ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে আসা বালুতে চাপা পড়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ৮৫ শতাংশ জমির রোপা আমন। উপজেলা কৃষি বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বালুর কারণে কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় স্থানীয় কৃষকরা এখন গভীর শঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। খবর বাসসের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরশুরামে ভয়াবহ বন্যার সময় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়দের মতে, বন্যার পানির স্রোতের সঙ্গে আসা বালু কৃষি জমিতে জমাট বেঁধেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও জমিতে জমে থাকা বালু সরানো যায়নি। কৃষিজমিতে জমে থাকা বালু তুলে ফেলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ৩ দফা বন্যায় মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০ আগস্ট ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের বন্যায় পরশুরামের ৯০ শতাংশ এলাকা ৮ থেকে ১৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢলে সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ৫টি, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ৭টি এবং কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ২টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এসব ভাঙন দিয়ে তীব্র স্রোতে বন্যার পানিতে ভেসে আসে বালু। পরশুরামের বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমিতে ৫ ফুট পর্যন্ত বালু জমে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮২৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, যা মোট আবাদের ৮৫ শতাংশ। এসব জমির বেশির ভাগই বন্যার পলিতে ভরে গেছে। কয়েক শ পুকুরও ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বালুর কারণে বেশির ভাগ জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
চিথলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব অলকা গ্রামের সোহাগ ভূঁইয়া জানান, এখানে সব জমিতে ৪-৫ ফুট করে বালু জমেছে। রাঙামাটিয়া গ্রামের কৃষক জাফর আহমেদ বলেন, তিনি তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলেন। এখন সব জমি বালু পড়ে চাষের অযোগ্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের দেওয়া চাল, ডাল খেয়ে বেঁচে আছি। ভবিষ্যৎ কীভাবে চলবে জানি না।’
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, জমির ক্ষতি দ্রুত সংস্কার করা না হলে দীর্ঘ সময় জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সিফাত হাসান জানান, বন্যায় ৮৫ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন চারা বা বীজতলা তৈরি করে আমন রোপণ করতে হবে। তবে বালু যেভাবে জমেছে, তা দ্রুত সরানো না গেলে চাষ করা যাবে না এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, কাশিনগরে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানের ভাঙন দিয়ে ভেসে আসা বালুতে তাদের গ্রামের বেশির ভাগ জমি বালুচাপা পড়েছে। ফসল কয়েক ফুট বালুর নিচে চাপা পড়েছে। জমি থেকে এসব বালু তোলা যাবে কি না জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যার কারণে কৃষি জমিতে বালু জমেছে। জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু সরাতে হবে এবং কৃষক নিজ জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু তুলতে পারবেন।