ঢাকা ২১ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

সহযোগিতা পেলে মাছ উৎপাদন বাড়বে

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
সহযোগিতা পেলে মাছ উৎপাদন বাড়বে
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় একটি মাছের বাজার। খবরের কাগজ

সোনারগাঁয়ে পুকুর, ডোবা ও নদীতে মাছ চাষ হলেও দুষিত পানি ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে উৎপাদন কমছে। প্রতি বছর ৪ হাজার ৭০০ টন মাছ চাষ হয়, তবে সহযোগিতা পেলে ২০ হাজার টন উৎপাদন সম্ভব। মাছ চাষিরা বলেন, পরিষ্কার পানি ও ঋণ সহায়তা পেলে আয় বাড়বে। মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে।

পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষি মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৪৫ থেকে ৪৬ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। বর্তমানে আমি দশটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ করছি। আমি ৩০ শতাংশ একটি পুকুরে ৫০ হাজার পাঙাশের পোনা ছেড়েছি। মাছের পরিচর্যার জন্য চুক্তিভিত্তিক লোক রেখেছি। ৬ মাস এই মাছ লালন-পালন করতে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। ৬ মাস পর বিক্রি করলে ১০ লাখ টাকা খরচ উঠে যাবে এবং আরও ১০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হবে। পুকুরে পানি স্বল্পতা রয়েছে, খাল থেকে পানি এখন আর আসে না। খালের পানি দুষিত ও ময়লা, রোগজীবাণু থাকে। আগে খালের মাছ বিক্রি করে ২০ হাজারের বেশি পরিবার চলত। যদি খালের পানি পরিষ্কার করা যেত, তাহলে মাছের উৎপাদন চার গুণ বাড়ত।’

পৌরসভার দিয়া পাড়া এলাকার মাছ চাষি আবুল কাশেম জানান, ‘বর্তমানে আমার পাঁচটি পুকুরে বিভিন্ন প্রকার মাছ আছে। কুমিল্লা একতা হ্যাচারি থেকে আমরা মাছ নিয়ে আসি, কিন্তু তারা যেভাবে নির্দেশ দেয়, সেভাবে আমরা মাছ চাষ করতে পারি না। মাছের খাবারের দাম খুব বেশি। ৬ মাসে মাছের ওজন যতটুকু হওয়া উচিত, তা ঠিকমতো হয় না এবং সেজন্য লাগে ৯ মাস। আমার পাঁচটি পুকুরে মোট ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হবে এবং বার্ষিক লাভ হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিদেশে মাছ বিক্রির সুযোগ দিত সরকার, তাহলে আমার বার্ষিক আয় হতো ১ কোটি টাকার বেশি।’ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কারখানার দুষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে নদীর পানি পরিষ্কার করা হলে আরও লাভবান হওয়া যেত। সরকার সহযোগিতা করলে মাছ চাষ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেলে হরি দাস বলেন, ‘আমরা কুমিল্লার কয়েকজন জেলে সোনারগাঁয়ে গিয়ে পুকুরে মাছ ধরে থাকি। বিভিন্ন পুকুরে চুক্তিভিত্তিক প্রতি জাল টেনে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পাই। প্রতিদিন ২ থেকে ৫টি পুকুরে জাল টান দিয়ে থাকি।’

পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষের শ্রমিক করিম বলেন, ‘আমি পুকুর পরিষ্কার এবং মাছের খাবার দেওয়ার কাজ করি। প্রতি মাসে আমাকে ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। মাছ বিক্রির সময় কিছু বকশিশও পাই।’

মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজারের মাছ বিক্রেতা ইমান আলী জানান, ‘সোনারগাঁয়ে আমরা পুকুর, চান্দিনা, নেপগুঞ্জ, আড়াইহাজার, চিটাগাং রোড, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী থেকে মাছ কিনি। আমরা মাছ কেজি ধরে কিনি ও কেজিতে বিক্রি করি। তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, বাটামাছ ২২০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

