ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝিনাইগাতীতে বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
ঝিনাইগাতীতে বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের খেত। বাসস

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী এবারের আমন মৌসুমে দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। গত ৩ অক্টোবর রাতে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিমজ্জিত ছিল মুনসুর আলীর চাষ করা ধানের জমি। তার মতো শত শত কৃষকের ধানের জমি টানা কয়েক দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশির ভাগ আমন ফসল পচন ধরেছে। পানি কমতে থাকায় ফসলের মাঠ থেকে ধানের চারা ও কাঁচা ধানের পচা গন্ধ বের হচ্ছে। খবর বাসসের।

কৃষক মুনসুর আলী বলেন, ‘আমার চাষ করা দুই একর জমির ধান পচে-গলে সব শেষ। দুই একর জমিতে ধান চাষ করতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ট্রাক্টর নিয়ে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ, কীটনাশক, ইউরিয়া সার- সবই মহাজনদের কাছে বকেয়া নিয়ে চাষ করেছি। বন্যায় ধান তলিয়ে ছিল সপ্তাহের বেশি সময়। একটি ধানের চারাও নেই, সব ফসলে পচা গন্ধ বের হচ্ছে। দুর্গন্ধে জমিতে যাওয়া যায় না।’

উপজেলার রামেরকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার জীবনেও এত পানি দেখিনি। এবারের বন্যায় আমার ঘরবাড়ি ক্ষতির পাশাপাশি দেড় একর জমির ধান বালুর নিচে পড়ে শেষ হয়েছে। এখনো ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করতে পারিনি। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।’

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন মৌসুমে ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছিল। এবারের বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছিল ৯ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ধান। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির। এ ছাড়া ১২৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে সম্ভাব্য মূল্য অনুযায়ী ১১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৬১৫ টাকা। সবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে প্রাপ্ত প্রণোদনা দেওয়া হবে।’

পাহাড়ে সবজির পাশাপাশি ফুল চাষ

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ এএম
পাহাড়ে সবজির পাশাপাশি ফুল চাষ
পাহাড়ের বাজারে সবজির পাশাপাশি ফুলও বেচাকেনা করছেন নারীরা।ছবি: বাসস

রাঙামাটির পাহাড়ের ঢালে ঢালে শাকসবজি চাষের পাশাপাশি এখন ফুলের চাষও করছেন পাহাড়ি জুমিয়ারা। পাহাড়ের ঢালে গড়ে তোলা মিশ্র শাকসবজি চাষের পাশাপাশি পাহাড়ি ঢালে ঢালে শোভা পাচ্ছে ফুলের বাগান। এতে গাঁদাসহ আরও কয়েক রকমের ফুল। জুমিয়ারা নিজেদের বাগানে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজির পাশাপাশি বাজারে  ফুলও বিক্রি করছেন। খবর বাসসের।

পাহাড়ি জুমিয়া রাঙাবি চাকমা বলেন, পাহাড়ে জুমচাষ ও মিশ্র সবজি বাগানের পাশাপাশি এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষও করছি এবং সপ্তাহের দুই দিন বাজারে সবজির পাশাপাশি ফুল বিক্রি করছি। এতে ফুল বিক্রি করে বাড়তি আয় করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের  অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘পাহাড়ে সবজি বাগানের সঙ্গে পাহাড়ি জুমিয়াদের ফুল চাষ করার বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। এ বিষয়ে চাষিদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’

হাওরের মাঠে পরবাসী কৃষক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ এএম
হাওরের মাঠে পরবাসী কৃষক
কিশোরগঞ্জের হাওরে ফসলের খেতে কাজ শেষে দুপুরের বিশ্রাম নিচ্ছেন কৃষকরা।ছবি: খবরের কাগজ

কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকরা বছরের সাত মাস পরবাসী জীবন কাটিয়ে সোনালি ফসল নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তাদের কষ্টের মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এই কৃষকদের ‘জিরাতি’ বলা হয়। তারা হাওরাঞ্চলগুলোতে বসবাস করেন। ফসল উৎপাদনের জন্য বছরের একটি বড় সময় নিজের পরিবার ও পরিচিতজনদের ছেড়ে অস্থায়ীভাবে হাওরে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের  ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম উপজেলার জিরাতিরা বোরো ধান উৎপাদনসহ নানা ধরনের কৃষিকাজ করেন। তারা হাওরে ধানের পাশাপশি ভুট্টা, সরিষা, বাদাম, মিষ্টিআলু, মাষকলাই, চিনাবাদাম, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন। এই মৌসুমে জমি তৈরি, বীজতলা প্রস্তুতি, চারা রোপণ, সেচ, পরিচর্যা ও ধান কাটাসহ মাড়াই-ঝাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।

