ঢাকা ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহে মাল্টা চাষে স্বপ্ন বুনন

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
ময়মনসিংহে মাল্টা চাষে স্বপ্ন বুনন
ময়মনসিংহে কাজিম উদ্দিনের মাল্টা বাগান। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন কাজিম উদ্দিন। শুরুতে সবজির আবাদ করলেও, খরচ বাড়ায় তিনি ফল চাষে ঝোঁক দেন। পরিকল্পনা করে বারোমাসি মাল্টা চাষ শুরু করেন, যার মাধ্যমে তিনি কম খরচে অধিক লাভের মুখ দেখেন। প্রথমে অল্প জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করলেও লাভ হওয়ায় বর্তমানে বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন। তার দেখাদেখি বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

কাজিম উদ্দিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাবুগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ২০০৯ সালে ২০০ ভিয়েতনামি সবুজ মাল্টা বা বাউ-থ্রি মাল্টার চারা লাগিয়ে শুরু করেন। কিন্তু এখন তার বাগানে অন্তত ১০ বিঘা জমিতে মাল্টা রয়েছে। গত বছর ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করলেও, এবার মাল্টার বাম্পার ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় তিনি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় সবুজ মাল্টা ঝুলে আছে। বেশির ভাগ গাছে এক থেকে দেড় মণ মাল্টা আসায় গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বিক্রির উদ্দেশ্যে শ্রমিকরা মাল্টা তোলার কাজ করছেন এবং কাজিম উদ্দিন তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন বাগান দেখতে আসায় বিনামূল্যে মাল্টা খেতে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে কেজি দরে মাল্টা কিনে নিচ্ছেন।

শ্রমিক সাইদুল মিয়া বলেন, ‘বাগান পরিচর্যা, গাছে খুঁটি দেওয়া, মাল্টা তোলা ও অন্যান্য কাজ করি। প্রতিদিন ৫০০ টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি।’

কাজিম উদ্দিনের জানান, ‘কাজিম উদ্দিন একজন কৃষিমনা মানুষ। বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফেরার পর সরাসরি বাগানে চলে যান। শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি নিজেও বাগান পরিচর্যায় কাজ করেন। ফলে মাল্টার বাম্পার ফলন হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন তিনি। তার সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষক ও বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছেন।

কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কৃষি কাজ পছন্দ করি। প্রথমে সবজির আবাদ করলেও লাভবান হতে পারিনি। ফলের বাগান গড়ার ইচ্ছা ছিল। ২০০৯ সালে সাহস করে ২০০ ভিয়েতনামি সবুজ মাল্টা বা বাউ-থ্রি মাল্টার চারা লাগাই। প্রথম বছরেই লাভের মুখ দেখি। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বেশি জমিতে চারা রোপণ করতে থাকি, ফলে লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে আমদানি করা বিদেশি মাল্টা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমার বাগানে উৎপাদিত মাল্টা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে ব্যাপকভাবে মাল্টা চাষ হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানি ১০ হাজার টন কমেছে। গত অর্থবছরে ফল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার টন, যা কিনতে ক্রেতাদের খরচ হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে মাল্টা।

দেশে উৎপাদিত মাল্টার চাহিদা বাড়াতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে, উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া তাবাসসুম। তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষক ও বেকার যুবকরাও মাল্টা চাষ করছেন। কিন্তু ওই তুলনায় উৎপাদিত মাল্টার চাহিদা বাড়ানো যাচ্ছে না। চাহিদা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে ও আমদানি কমবে।’

ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টার আবাদ হয় ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও ত্রিশাল উপজেলায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর মাল্টার আবাদ বেড়েছে ৫০ হেক্টরের বেশি। এ বছর ৩৭৪ দশমিক ৪ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাল্টার চাষ বাড়াতে চাষিদের পরামর্শসহ সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, উৎপাদন যত বাড়বে, আমদানি ততই কমবে।’

কমলা চাষে দুই যুবকের বাজিমাত

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭ এএম
কমলা চাষে দুই যুবকের বাজিমাত
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মো. মাহফুজ ও ভালুকায় শহিদ আহাম্মেদ কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন। খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন দুই যুবক। তারা ইউটিউব দেখে এই ফল চাষে মনোযোগী হন। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও কমলা চাষে ঝুঁকছেন।

