ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

সহযোগিতা পেলে মাছ উৎপাদন বাড়বে

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
সহযোগিতা পেলে মাছ উৎপাদন বাড়বে
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় একটি মাছের বাজার। খবরের কাগজ

সোনারগাঁয়ে পুকুর, ডোবা ও নদীতে মাছ চাষ হলেও দুষিত পানি ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে উৎপাদন কমছে। প্রতি বছর ৪ হাজার ৭০০ টন মাছ চাষ হয়, তবে সহযোগিতা পেলে ২০ হাজার টন উৎপাদন সম্ভব। মাছ চাষিরা বলেন, পরিষ্কার পানি ও ঋণ সহায়তা পেলে আয় বাড়বে। মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে।

পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষি মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৪৫ থেকে ৪৬ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। বর্তমানে আমি দশটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ করছি। আমি ৩০ শতাংশ একটি পুকুরে ৫০ হাজার পাঙাশের পোনা ছেড়েছি। মাছের পরিচর্যার জন্য চুক্তিভিত্তিক লোক রেখেছি। ৬ মাস এই মাছ লালন-পালন করতে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। ৬ মাস পর বিক্রি করলে ১০ লাখ টাকা খরচ উঠে যাবে এবং আরও ১০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হবে। পুকুরে পানি স্বল্পতা রয়েছে, খাল থেকে পানি এখন আর আসে না। খালের পানি দুষিত ও ময়লা, রোগজীবাণু থাকে। আগে খালের মাছ বিক্রি করে ২০ হাজারের বেশি পরিবার চলত। যদি খালের পানি পরিষ্কার করা যেত, তাহলে মাছের উৎপাদন চার গুণ বাড়ত।’

পৌরসভার দিয়া পাড়া এলাকার মাছ চাষি আবুল কাশেম জানান, ‘বর্তমানে আমার পাঁচটি পুকুরে বিভিন্ন প্রকার মাছ আছে। কুমিল্লা একতা হ্যাচারি থেকে আমরা মাছ নিয়ে আসি, কিন্তু তারা যেভাবে নির্দেশ দেয়, সেভাবে আমরা মাছ চাষ করতে পারি না। মাছের খাবারের দাম খুব বেশি। ৬ মাসে মাছের ওজন যতটুকু হওয়া উচিত, তা ঠিকমতো হয় না এবং সেজন্য লাগে ৯ মাস। আমার পাঁচটি পুকুরে মোট ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হবে এবং বার্ষিক লাভ হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিদেশে মাছ বিক্রির সুযোগ দিত সরকার, তাহলে আমার বার্ষিক আয় হতো ১ কোটি টাকার বেশি।’ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কারখানার দুষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে নদীর পানি পরিষ্কার করা হলে আরও লাভবান হওয়া যেত। সরকার সহযোগিতা করলে মাছ চাষ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেলে হরি দাস বলেন, ‘আমরা কুমিল্লার কয়েকজন জেলে সোনারগাঁয়ে গিয়ে পুকুরে মাছ ধরে থাকি। বিভিন্ন পুকুরে চুক্তিভিত্তিক প্রতি জাল টেনে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পাই। প্রতিদিন ২ থেকে ৫টি পুকুরে জাল টান দিয়ে থাকি।’

পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষের শ্রমিক করিম বলেন, ‘আমি পুকুর পরিষ্কার এবং মাছের খাবার দেওয়ার কাজ করি। প্রতি মাসে আমাকে ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। মাছ বিক্রির সময় কিছু বকশিশও পাই।’

মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজারের মাছ বিক্রেতা ইমান আলী জানান, ‘সোনারগাঁয়ে আমরা পুকুর, চান্দিনা, নেপগুঞ্জ, আড়াইহাজার, চিটাগাং রোড, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী থেকে মাছ কিনি। আমরা মাছ কেজি ধরে কিনি ও কেজিতে বিক্রি করি। তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, বাটামাছ ২২০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

