ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি খেতে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। মাসখানেক আগে আমন ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হলেও সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার ফলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আবার আমন ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ৬৬০ হেক্টর, উচ্চফলনশীল জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ২০ হেক্টর। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাকি ৬০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে আগাম রোপণ করা ১২৯ হেক্টর আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩২ জন আমন চাষি ২ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া ৮ হেক্টর আমন বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ১৫৭ জন কৃষকের ৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা গ্রামের আমন চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘জমিতে বন্যার পানি থাকায় এবার একটু দেরিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফসল ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পরিচর্যা করব যাতে লাভবান হতে পারি।’

ছদাহা ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সার ও কীটনাশকের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে আশানুরূপ ফলন হবে। কারণ এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ লাগে না। তাই বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমে খরচ অনেক কম। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করি ফলন ভালো হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিটু দাশ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আগাম রোপণ করা কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো যেহেতু আমন রোপণের সময় আছে, তাই আমরা তাদের একই জমিতে নতুন করে চারা রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে আমরা কৃষকদের পাশে থাকব।’

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় আমন ধানের চারা রোপণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এ বছরও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কিছু কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে, এতে অনেক কৃষক এখনো চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি। অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আশাবাদী।’

অতিবৃষ্টি শিম চাষে লোকসানের আশঙ্কা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৫ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
শিম চাষে লোকসানের আশঙ্কা
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি এলাকায় বৃষ্টির পানিতে শিমখেতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। খবরের কাগজ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় বৃষ্টির পানিতে কয়েক হেক্টর জমির শিমগাছ তলিয়ে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে গাছের গোড়ায় পচন ধরছে এবং শিমের ফুল ঝরে পড়ছে। এ কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। মুলাডুলি ইউনিয়নে ২৫০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদে বিপর্যয়ের কারণে কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম পড়লেও ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তবে সেপ্টেম্বরজুড়ে বৃষ্টিপাত ছিল। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকা ও সাত ইউনিয়নে ৯১০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মুলাডুলিতেই ২৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এই ইউনিয়নের বাঘহাছলা, শেখপাড়া, গোয়ালবাথান ও মুলাডুলি মধ্যপাড়া এলাকায় শিমের আবাদ বেশি হয়েছে।

এসব এলাকার শিম চাষিরা জানান, এ বছর আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বেশির ভাগ জমিতে লাগানো আগাম শিমের গাছ পানিতে ডুবে যায়। এতে শিমগাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গাছের গোড়ায় পচন ধরায় শিমের ফুল ঝরে পড়ছে। শিমগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেও পচন ও ফুল ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত শিম উৎপন্ন হতো। কিন্তু বৃষ্টিতে শিমগাছ ডুবে যাওয়ায় অর্ধেকেরও কম শিম উৎপাদন হতে পারে। এ বিপর্যয়ে তারা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

শেখপাড়া গ্রামের শিম চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে আগাম শিমের আবাদ করেছেন। সব ঠিক ছিল কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে উৎপাদন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি আরও জানান, ৫ বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এবার পুরো টাকাই লোকসান হবে।

মুলাডুলির শিম চাষি রাজিব হোসেন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শিম চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন পানি কমতে শুরু করলেও পোকার আক্রমণে গাছ মরে যাচ্ছে। শিমের ফুল দেখা গেলেও তা নষ্ট হয়ে গেছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, উপজেলায় মোট ৯১০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে মুলাডুলি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় শিমের আবাদের জমির পরিমাণ ২৫০ হেক্টর। পানি বের হওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর বৃষ্টিতে ওই এলাকার ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে অতিরিক্ত বা ভারী বৃষ্টি হলে এ জলাবদ্ধতা আরও বাড়ে। কৃষকদের যাতে সমস্যায় না পড়তে হয়, সে জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি জানান, প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিম চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা বন্যায় নিঃস্ব ৩ লাখ কৃষক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
বন্যায় নিঃস্ব ৩ লাখ কৃষক
লক্ষ্মীপুর সদরের হাজারও পরিবার এখনো পানিবন্দি। ছবিটি সম্প্রতি জয়রামপুর গ্রাম থেকে তোলা হয়েছে। খবরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরে বন্যায় বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার কৃষি ও মৎস্য খাতে, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ৮৭০ কোটি টাকা। বন্যার ফলে প্রায় ৩০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর উপজেলায়, যেখানে এখনো ১৫ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। 

