ঢাকা ২০ আশ্বিন ১৪৩১, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

ফেনীতে দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি বালুচাপায় চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়ার শঙ্কা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ এএম
চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়ার শঙ্কা
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে আসা বালুতে চাপা পড়েছে কৃষিজমি। বাসস

ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে আসা বালুতে চাপা পড়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ৮৫ শতাংশ জমির রোপা আমন। উপজেলা কৃষি বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বালুর কারণে কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় স্থানীয় কৃষকরা এখন গভীর শঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। খবর বাসসের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরশুরামে ভয়াবহ বন্যার সময় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়দের মতে, বন্যার পানির স্রোতের সঙ্গে আসা বালু কৃষি জমিতে জমাট বেঁধেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও জমিতে জমে থাকা বালু সরানো যায়নি। কৃষিজমিতে জমে থাকা বালু তুলে ফেলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ৩ দফা বন্যায় মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০ আগস্ট ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের বন্যায় পরশুরামের ৯০ শতাংশ এলাকা ৮ থেকে ১৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢলে সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ৫টি, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ৭টি এবং কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ২টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এসব ভাঙন দিয়ে তীব্র স্রোতে বন্যার পানিতে ভেসে আসে বালু। পরশুরামের বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমিতে ৫ ফুট পর্যন্ত বালু জমে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮২৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, যা মোট আবাদের ৮৫ শতাংশ। এসব জমির বেশির ভাগই বন্যার পলিতে ভরে গেছে। কয়েক শ পুকুরও ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বালুর কারণে বেশির ভাগ জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব অলকা গ্রামের সোহাগ ভূঁইয়া জানান, এখানে সব জমিতে ৪-৫ ফুট করে বালু জমেছে। রাঙামাটিয়া গ্রামের কৃষক জাফর আহমেদ বলেন, তিনি তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলেন। এখন সব জমি বালু পড়ে চাষের অযোগ্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের দেওয়া চাল, ডাল খেয়ে বেঁচে আছি। ভবিষ্যৎ কীভাবে চলবে জানি না।’

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, জমির ক্ষতি দ্রুত সংস্কার করা না হলে দীর্ঘ সময় জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সিফাত হাসান জানান, বন্যায় ৮৫ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন চারা বা বীজতলা তৈরি করে আমন রোপণ করতে হবে। তবে বালু যেভাবে জমেছে, তা দ্রুত সরানো না গেলে চাষ করা যাবে না এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, কাশিনগরে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানের ভাঙন দিয়ে ভেসে আসা বালুতে তাদের গ্রামের বেশির ভাগ জমি বালুচাপা পড়েছে। ফসল কয়েক ফুট বালুর নিচে চাপা পড়েছে। জমি থেকে এসব বালু তোলা যাবে কি না জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যার কারণে কৃষি জমিতে বালু জমেছে। জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু সরাতে হবে এবং কৃষক নিজ জমি চাষযোগ্য করার জন্য বালু তুলতে পারবেন।

নওগাঁয় আমন চাষ, বাড়তি খরচে উদ্বিগ্ন চাষিরা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
নওগাঁয় আমন চাষ, বাড়তি খরচে উদ্বিগ্ন চাষিরা
নওগাঁয় আমন ধানখেতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

নওগাঁ ধান উৎপাদনে দেশসেরা। চলতি বছরে ১১ উপজেলায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের পাশাপাশি চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনাবৃষ্টি ও বাড়তি খরচের কারণে চাষিরা উদ্বিগ্ন। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছে। সঠিক দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

নওগাঁর ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চোখজুড়ানো সবুজ আমন খেত। আবাদের শেষ সময়ে কীটনাশক বা বালাইনাশক প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন চাষিরা। অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে উঠবে আমন ধান। শরতের পর হেমন্তে নতুন ফলন ডেকে আনবে নবান্ন। কৃষকের স্বপ্ন পূরণের হাতছানি দিচ্ছে মৌসুমের নতুন ধান।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত ও প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২ লাখ টন।

আমন মৌসুমের চাষাবাদ বৃষ্টিনির্ভর। কিন্তু খড়ার কারণে চলতি বছর চারা রোপণে কিছুটা দেরি হয়েছে। চাষিদের অনেকে ভূগর্ভের পানি তুলে সেঁচ দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে। আমন মৌসুমে আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস হালচাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর চারা রোপণ করেন কৃষক। ইতোমধ্যে সবুজ খেতে নতুন ধানের দেখা মিলেছে। কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফসল কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আবাদে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলন আসবে।

