নাটোরে সোনালি আঁশের দিন আবারও ফিরে আসছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় পাটের উচ্চমূল্য কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। চলতি বছরে নাটোরে পাটের উৎপাদন ও আবাদি জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। খেত থেকে পাটের গাছ কাটা, পচানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের কাজ একসঙ্গে চলছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে গ্রামীণ জনপদে কৃষকরা পাটের কর্মযজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেছেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৮ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৯ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে, লালপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার ৮১৫ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও সিংড়ায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এক দশক আগে নাটোরে পাটের আবাদি জমি চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরে প্রতি বিঘা জমিতে পাটের উৎপাদন ৯ মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলার লাড়ুয়া গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বিল ও ডোবায় শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। ওই কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তারা পানিতে না নেমেই পচানো পাট পাড়ে তুলে এনে আঁশ ছড়াচ্ছেন। জমেলা খাতুন বলেন, ‘আমাদের মজুরি পুরুষদের তুলনায় কম, তবে পাটের কাজ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ কুলসুম বিবি বলেন, ‘আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি।’
রাজাপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘাপ্রতি নয় মণ।’ জাঠিয়ান এলাকার কৃষক শামসুল আলম তার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি, বিঘায় অন্তত ৯ মণ পাট পাওয়া যাবে।’
সিংড়া উপজেলার বড়শাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করলে জমি অনাবাদি থাকে না।’ নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বাজারের সম্প্রসারণ ঘটায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’
নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাটগুলো, যেমন গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, নাটোর সদরের তেবাড়িয়া ও সিংড়ার হাতিয়ান্দহ হাটে গিয়ে দেখা যায় আগাম ওঠা পাটের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বাছেদ আলী বলেন, ‘হাটে ২ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছি।’ পাটের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মেম্বার বলেন, ‘পাটের দর কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্যই ভালো হবে। বর্তমানে পাটের দর আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।’
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নীলিমা জাহান জানান, ‘বর্তমানে পাটের গড় উৎপাদন বিঘাপ্রতি ৯ মণ। তবে খরা কাটিয়ে বৃষ্টি হওয়ায় গড় উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গত সপ্তাহের বৃষ্টি পাট জাগ দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়েছে। পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে-বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে আছে, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে তাদের সহায়তা করছে।’