সব হারিয়ে নিঃস্ব প্রায় তিন লাখ কৃষক। বন্যার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ২০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় ও স্থানীয়দের তথ্যে জানা গেছে, গত ২০ বছরের মধ্যে এত পানি ও জলাবদ্ধতা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা লক্ষ্মীপুরের মানুষ দেখেনি। দেড় মাস পার হলেও অনেক এলাকায় এখনো পানি নামেনি, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। 

গত ১৭ আগস্ট থেকে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ সময় রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পানি প্রবেশ করে। ফলে একের পর এক গ্রাম ও শহর পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৫ উপজেলার ৯০ শতাংশ মানুষ। 

বন্যায় ৫০ হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। যার মোট ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ও আমনের বীজতলা। জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। 

এ ছাড়া পানির তোড়ে ২০০টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৯ হাজার ৮৭০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর মধ্যে পুঁজিসহ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিন লাখ কৃষক। 

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে বানভাসি এসব মানুষ। সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের জাকির হোসেন ও জয়পুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, দেড় মাস পার হলেও এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। পানিতে পচে গেছে ঘরের আসবাবপত্র, আর ঘরের ভিটেমাটি ধসে গেছে। 

বালাইশপুর এলাকার আদর্শ খামারের মালিক ফারুকুর রহমান বলেন, ‘বন্যার ফলে চারটি পুকুর ও তিনটি ঘেরের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে, আর গবাদিপশুর খো-খাদ্যে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংকের ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন, ওই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’ 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। কৃষকের সংখ্যা তিন লাখ। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘মোট শস্যখেত রয়েছে ৯০ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৫৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল, যার ক্ষয়ক্ষতি ৬৩৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। পাশাপাশি খালগুলোর বাঁধ অপসারণ ও দুই পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন উচ্ছেদ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬৯ টন চাল ও ৬৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

নওগাঁয় আমন চাষ, বাড়তি খরচে উদ্বিগ্ন চাষিরা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
নওগাঁয় আমন চাষ, বাড়তি খরচে উদ্বিগ্ন চাষিরা
নওগাঁয় আমন ধানখেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

নওগাঁ ধান উৎপাদনে দেশসেরা। চলতি বছরে ১১ উপজেলায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের পাশাপাশি চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনাবৃষ্টি ও বাড়তি খরচের কারণে চাষিরা উদ্বিগ্ন। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছে। সঠিক দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

নওগাঁর ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চোখজুড়ানো সবুজ আমন খেত। আবাদের শেষ সময়ে কীটনাশক বা বালাইনাশক প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন চাষিরা। অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে উঠবে আমন ধান। শরতের পর হেমন্তে নতুন ফলন ডেকে আনবে নবান্ন। কৃষকের স্বপ্ন পূরণের হাতছানি দিচ্ছে মৌসুমের নতুন ধান।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত ও প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২ লাখ টন।

আমন মৌসুমের চাষাবাদ বৃষ্টিনির্ভর। কিন্তু খড়ার কারণে চলতি বছর চারা রোপণে কিছুটা দেরি হয়েছে। চাষিদের অনেকে ভূগর্ভের পানি তুলে সেঁচ দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে। আমন মৌসুমে আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস হালচাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর চারা রোপণ করেন কৃষক। ইতোমধ্যে সবুজ খেতে নতুন ধানের দেখা মিলেছে। কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফসল কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আবাদে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলন আসবে।

পত্নীতলা উপজেলার চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে ডিপ টিউবওয়েলের সাহায্যে চারা রোপণ করতে হয়েছে এবং তিনবার সেঁচ দিতে হয়েছে, যার ফলে খরচ বেড়ে গেছে ৫০০-৬০০ টাকা প্রতি বিঘা। 

