শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম গোমড়া। এই গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা নানা ধরনের সবজির আবাদ করেন। এই গ্রামের সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। গ্রামটি ইতোমধ্যে সবজির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
গোমড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, একটা সময় এ এলাকায় বহু জমি অনাবাদি থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে তা চাষাবাদের আওতায় আসতে শুরু করে। এ গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দাই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে নানা ধরনের সবজির আবাদ করতে থাকেন। এখন এ গ্রামে বরবটি, কাঁকরোল, ধুন্দুল, লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করছেন। মূলত, শীতের সময় শীতের আগাম সবজি ও গরমের সময় গরমের আগাম সবজি আবাদ বেশি করেন এখানকার বাসিন্দারা। আর এসব সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এভাবেই নিজেদের সংসারের চাকা সচল রাখছেন এখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু এই পাহাড়ি এলাকার রাস্তাগুলো কাঁচা ও গর্তে ভরা। সবজি পরিবহনে সমস্যা হয়। এ কারণে গ্রামের বাসিন্দারা সবজির ন্যায্য দাম পান না।
সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে দেখা গেছে, যেদিকে তাকানো যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। কেউ চাষ করেছেন বরবটি, কেউ করেছেন লাউ, কেউবা করেছেন কাঁকরোল ও ধুন্দুল। অনেকেই আবার অনেক আগাম সবজি বিক্রি শেষে নতুন করে প্রস্তুত করছেন মাঠ। শুধু এই গোমড়া গ্রামে প্রায় ৪০০ একর জমিতে সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষে পাঁচ শতাধিক পরিবার সরাসরি যুক্ত।
এ গ্রামের বাসিন্দা ফজল মিয়া। ভিটেবাড়ি ছাড়া তার নিজের জমি নেই। আগে দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে নানা আগাম জাতের সবজির চাষ করেন। এবার তিনি ১০ কাঠা জমিতে কাঁকরোল ও বরবটি আবাদ করেছেন। সবজি বিক্রি করে ইতোমধ্যে পেয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখনো জমিতে রয়েছে অনেক সবজি। এককালীন বর্গার টাকা দেন। তারপর খুঁটির জন্য বাঁশ কেনেন। এরপর সার ও বিষ প্রয়োগ করেন। খরচ বলতে এইটুকুই।
ফজল মিয়া বলেন, ‘ভাই আগে যে পরিমাণ কষ্ট করছি, মানষের জমিতে সারা দিন কামলা দিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পাইছি। এই টাকা নিয়া বাজার করবার গেলে কষ্ট হইছে। পরে আমার বাড়ির পাশে এক ভাইয়ের জমি বর্গা নিয়া শুরু করলাম আগাম সবজির চাষ। এখন আল্লাহর রহমতে নিজেও ভালা আছি, পরিবারও সুন্দরভাবে চলতে পারতাছে।’
আরেক কৃষক ইয়াকুব মিয়া বলেন, ‘এখানে কেউ জমি ফেলে রাখেন না। এ গ্রামে যে পরিমাণ সবজির আবাদ হয়, তাতে গ্রামটি এখন সবজির গ্রাম নামে মানুষ চেনে।’
কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল শতভাগ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সমস্যাও আছে। এই অঞ্চলে হাতির উপদ্রব আছে। তা ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। এখান থেকে দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আমাদের। এই দুই কারণে আমরা অনেকেই একটু পিছিয়ে আছি। একদিকে হাতি ফসল নষ্ট করে। অন্যদিকে কাঁচা রাস্তায় আমরা সবজি নিতে পারি না। নিলেও সঠিক দাম পাই না। আমরা কৃষকরা অবহেলিত। হাতি ঠেকাতে আমাদের এলাকায় সোলার ফ্রেন্সিং ব্যবস্থা করা দরকার। গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা করলে আমাদের খুব উপকার হবে।’
কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ‘এটা পাহাড়ি এলাকা। এ এলাকায় আমরা সবজির আবাদই করি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোল লাগাইছি। আজকেও আমি ১১ হাজার টাকার বিক্রি করছি।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে কাঁকরোল এবং বরবটির পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়। আমরা এই সবজিগুলো সাধারণত বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পাই। যে সময় বাজারে সবজির ক্রাইসিস থাকে, তখন এই বরবটি ও কাঁকরোলের আবাদ হয়ে থাকে। এই সবজি কৃষকরা সরাসরি ঢাকার বাজারে পাঠিয়ে দেন। এ কারণে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। কৃষি অফিস তাদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে চায়। কৃষি অফিসের পরামর্শে সবজির আবাদ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন।