ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৪৯ কোটি টাকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডুবে যাওয়া জমি থেকে ফসলি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কৃষকরা। সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাষকলাই চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। খবর বাসসের।

গত ১৬ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা— কোনোটির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি পদ্মা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় বিপৎসীমার ১.৩৭ মিটার, মহানন্দায় ১.৫১ মিটার এবং পুনর্ভবায় ২.০৭ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় ১৯৩২ হেক্টর জমির মাষকলাই, ৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৪০ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি এবং ৩ হেক্টর জমির চিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাষকলাই চাষিরা।

জেলায় মোট ফসলের ২.৭৪ শতাংশ ফসল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মাষকলাইয়ে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সবজিতে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, রোপা আউশে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং চিনাতে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। সম্ভাব্য উৎপাদিত ফসলের সম্ভাব্য মূল্য হিসাবে এই আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে সদর উপজেলার আলাতুলি, শাহজাহানপুর, বারোঘরিয়া, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, ছত্রাজিতপুর, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, মনাকষা, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, চৌডালা, রাধানগর, বোয়ালিয়া, বাঙ্গাবাড়ি ও আলীনগর ইউনিয়নকে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের নিয়মিত প্রণোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এলে সেগুলো কৃষকদের সময়মতো প্রদান করা হবে।

ময়মনসিংহে মাল্টা চাষে স্বপ্ন বুনন

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
ময়মনসিংহে মাল্টা চাষে স্বপ্ন বুনন
ময়মনসিংহে কাজিম উদ্দিনের মাল্টা বাগান। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন কাজিম উদ্দিন। শুরুতে সবজির আবাদ করলেও, খরচ বাড়ায় তিনি ফল চাষে ঝোঁক দেন। পরিকল্পনা করে বারোমাসি মাল্টা চাষ শুরু করেন, যার মাধ্যমে তিনি কম খরচে অধিক লাভের মুখ দেখেন। প্রথমে অল্প জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করলেও লাভ হওয়ায় বর্তমানে বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন। তার দেখাদেখি বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

কাজিম উদ্দিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাবুগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ২০০৯ সালে ২০০ ভিয়েতনামি সবুজ মাল্টা বা বাউ-থ্রি মাল্টার চারা লাগিয়ে শুরু করেন। কিন্তু এখন তার বাগানে অন্তত ১০ বিঘা জমিতে মাল্টা রয়েছে। গত বছর ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করলেও, এবার মাল্টার বাম্পার ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় তিনি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় সবুজ মাল্টা ঝুলে আছে। বেশির ভাগ গাছে এক থেকে দেড় মণ মাল্টা আসায় গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বিক্রির উদ্দেশ্যে শ্রমিকরা মাল্টা তোলার কাজ করছেন এবং কাজিম উদ্দিন তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন বাগান দেখতে আসায় বিনামূল্যে মাল্টা খেতে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে কেজি দরে মাল্টা কিনে নিচ্ছেন।

শ্রমিক সাইদুল মিয়া বলেন, ‘বাগান পরিচর্যা, গাছে খুঁটি দেওয়া, মাল্টা তোলা ও অন্যান্য কাজ করি। প্রতিদিন ৫০০ টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি।’

কাজিম উদ্দিনের জানান, ‘কাজিম উদ্দিন একজন কৃষিমনা মানুষ। বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফেরার পর সরাসরি বাগানে চলে যান। শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি নিজেও বাগান পরিচর্যায় কাজ করেন। ফলে মাল্টার বাম্পার ফলন হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন তিনি। তার সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষক ও বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছেন।

কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কৃষি কাজ পছন্দ করি। প্রথমে সবজির আবাদ করলেও লাভবান হতে পারিনি। ফলের বাগান গড়ার ইচ্ছা ছিল। ২০০৯ সালে সাহস করে ২০০ ভিয়েতনামি সবুজ মাল্টা বা বাউ-থ্রি মাল্টার চারা লাগাই। প্রথম বছরেই লাভের মুখ দেখি। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বেশি জমিতে চারা রোপণ করতে থাকি, ফলে লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে আমদানি করা বিদেশি মাল্টা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমার বাগানে উৎপাদিত মাল্টা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে ব্যাপকভাবে মাল্টা চাষ হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানি ১০ হাজার টন কমেছে। গত অর্থবছরে ফল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার টন, যা কিনতে ক্রেতাদের খরচ হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে মাল্টা।