পত্নীতলা উপজেলার চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে ডিপ টিউবওয়েলের সাহায্যে চারা রোপণ করতে হয়েছে এবং তিনবার সেঁচ দিতে হয়েছে, যার ফলে খরচ বেড়ে গেছে ৫০০-৬০০ টাকা প্রতি বিঘা। 

চাষি মনিরুল বলেন, ‘নওগাঁয় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী ও মান্দা উপজেলায়। এসব এলাকায় চাষিরা চলতি মৌসুমে জিরাশাইল, কাটারি ও অন্যান্য সরু জাতের ধানের আবাদ বেশি করেছেন। মোটা বা হাইব্রিড কম চাষ হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলায় চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের চাষ বেশি হয়েছে।’

মহাদেবপুর উপজেলার পয়নারী গ্রামের আমন চাষি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মহাদেবপুর ও বদলগাছীর বেশিরভাগ চাষি চিকন, চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের আবাদ করেছেন। চিনিগুঁড়া ধান ঘরে উঠতে অন্য জাতের চেয়ে সময় বেশি লাগে। খরচও বেশি হয়। রোপণ থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই মাস পর ফলন ঘরে ওঠে। হেক্টর প্রতি ফলন আসে ২৫ থেকে ৩০ মণ। চিনিগুঁড়া ধানের চাল মিলার ও ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিদেশে বিক্রি করেন। তাই হাটগুলোতে সারা বছর এই ধানের চাহিদা থাকে। গত বছর মহাদেবপুর হাটে প্রতি মণ চিনিগুঁড়া ও সুগন্ধি ধানের দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা।’

মাতাজি গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বাড়তি দামে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করে আবাদ করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সার-কীটনাশক কিনতে গিয়ে চাষিরা সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন। খুচরা সার বিক্রেতারা সরকারি মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে সার কিনতে বাধ্য করছেন। কৃত্রিম সংকট ও সরবরাহে ঘাটতির অজুহাতে ইউরিয়া ২২ টাকার স্থলে ২৮ টাকা, পটাশ সার ১৫ টাকার স্থলে ১৮ থেকে ২০ টাকা, ডিএপি ও অন্যান্য সারের কেজিতেও ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া হালচাষে (৪ চাষ) বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, নিড়ানি ও অন্যান্য কাজে শ্রমিকের ব্যয় গত বছরের চেয়ে অন্তত ১ হাজার টাকা বেড়েছে।

চাষিরা অভিযোগ করেছেন, বালাইনাশক ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারের তদারকি নেই। চলতি মৌসুমে কৃষকদের বিঘাপ্রতি খরচ ১৮-২০ হাজার টাকা, গত বছরের তুলনায় ৪-৫ হাজার টাকা বেড়েছে। নওগাঁয় বাড়তি খরচ ৩০০ কোটি টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁর ১১ উপজেলায় ১১ হাজার ২০০ প্রান্তিক চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উফশী ধান চাষিদের ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার ও ১০ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ২০০ জন চাষিকে হাইব্রিড ধানের বীজ ২ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। মৌসুমের এই গুরুত্বপূর্ণ সময় পোকা ও বালাইয়ের আক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় চাষিদের প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জানান, নওগাঁ কৃষি প্রধান জেলা, যেখানে ৮৬ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার অর্থনীতির ৮০ শতাংশ ধান-চাল উৎপাদন থেকে আসে। চাষিদের সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সঠিক মূল্য নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ ছাড়া, ধানের হাটে সিন্ডিকেট ভাঙা ও কৃষি উপকরণের বাজার তদারকির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডুবে যাওয়া জমি থেকে ফসলি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কৃষকরা। সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাষকলাই চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। খবর বাসসের।

গত ১৬ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা— কোনোটির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় বিপৎসীমার ১.৩৭ মিটার, মহানন্দায় ১.৫১ মিটার এবং পুনর্ভবায় ২.০৭ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় ১৯৩২ হেক্টর জমির মাষকলাই, ৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৪০ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি এবং ৩ হেক্টর জমির চিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাষকলাই চাষিরা।

জেলায় মোট ফসলের ২.৭৪ শতাংশ ফসল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মাষকলাইয়ে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সবজিতে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, রোপা আউশে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং চিনাতে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। সম্ভাব্য উৎপাদিত ফসলের সম্ভাব্য মূল্য হিসাবে এই আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, বারোঘরিয়া, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, ছত্রাজিতপুর, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ি ও আলীনগর ইউনিয়নকে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের নিয়মিত প্রণোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এলে সেগুলো কৃষকদের সময়মতো প্রদান করা হবে।

