ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নাটোরে সোনালি আঁশের সুদিন ফিরছে

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম
নাটোরে সোনালি আঁশের সুদিন ফিরছে
নাটোরের সিংড়া উপজেলার রাস্তার দুই পাশে ডোবায় নারী-পুরুষ পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরে সোনালি আঁশের দিন আবারও ফিরে আসছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় পাটের উচ্চমূল্য কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। চলতি বছরে নাটোরে পাটের উৎপাদন ও আবাদি জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। খেত থেকে পাটের গাছ কাটা, পচানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের কাজ একসঙ্গে চলছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে গ্রামীণ জনপদে কৃষকরা পাটের কর্মযজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেছেন।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৮ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৯ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে, লালপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার ৮১৫ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও সিংড়ায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এক দশক আগে নাটোরে পাটের আবাদি জমি চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরে প্রতি বিঘা জমিতে পাটের উৎপাদন ৯ মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

সিংড়া উপজেলার লাড়ুয়া গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বিল ও ডোবায় শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। ওই কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তারা পানিতে না নেমেই পচানো পাট পাড়ে তুলে এনে আঁশ ছড়াচ্ছেন। জমেলা খাতুন বলেন, ‘আমাদের মজুরি পুরুষদের তুলনায় কম, তবে পাটের কাজ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ কুলসুম বিবি বলেন, ‘আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি।’

রাজাপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘাপ্রতি নয় মণ।’ জাঠিয়ান এলাকার কৃষক শামসুল আলম তার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি, বিঘায় অন্তত ৯ মণ পাট পাওয়া যাবে।’

সিংড়া উপজেলার বড়শাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করলে জমি অনাবাদি থাকে না।’ নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বাজারের সম্প্রসারণ ঘটায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাটগুলো, যেমন গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, নাটোর সদরের তেবাড়িয়া ও সিংড়ার হাতিয়ান্দহ হাটে গিয়ে দেখা যায় আগাম ওঠা পাটের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বাছেদ আলী বলেন, ‘হাটে ২ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছি।’ পাটের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মেম্বার বলেন, ‘পাটের দর কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্যই ভালো হবে। বর্তমানে পাটের দর আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।’

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নীলিমা জাহান জানান, ‘বর্তমানে পাটের গড় উৎপাদন বিঘাপ্রতি ৯ মণ। তবে খরা কাটিয়ে বৃষ্টি হওয়ায় গড় উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গত সপ্তাহের বৃষ্টি পাট জাগ দেওয়ার জন্য সহায়ক হয়েছে। পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে-বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে আছে, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে তাদের সহায়তা করছে।’

কুষ্টিয়ায় সফলতার পথে মসলা গ্রাম প্রকল্প

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
কুষ্টিয়ায় সফলতার পথে মসলা গ্রাম প্রকল্প
কুষ্টিয়ার বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া মসলা গ্রাম প্রকল্প। খবরের কাগজ

সরকারি প্রণোদনায় গড়ে তোলা কুষ্টিয়ার বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া মসলা গ্রাম প্রকল্প এখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামের সব রাস্তার পাশে বিভিন্ন মসলার চারা লাগানো হয়েছে। বাড়ির আঙিনায়, পুকুরপাড়ে জিও ব্যাগে আদা ও হলুদের চাষ করা হচ্ছে। মাঠে মসলার চারা ও বীজতলার জন্য শেড তৈরি করা হয়েছে।

মসলা গ্রাম প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কৃষকদের মসলা বীজের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে গড়ে তোলা, উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানি-নির্ভরতা কমানো। প্রকল্পের আওতায়, রাস্তার পাশে লাগানো দারুচিনি, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলার গাছের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। খাঁচায় লাগানো গাছগুলো টিকে আছে এবং নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বেড়ে উঠছে। এতে করে কৃষকরা বাড়ির আঙিনা, উঠান, পুকুরপাড়সহ পতিত জায়গায় ব্যাগে বা বস্তায় আদা ও হলুদের চাষ বাড়াচ্ছেন।