দেশে উৎপাদিত মাল্টার চাহিদা বাড়াতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে, উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া তাবাসসুম। তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষক ও বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষ করছেন। কিন্তু ওই তুলনায় উৎপাদিত মাল্টার চাহিদা বাড়ানো যাচ্ছে না। চাহিদা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে ও আমদানি কমবে।’

ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টার আবাদ হয় ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও ত্রিশাল উপজেলায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর মাল্টার আবাদ বেড়েছে ৫০ হেক্টরের বেশি। এ বছর ৩৭৪ দশমিক ৪ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাল্টার চাষ বাড়াতে চাষিদের পরামর্শসহ সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, উৎপাদন যত বাড়বে, আমদানি ততই কমবে।’

দিনাজপুরে আগাম জাতের সবজি চাষে ব্যস্ত চাষীরা

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
দিনাজপুরে আগাম জাতের সবজি চাষে ব্যস্ত চাষীরা
দিনাজপুরের একটি সবজি খেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন কৃষকরা। ছবি: খবরের কাগজ

দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। নশিপুর সাত মাইল, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও খানসামা এলাকায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও টমেটোর চাষে মনোযোগ দিয়েছেন তারা। যদিও টানা বর্ষণে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কৃষকরা লাভের সম্ভাবনায় আশাবাদী। বর্তমানে বাজারে সবজির দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুশি। এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কাকডাকা ভোর থেকে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে জমিতে হাল-চাষ, চারা রোপণ, খেতে পানি দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তারা শুধু নিজেদের চাহিদা পূরণ করছেন না, বরং বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষেও মনোযোগ দিচ্ছেন। শীতের শুরুতে কৃষকরা রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠান, যার ফলে তারা লাভবান হচ্ছেন।

এখন মাঠগুলো সবুজে ভরে উঠেছে। বিস্তৃত মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং ও লাল শাকসহ নানা রকম শীতকালীন সবজির চারা। এসব সবজি শীত নামার আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। তবে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু সবজি চাষ ব্যাহত হয়েছে। এতে কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তাদের অনেকের চারা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তারা আবার চারা রোপণ করছেন।

দিনাজপুর নশিপুর সাতমাইল এলাকার চাষী এখলেচুর রহমান জানান, দিনাজপুরে কয়েক দিন টানা বর্ষণের কারণে মুলার আবাদ নষ্ট হয়েছে। সেই জমিতে পুনরায় চাষ করে আবার মুলার শাখা চাষ করছি। এ ছাড়া আমি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শসা ও টমেটো চাষ করছি। প্রতিদিন জমির পরিচর্যা করছি। আশা করছি আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি বাজারজাত করতে পারব।

একই এলাকার চাষী মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমি ২৫ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। প্রতিটি ফুলকপি গাছের অবস্থা ভালো আছে। প্রতিদিন কোদাল দিয়ে গাছের গোড়ায় মাটি দিচ্ছি। পানি সেচের প্রয়োজন হচ্ছে না, কারণ জমিতে রস রয়েছে। ইতোমধ্যে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করা যাবে।’

দিনাজপুরে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষকরা তাদের শ্রম ও যত্নের মাধ্যমে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছেন ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কৃষকদের এই কঠোর পরিশ্রম তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে আশা করা যায়।

দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, ‘দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা, কাশিপুর, মহব্বতপুর, নশিপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় বেশি লাভের আশায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করা হচ্ছে। এখন এই উপজেলায় যে সবজি চাষ হচ্ছে তা রবি মৌসুম শুরুর আগেই করা হয়। এই সবজি চাষে ফলনও ভালো হয়। সাধারণত কার্তিক মাসে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়। এ বছর ৫ শত হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে ৭ শত হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজির চাষ হচ্ছে। এতে করে চাষীরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।’

