সোনারগাঁয়ে পুকুর, ডোবা ও নদীতে মাছ চাষ হলেও দুষিত পানি ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে উৎপাদন কমছে। প্রতি বছর ৪ হাজার ৭০০ টন মাছ চাষ হয়, তবে সহযোগিতা পেলে ২০ হাজার টন উৎপাদন সম্ভব। মাছ চাষিরা বলেন, পরিষ্কার পানি ও ঋণ সহায়তা পেলে আয় বাড়বে। মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে।
পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষি মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৪৫ থেকে ৪৬ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। বর্তমানে আমি দশটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ করছি। আমি ৩০ শতাংশ একটি পুকুরে ৫০ হাজার পাঙাশের পোনা ছেড়েছি। মাছের পরিচর্যার জন্য চুক্তিভিত্তিক লোক রেখেছি। ৬ মাস এই মাছ লালন-পালন করতে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। ৬ মাস পর বিক্রি করলে ১০ লাখ টাকা খরচ উঠে যাবে এবং আরও ১০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হবে। পুকুরে পানি স্বল্পতা রয়েছে, খাল থেকে পানি এখন আর আসে না। খালের পানি দুষিত ও ময়লা, রোগজীবাণু থাকে। আগে খালের মাছ বিক্রি করে ২০ হাজারের বেশি পরিবার চলত। যদি খালের পানি পরিষ্কার করা যেত, তাহলে মাছের উৎপাদন চার গুণ বাড়ত।’
পৌরসভার দিয়া পাড়া এলাকার মাছ চাষি আবুল কাশেম জানান, ‘বর্তমানে আমার পাঁচটি পুকুরে বিভিন্ন প্রকার মাছ আছে। কুমিল্লা একতা হ্যাচারি থেকে আমরা মাছ নিয়ে আসি, কিন্তু তারা যেভাবে নির্দেশ দেয়, সেভাবে আমরা মাছ চাষ করতে পারি না। মাছের খাবারের দাম খুব বেশি। ৬ মাসে মাছের ওজন যতটুকু হওয়া উচিত, তা ঠিকমতো হয় না এবং সেজন্য লাগে ৯ মাস। আমার পাঁচটি পুকুরে মোট ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হবে এবং বার্ষিক লাভ হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিদেশে মাছ বিক্রির সুযোগ দিত সরকার, তাহলে আমার বার্ষিক আয় হতো ১ কোটি টাকার বেশি।’ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কারখানার দুষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে নদীর পানি পরিষ্কার করা হলে আরও লাভবান হওয়া যেত। সরকার সহযোগিতা করলে মাছ চাষ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
জেলে হরি দাস বলেন, ‘আমরা কুমিল্লার কয়েকজন জেলে সোনারগাঁয়ে গিয়ে পুকুরে মাছ ধরে থাকি। বিভিন্ন পুকুরে চুক্তিভিত্তিক প্রতি জাল টেনে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পাই। প্রতিদিন ২ থেকে ৫টি পুকুরে জাল টান দিয়ে থাকি।’
পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার মাছ চাষের শ্রমিক করিম বলেন, ‘আমি পুকুর পরিষ্কার এবং মাছের খাবার দেওয়ার কাজ করি। প্রতি মাসে আমাকে ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। মাছ বিক্রির সময় কিছু বকশিশও পাই।’
মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজারের মাছ বিক্রেতা ইমান আলী জানান, ‘সোনারগাঁয়ে আমরা পুকুর, চান্দিনা, নেপগুঞ্জ, আড়াইহাজার, চিটাগাং রোড, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী থেকে মাছ কিনি। আমরা মাছ কেজি ধরে কিনি ও কেজিতে বিক্রি করি। তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, বাটামাছ ২২০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।’
সোনারগাঁ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। মৎস্য চাষিরা আমাদের কাছে এলে আমরা শুধু তাদের পরামর্শ দিতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন বায়োফ্লক ও অন্যান্য পদ্ধতিতে অল্প পানিতে অধিক মাছ চাষ করা সম্ভব। দিন দিন পুকুরের পরিমাণ কমলেও মাছ চাষে আধুনিকতার কারণে মাছের উৎপাদন বাড়ছে।’