সোনারগাঁ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। মৎস্য চাষিরা আমাদের কাছে এলে আমরা শুধু তাদের পরামর্শ দিতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন বায়োফ্লক ও অন্যান্য পদ্ধতিতে অল্প পানিতে অধিক মাছ চাষ করা সম্ভব। দিন দিন পুকুরের পরিমাণ কমলেও মাছ চাষে আধুনিকতার কারণে মাছের উৎপাদন বাড়ছে।’

অ্যাভোকাডো চাষে টিটোর সাফল্য

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
অ্যাভোকাডো চাষে টিটোর সাফল্য
বাগানে অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা করছেন আশরাফুজ্জামান টিটো/ খবরের কাগজ

নড়াইলের আশরাফুজ্জামান টিটো শখের বশে শুরু করেছিলেন অ্যাভোকাডো চাষ। এখন তা পরিণত হয়েছে লাভজনক বাণিজ্যিক বাগানে। সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে ৪০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন তিনি অ্যাভোকাডোর সবুজ বাগান।

বাড়ির সামনে মাঝারি আকৃতির একটি গাছে ঝুলছে সবুজ ফল। পাশেই আছে আরও দুটি গাছ। একটু দূরে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি অ্যাভোকাডো গাছ। প্রতিটি ডালে ঝুলছে নাশপাতি বা পেয়ারা আকৃতির বিদেশি ফল। একেকটি ফলের ওজন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। ভেতরে ডিম আকৃতির বীজ। খেতে নরম ও মাখনজাতীয়। সরাসরি খাওয়া ছাড়াও এ ফল দিয়ে ভর্তা, সালাদ, জুস বা শরবত তৈরি করা যায়।

আশরাফুজ্জামান টিটো বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময় আফ্রিকায় মিশনে যাই। সেখানেই অ্যাভোকাডোর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। দেশে ফল আনা নিষেধ থাকায় আমি কার্বন পেপারে মুড়িয়ে পাঁচটি বীজ এনেছিলাম। ২০১৪ সালে তা বাড়িতে রোপণ করি। এরপর দুটি গাছে ফল আসে। তার পর থেকে প্রতি বছর ফল বিক্রি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সুপার শপে ফল সরবরাহ করি। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হয়। চারা তৈরিও করেছি। পাইকারি দরে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করি। তবে ঢাকায় খুচরা বাজারে এক কেজির দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।’

বাণিজ্যিকভাবে চাষে আরও আগ্রহী হয়ে ৪০ শতক জমিতে ৪০টি গাছ রোপণ করেছেন তিনি। এ বছর গাছগুলোতে ফুল এসেছে। টিটোর আশা, আগামী বছর এসব গাছে ফল ধরবে। সেগুলোও বাজারজাত করতে পারবেন।

চাষপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথমে চারা সংগ্রহ করতে হয়। দেড় ফুট বাই দেড় ফুট গর্ত করে ৭ দিন রেখে দিতে হয়। এরপর জৈব সার, হাঁড়ের গুঁড়া, গোবর মিশিয়ে গর্তে ভরতে হয়। চারা রোপণের আগে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা দরকার। ৩ থেকে ৪ বছর পর গাছে ফল আসে।’ বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ২৯টি ফলদ গাছ। প্রতিটি গাছ সবুজ পাতার সৌন্দর্যে ভরা। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অ্যাভোকাডো।
বাগান দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা চারা কিনছেন। বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ কাজ করে আমার সংসার চলে। মালিক আমাকে বেতন দেন। গাছগুলোকে সন্তান মনে করে পরিচর্যা করি।’ বাগান দেখতে আসা রিপন মণ্ডল বলেন, ‘এমন বাগান দেখে ভালো লেগেছে। আমিও একটি বাগান করতে চাই। কয়েকটি চারার অর্ডার করেছি।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘সুপারফুড হিসেবে পরিচিত অ্যাভোকাডো এখন দেশে চাষ হচ্ছে। আশরাফুজ্জামান টিটো একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কয়েকটি গাছে ইতোমধ্যে ফল এসেছে। অন্যগুলোতেও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব। আশা করছি, নড়াইলে এ ফলের চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।’ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ফলের বাজার চাহিদা বাড়ছে। তাই অ্যাভোকাডো চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। শখের বাগান এখন হয়ে উঠছে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত।