রংপুরে আগাম ধান কাটা শুরু, কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
রংপুরে আগাম ধান কাটা শুরু, কৃষকের মুখে হাসি
রংপুরে ধান শুকানো শেষে বস্তায় ভরা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

রংপুরে স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল আগাম আমন ধান পাকতে শুরু করায় কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন চাষিরা। এতে করে আগাম আলু চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আগাম ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় এখন কার্তিক মাসে শ্রমহীন থাকতে হচ্ছে না কৃষিশ্রমিকদের। তাই বেশ আনন্দে রয়েছেন কৃষকসহ শ্রমিকরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। ধান কাটা শেষে আগাম জাতের আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করবেন চাষিরা। ইতোমধ্যে ১০০ হেক্টর জমির আগাম ধান কাটা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল আগাম আমন ধান রোপণের ৮০-৯০ দিনের মধ্যে এই ধান পাকে। এই ধান কাটার পর আলুসহ নানা রবিশস্য আবাদ করে থাকেন চাষিরা। এই লক্ষ্যে রংপুরের সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর ও গংগাচড়াসহ কয়েক উপজেলায় এই আগাম ধানের চাষ বেশি হয় থাকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সবুজের মাঝে পাকা ধানখেত। আগাম ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই ধান ট্রাক্টরচালিত ট্রলিতে বোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে উঁচু স্থানে, যেখানে মাড়াইয়ের কাজ করা হবে। আবার কোথাও কোথাও যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা হচ্ছে। অনেকে আবার জমিতেই পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করে নিচ্ছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের পর শুকানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

রংপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ধান, আলু আগাম চাষ করে থাকি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আগাম ধান চাষ করেছি। আগে আগাম ধানে তেমন লাভ হতো না। এখন স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল জাতের ধান হওয়ায় লাভ হয়।’

রবিশস্যের জন্য বিখ্যাত মিঠাপুকুর এলাকার রসুল মিয়া বলেন, ‘এলাকার অনেকেই অন্যান্য ধান রোপণ করলেও আমি উচ্চফলনশীল জাতের আগাম ধান চাষ করেছি। ইতোমধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করেছে। এবার খরার কারণে অনেক চিটা হয়েছে। এজন্য লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

কৃষিশ্রমিক মোতালেব হোসেন বলেন, এ সময় এলাকায় কাজের চাহিদা কম। আগাম ধান চাষ হওয়ায় এখন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। মজুরি অন্য সময়ের তুলনায় কম। তারপরও যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে সংসার চলছে।

বাঁশে সাবলম্বী হাজারও পরিবার

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
বাঁশে সাবলম্বী হাজারও পরিবার
কুমিল্লার লালমাইতে বাঁশ দিয়ে গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করছেন নারীরা। ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে নানা প্রজাতির বাঁশের চাষ হচ্ছে। এতে পাহাড়ের দুই হাজারের বেশি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। ময়নামতি থেকে চণ্ডিমুড়া পর্যন্ত চাষ হওয়া এসব বাঁশ থেকে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বাণিজ্য হয় বলে জানা গেছে। গৃহস্থালি সামগ্রী, বসতঘর, ফসলের খেতের মাচা, নির্মাণসামগ্রী ও মাছ ধরার ফাঁদ- এসব ক্ষেত্রে বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আগের তুলনায় এতে অধিক ঝুঁকছেন। 

প্রায় ৪০০ বছর ধরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে গুণগত মানের বিভিন্ন জাতের বাঁশ চাষ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মতে, চাষিরা লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর লালমাই পাহাড়ে চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে।