সোনারগাঁ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। মৎস্য চাষিরা আমাদের কাছে এলে আমরা শুধু তাদের পরামর্শ দিতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন বায়োফ্লক ও অন্যান্য পদ্ধতিতে অল্প পানিতে অধিক মাছ চাষ করা সম্ভব। দিন দিন পুকুরের পরিমাণ কমলেও মাছ চাষে আধুনিকতার কারণে মাছের উৎপাদন বাড়ছে।’

মেহেরপুরের ৩ উপজেলা কীটনাশকে ধুঁকছেন কৃষক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
কীটনাশকে ধুঁকছেন কৃষক
সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার না করেই একজন কৃষক জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরোঘড়িয়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : খবরের কাগজ

এক মাস আগের ঘটনা। মেহেরপুরের গাংনীর চেংগাড়া গ্রামের ৪২ বছর বয়সী কৃষক ওমর ফারুক নিজের ধান খেতে কীটনাশক দিচ্ছিলেন। তার মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা- এর কোনোটিই ছিল না। কীটনাশক দেওয়া শেষ হলে হঠাৎ তার বমি হয়। অসুস্থ অনুভব করায় ধান খেতেই নিজের মাথায় পানি ঢালেন। সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি চলে যাবেন। কিছু দূর যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। যখন জ্ঞান ফেরে তখন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় নিজেকে দেখতে পান।

হাসপাতালটির কর্তব্যরত নার্স রাফিজা বেগম জানান, ওমর ফারুক কীটনাশকের বিষক্রিয়া বা কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা এবং স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হন। পরে বাড়ি পাঠানো হয়। প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগী হাসপাতালে আসেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া ফসলের খেতে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মেহেরপুরের কৃষকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। প্রায়ই তারা ফসলের পরিচর্চা করতে গিয়ে কীটনাশকের সংস্পর্শে এসে বিষক্রিয়া বা কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা ফুসফুসে ক্যানসারসহ ভয়াবহ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় (শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ) আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পরিকল্পনার মধ্যে এখনো আটকে আছে কৃষি বিভাগ। সংস্থাটি জানিয়েছে, সরকার থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

মেহেরপুরের তিন উপজেলার হাসপাতালগুলোর তথ্য বলছে, গত দুই মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ৭৮ জন কৃষক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের সবাই সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া অসংখ্য কৃষক পল্লি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে গিয়ে মেলে সত্যতা। প্রায় সকল কৃষকই সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবহার ছাড়াই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তারা বলছেন, জমিতে বিষ (কীটনাশক) দেওয়ার পর শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব হয়। তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যান।

কথা হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিষ প্রয়োগ করতে গিয়ে মাথা চিন চিন করে। কিছু সময় বিশ্রাম নিলে আবার ঠিক হয়ে যায়।’  একই উপজেলার তেরোঘড়িয়া গ্রামের কৃষক সাহারুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কীটনাশকের ঝাঁজ অনেক বেশি। শরীরের কোনো অংশে লাগলেই জ্বালাপোড়া করে। অনেকক্ষণ সাবান দিয়ে ধুলে তারপর ঠিক হয়।’ 

তবে এ পরিস্থিতির জন্য কৃষি বিভাগও দায়ী। তারা কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন করেন না বলে অভিযোগ মুজিবনগরের শিবপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সবুরের। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে জ্ঞান খুবই কম। কৃষি অফিসাররা তেমন কিছুই বলেন না। সরকার থেকে হেলমেট, মাস্ক কিংবা হাতমোজা (হ্যান্ড গ্লাভস) সরবরাহ করলে আমরা তা ব্যবহার করব।’ 

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত রোগীর দেখা পাওয়া যায়। তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই কৃষক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে বিষ প্রয়োগের পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসা পেলে তারা সুস্থ হয়ে যান। এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।’

হাসপাতালটির মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বেলাল হোসেন বলেন, ‘এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের ফুসফুসে ক্যানসারের পাশাপাশি ভয়াবহ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। অনেক ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।’

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে জেলার ৬৫ হাজার কৃষক পরিবারকে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করতে বলা হয়। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলে সেগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সরবরাহের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