চাষি মনিরুল বলেন, ‘নওগাঁয় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী ও মান্দা উপজেলায়। এসব এলাকায় চাষিরা চলতি মৌসুমে জিরাশাইল, কাটারি ও অন্যান্য সরু জাতের ধানের আবাদ বেশি করেছেন। মোটা বা হাইব্রিড কম চাষ হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলায় চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষ বেশি হয়েছে।’

মহাদেবপুর উপজেলার পয়নারী গ্রামের আমন চাষি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মহাদেবপুর ও বদলগাছীর বেশিরভাগ চাষি চিকন, চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের আবাদ করেছেন। চিনিগুঁড়া ধান ঘরে উঠতে অন্য জাতের চেয়ে সময় বেশি লাগে। খরচও বেশি হয়। রোপণ থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই মাস পর ফলন ঘরে ওঠে। হেক্টর প্রতি ফলন আসে ২৫ থেকে ৩০ মণ। চিনিগুঁড়া ধানের চাল মিলার ও ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিদেশে বিক্রি করেন। তাই হাটগুলোতে সারা বছর এই ধানের চাহিদা থাকে। গত বছর মহাদেবপুর হাটে প্রতি মণ চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা।’

মাতাজি গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বাড়তি দামে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করে আবাদ করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সার-কীটনাশক কিনতে গিয়ে চাষিরা সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন। খুচরা সার বিক্রেতারা সরকারি মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে সার কিনতে বাধ্য করছেন। কৃত্রিম সংকট ও সরবরাহে ঘাটতির অজুহাতে ইউরিয়া ২২ টাকার স্থলে ২৮ টাকা, পটাশ সার ১৫ টাকার স্থলে ১৮ থেকে ২০ টাকা, ডিএপি ও অন্যান্য সারের কেজিতেও ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া হালচাষে (৪ চাষ) বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, নিড়ানি ও অন্যান্য কাজে শ্রমিকের ব্যয় গত বছরের চেয়ে অন্তত ১ হাজার টাকা বেড়েছে।

চাষিরা অভিযোগ করেছেন, বালাইনাশক ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারের তদারকি নেই। চলতি মৌসুমে কৃষকদের বিঘাপ্রতি খরচ ১৮-২০ হাজার টাকা, গত বছরের তুলনায় ৪-৫ হাজার টাকা বেড়েছে। নওগাঁয় বাড়তি খরচ ৩০০ কোটি টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁর ১১ উপজেলায় ১১ হাজার ২০০ প্রান্তিক চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উফশী ধান চাষিদের ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার ও ১০ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ২০০ জন চাষিকে হাইব্রিড ধানের বীজ ২ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। মৌসুমের এই গুরুত্বপূর্ণ সময় পোকা ও বালাইয়ের আক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় চাষিদের প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জানান, নওগাঁ কৃষি প্রধান জেলা, যেখানে ৮৬ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার অর্থনীতির ৮০ শতাংশ ধান-চাল উৎপাদন থেকে আসে। চাষিদের সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সঠিক মূল্য নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ ছাড়া, ধানের হাটে সিন্ডিকেট ভাঙা ও কৃষি উপকরণের বাজার তদারকির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডুবে যাওয়া জমি থেকে ফসলি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কৃষকরা। সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাষকলাই চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। খবর বাসসের।

গত ১৬ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা— কোনোটির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় বিপৎসীমার ১.৩৭ মিটার, মহানন্দায় ১.৫১ মিটার এবং পুনর্ভবায় ২.০৭ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় ১৯৩২ হেক্টর জমির মাষকলাই, ৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৪০ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি এবং ৩ হেক্টর জমির চিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাষকলাই চাষিরা।

জেলায় মোট ফসলের ২.৭৪ শতাংশ ফসল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মাষকলাইয়ে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সবজিতে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, রোপা আউশে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং চিনাতে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। সম্ভাব্য উৎপাদিত ফসলের সম্ভাব্য মূল্য হিসাবে এই আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, বারোঘরিয়া, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, ছত্রাজিতপুর, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ি ও আলীনগর ইউনিয়নকে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের নিয়মিত প্রণোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এলে সেগুলো কৃষকদের সময়মতো প্রদান করা হবে।