জানা গেছে, বাঁশের কুলা, খাঁচা, উড়া, ঝুড়ি, ডালা ও মাছ ধরার নানান ফাঁদ তৈরি করছেন নারীরা। কুমিল্লার শহরতলির নমশূদ্র পল্লীর প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবারের পেশা এ বাঁশ শিল্প ঘিরে। তাদের তৈরি করা প্রতিটি পণ্য মানভেদে বাজারে ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া আনুষঙ্গিক খরচ মেটান তারা। নমশূদ্র পল্লী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য উদ্যোক্তা। যাদের কাঁচামাল হিসেবে লালমাই পাহাড়ের বাঁশেই নির্ভরতা রয়েছে।

জানা গেছে, কুমিল্লার ময়নামতি থেকে চণ্ডিমুড়া পর্যন্ত পাহাড়ের অন্তত ১০০ একর ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাঁশ চাষ হচ্ছে। সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত। চোখে পড়বে সারি সারি বাঁশ বাগান। এখানে রয়েছে তল্লা, মুলি, বরাক, কাঁটা বরাক, হিল বরাক, বোম, কনক, বারি ও পেঁচাসহ নানান জাতের বাঁশ। তবে সব থেকে বেশি বাঁশঝাড় চোখে পড়ে মধ্যম বিজয়পুর, ধনমুড়া, বড় ধর্মপুর, রাজারখলা, ভাঙামুড়া, জামমুড়া, বৈষ্ণবমুড়া, লালমতি, গন্ধমতি ও সালমানপুরে। চাষে খরচের বিপরীতে বিক্রয় মূল্য বেশি হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে।

বাঁশ কাটলে সেখান থেকে প্রতিবছর নতুন বাঁশ জন্মায়। বাঁশ বিক্রি করে বাঁশ কাঁটার সঙ্গে নিয়োজিত বদলিদের পরিবারও চলছে ওই অর্থ দিয়ে।

গৃহস্থালি সামগ্রী ছাড়াও নির্মাণকাজ, বসতঘর তৈরি ও জমিতে শাকসবজির মাচাতেও বাঁশের ব্যবহার বাড়ছে। স্থানীয় চাষিরা জানান, সরকারি সহায়তা পেলে বাঁশ চাষ বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে রাজস্ব আয়ও।

লালমাই পাহাড়ের বাঁশ চাষি আবদুল হান্নান বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ের বাঁশের চাহিদা আগের চেয় বেড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা এখানে এসে বাঁশ কিনে নিয়ে যান।’

তিনি জানান, বড় আকারের প্রতি ১০০ বাঁশের দাম ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। মাঝারি বাঁশের দাম প্রতি পিস ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ছোট বাঁশের দাম প্রতি পিস ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাঁশের চাহিদা বাড়ায় এ অঞ্চলে বাঁশ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। 

সদর দক্ষিণ উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান বলেন, ‘পাহাড়ে বাঁশ চাষ করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। বাঁশ থেকে নানা ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে, যা কর্মসংস্থানের জন্য অনেক বড় উৎস। এখানে প্রতি বছর বাঁশ চাষ বাড়ছে। পাহাড়ের বাঁশ থেকে তৈরি করা পণ্যে বছরে ৫০ লাখ টাকারও বেশি আয় হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারী বর্ষণসহ নানা দুর্যোগে পাহাড়ের মাটির ক্ষয়রোধে বাঁশের ভূমিকা অনেক।’

চুইঝাল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৯ এএম
চুইঝাল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
নড়াইল পৌরসভার উজিরপুরে একটি বাগানে চুইঝাল গাছ পরিচর্যা করছেন এক নারী উদ্যোক্তা। সংগৃহীত

নড়াইলে দিন দিন চুইঝালের আবাদ বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণে এই জেলার মাটি চুইঝাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম একেবারেই কম, রোগবালাইও নেই বললেই চলে। চাষাবাদের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না; বাড়ির আঙিনা কিংবা বাগানের যেকোনো গাছের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে সহজেই চাষ করা সম্ভব। স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। চাহিদা থাকায় বিক্রিতেও ঝামেলা পোহাতে হয় না। এ কারণে দিন দিন মসলা জাতীয় চুইঝাল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