হাওরের কৃষকরা দীর্ঘ সময় নিজ বাড়ি ছেড়ে বাঁশের বেড়া ও ছনের ঘর বানিয়ে হাওরে বসবাস শুরু করেন। তাদের এই পরবাসী জীবন শুরু হয় কার্তিক মাস থেকে। যখন হাওরের পানি কমে যায়, তখন জমি প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময় বোরো ধানের চারা রোপণ এবং ফসলের যাবতীয় কাজ চলতে থাকে। বছরের এই সাত মাস ধরে কৃষকরা পরিশ্রম করে নিজের খাবারের ব্যবস্থা হিসেবে মাছ ধরেন, গরু-ছাগল পালন করেন, হাঁস-মুরগি লালন-পালন করেন ও সবজি চাষ করেন।

জিরাতিদের জীবন বড় কঠিন। হাওরের উঁচু-নিচু জমিতে কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এর মধ্যে তাদের বড় সমস্যা খাবারের পানি ও শৌচাগারের অভাব। এভাবে জিরাতিরা নানা সংকট কাটিয়ে ফসল ঘরে তোলেন।

ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের বড় হাওরের কৃষক হিমেল বলেন, ‘প্রতিবছর আমাকে এখানে এসে ফসল চাষ করতে হয়। পৌষ মাসে জমিতে ধানের চারা রোপণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আমাদের বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’

মিঠামইন হাওরের কৃষক মারফত আলী ও তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘হাওরে বিশুদ্ধ পানির অভাব খুবই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার যদি আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করত, তবে আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হতো।’

এ বছর বোরো মৌসুমে কিশোরগঞ্জে প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হবে। এর মধ্যে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব ফসল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন এই জিরাতিরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাওরের ফসল উৎপাদনে জিরাতিদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, পাশের নেত্রকোনা, জামালপুর থেকেও হাওরাঞ্চলে এসে কাজ করেন। তারা দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বিশাল অবদান রাখেন। কিন্তু তাদের প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন না।’

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হাওরের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সরকারিভাবে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও অস্থায়ী বাসিন্দা জিরাতিদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।’

স্থানীরা জানান, হাওরের কৃষকরা দেশের খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তাদের জীবনযাত্রা অনেক কষ্টকর। তাদের জন্য সরকারিভাবে আরও সুবিধা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে দেশের কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য হাওরাঞ্চলের জিরাতিদের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ এএম
সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
সবজিখেত পরিচর্যা করছেন এক কৃষক।ছবি: বাসস

লালমনিরহাটের কৃষকরা বর্তমানে শীতের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ ও পরিচর্যায় তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। বাজারের চাহিদা ও লাভের আশায় কৃষকরা নানা ধরনের সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিস্তীর্ণ জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো, বেগুন, শিম, মুলা, করলা, পটোল, পালংশাক, লালশাকসহ নানা ধরনের শীতের সবজির চাষ চলছে। খবর বাসসের। 

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা, বিশেষ করে তিস্তা নদীর চরের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শীতের সবজি চাষ বেড়েই চলেছে। কৃষকরা এখন খুবই পরিশ্রমী হয়ে মাঠে কাজ করছেন, যেন তাড়াতাড়ি সবজি বাজারজাত করতে পারেন। সারা মাঠে সবজির চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার ও খেতে পানি দেওয়ার কাজ চলছে। এসব সবজি শুধু স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হবে না, পাশের অঞ্চলেও পাঠানো হবে, এমন পরিকল্পনা করছেন কৃষকরা।

বর্তমান সময়ের কৃষকরা জানান, শীতের সবজি চাষে আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। কৃষকরা আরও জানিয়েছেন, যদি আগাম সবজি চাষ করা হয়, তবে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে এবং লাভও অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, লাউ ও বাঁধাকপির মতো সবজির চাষে বেশ লাভ হয়। 

তিস্তা নদীর চরের কৃষকরা উঁচু জমিতে সবজি চাষ করছেন। এ ধরনের জমি ফুলকপি ও অন্যান্য সবজি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, তাদের এই চাষের পদ্ধতিতে খুব ভালো ফলন হয় এবং কম খরচে অধিক মুনাফা লাভ করা সম্ভব হয়।