জুমের ধান কাটা শুরু সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রঙিন

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রঙিন
বান্দরবান থানচি উপজেলায় বলিপাড়া এলাকায় জুমের পাকা ধান কাটছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

পার্বত্য এলাকায় জুম চাষের ধান কাটা শুরু হয়েছে, যেখানে পাহাড়ের ঢালু ভূমিতে ধান সোনালি হয়ে উঠেছে। এ বছর দেরিতে বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও, অন্যত্র ধান এখনো সবুজ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায় জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জুমচাষীরা পরিবারসহ ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। তবে আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের জুমচাষী মিলন ত্রিপুরা জানান, এ বছর তার ১২ আড়ি জুমের ধান কাটছেন, কিন্তু ফলন তেমন ভালো হয়নি। আবহাওয়ার অনিয়ম- বৃষ্টির অভাব, আবার অতিবৃষ্টি- ফসলের গুণগত মান কমিয়ে দিয়েছে। তিনি ২০০ আড়ি ধান পাওয়ার আশা করছেন। কিন্তু যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকত, তা হলে ৩০০ আড়ি ধান পেতেন। অনেক চাষীর খেতেও ধান নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির কারণে, ফলে আগামী বছর খাদ্যসংকটের সম্ভাবনা রয়েছে।

পুষ্পরানি ত্রিপুরা (১৮) জানান, তারা জুম চাষ করেছেন। কিন্তু তাদের জুমের ধান এখনো কাটার উপযুক্ত হয়নি। তাই তারা প্রতিবেশী দুলাভাইয়ের পাকাধান শ্রমের বিনিময়ে কাটতে সহযোগিতা করছেন। কিছুদিন পর তাদের জুমের ধান কাটার উপযুক্ত হলে তাদের থেকেও শ্রম দিয়ে জুমের ধান কাটার সহযোগিতা পাবেন বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম চাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জঙ্গল কাটা হয়। পরে কাটা জঙ্গল রোদে শুকানোর পর মার্চ-এপ্রিল মাসে আগুন দেওয়ার জন্য প্রথমে ফায়ারিং লাইন করে জঙ্গল পোড়ানো হয়। এপ্রিল মাস জুড়ে জুমের জায়গা পরিষ্কার করে ধান বপনের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হয়। বৃষ্টি হলেই জুমের জায়গায় ধানসহ সাথী ফসল বপন করা হয়। যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর জুমে ধানসহ সাথী ফসল বপন করতে পারেন, তাদের ধান আগে পাকা শুরু করে। আর যারা একটু দেরিতে বপন করেন, তাদের ধান দেরিতেই পাকে। প্রতিবছর আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর প্রক্রিয়া চলে। ধান শুকানোর পর জুমঘর থেকে মূলঘরে ধান স্থানান্তর করার পর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব পালিত হয়।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২০২১ সালে জুম আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৬৭ দশমিক ২২ টন চাল। ২০২২ সালে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২৯২ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪১৮ দশমিক ১২ টন চাল। ২০২৩ সালে জুম চাষ আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ টন চাল। চলতি বছর ২০২৪ সালে জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায়, আবাদ অর্জনে ৮ হাজার ২৬৭ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৭১ টন চাল। বর্তমানে জুমের ধান কাটা চলমান রয়েছে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী বলেন, বান্দরবানে চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার ৩ হেক্টর জায়গায় জুমের আবাদ হয়েছে। জুমে ধান ছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর জুমের ফলন ভালো হবে আশা করা যায়। তবে পার্বত্য অঞ্চলের কারণে বৃষ্টি সব জায়গায় সমানভাবে না হওয়ার কারণে উৎপাদনে তারতম্য হয়। একেক জায়গার ফলন একেক রকম হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলায় জুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে এবং অন্যান্য উপজেলায়ও জুমের ধান কাটা শুরু হবে।’