চাষিরা জানান, বেলে-দোআঁশ মাটিতে চুইঝালের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে কাটিং পদ্ধতিতে নতুন করে চারা উৎপাদন করা যায়, ফলে বারবার চারা কেনার প্রয়োজন হয় না। গাছ রোপণের পর জৈব সার ও পর্যাপ্ত পানি দিলেই হয়; বাড়তি তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। দুই বছর পর থেকে গাছ বিক্রি করা যায়। গাছের ওজন অনুযায়ী এর দাম নির্ধারণ করা হয়। এর দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। গাছের বয়স যত বাড়ে, দামও বাড়তে থাকে। ১০ বছর রাখলে একেকটি গাছ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে তিন একর জায়গায় চুইঝালের চাষ করছেন নাজমুল মোল্যা ও স্বর্ণা ইয়াসমিন দম্পতি। তাদের বাগানে থাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, সুপারিসহ প্রতিটি গাছের সঙ্গে রয়েছে এক থেকে একাধিক চুই গাছ। 

স্বর্ণা ইয়াসমিন বলেন, ‘২০২১ সালে চার থেকে পাঁচটা গাছ লাগিয়ে ছিলাম। ওই গাছ থেকে ডগা কেটে পুনরায় লাগাতে থাকি। এভাবে বাড়তে বাড়তে বাগানে এখন প্রায় ৩ হাজারের মতো চুইঝাল গাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। খরচের তুলনায় এর দাম অনেক বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু চুইঝাল চাষে তেমন কোনো খরচ নেই, আলাদা জমিরও প্রয়োজন নেই, তাই এটা থেকে বেশি লাভ করা সম্ভব। আমাদের বাগানে আরও গাছ রয়েছে; আগামীতে সব গাছে চুইঝাল গাছ লাগাব।’

ফয়সাল আমিন নামে এক চুইঝাল চাষি বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে চুইঝাল চাষ করছি। এতে অতিরিক্ত কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। পরিত্যক্ত জায়গায় এটি চাষ করা সম্ভব। খুবই লাভজনক একটি ফসল। বিক্রিতেও কোনো ঝামেলা নেই, ব্যাপারীরা বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যান।’

চম্পা খাতুন নামে এক নারী বলেন, ‘আমি ২০০৫ সালে ১০টা গাছ দিয়ে চুইঝাল চাষ শুরু করি। সেখান থেকে দেড় লাখ টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছিলাম। আমাদের এলাকায় তখন অন্য কেউ করত না, এখন আশেপাশের সবাই চাষ করে।’

আগে চুইঝালের চারা নড়াইলের নার্সারিতে উৎপাদন হতো না। নার্সারি মালিকরা খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া থেকে চারা পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করতেন। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ায় গত দুই বছর ধরে নড়াইলে চারা উৎপাদন হচ্ছে। শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকায় আল্লাহর দান নার্সারি অ্যান্ড পলিনেট হাউসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্যান্য গাছের চারার সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে চুইঝালের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।

নার্সারির মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দিন দিন নড়াইলের চুইঝালের চারার চাহিদা বাড়ছে। এক বছর আগে যে পরিমাণ চারা বিক্রি করতাম, এখন তার চারগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। যা উৎপাদন করছি তা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চুইঝাল চাষে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার পরেই নড়াইলের অবস্থান। জেলার তিনটি উপজেলায় বর্তমানে ৭ হাজার ৪৩৭টি পরিবার চুইঝাল চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় মোট ১২ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ হয়েছে, সেখান থেকে ৩০ টন চুইঝাল উৎপাদন হয়। এর আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ টন। এক বছরে আবাদ বেড়েছে ৫ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল মাত্র ৯ টন। অর্থাৎ ছয় বছরে উৎপাদন বেড়েছে ২১ টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝালের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বাজারে এর চাহিদা অনেক। এ অঞ্চলের যে কয়টি জেলায় চুইঝালের চাষ হয়, তার মধ্যে নড়াইল অন্যতম। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকের চুইঝাল চাষ আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছি।’