জুমের ধান কাটা শুরু সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রঙিন

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রঙিন
বান্দরবান থানচি উপজেলায় বলিপাড়া এলাকায় জুমের পাকা ধান কাটছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

পার্বত্য এলাকায় জুম চাষের ধান কাটা শুরু হয়েছে, যেখানে পাহাড়ের ঢালু ভূমিতে ধান সোনালি হয়ে উঠেছে। এ বছর দেরিতে বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও, অন্যত্র ধান এখনো সবুজ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায় জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জুমচাষীরা পরিবারসহ ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। তবে আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের জুমচাষী মিলন ত্রিপুরা জানান, এ বছর তার ১২ আড়ি জুমের ধান কাটছেন, কিন্তু ফলন তেমন ভালো হয়নি। আবহাওয়ার অনিয়ম- বৃষ্টির অভাব, আবার অতিবৃষ্টি- ফসলের গুণগত মান কমিয়ে দিয়েছে। তিনি ২০০ আড়ি ধান পাওয়ার আশা করছেন। কিন্তু যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকত, তা হলে ৩০০ আড়ি ধান পেতেন। অনেক চাষীর খেতেও ধান নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির কারণে, ফলে আগামী বছর খাদ্যসংকটের সম্ভাবনা রয়েছে।

পুষ্পরানি ত্রিপুরা (১৮) জানান, তারা জুম চাষ করেছেন। কিন্তু তাদের জুমের ধান এখনো কাটার উপযুক্ত হয়নি। তাই তারা প্রতিবেশী দুলাভাইয়ের পাকাধান শ্রমের বিনিময়ে কাটতে সহযোগিতা করছেন। কিছুদিন পর তাদের জুমের ধান কাটার উপযুক্ত হলে তাদের থেকেও শ্রম দিয়ে জুমের ধান কাটার সহযোগিতা পাবেন বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম চাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জঙ্গল কাটা হয়। পরে কাটা জঙ্গল রোদে শুকানোর পর মার্চ-এপ্রিল মাসে আগুন দেওয়ার জন্য প্রথমে ফায়ারিং লাইন করে জঙ্গল পোড়ানো হয়। এপ্রিল মাস জুড়ে জুমের জায়গা পরিষ্কার করে ধান বপনের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হয়। বৃষ্টি হলেই জুমের জায়গায় ধানসহ সাথী ফসল বপন করা হয়। যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর জুমে ধানসহ সাথী ফসল বপন করতে পারেন, তাদের ধান আগে পাকা শুরু করে। আর যারা একটু দেরিতে বপন করেন, তাদের ধান দেরিতেই পাকে। প্রতিবছর আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর প্রক্রিয়া চলে। ধান শুকানোর পর জুমঘর থেকে মূলঘরে ধান স্থানান্তর করার পর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব পালিত হয়।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২০২১ সালে জুম আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৬৭ দশমিক ২২ টন চাল। ২০২২ সালে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২৯২ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪১৮ দশমিক ১২ টন চাল। ২০২৩ সালে জুম চাষ আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জায়গায়, উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ টন চাল। চলতি বছর ২০২৪ সালে জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায়, আবাদ অর্জনে ৮ হাজার ২৬৭ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৭১ টন চাল। বর্তমানে জুমের ধান কাটা চলমান রয়েছে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী বলেন, বান্দরবানে চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার ৩ হেক্টর জায়গায় জুমের আবাদ হয়েছে। জুমে ধান ছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর জুমের ফলন ভালো হবে আশা করা যায়। তবে পার্বত্য অঞ্চলের কারণে বৃষ্টি সব জায়গায় সমানভাবে না হওয়ার কারণে উৎপাদনে তারতম্য হয়। একেক জায়গার ফলন একেক রকম হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলায় জুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে এবং অন্যান্য উপজেলায়ও জুমের ধান কাটা শুরু হবে।’

লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে আমড়ার চাষ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে আমড়ার চাষ
ঝালকাঠির ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে আমড়া কিনে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন পাইকাররা। খবরের কাগজ

ঝালকাঠিতে মৌসুমের শুরু থেকেই আমড়ার বাজার জমে উঠেছে। ভিমরুলী ও আটঘর কুরিয়ানার ভাসমান হাটে এখন তাজা আমড়ার সমারোহ। জেলার কৃত্তিপাশা ইউনিয়নজুড়ে আমড়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা। কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিনদিন আমড়ার চাষ বাড়ছে।