ঈশ্বরগঞ্জের যুবক মো. মাহফুজ। তিনি উপজেলার লংগাই গ্রামে চায়না ছোট জাতের কমলা চাষ করেছেন। তার ৪০ শতাংশ বাগানে রয়েছে ৯৭টি কমলা গাছ। এতে প্রায় ৭০ মণ কমলা ধরেছে। ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন মাহফুজ।

ভালুকার যুবক শহিদ আহাম্মেদ। তিনি উপজেলার আখালিয়া গ্রামে কমলার চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। তার দেড় একর জমিতে রয়েছে চায়না জাতের ২৩০টি ও দার্জিলিং জাতের ৭০টি কমলা গাছ। এতে প্রায় ২০০ মণ কমলা ধরেছে। ১২ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন শহিদ।

লংগাই ও আখালিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাহফুজ ও শহিদ নিজেদের প্রচেষ্টায় সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাদের বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন শ্রমিকরা। স্বপ্নবাজ দুই যুবকের দেখাদেখি স্থানীয় লোকজনসহ বেকার যুবকরাও কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ধীরে ধীরে কমলা চাষি বাড়তে থাকলে বাজারে কমে যাবে কমলার দাম। এতে সব শ্রেণি-পেশার লোকজন চাহিদামতো কমলা কিনে খেতে পারবেন।

লংগাই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই গ্রামে কমলা চাষ করতে আগ্রহী ছিলেন না কেউ। সবাই ভেবেছে, এই ফল চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন মাহফুজ। তিনি কমলা চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। এখন অন্যরাও কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

মাহফুজের বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ফাঞ্জু মিয়া ও জহিরুল ইসলাম মাসুমসহ কয়েকজন। তারা জানান, তারা নিয়মিত বাগান পরিচর্যার কাজ করেন। এতে যা মজুরি পান তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করেন। বাড়ির পাশে কাজ পেয়ে খুশি তারা।

আখালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মতলু শেখ বলেন, ‘শহিদ এইচএসসি পাস করে আর্থিক সফলতা অর্জনের জন্য ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যান। ২০১৫ সালে দেশে ফিরে প্রথমে পোলট্রি খামার ও লেবুর চাষ শুরু করেন। কিন্তু লেবুতে তেমন একটা সাফল্য না আসায় কমলা চাষ করেন। এতে ধরা দেয় সাফল্য। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা।

এই বাগানের শ্রমিক আব্দুল কাদির ও ইদ্রিসসহ কয়েকজন জানান, দূর-দূরান্তে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। শহিদ বাগান করার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাগানে কাজ দেওয়া হয়। প্রতিদিনের মজুরি দিয়ে সংসার চলছে।

ঈশ্বরগঞ্জের মাহফুজ বলেন, ‘ইউটিউব দেখে কমলা চাষ করেছি। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করি না। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছি। তাই এই কমলাগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অনেক বেকার যুবক চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করছেন। তারাও যদি এমন বাগান গড়ে তোলেন, তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

শহিদ আহাম্মেদ বলেন, ভালুকা উপজেলায় আমিই প্রথম কমলা চাষ শুরু করেছি। ইউটিউব দেখে কমলা চাষে লাভবান হয়েছি। এ বছর ১৫০ টাকা কেজি দরে কমলা বিক্রি শুরু করেছি। পাশাপাশি সারা দেশে কমলার চাষ ছড়িয়ে দিতে কলম পদ্ধতিতে কমলার চারা করে বিক্রি করছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় গত বছর ২২ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জে এক হেক্টর জমিতে ও ভালুকায় ১০ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ১৯ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জে এক হেক্টর জমিতে ও ভালুকায় ১০ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে। কমলার চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘কমলা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই কমলা চাষ করতে চান না। কিন্তু এ ফল চাষে সফল হচ্ছেন অনেকেই। কমলা চাষে আগ্রহী করতে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষাবাদ বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিদেশ থেকে কমলা আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি করা সম্ভব। যদি নতুন করে কেউ কমলা চাষ করতে চান, তাহলে পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর দাম বাড়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষে

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ এএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর দাম বাড়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষে
ঠাকুরগাঁওয়ে একটি জমিতে আলুর বীজ বপন করছেন নারী শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁওয়ে জমিতে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আলুর বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষক এবার আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষকরা জানান, ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু চাষ বেশি লাভজনক। এ বছর আলুর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় তারা জমিতে আলু লাগানোর পরিমাণ বাড়িয়েছেন।