নার্সারি ব্যবসায় সোহাগের সাফল্য

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
নার্সারি ব্যবসায় সোহাগের সাফল্য
নার্সারি পরিচর্যা করছেন সোহাগ মজুমদার। ছবি: খবরের কাগজ

নিজের জমি না থাকায় জমি বর্গা নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথমে যৌথভাবে নার্সারি দেন সোহাগ মজুমদার। লাভজনক হওয়ায় পরবর্তী সময় আলাদাভাবে ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় নার্সারির নাম ‘মজুমদার নার্সারি’। 

গাছের চারার গুণগতমান ভালো হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে অনেকে সেখানে এসে চারা সংগ্রহ করছেন। তবে সরকারি সহায়তা পেলে নার্সারি আরও সম্প্রসারণ করার কথা জানান মালিক সোহাগ। 

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৮ নম্বর কাদলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে মনপুরা গ্রামের এই নার্সারিতে রয়েছে- ফলের মধ্যে থাই পেয়ারা, বারি ফোর মাল্টা, নাশপাতি, আপেল কুল, বাউ কুল, পেয়ারা, আমের কলম, লিচুর কলম, আমলকি, বহেড়া, হরীতকী ও জামের কলমসহ প্রায় ৫০-৬০ রকমের চারা। এ ছাড়া ফুলের মধ্যে বিশেষ করে রয়েছে- গোলাপ, ড্রাগন ফুল, নাইট কুইন, ক্যাকটাস, গাঁদাফুল, রজনীগন্ধা, সূর্যমুখীসহ প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ প্রজাতির ফুল। নার্সারি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ফুলের চারা সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলম দেওয়া বিভিন্ন গাছে কুঁড়ি গজিয়েছে। ছোট ছোট গাছগুলোতে বিভিন্ন ফুল ও ফলের সমাহার। নার্সারির অবস্থান সড়কের পাশে হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ পাইকারি ও খুচরা দামে সেখানে গাছ কিনতে আসেন। বর্তমানে চাহিদার ৪০ শতাংশ চারা এখানে উৎপাদিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাকি ৬০ শতাংশ চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

নার্সারিতে চারা কিনতে আসা মাসুদ রানা জানান, গাছগুলো দেখার পর মনে হলো এগুলো অনেক যত্নসহকারে উৎপাদন করা হচ্ছে। এখান থেকে চারা নিলে তিনি আশানুরূপ ফল পাবেন বলে আশা করেন। তিনি আরও জানান, চারা কেনার পাশাপাশি একই সঙ্গে গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে নানা বিষয় নার্সারির মালিকের কাছ থেকে জানতে পারেন।

সেখানে কাজ করা শ্রমিক মহিন উদ্দিন মিয়াজী জানান, প্রতিদিন তার সঙ্গে আরও একজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তিনি এ নার্সারিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। প্রতি মাসে যে বেতন পান তা দিয়ে পরিবার চলে।

নার্সারি মালিক সোহাগ মজুমদার জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে এ নার্সারি। তার কাছ থেকে অনেকেই কলমের চারা কিনে নিয়ে লাভবান হয়েছেন। অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ফলের ব্যবসায়ী হয়েছেন। তিনি আরও জানান, এবার বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিক্রি কিছুটা কম হচ্ছে।

সোহাগ মজুমদারের স্বপ্ন, প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজে জমি কিনে আরও বড় পরিসরে নার্সারি গড়ে তুলবেন। সারা দেশে তার কলমের গাছ রপ্তানি হবে- এটা তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, মজুমদার নার্সারির নাম তিনি শুনেছেন। তরুণ ও যুবক শ্রেণির জন্য এটি একটি আয়বর্ধক কার্যক্রম। যারা নার্সারি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান, প্রাকৃতিকভাবে অকৃত্রিম আনন্দ পাবেন, পাশাপাশি আয় উপার্জনের সুযোগ থাকবে। সোহাগ মজুমদারের মতো কেউ যদি নার্সারি ও আয়বর্ধক উপার্জন করতে চান, তাহলে কৃষি বিভাগ তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসীর মতে, দীর্ঘদিন নার্সারির কাজের অভিজ্ঞতায় সোহাগ মজুমদার এখন অনেকের কাছে পরিচিত নাম। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় নার্সারির ক্ষতি হয়। তাই সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণ বা আর্থিক সহায়তা করে, তবে এ ব্যবসার আরও প্রসার সম্ভব।

