলার বাগডাঙ্গা, পাঁজিয়া, কালীচরণপুর, বিলখুকশিয়া, কাটাখালী, মনোহরনগর, নারায়ণপুরসহ ৫০ বিলে জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো আবাদ হয়নি।

জলাবদ্ধ এলাকার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম, মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, তাদের গরালিয়া বিলের জমি ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে। ঘেরমালিক মাছ চাষের জন্য প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ঘের ভরাট করে। আবার ইরি-বোরো মৌসুমে শ্যালোমেশিন দিয়ে ঘেরের পানি নিষ্কাশন করলে কৃষকরা ধান আবাদ করে। জলাবদ্ধতার কারণে বিলের দেড় হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। দেউলি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, তাদের বাগদা-দেউলি বিলের এক হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কিরণ্ময় সরকার বলেন, ‘নদী ভরাটে সব বিলের পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধানের কম আবাদ হয়। ফলে এবারের ফলন অনুযায়ী ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার ধান কম উৎপাদন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবাদ করা এলাকার কৃষকের চাহিদামতো সার ও বীজের কোনো ঘাটতি ছিল না। আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। এ জন্য এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়।’

মাশরুম চাষে শাহীনের সাফল্য

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:২৫ এএম
আপডেট: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৩২ এএম
মাশরুম চাষে শাহীনের সাফল্য
নিজের খামার অজূফা মাশরুম সেন্টারে শাহীন মোল্লা। খবরের কাগজ

নরসিংদীর সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের শাহীন মোল্লা মালয়েশিয়া থেকে ফিরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথমে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। নিজের মায়ের নামে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ গড়ে তোলেন। এখান থেকে দেশ-বিদেশে মাশরুম সরবরাহ করছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। নারী-পুরুষ মিলে কাজ করছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। আছে ঢাকায় শোরুমও। শাহীনের সাফল্য দেখে তরুণরা আগ্রহী হচ্ছেন। সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চান তিনি।

শাহীন মোল্লা প্রায় এক যুগ আগে মালয়েশিয়ায় গিয়ে জাপানি এক বন্ধুর কাছ থেকে মাশরুমের চাষ শিখেছিলেন। পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে, সংসারের টানাপোড়েন সামলাতে না পেরে খালি হাতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তবে হাল না ছেড়ে, জাপানি বন্ধুর শেখানো দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নরসিংদীতে মাশরুম চাষে  মনোযোগ দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ নামে একটি মাশরুম খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। এখান তৈরি হচ্ছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন এখানে এসে মাশরুম চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন।

ওমর ফারুক নামে এক তরুণ জানান, তিনি পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। চলতি পথে উদ্যোক্তা শাহীন মোল্লার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি বলেন, ‘শাহীন ভাইয়ের মাশরুম চাষ দেখে আমারও আগ্রহ জন্মায়।’ এর পর তিনি প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ৩ হাজার বীজের একটি মাশরুম প্রকল্প শুরু করেন। মাঝে মধ্যে কাঁঠালিয়া গ্রামে গিয়ে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ থেকে পরামর্শ নেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার উৎপাদিত মাশরুম বিক্রিতে শাহীন ভাই সব সময় সহায়তা করেন।’

মাধবদী-খড়িয়া সড়কের পাশে, কাঁঠালিয়া গ্রামে অবস্থিত ‘অজূফা মাশরুম সেন্টারে’ বর্তমানে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মী চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারীকর্মীরা স্পন ও বীজ তৈরি এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন বলে জানান স্থানীয় শ্রমিকরা। শাহীনের সহকারী হিসেবে স্ত্রীকেও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি এখন শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দেওয়াসহ সার্বিক তদারকির পাশাপাশি বীজ রোপণের কাজ করছেন।

শাহীন বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে বিদেশ থেকে ফিরে মাশরুম চাষ শুরু করি। শুরুতে বিক্রি ও জনবল সংকটে অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন আমার উৎপাদিত মাশরুম দেশ-বিদেশে যাচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক মাশরুম চাষি তৈরি করেছি। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও বীজ সরবরাহ করে সহযোগিতা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। 

বছরজুড়ে আমার সেন্টার থেকে মাশরুম বাজারজাত করছি। বাড়ির নিচতলায় অফিস রয়েছে, আর ঢাকায় রয়েছে শোরুম। আমি মাশরুম দিয়ে স্যুপ, আচারসহ নানা ধরনের অর্গানিক পণ্য তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছি।’