এক বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের অধীনে রাস্তার পাশে রঙিন খাঁচায় দারুচিনি, তেজপাতা এবং অন্যান্য মসলার গাছ লাগানো হয়। বর্তমানে খাঁচার সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। কিছু গাছ মারা গেলে বা খাঁচা নষ্ট হলে তা আবার লাগানো হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মীরা এবং গ্রামের মানুষ মসলা গাছের পরিচর্যা করছেন।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ জানান, পলিনেটের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা ও মৌরি চাষ হচ্ছে। কৃষকরা বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় এবং পতিত জায়গায় জিও ব্যাগ ও বস্তায় আদা ও হলুদের চাষ করছেন।

ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, গত মৌসুমে ৩৬টি বস্তায় আদা চাষ করে ২১ কেজি আদা পেয়েছিলেন, যা ভালো দামে বিক্রি করেছেন। এবারে ৫০০ বস্তায় আদা লাগিয়েছেন এবং প্রতি বস্তায় এক কেজি আদা পাওয়ার আশা করছেন। তিনি আশা করেন, কোনো রোগবালাই না হলে এবারের ফলনও ভালো হবে।

নূর আলম নামে এক কৃষক জানান, তিনি আদা, পেঁয়াজ-রসুন, তেজপাতা, দারুচিনি ও চুই ঝাল চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ তাদের নিয়মিত সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। গত বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি চাষ করা হচ্ছে। সরকারের দেওয়া জিও ব্যাগের সাহায্যে অনেক বেশি বস্তায় চাষ করা হচ্ছে।

নারী কৃষক আমেনা খাতুন জানান, তিনি বাড়ির আঙিনা এবং পুকুরপাড়ে মসলার চাষ শুরু করেছেন। প্রাথমিকভাবে কৃষি কর্মকর্তাদের কথা বিশ্বাস না করলেও এখন বাজারে ভালো দাম পাওয়ার পর গ্রামের অধিকাংশ মানুষই মসলার চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, ‘এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং মসলার উৎপাদন বাড়ানো। রাস্তার পাশে লাগানো গাছগুলো বড় হলে আগামী বছর থেকে তেজপাতা এবং পরবর্তী বছরে দারুচিনি সংগ্রহ করা যাবে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্প সফলতার দারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং এর মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

সাম্প্রতিক বন্যা লক্ষ্মীপুরে কৃষিতে ক্ষতি ২২৭ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১২ এএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১২ এএম
লক্ষ্মীপুরে কৃষিতে ক্ষতি ২২৭ কোটি টাকা
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের খেত। সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ লাখ ৫৭ হাজার ২০৯ জন কৃষক ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান ও আমনের বীজতলার। এ ছাড়া রোপা আমন, সবজি খেত, পান, আখ, হলুদ, আদা, সুপারি, পেঁপে, কাঁঠাল, কলাসহ নানা জাতের ফলদ গাছ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ২ হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে, যা মোট বীজতলার ৭০ শতাংশের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪২০ কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলায় রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬১০ দশমিক ৭০ হেক্টর জমির, যা আবাদকৃত মোট জমির ৫৩ শতাংশ। এতে ৩১ হাজার ৭০৬ কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

২৪ হাজার ৪২৩ জন কৃষকের ৪ হাজার ৭০ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। বোনা আমনে ৯ হাজার ৭২০ কৃষকের ১ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বন্যায় ১০ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির শরৎকালীন শাকসবজি নষ্ট হয়েছে, যা আবাদকৃত জমির শতভাগ। এতে ২০ হাজার ৭৮০ কৃষকের ৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পান নষ্ট হয়েছে ১১২ দশমিক ২ হেক্টর জমির। এতে ১ হাজার ৬৬৩ কৃষকের ক্ষতি ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
আদা নষ্ট হয়েছে ২৪০ জন কৃষকের ৮৩ দশমিক ৩৩ হেক্টর জমির। ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ টাকার। ৩৯ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৮ টন হলুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ হাজার ৪০ জন কৃষকের ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