সবজি চাষে শঙ্কায় গাইবান্ধার কৃষক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
সবজি চাষে শঙ্কায় গাইবান্ধার কৃষক
সবজিখেত পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। ছবি: খবরের কাগজ

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাইবান্ধা শীতের সবজি চাষ দেড় মাস পিছিয়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার সবজি চাষ কমেছে। এদিকে সার, কীটনাশক সংকট ও শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। অন্যদিকে কয়েক দফা বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ।

গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হলেও এ বছর তা কমে ৬ হাজার ৯৪৭ হেক্টরে নেমেছে। সম্প্রতি তিন দফায় বন্যায় জেলায় অন্তত ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর ৬ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৭১৩ হেক্টর জমিতে চাষ সম্পূর্ণ হয়েছে।

সরেজমিন পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী মাঠে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ খেতে কৃষকরা সবজির পরিচর্যা করছেন। অনেকে আগাম আমন ধান কেটে ওই জমিতে সবজি চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন। 

কাতলী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় সারা বছর পটল, কপি ও করলার চাষ হয়। এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করেছেন। গত বছরে এই সময়ে সবজি বাজারে তুলতে পারলেও এবার অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ওই সবজি দেড় মাস পিছিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে সবজি গাছ মারা গেছে। এতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। শীতের শুরুতে সবজির দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু এবার সময়মতো সবজি বাজারে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।

কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এ ছাড়া দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি করেছি। দেড় বিঘা জমিতে কপি চাষে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু এই কপি যখন বাজারে তুলব, তখন এর দাম পাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এই সবজি এক মাস আগে বাজারে তুলতে পারলে খরচ বাদে, প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হতো। কিন্তু সেটা আর হবে না।’

কৃষক জাইদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও দিতে হয়। কিন্তু বাজারে সার কিনতে গেলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। সার পাওয়া গেলেও তা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কিটনাশকেরও দাম বেড়েছে গেছে। একই সঙ্গে জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি আগের চেয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। এতে আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের প্রণোদনার আওতায় না আনে, তাহলে আগামীতে এ অঞ্চলে অনেক চাষি ঝরে পড়বেন। তারা বিকল্প হিসেবে অন্যকিছু চাষ করতে বাধ্য হবেন।’

কৃষক সাইফুল মিয়া জানান, এবার সবজি চাষে তাদের প্রচুর খরচ বেড়েছে। উচ্চমূল্যে সার ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এতে চাষাবাদ করতে হিমশিমে পড়েছেন। গত বছর সবজি চাষে লাভ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মরিচ ও পটলসহ শত শত বিঘা জমির সবজি পোকা লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তারা চরম লোকসানের শঙ্কায় আছেন। এর পরও লাভের স্বপ্ন নিয়ে খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর শীতের সবজি চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। সামনে কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, চাষিরা বাম্পার ফলন পাবেন। তারা উপযুক্ত সময়ে ভালো দামে সবজি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এজন্য কৃষকদের পরামর্শ ও কৃষি সহায়তা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

দৌলতপুরে মাছ বিক্রিতে আয় শতকোটি টাকা

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪১ এএম
দৌলতপুরে মাছ বিক্রিতে আয় শতকোটি টাকা
মাছ ধরার পর বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন জেলেরা। ছবি: খবরের কাগজ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদী ঘেঁষা এলাকায় মানুষের জীবিকা মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রির আয় বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেও, এখানে কোনো মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র নেই। এর কারণে জেলেরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সরকারের কাছে দ্রুত মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। তারা আশা করেন, এতে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে ও স্থানীয় মৎস্য খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