সদর উপজেলার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আলুর দাম ভালো ছিল। তাই এবার আমি ধানের পাশাপাশি আমার ৫ বিঘা জমিতে আলু লাগাচ্ছি। আশা করছি, ফলন ভালো হবে এবং লাভবান হব।’ এ ছাড়া কৃষকরা আলু চাষের জন্য তাদের জমিতে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগ করছেন এবং সঠিক পরিচর্যায় আশা করছেন ভালো ফলনের।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আলু চাষের শুরুতে বীজ, সেচ, সার ও শ্রমের জন্য তুলনামূলক বেশি বিনিয়োগ করতে হয়। তবে ভালো ফলন এবং বাজারে চাহিদা থাকলে এই ফসলটি কৃষকদের জন্য দারুণ লাভজনক হয়ে উঠে। এ বছর প্রতি কেজি আলুর দাম ৪০-৫০ টাকার মধ্যে থাকায় কৃষকরা আশাবাদী। 

কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ মৌসুমে আলুর চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি জমিতে আলু রোপণ করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং সঠিক পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া এবং জমি প্রস্তুতির জন্য অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চাষীরা এ বছর ভালো ফলনের আশা করছেন। এক কৃষক বলেন, ‘আবহাওয়া যদি এভাবেই অনুকূলে থাকে, তা হলে আলুর ফলন ভালো হবে। তবে বৃষ্টি হলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’

তবে আলু চাষে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সঠিক বীজের অভাব, সারের মূল্যবৃদ্ধি ও ফসল সুরক্ষায় পর্যাপ্ত কীটনাশকের ব্যবস্থা করা কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আলু সংগ্রহের পর সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সঠিক ব্যবস্থা না থাকলে কৃষকদের লোকসানের শঙ্কাও থাকে। 

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘আলু চাষ লাভজনক হলেও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। সরকার যদি সারের মূল্য সহনীয় রাখে এবং আমাদের জন্য সহজলভ্য করে, তা হলে লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে।’

এদিকে কৃষি বিভাগ আশ্বাস দিয়েছে, আলু চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং সঠিক পরিচর্যাসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে কৃষকদের লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া আলু চাষের ক্ষেত্রে সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশে আলু শুধু স্থানীয় চাহিদাই পূরণ করে না, বরং এটি রপ্তানিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আলুর রপ্তানি বাড়ানো যায়, তবে কৃষকরা আরও বেশি উৎসাহিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলবে। ঠাকুরগাঁওয়ে আলু চাষের সম্ভাবনা সম্প্রতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।

বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলে জমজমাট দৃশ্য। জমিতে কাজ করছেন কৃষকরা, নারীরা সেচের কাজে সহায়তা করছেন ও তরুণরা জমি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এই দৃশ্য যেন আলু চাষের নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করছে। কৃষকরা জানান, ‘আমরা কষ্ট করে ফসল ফলাই। সরকার যদি আমাদের সঠিক দামে আলু বিক্রি করতে সহায়তা করে, তবে আমরা আরও বড় পরিসরে চাষ করতে পারব।’

ধান কাটা শেষে আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম
ধান কাটা শেষে আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক
খেতে আলুর বীজ বপন করছেন শ্রমিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

শেরপুরে ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা প্রায় শেষ করেছেন কৃষকরা। এখন ওই জমিতে আলু বীজ রোপণের কাজ শুরু করেছেন তারা। শীতের শুরুতে এ কাজের জন্য মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে আলু বীজ বপনের কাজ। এ কাজের মাধ্যমে মৌসুমি শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রতি দিন হাজার হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরিভিত্তিতে কাজ করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ আলু বীজ বপনের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কৃষকরা নিয়মিত কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। শেরপুরে কৃষকদের মাঝে এ সময় শীতের আলু চাষের জন্য উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকা থেকে শ্রমিক হেলেনা বেগম জানান, ‘আমরা সারা বছর বাড়িতে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকি। তবে আলু বীজ রোপণ ও আলু তোলার সময় আমাদের প্রয়োজন হয়। তখন মাঠে কাজ করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করি। এই টাকা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন খরচে সহায়তা করি।’ 

আলু চাষে নিয়োজিত শ্রমিক আবু মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর আমি আলু বীজ রোপণের কাজে অংশগ্রহণ করি। এতে কোনো দূরে যেতে হয় না, বরং বাড়ির পাশেই কাজ করতে পারি। এতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করতে পারি।’