কৃষক মতিয়ার রহমান (৫০) বলেন, ‘গত বছর আমি এক একর জমিতে ফুলকপি চাষ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এ বছর একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছি।’ 

একইভাবে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আশরাফুল হক (৪০) বলেন, ‘গত বছর আমি ১ একর জমিতে প্রায় ৪০ টন শাকসবজি পেয়েছি। তা পাইকারি বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেছি।’

বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জাহিদ হাসান (৪২) বলেন, ‘সবজি চাষে তুলনামূলকভাবে মূলধন কম লাগে, পরিশ্রমও তেমন বেশি না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। তবে সঠিক পরিচর্যা না করলে ফলন কমে যেতে পারে।’ 

কৃষকরা আরও জানান, বর্তমান সবজির দামও বেশ ভালো। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভালো লাভও করছেন। 

সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, ‘এবার শীতের শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। আশা করছি, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি শাকসবজি উৎপাদিত হবে।’

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইফুল আরিফিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। প্রায় ২ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। পাশাপাশি ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আগাম শাকসবজি চাষ শুরু হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। যার ফলে বাজারে এসব সবজির চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

 

কদর বেড়েছে খেজুরের রসের

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম
কদর বেড়েছে খেজুরের রসের
রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছি। সংগৃহীত

বগুড়ায় শীতের আগমনে খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের পিঠাপুলি, পায়েস ও গুড় তৈরিতে ব্যবহারের জন্য খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খেজুরগাছের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যা এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে খেজুরের গুড় সংরক্ষণে সমস্যা রয়েছে। খবর বাসসের।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও মৌসুমি গাছিরা কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে উঠে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছেন গাছগুলো। গাছের কিছু নিচের অংশ চেঁচে রস সংগ্রহ করা হয়, যা একটি হাঁড়ির মাধ্যমে জমা করা হয়। এভাবে প্রতিটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ লিটার রস সংগ্রহ করা সম্ভব। শীত যত বাড়বে, খেজুরের রসের স্বাদ ততই বৃদ্ধি পাবে।

গ্রামের বাড়িতে শীতের নাশতাতে খেজুরের রসের সঙ্গে মুড়ি খাওয়ার প্রচলন বহু বছর ধরে চলে আসছে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পিঠাপুলি, পায়েস, ভাপা পিঠা, দুধ পিঠা, চিতই পিঠা, সন্দেশ, পুলি, ক্ষীরসহ নানা ধরনের মজাদার খাবার তৈরি করা হয়। গ্রামীণ বধূরা নতুন ধানের চাল দিয়ে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা তৈরি করতে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খেজুরের রসের এই পিঠাপুলি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

তবে খেজুরের গুড় সংরক্ষণের জন্য ভালো ব্যবস্থা না থাকায় গাছিরা অভিযোগ করছেন, গুড় অনেক দিন রাখা যায় না। তা ছাড়া খেজুরের রস ও গুড়ের বাজারে চাহিদা থাকার কারণে এই অঞ্চলের গাছিরা তাদের উৎপাদিত গুড় সরাসরি পাইকারি বিক্রি করে অনেক সময় এবং অর্থ বাঁচাতে সক্ষম হন।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতামাঝ গ্রামের গাছি আশরাফ আলী জানান, তিনি বহু বছর ধরে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ করছেন। তিনি বলেন, এ বছর শীত একটু দেরিতে পড়ায় রস সংগ্রহের কাজও কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণে গুড় উৎপাদন করা সম্ভব হবে। 

তিনি আরও বলেন, অনেক গাছ তার একার না, চুক্তির মাধ্যমে অন্যের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন।