দৌলতপুরের ফিলিপনগর, মরিচার ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নগুলো নদী ঘেঁষা এ অঞ্চলের প্রায় ৯০০ জেলে মাছ শিকার করে। এ ছাড়া স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ বাড়তি আয়ের আশায় নদীর ধারে মাছ ধরেন। পদ্মা নদী থেকে ধরা এসব মাছ তারা বিক্রির জন্য প্রতিদিন স্থানীয় ঘাট ও বাজারগুলোতে নিয়ে আসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর এসব টাটকা মাছের বেচাকেনা চলে। এসব মাছ কিনতে ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় করেন। এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। এতে বছরে মাছ বিক্রির আয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি।

স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুরের মৎস্য খাত অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক সম্ভাবনাময়। তবে সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাব এই অঞ্চলের জেলেদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা হলে এখানকার মৎস্য খাত স্থানীয় জনগণের জীবিকার উন্নতির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই অঞ্চলের বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়- চিংড়ি, পিউলি, চ্যালা, ঘাউরা, বাঁশপাতা, বাইম, বেলে, ট্যাংরা ও ইলিশের মতো বিভিন্ন পদের মাছ। মাছের দাম প্রকার ও আকার ভেদে ২৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হয়। তবে এখানকার মৎস্যজীবীরা বলছেন, পদ্মা তীরবর্তী হওয়া সত্ত্বেও বৃহত্তর এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোনো মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এর ফলে মাছ ধরে জেলেরা তাদের মাছের সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সিদ্দিক ও জামাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিদিন পদ্মা নদী থেকে তারা যে পরিমাণ মাছ শিকার করেন, তা ঘাট ও স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসেন। কিছু পরিমাণ মাছ শহরের আড়তেও পাঠান। এভাবে প্রতিদিনের আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। অপরদিকে মাছের আকার ও ধরনের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ হয়। তবে বাজারে ক্রেতার অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মাছের দাম কমে যায়।

মাছ বিক্রি করতে আসা জেলে মনোয়ার বলেন, ‘আমাদের মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মাছ পচে যাওয়ার ভয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি এখানে একটি মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তা হলে জেলেরা লাভবান হবেন ও সরকারও এখান থেকে আয় করতে পারবেন।’

নদীর পাড়ে মাছ কিনতে আসা তুষার রহমান বলেন, ‘সকালে ঘাটে এসেছি নদীর টাটকা মাছ কিনতে। যদিও দাম কিছুটা বেশি, তবে এসব মাছের স্বাদ অসাধারণ।’

দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ জানান, ‘প্রতি মৌসুমের মে মাসের শেষ সময় থেকে ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত নদীতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন গড়ে অন্তত দেড় হাজার কেজি মাছ বিক্রি হয়। এসব এলাকা থেকে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়। তিনি আরও বলেন, ‘একটি মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই খাতের আরও উন্নয়ন হবে।’

লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪০ এএম
লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা
লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনিতে সুপারি কেনাবেচা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরে এখন সুপারির ভরা মৌসুম। জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পাকা সুপারির জমজমাট বেচাকেনা চলছে। বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সুপারির দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। এতে ন্যায্য দাম পেয়ে  খুশি  স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর সুপারি বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তথ্যটি জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে পাকা সুপারি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে মজুত করছেন। তারা বেশির ভাগ সুপারি পানিতে ভিজিয়ে রাখছেন। কারণ মৌসুম শেষে পানসেবীদের কাছে ভেজা সুপারির কদর বেড়ে যায়।

এসব উৎপাদিত সুপারির একটি বড় অংশ পান খাওয়ায় ব্যবহার হলেও আর একটি অংশ দেশের বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল কারখানায় ব্যবহার হয়। বাজারে প্রতি পোন (৮০টি সুপারিতে এক পোন) সুপারি ১৪০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম অর্থসংকটে ভুগছিল। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুপারি দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। সুপারি বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় চাষিরা। গত বছরের তুলনায় সুপারির দাম প্রতি পোনে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে চলতি বছর ৬ হাজার  ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর সুপারি বাগানে আড়াই থেকে ৩ টন শুকনো সুপারি উৎপাদন হবে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দেরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়। সদর উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চৌধুরী মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’

মান্দারি বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

সদর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের সুপারি চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

মনোহরপুর গ্রামের বাবুল জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়।

 তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।