এ ছাড়া আলু চাষিরা জানান, এ বছর আলু চাষের খরচ বেড়েছে। কৃষি উপকরণ, শ্রমিকের মজুরি, জমি লিজ ও সেচ খরচ বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। তবে এক বিঘা জমিতে আলু চাষের লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক এখনো আলু চাষে আগ্রহী।

সদর উপজেলার কুসুমহাটি এলাকার আলুচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি ১০ একর জমিতে আলু চাষ করছি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আলু চাষে লাভ বেশি। এক একর জমিতে আলু বীজ ক্রয়, রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কিছু খরচ বেশি। তবে খরচ বাদে একরপ্রতি ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ আশা করছি।’

আরেক কৃষক সাদেক মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর আমি আমন ধান কাটার পর আলু বীজ বপন করি। এ বছরও ওই কাজ করেছি। ডায়মন্ড, এস্টারিক্স ও সানশাইন এই তিন জাতের আলু বীজ বপন করেছি। আলুগাছের একটি সাধারণ রোগ হচ্ছে লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ। এই ভাইরাস যদি আলু গাছকে আক্রমণ করে, তাহলে গাছটি এক দিনের মধ্যে মরে গিয়ে পুড়ে যায়। তবে এই রোগ না হলে আলুতে ভালো লাভ হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ধান কাটার পর কৃষকদের আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এবার শেরপুরে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়া সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পায় এবং ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ে। আলু চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) জেলার উপপরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এবার শেরপুরে উন্নতমানের আলু বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকরা এ বছর লেডি রোসেটা, সানশাইন, এস্টারিক্স, ডায়মন্ড ও কারেজ জাতের আলু বীজ বপন করছেন। আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।’

মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ভাগ্য খুলছে কৃষকের

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ এএম
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ভাগ্য খুলছে কৃষকের
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে পার্বতীপুর দিঘা এলাকায় টমেটোখেত পরিচর্যা করছেন কৃষক নাজমুল হক। ছবি: খবরের কাগজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মালচিং পদ্ধতিতে আগাম জাতের টমেটো চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন কৃষকরা। তারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন ও কম খরচে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, মালচিং একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এটি পরিবেশের জন্য উপকারী ও উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি করতে সহায়ক। 

মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে জমি রোগবালাই মুক্ত থাকে, পানি, সার ও ওষুধের খরচ অনেক কমে যায়। এতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গাছের জীবনকালও দীর্ঘ হয়। এ বছর জেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নত জাতের মধ্যে বিউটি প্লাস, অভিলাষ, লাভলী, লভেলট্রি, বাহুবলি ও জিরো ফোর জাতের টমেটো আবাদ হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এতে খরচ কমিয়ে রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের দিঘা এলাকার কৃষক নাজমুল হক মালচিং পদ্ধতিতে ৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এই চাষাবাদে তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা, আর তিনি খরচ বাদে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষের ফলে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, যে জমিতে টমেটো চাষ করছেন, তা থেকে তিনি সপ্তাহখানেক পর পাকা টমেটো বাজারজাত করতে পারবেন। তার জমিতে আসা কৃষকরা মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

অন্যদিকে কৃষক আলাউদ্দীন মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি জানান, মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ফলে ব্যাপক ফলন হয়েছে। শিগগিরই বাজারে পাকা টমেটো পাঠাতে পারবেন। তিনি আরও জানান, তার জমি থেকে শিগগিরই টমেটো উঠতে শুরু করবে। অন্য কৃষকরা তার জমিতে এসে এই পদ্ধতি শিখছেন।

কৃষক বাবু জানা জানান, তিনি আগে সাধারণ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতেন। কিন্তু এখন মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তার মতে, এই পদ্ধতিতে খরচ কম হয় এবং লাভ বেশি হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর যদি ভালো ফলন হয়, তাহলে আগামী বছর মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো ছাড়াও অন্যান্য সবজি চাষাবাদ করব।’ 

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হয়। প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হয়। পরে ওই বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এই পেপার বিশেষ ধরনের পলিথিন, যা মাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখে না। এরপর বীজ থেকে চারা গজানোর পর মালচিং পেপার ছিদ্র করে চারা বের হতে দেওয়া হয়। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না এবং অতিরিক্ত পানি জমে গাছের ক্ষতি হয় না। এতে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন খরচ কমে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, আগামীতে মালচিং পদ্ধতিতে আরও বেশি টমেটো এবং অন্যান্য সবজি চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, এ পদ্ধতি কৃষকদের জন্য লাভজনক। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। 