৭৪৪ জন কৃষকের ৯ দশমিক ৩ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২ হাজার ৭৩ জন ফলচাষির ৪১ দশমিক ৪৬ হেক্টর জমির ফল বাগান নষ্ট হয়েছে। এতে ২০৭ টন ফলের ক্ষতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, ‘চলমান বৃষ্টি ও বন্যায় লক্ষ্মীপুরের ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। কৃষকের আমনের বীজতলা, রোপা আমন খেত, পান, সবজি ও ফলদ গাছ নষ্ট হয়েছে; যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন প্রণোদনা সরবরাহ করার জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছে। এরই মধ্যে আমরা ছয় হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাদের অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগাম রবি মৌসুমের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে পেয়েছি। ১৩ হাজার ২০০ কৃষকের মাঝে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, মুগ, মসুর, খেসারি, চিনাবাদাম, সয়াবিন ও শীতকালীন পেঁয়াজের বীজ বিতরণের কর্মসূচি আসবে।’

তিনি বলেন, ‘৬৫ হাজার কৃষকের জন্য শীতকালীন সবজির প্রণোদনার চাহিদা পাঠিয়েছি। তারা যাতে বাড়ির আঙিনায় শীতকালীন সবজির চাষাবাদ করতে পারেন, সে সহযোগিতা করা হবে।’ সব মিলিয়ে কৃষকের জন্য যতটুকু করণীয়, তা করার জন্য কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

নাটোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধানের চাষ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ পিএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
নাটোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধানের চাষ
ছবি : খবরের কাগজ

নাটোর জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর বেশি হয়েছে। কৃষকদের আশা, এবারে ধানে ভালো ফলন পাবেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ১০০ হেক্টর। কিন্তু ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৭৯ হাজার ৭২০ হেক্টর।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় তিন হাজার ৭৮০ হেক্টর, সিংড়ায় ২১ হাজার ৬৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে পাঁচ হাজার ৪৭৫ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ১৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর, লালপুরে আট হাজার ৪৭০ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় আমন ধানের চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১০ হেক্টর।

ওই সূত্র আরও জানায়, এর মধ্যে উফশী রোপণ হয়েছে এক হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। বাকিগুলো হাইব্রিড ও স্থানীয় জাত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওই ধান চাষের জন্য জেলায় মোট তিন হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেন কৃষকরা। এর মধ্যে হাইব্রিড ধানের বীজতলা ছিল ২১৫ হেক্টর, উফশী তিন হাজার ২৩০ হেক্টর আর স্থানীয় জাতের বীজতলা করা হয় ৩৫ হেক্টর জমিতে।

নাটোর সদর উপজেলার ভাটোদাঁড়া গ্রামের কৃষক আবু হাকিম মৃধা জানান, তিনি এক বিঘা ব্রি২৯ ছাড়াও এক বিঘা জমিতে বাবু কাটারী ধানের চাষ করেছেন। ধানের চারা কেনা থেকে শুরু করে শ্রমিক দিয়ে রোপণ করা পর্যন্ত তার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা।

তিনি জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ধান চাষের আগে জমিতে পানি সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি বিধায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধান চাষে খরচ কম হয়েছে। আবার পর্যাপ্ত পানি পাওয়ায় ধানের চারা বেশ সতেজ হয়েছে। এমন অবস্থায় ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।

নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর চকপাড়া গ্রামের কৃষক জরিপ জানান, তিনি ব্রি২৯, স্বর্ণাসহ মোট দুই বিঘা জমিতে তিন জাতের ধান রোপণ করেছেন। নিজেরা পরিশ্রমের পাশাপাশি কয়েকজন শ্রমিকও নিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত তাদের মোট খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।

তিনি জানান, এবারে ধান চাষে সেচে তেমন খরচ হয়নি। তা ছাড়া ধান রোপণেও শ্রমিক খরচ কম হয়েছে। জমিতে পানি থাকায় তেমন আগাছাও হয়নি। আবার পর্যাপ্ত পানি থাকায় ধানগাছের চেহারাও সুন্দর আছে। এমন অবস্থায় ভালো ফলনের মাধ্যমে ভালো লাভের আশা করছেন তিনি।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, অনুকূল পরিবেশ আর পর্যাপ্ত পানি থাকায় এবারে কৃষকদের ধানচাষে খরচ কমেছে; অপরদিকে ধানগাছের চেহারা ভালো আছে। নেই কোনো পোকা-মাকড়ের আক্রমণ। এমন অবস্থায় ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হবেন এমন প্রত্যাশা করছেন তিনি।