বগুড়ায় খেজুরগাছের সংখ্যা গত কয়েক বছরে কমে গেছে। আগে যে পরিমাণ খেজুরগাছ ছিল, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম কার্তিক মাসে শুরু হয় এবং চলে মাঘ মাস পর্যন্ত। এ সময় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় এবং তা থেকে পাতলা লাল গুড়, পাটালি গুড় ও দানাদার গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই অঞ্চলে খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যা, রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কার্যক্রম আরও বাড়ানো যেতে পারে, যা কৃষকদের জন্য একটি ভালো আয় ব্যবস্থা হতে পারে। এ ছাড়া খেজুরগাছের সংখ্যা বাড়ানো, রস ও গুড়ের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করা এবং বাজারজাতকরণে নতুন সুযোগ তৈরি করা হলে বগুড়ার কৃষি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ বলেন, ‘প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় খেজুরগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যা করা হলে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক বেশি।’ তিনি আরও বলেন, খেজুরের রস ও গুড় গ্রামের ঐতিহ্য এবং তা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গো-খাদ্যের তীব্র সংকট বিপাকে চাষি-খামারিরা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ এএম
গো-খাদ্যের তীব্র সংকট বিপাকে চাষি-খামারিরা
উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা খড় নামাচ্ছেন শ্রমিকরা।ছবি: খবরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরে বন্যার কারণে গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খামারিরা গরু-মহিষের খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। খড়ের দাম ৪০-৪৫ টাকা প্রতি কেজি হওয়ায় ছোট খামারি ও কৃষকদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে। 

একদিকে গরু পালনে সমস্যা, অন্যদিকে খাদ্যসংকটে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে। পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হলে কোরবানির ঈদের আগেই গরুর সংকট দেখা দিতে পারে।

কৃষক-খামারিরা জানান, সম্প্রতি বন্যায় আউশ ও আমন ধানের চাষ ব্যাহত হয়েছে। এতে খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে গরু-মহিষের প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগাতে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খড় সংগ্রহ করছেন। খড় এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের ছোট ছোট খামারি ও কৃষক পরিবারও এই খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও তাদের জন্য এটি একটি আর্থিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি খড়ের দাম প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে উঠেছে। এটি আগে ছিল মাত্র ১০ টাকার কাছাকাছি।

এদিকে বন্যার কারণে আমন ধানের জমি একদিকে যেখানে অনাবাদি পড়ে রয়েছে, অন্যদিকে কৃষকরা ওই জমিতে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জসহ যেসব অঞ্চলে বড় চাষ হয়, সেসব এলাকায় কৃষকরা এখনো বড় চাষের প্রস্তুতি নিতে পারেননি। অনেক এলাকায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছেন। কারণ তাদের নিজেদের পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতেই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কৃষক ও খামারিরা জানান, বর্তমানে গো-খাদ্য সরবরাহে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরু-মহিষের দৈনিক খাবারের জন্য ৩ থেকে ৪ কেজি খড় প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রয়োজনীয় খড়ের দাম এখন অতিরিক্ত খরচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে গরু-মহিষের খাদ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। অনেকেই খামারের গরু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার হাজিরপাড়া এলাকার খড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, তিনি রংপুর থেকে এক ট্রাক খড় কিনে এনেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। তবে ট্রাক ভাড়া, লোড-আনলোডসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর ফলে প্রতি কেজি খড়ের দাম পড়েছে ৪০ টাকার ওপরে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। আগে খড়ের দাম ১০ টাকা ছিল, এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। 

সদর উপজেলার বালাশপুর আদর্শ খামারের মালিক ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, বন্যার কারণে তার চাষ করা জমি থেকে কোনো ধান উৎপাদন হয়নি। তার এক একর জমিতে গাছের চাষ হলেও বন্যার কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে তার খামারে মাত্র ২০টি গরু থাকলেও তাদের আহার জোগানো সম্ভব হচ্ছে না। খড়ের সংকটের কারণে তিনি নতুন গরু পালনে অক্ষম হচ্ছেন এবং এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

মান্দারী ইউনিয়নের খামারি নুরুল আমিন জানিয়েছেন, খড়ের পাশাপাশি কাঁচা ঘাসেরও তীব্র সংকট রয়েছে। ভুসি ও খইলও এখন আকাশচুম্বী দামে বিক্রি হচ্ছে। খইল ও ভুসির প্রতি কেজির দাম বর্তমানে ৬০ টাকা। এর ফলে খামারি ও কৃষকদের অনেকেই গরু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।  

স্থানীরা জানান, এ অবস্থায় গরু-মহিষ পালন ও দুগ্ধ উৎপাদনে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যদি এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে জেলার কৃষি ও খামার খাত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে এবং এর প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতেও পড়বে। 

স্থানীয়রা আরও জানান, গো-খাদ্যের সংকট থেকে মুক্তি পেতে কৃষক ও খামারিদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই সংকট থেকে তারা দ্রুত বের হয়ে আসতে পারেন। বিশেষ করে খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা এবং বিকল্প খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে কৃষকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।