তিনি জানান, কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা মালচিং পদ্ধতিতে সফলভাবে চাষাবাদ করতে পারেন এবং লাভবান হতে পারেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে পুরো কৃষি সেক্টরকেই লাভবান করবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবজি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

কমলা চাষে সফল উদ্যোক্তা ইমরান

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ এএম
কমলা চাষে সফল উদ্যোক্তা ইমরান
কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন ইমরান হোসেন উজ্জ্বল।ছবি: খবরের কাগজ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনী গ্রামের উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু কমলা। বাগানটি এখন হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে, যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয়রা।

অনেকেই বাগানটি দেখতে এসে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বর্তমানে অনেকেই ইমরানের দেখাদেখি কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন চাষের উদ্যোগে একদিকে যেমন বেকারত্ব কমবে, তেমনি কমবে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিষমুক্ত কমলা খেতে পারবেন।

ইমরান হোসেন উজ্জ্বল একসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। করোনাকালে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে তিনি একটি নতুন উপায় খোঁজেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। এক দিন ইউটিউবে কমলা চাষের ভিডিও দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। সিদ্ধান্ত নেন কমলা চাষের দিকে মনোনিবেশ করবেন। তখন তিনি তার বাড়ির পাশের পতিত এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ১০০টি বারী কমলা-২-এর চারা রোপণ করেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রথম মৌসুমেই তার বাগানের খরচ উঠে যায়। বর্তমানে তার বাগান হলুদ রঙের সুস্বাদু কমলায় পরিপূর্ণ।

ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ব্যবসায় মন্দার কারণে দোকান বন্ধ হওয়ার পর আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন ইউটিউবের ভিডিও দেখে কমলা চাষের সিদ্ধান্ত নিই। তারপর বাড়ির পাশের জমিতে কমলা চাষ শুরু করি। প্রতিবছর ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে আমার বাগান ভরে গেছে কমলায়। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে কমলা নিয়ে যাওয়ার সময় পাই না। কারণ ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর ১০০ মণ কমলা বিক্রির আশা করছি, যা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া আমি চারাও বিক্রি করছি।’

এ ছাড়া আক্কেলপুরের শান্তা এলাকার মুনিরা সুলতানা বলেন, ‘অন্যান্য দেশ থেকে যে কমলা আসে, সেগুলোতে সাধারণত ফরমালিন থাকে। কিন্তু এখানে বিষমুক্ত কমলা পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমি এখান থেকে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। বাচ্চাদের জন্যও এই কমলা অনেক স্বাস্থ্যকর।’ 

এদিকে আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের তানহা নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘কমলা বাগানটি দেখতে এসেছিলাম। বাগানের মধ্যে হলুদ রঙের কমলাগুলো সত্যিই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি কমলা খেয়েছি, এটি অত্যন্ত মিষ্টি। এ জন্য বাসার জন্যও কিনেছি।’ 

স্থানীয় ভিকনী গ্রামের রায়হান আলী বলেন, ‘এই কমলার বাগানটি যেমন সুন্দর, তেমন কমলাগুলোও খেতে অনেক সুস্বাদু। বাজারের কমলার তুলনায় এই কমলা অনেক বেশি মিষ্টি।’ 

একই গ্রামের ছাত্র মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এ রকম একটি কমলা বাগান করার ইচ্ছা। এ জন্য পরামর্শ নিতে আমি এখানে এসেছিলাম।’

স্থানীয়রা জানান, ইমরান হোসেন উজ্জ্বলের সফলতা জয়পুরহাটে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার চাষের মাধ্যমে শুধু আর্থিক সাফল্যই আসেনি বরং এলাকায় বিষমুক্ত কমলা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বেকারত্ব দূরীকরণ, আমদানি নির্ভরতা কমানো, ও জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইমরানের এই উদ্যোগ একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কামনাশিস্ সরকার বলেন, ‘লেবুজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আমরা ইমরান হোসেনকে একটি প্রদর্শনী দিয়েছিলাম, যা এখন সফলতার মুখ দেখেছে। মানুষজন এখানে এসে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। কমলা চাষের জন্য মাটি ও সারের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এ ধরনের ফসল চাষ করতে চান, তাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। আমরা ইমরানকে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করেছি।’

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });