চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। মাসখানেক আগে আমন ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হলেও সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার ফলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আবার আমন ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ৬৬০ হেক্টর, উচ্চফলনশীল জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ২০ হেক্টর। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাকি ৬০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে আগাম রোপণ করা ১২৯ হেক্টর আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩২ জন আমন চাষি ২ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া ৮ হেক্টর আমন বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ১৫৭ জন কৃষকের ৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা গ্রামের আমন চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘জমিতে বন্যার পানি থাকায় এবার একটু দেরিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফসল ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পরিচর্যা করব যাতে লাভবান হতে পারি।’
ছদাহা ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সার ও কীটনাশকের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে আশানুরূপ ফলন হবে। কারণ এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ লাগে না। তাই বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমে খরচ অনেক কম। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করি ফলন ভালো হবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিটু দাশ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আগাম রোপণ করা কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো যেহেতু আমন রোপণের সময় আছে, তাই আমরা তাদের একই জমিতে নতুন করে চারা রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে আমরা কৃষকদের পাশে থাকব।’
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় আমন ধানের চারা রোপণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এ বছরও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কিছু কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে, এতে অনেক কৃষক এখনো চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি। অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কিছু আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আশাবাদী।’