বস্তায় আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৪ এএম
বস্তায় আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা
ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহীর তানোরে বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় ও ফাঁকা জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। কৃষি বিভাগের সহায়তায় শুরু হওয়া এ পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের দুই যুবক ২ হাজারের বেশি বস্তায় আদার চাষ করেছেন। উপজেলায় এখন প্রায় ৩৬ হাজার বস্তায় আদার চাষ হচ্ছে। খরচ কম, লাভ বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদ্ধতি কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে।

তানোর উপজেলার শিলিমপুর গ্রামের দুই তরুণ— একরামুল হক ও আব্দুল মালেক তাদের পুকুরপাড়ের পতিত জমিতে ২ হাজারেরও বেশি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিজুর রহমানের পরামর্শে তারা এ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হওয়ায় তারা এখন বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মোট প্রায় ৩৬ হাজার ২৫০ বস্তায় আদার চাষ হচ্ছে। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নে ৭ হাজার ৫০০, কলমায় ৪ হাজার ৮০০, তালন্দে ৫ হাজার ৫০০, বাঁধাইড়ে ২ হাজার ৫০০, কামারগাঁয় ৪ হাজার ১৩০, পাঁচন্দরে ২ হাজার ৯৫০ এবং সরনজাই ইউনিয়নে ৪ হাজার ২৫০ বস্তায় আদা চাষ চলছে। এ ছাড়া তানোর পৌরসভায় ২ হাজার ৫০ এবং মুন্ডুমালা পৌরসভায় ২ হাজার ৫৭০ বস্তায় চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একটি বস্তায় আদা চাষে গড়ে ৫০ টাকা খরচ হয়। পরিচর্যা ভালো হলে একেকটি বস্তা থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ওঠে। বাজারদরে প্রতি কেজি আদা বিক্রি করে চাষিরা প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহম্মদ বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও জায়গা-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। পুকুরপাড়, ছাদ কিংবা বাড়ির যে কোনো ফাঁকা জায়গায় সহজেই এটি করা যায়। পরিচর্যার ঝামেলা কম এবং আগাছাও হয় না।’ কৃষি উদ্যোক্তা সুমন কুমার মজুমদার বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে চাষ করা খুব সহজ। জায়গা কম লাগে, খরচও কম। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে।’ 

সম্প্রতি এই চাষ পদ্ধতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান, জেলা উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা এবং তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মদ। তারা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন এবং চাষ পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তারা বলেন, ‘বস্তায় আদার চাষ— তানোরের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। স্বল্প খরচে, কম পরিচর্যায় এবং অপ্রচলিত জায়গায় এই চাষ সম্ভব। উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই প্রযুক্তি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।’

নেত্রকোনায় পাট চাষে আগ্রহ ফিরছে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
নেত্রকোনায় পাট চাষে আগ্রহ ফিরছে
নেত্রকোনায় একটি খেতে পাটগাছ কেটে রাখা হয়েছে/ খবরের কাগজ

নেত্রকোনায় পাট চাষে ফিরছে আগ্রহ। দো-আঁশ মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। এক সময় এ জেলার পাট যেত নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। কৃত্রিম তন্তু ও প্লাস্টিকের কারণে চাষ কমে যায়। এখন আবার দর বাড়ায় উৎসাহ পেয়েছেন কৃষকরা। পাট পরিবেশবান্ধব ও অর্থকরী ফসল। সরকার ও কৃষি বিভাগ চাষ বাড়াতে কাজ করছে। সেমিনার, কর্মশালায় কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হচ্ছেন সবাই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৪৫৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে চাষ। কৃষকদের সচেতন করতে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করছে কৃষি বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাট চাষের সম্প্রসারণ হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। পরিবেশ সুরক্ষা ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে পাট আবারও হতে পারে পরিবর্তনের বাহক। এ জন্য দরকার সরকারি সহায়তা, সচেতনতা এবং বাজারে স্থিতিশীলতা।

বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের কৃষক রমজান মিয়া বলেন, ‘এক সময় এই গ্রামে অনেক জমিতে পাট হতো। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে মানুষ পাট চাষ ছেড়ে দেয়। সরকার যদি মূল্য নিশ্চিত করে, তা হলে আবারও জমি ভরে উঠবে পাটগাছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চটের ব্যাগ, রশি, বস্তাসহ পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।’

মোহনগঞ্জ উপজেলার খুরশিমূল গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ শীল জানান, ‘আগে ধান চাষের পাশাপাশি পাট চাষ হতো অনেক জমিতে। এখন শুধু দুই কাঠা জমিতে পাট চাষ করি। বর্ষাকালে পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। পাটের শাক সুস্বাদু ; আবার পাটের ব্যাগ, রশিও খুব কাজে লাগে। সরকার যেন পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুল রহমান বলেন, ‘পাট পরিবেশবান্ধব ফসল। পাট চাষের মাধ্যমে যেমন গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরে আসবে, তেমনি পরিবেশ রক্ষা এবং বেকারত্ব হ্রাসেও বড় ভূমিকা রাখবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য মাটির সঙ্গে মেশে না। এটি মাটি দূষণ করে। তাই পাটের ব্যাগ ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও পিছিয়ে নেই। পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ে পরামর্শ ও প্রচার চালাচ্ছে তারা। জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকরা এখন আর শুধু ধান চাষেই সীমাবদ্ধ নন। শাকসবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, মাছ চাষ, এমনকি বাড়ি নির্মাণের জন্য অনেক জমির ব্যবহার বদলে গেছে। এতে চাষযোগ্য জমি কমেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবু পাট চাষ বাড়াতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে আবারও নেত্রকোনার মাঠ ভরে উঠবে পাটে।’

উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে মরুভূমির খেজুরের স্বপ্ন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে মরুভূমির খেজুরের স্বপ্ন
বাগানে খেজুরগাছ পরিচর্যা করছেন শোকর আলী। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নইরহরকাটি গ্রামের শোকর আলী একসময় ছিলেন বাহরাইনের একটি খেজুর বাগানের শ্রমিক। সেখানেই খেজুর চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। বাস্তব জ্ঞান আর সাহসিকতা নিয়ে দেশে ফিরে এবার গড়েছেন উন্নত জাতের খেজুর নার্সারি। তার দাবি, ‘উপকূলীয় মাটিতে চাষ করা এই খেজুরের গুণগত মান মরুভূমির খেজুরকেও হার মানাবে।’

২০১৮ সালে জীবিকার তাগিদে বাহরাইন যান শোকর আলী। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, খেজুর একটি দীর্ঘমেয়াদি ও কম পরিচর্যায় উৎপাদনক্ষম ফসল। এই ভাবনাই বদলে দেয় তার ভবিষ্যতের দিক। ২০২১ সালে দেশে ফেরার সময় সঙ্গে আনেন উন্নত জাতের ৫০টি খেজুর বীজ। ওই বীজ নিজের আঙিনায় রোপণ করে শুরু করেন চারা উৎপাদন। পরবর্তী সময় বাহরাইন ও সৌদি আরবে থেকে আরও উন্নত জাতের খেজুর সংগ্রহে করেন। ওই বীজ দিয়ে নার্সারিকে পরিপূর্ণ করেন। এখন তার নার্সারিতে রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার খেজুর চারা। এর মধ্যে বেশ কিছু গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।

শোকর আলী বলেন, ‘২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাহরাইনে ছিলাম। তখন কিছুই করতে পারিনি। তবে সেখানকার খেজুর বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন আমার জীবনের সম্পদ হয়ে উঠেছে।’

তিনি জানান, মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ দেশি গাছের মতোই পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১২০টি গাছ রোপণ সম্ভব। প্রথম দুই বছরে গাছে ফল এলে কেটে ফেলতে হয়, নাহলে গাছ বড় হয় না। ফল আসার তিন মাসের মধ্যেই তা পেকে যায়। বর্তমানে তার একটি গাছে ফল এসেছে, আর ২০ দিনের মধ্যেই তা পাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে আশাবাদী শোকর আলী বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি, সাফল্য আসবেই।’

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তার নার্সারির কয়েকটি গাছে ইতোমধ্যে খেজুর ধরেছে। উপকূলীয় জলবায়ুতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ সফল হলে বড় পরিসরে সম্প্রসারণ সম্ভব। তার এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছে। একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের শফিউল্লাহ তার চিংড়িঘেরের বাঁধে সৌদি খেজুরের চাষ করে সফল হয়েছেন।

সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও খেজুর একটি খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ছোট পরিসরে চাষ করে উপযোগিতা যাচাই করা যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর রমজানে ও অন্যান্য সময় হাজার হাজার টন খেজুর আমদানি করতে হয়। অথচ দেশে উন্নত জাতের খেজুর উৎপাদন সম্ভব হলে আমদানিনির্ভরতা কমবে, কৃষকের আয়ও বাড়বে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে খেজুরের মতো সহনশীল ফসল নতুন এক দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

নরসিংদীতে লটকনের ফলন কম, দ্বিগুণ দাম

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:২০ এএম
নরসিংদীতে লটকনের ফলন কম, দ্বিগুণ দাম
ছবি: খবরের কাগজ

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া নরসিংদীর লটকনের চাষ এ বছর বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গাছে লটকন ধরলেও ঝরে পড়েছে প্রচুর। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ ফলন কমেছে। ফলন কম হলেও বাজারে দাম দ্বিগুণ। প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। এ কারণে চাষিরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, ‘এ বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় বেশি।’

তিনি জানান, গত ৬০ বছরে মাত্র তিনবার লটকনের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এবার ওই বিরল ঘটনাই ঘটেছে। বিষয়টি সরকারি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নরসিংদীর লটকনের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মান অনন্য। এখানকার লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর, ওয়ারী, বটেশ্বর ও দক্ষিণ বটেশ্বর, শিবপুর উপজেলার জয়নগর, যোশর ও বাঘাব, আর রায়পুরার মরজাল এলাকায় লটকনের ভালো ফলন হয়। তবে এবার আবহাওয়ার কারণে এসব এলাকার গাছগুলোতেও ফল কমেছে। লাখপুর গ্রামের লটকন চাষি বাছেদ মাস্টার বলেন, ‘পুরোনো গাছে লটকন কম হয়েছে। তবে নতুন চারাগুলোতে ফলন ভালো হয়েছে। আর বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে না।’

লটকন মৌসুমে প্রতিদিন ভোরে মরজাল বাসস্ট্যান্ডে বসছে লটকনের হাট। হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও বাগানের দামে তেমন পার্থক্য নেই। ঢাকা থেকে সিলেটগামী রিবউল ইসলাম বলেন, ‘বাগানে গিয়েছিলাম, কিন্তু দাম একই। তাই হাট থেকেই বড় লটকন কিনছি ২২০ টাকা কেজি দরে।’ চাষি ও বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে লটকনের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ফলে ফলন কম হলেও লাভের মুখ দেখছেন অনেকে ।

নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রামে এখন বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ জমিতেও লটকনের চারা রোপণ করছেন স্থানীয়রা। আবাদ বাড়ছে, চাষের আগ্রহও বাড়ছে। লটকন দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন এসব বাগানে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নারী-পুরুষ এসে ফল কিনে নিচ্ছেন বাগান থেকেই।

একই সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফল স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। ক্রমেই এটি লাভজনক বাণিজ্যিক ফসলে রূপ নিচ্ছে।
নরসিংদীর লটকন এখন শুধু এলাকার গর্ব নয়, দেশের অর্থনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ফলন বাড়াতে এবং আবহাওয়াজনিত ক্ষতি ঠেকাতে গবেষণাভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।