চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাষকলাই চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। খবর বাসসের।
গত ১৬ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা— কোনোটির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে সম্প্রতি পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় বিপৎসীমার ১.৩৭ মিটার, মহানন্দায় ১.৫১ মিটার এবং পুনর্ভবায় ২.০৭ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় ১৯৩২ হেক্টর জমির মাষকলাই, ৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৪০ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি এবং ৩ হেক্টর জমির চিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাষকলাই চাষিরা।
জেলায় মোট ফসলের ২.৭৪ শতাংশ ফসল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মাষকলাইয়ে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সবজিতে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, রোপা আউশে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং চিনাতে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। সম্ভাব্য উৎপাদিত ফসলের সম্ভাব্য মূল্য হিসাবে এই আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, বারোঘরিয়া, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, ছত্রাজিতপুর, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ি ও আলীনগর ইউনিয়নকে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের নিয়মিত প্রণোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এলে সেগুলো কৃষকদের সময়মতো প্রদান করা হবে।