দেশব্যাপী বিপুল চাহিদা রয়েছে বরিশাল অঞ্চলের আমড়ার। সুস্বাদু এই ফলের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ঝালকাঠি থেকে। ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খেজুরা, আতাকাঠিসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে এখন বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ হয়। অন্য জেলার আমড়ার তুলনায় মিষ্টি হওয়ায় এই জেলার আমড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন হাটে আমড়ার বেচাকেনা চলছে। এর মধ্যে ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান হাটটি সবচেয়ে বড়। এ হাট থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পুষ্টিকর এ ফল সরবরাহ করা হয়। বিপুল চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় প্রতি বছরই আমড়ার আবাদ বাড়ছে। এ বছর আমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে আমড়া কিনছেন ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে। তবে মৌসুম শেষে আরও কিছু বেশি দামে আমড়া বিক্রির আশা করছেন চাষিরা।

প্রতি বছর ভিমরুলীতে অস্থায়ী ডজনখানেক আড়তে আমড়ার বেচা-কেনা চলে। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে আমড়া নিয়ে ভিমরুলীর ভাসমান হাটে হাজির হন চাষিরা। আড়তদাররা নৌকা থেকেই কিনে নেন আমড়া। এরপর বাছাই করে বস্তা ও ক্যারেটে সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান পাইকাররা।

স্থানীয় আমড়া চাষি সবুজ হালদার জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে আমড়ার চাষ করেছেন। এ বছর ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রির আশা করছেন। সবুজ হালদার বলেন, ‘শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই তিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই এই সময়ে দামও ভালো থাকে। সুমিষ্ট হওয়ায় এখানকার আমড়ার সারা দেশে চাহিদা রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর এই এলাকায় আমড়ার আবাদ বাড়ছে।’

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টি এম মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘আমড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আঁশ থাকার কারণে আমড়া হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমে নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কাঁচা তো বটেই, সরষে মাখা, রান্না করে ও মোরব্বা করেও আমড়া খাওয়া যায়।’
 
কৃষকদের প্রত্যাশা, সরকারিভাবে যদি সরাসরি আমড়া কেনা হয়, এতে চাষিরা লাভবান হবেন। 

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘চলতি বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি প্রায় ১২ টন আমড়া পাওয়া গেছে। এ থেকে মৌসুমজুড়ে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই আমড়ার আবাদ বাড়ছে। এর ফলে শিক্ষিত ও বেকার যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।’

নিম্নচাপের প্রভাব মৎস্য-কৃষিতে ক্ষতি ৬১০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩১ এএম
মৎস্য-কৃষিতে ক্ষতি ৬১০ কোটি টাকা

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর রিং বাঁধ ভেঙে মৎস্য ও কৃষি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষণে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, আউশসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেত। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ৭ হাজার মৎস্য ঘের ও দেড় হাজার পুকুর। এতে জেলায় মৎস্য ও কৃষি খাতে ৬১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও মৎস্য অধিদপ্তর।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, জেলার মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছ, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার অধিক। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, অতি বৃষ্টির কারণে জেলার ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক মূল্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৫০। পানি কমার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুনরায় নিরূপণ করা হবে। 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ৪০টি গ্রাম। চার দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করে। তবে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংস্কার করা বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে বেতনার পানিতে প্লাবিত হয় সদর উপজেলার বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর ও তালা উপজেলার আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, নিমতলাসহ কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেশতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যাল্যেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পৌর এলাকার দেড় লাখ মানুষসহ সদর উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ওই সব এলাকার মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর, আমন ধান ও শাকসবজির খেত।

সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার ১২০ বিঘা জমির তিনটি ঘের রয়েছে। সবকটায় চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

বিনেরপোতা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি ঘের রয়েছে ৮০ বিঘা জমির ওপর। সেখানে সাদামাছ চাষ করি। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। এতে সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের কৃষক মো. আল মামুন বলেন, ‘এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। এর মধ্যে ৮ বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। গ্রামের কয়েক শ বিঘা ধান এখনো পানির নিচে।’

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে সৃষ্টি জলাবদ্ধতা এখনো নিরসন হয়নি। এজন্য সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। ফসলি জমি থেকে পানি নেমে গেলে কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন করে শাকসবজি ও খাদ্যশস্য চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ 

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে অতিবৃষ্টিজনিত কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় বিশেষ করে শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদরে বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সঙ্গে মিশে গেছে। এখানে আমাদের মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্যচাষিদের ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও ৪ কোটি টাকার অধিক। এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, অথবা তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা গেলে চাষিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এই লেখা দিয়ে ইনফোগ্রাফের জন্য ১০টি পয়েন্টে তৈরি করে দাও