কামাল মৃধা/জোবাইদা/অমিয়/

ফেনীতে দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি বালুচাপায় চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়ার শঙ্কা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ এএম
চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়ার শঙ্কা
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে আসা বালুতে চাপা পড়েছে কৃষিজমি। বাসস

ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে আসা বালুতে চাপা পড়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ৮৫ শতাংশ জমির রোপা আমন। উপজেলা কৃষি বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বালুর কারণে কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় স্থানীয় কৃষকরা এখন গভীর শঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। খবর বাসসের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরশুরামে ভয়াবহ বন্যার সময় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়দের মতে, বন্যার পানির স্রোতের সঙ্গে আসা বালু কৃষি জমিতে জমাট বেঁধেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও জমিতে জমে থাকা বালু সরানো যায়নি। কৃষিজমিতে জমে থাকা বালু তুলে ফেলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ৩ দফা বন্যায় মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০ আগস্ট ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের বন্যায় পরশুরামের ৯০ শতাংশ এলাকা ৮ থেকে ১৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢলে সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ৫টি, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ৭টি এবং কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ২টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এসব ভাঙন দিয়ে তীব্র স্রোতে বন্যার পানিতে ভেসে আসে বালু। পরশুরামের বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমিতে ৫ ফুট পর্যন্ত বালু জমে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮২৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, যা মোট আবাদের ৮৫ শতাংশ। এসব জমির বেশির ভাগই বন্যার পলিতে ভরে গেছে। কয়েক শ পুকুরও ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বালুর কারণে বেশির ভাগ জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব অলকা গ্রামের সোহাগ ভূঁইয়া জানান, এখানে সব জমিতে ৪-৫ ফুট করে বালু জমেছে। রাঙামাটিয়া গ্রামের কৃষক জাফর আহমেদ বলেন, তিনি তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলেন। এখন সব জমি বালু পড়ে চাষের অযোগ্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের দেওয়া চাল, ডাল খেয়ে বেঁচে আছি। ভবিষ্যৎ কীভাবে চলবে জানি না।’

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, জমির ক্ষতি দ্রুত সংস্কার করা না হলে দীর্ঘ সময় জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সিফাত হাসান জানান, বন্যায় ৮৫ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন চারা বা বীজতলা তৈরি করে আমন রোপণ করতে হবে। তবে বালু যেভাবে জমেছে, তা দ্রুত সরানো না গেলে চাষ করা যাবে না এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, কাশিনগরে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানের ভাঙন দিয়ে ভেসে আসা বালুতে তাদের গ্রামের বেশির ভাগ জমি বালুচাপা পড়েছে। ফসল কয়েক ফুট বালুর নিচে চাপা পড়েছে। জমি থেকে এসব বালু তোলা যাবে কি না জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যার কারণে কৃষি জমিতে বালু জমেছে। জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু সরাতে হবে এবং কৃষক নিজ জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু তুলতে পারবেন।

আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি খেতে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। মাসখানেক আগে আমন ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হলেও সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার ফলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আবার আমন ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ৬৬০ হেক্টর, উচ্চফলনশীল জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ২০ হেক্টর। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাকি ৬০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে আগাম রোপণ করা ১২৯ হেক্টর আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩২ জন আমন চাষি ২ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া ৮ হেক্টর আমন বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ১৫৭ জন কৃষকের ৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা গ্রামের আমন চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘জমিতে বন্যার পানি থাকায় এবার একটু দেরিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফসল ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পরিচর্যা করব যাতে লাভবান হতে পারি।’

ছদাহা ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সার ও কীটনাশকের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে আশানুরূপ ফলন হবে। কারণ এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ লাগে না। তাই বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমে খরচ অনেক কম। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করি ফলন ভালো হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিটু দাশ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আগাম রোপণ করা কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো যেহেতু আমন রোপণের সময় আছে, তাই আমরা তাদের একই জমিতে নতুন করে চারা রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে আমরা কৃষকদের পাশে থাকব।’

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় আমন ধানের চারা রোপণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এ বছরও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কিছু কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে, এতে অনেক কৃষক এখনো চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি। অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আশাবাদী।’