ঝালকাঠিতে মৌসুমের শুরু থেকেই আমড়ার বাজার জমে উঠেছে। ভিমরুলী ও আটঘর কুরিয়ানার ভাসমান হাটে এখন তাজা আমড়ার সমারোহ। জেলার কৃত্তিপাশা ইউনিয়নজুড়ে আমড়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা। কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিনদিন আমড়ার চাষ বাড়ছে।
দেশব্যাপী বিপুল চাহিদা রয়েছে বরিশাল অঞ্চলের আমড়ার। সুস্বাদু এই ফলের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ঝালকাঠি থেকে। ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খেজুরা, আতাকাঠিসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে এখন বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ হয়। অন্য জেলার আমড়ার তুলনায় মিষ্টি হওয়ায় এই জেলার আমড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন হাটে আমড়ার বেচাকেনা চলছে। এর মধ্যে ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান হাটটি সবচেয়ে বড়। এ হাট থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পুষ্টিকর এ ফল সরবরাহ করা হয়। বিপুল চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় প্রতি বছরই আমড়ার আবাদ বাড়ছে। এ বছর আমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে আমড়া কিনছেন ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে। তবে মৌসুম শেষে আরও কিছু বেশি দামে আমড়া বিক্রির আশা করছেন চাষিরা।
প্রতি বছর ভিমরুলীতে অস্থায়ী ডজনখানেক আড়তে আমড়ার বেচা-কেনা চলে। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে আমড়া নিয়ে ভিমরুলীর ভাসমান হাটে হাজির হন চাষিরা। আড়তদাররা নৌকা থেকেই কিনে নেন আমড়া। এরপর বাছাই করে বস্তা ও ক্যারেটে সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান পাইকাররা।
স্থানীয় আমড়া চাষি সবুজ হালদার জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে আমড়ার চাষ করেছেন। এ বছর ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রির আশা করছেন। সবুজ হালদার বলেন, ‘শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই তিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই এই সময়ে দামও ভালো থাকে। সুমিষ্ট হওয়ায় এখানকার আমড়ার সারা দেশে চাহিদা রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর এই এলাকায় আমড়ার আবাদ বাড়ছে।’
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টি এম মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘আমড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আঁশ থাকার কারণে আমড়া হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমে নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কাঁচা তো বটেই, সরষে মাখা, রান্না করে ও মোরব্বা করেও আমড়া খাওয়া যায়।’
কৃষকদের প্রত্যাশা, সরকারিভাবে যদি সরাসরি আমড়া কেনা হয়, এতে চাষিরা লাভবান হবেন।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘চলতি বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি প্রায় ১২ টন আমড়া পাওয়া গেছে। এ থেকে মৌসুমজুড়ে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই আমড়ার আবাদ বাড়ছে। এর ফলে শিক্ষিত ও বেকার যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।’