শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী এবারের আমন মৌসুমে দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। গত ৩ অক্টোবর রাতে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিমজ্জিত ছিল মুনসুর আলীর চাষ করা ধানের জমি। তার মতো শত শত কৃষকের ধানের জমি টানা কয়েক দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশির ভাগ আমন ফসল পচন ধরেছে। পানি কমতে থাকায় ফসলের মাঠ থেকে ধানের চারা ও কাঁচা ধানের পচা গন্ধ বের হচ্ছে। খবর বাসসের।
কৃষক মুনসুর আলী বলেন, ‘আমার চাষ করা দুই একর জমির ধান পচে-গলে সব শেষ। দুই একর জমিতে ধান চাষ করতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ট্রাক্টর নিয়ে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ, কীটনাশক, ইউরিয়া সার- সবই মহাজনদের কাছে বকেয়া নিয়ে চাষ করেছি। বন্যায় ধান তলিয়ে ছিল সপ্তাহের বেশি সময়। একটি ধানের চারাও নেই, সব ফসলে পচা গন্ধ বের হচ্ছে। দুর্গন্ধে জমিতে যাওয়া যায় না।’
উপজেলার রামেরকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার জীবনেও এত পানি দেখিনি। এবারের বন্যায় আমার ঘরবাড়ি ক্ষতির পাশাপাশি দেড় একর জমির ধান বালুর নিচে পড়ে শেষ হয়েছে। এখনো ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করতে পারিনি। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন মৌসুমে ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছিল। এবারের বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছিল ৯ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ধান। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির। এ ছাড়া ১২৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে সম্ভাব্য মূল্য অনুযায়ী ১১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৬১৫ টাকা। সবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে প্রাপ্ত প্রণোদনা দেওয়া হবে।’