ঢাকা ২৪ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

ধান চাষে বেড়েছে উৎপাদন খরচ

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ এএম
ধান চাষে বেড়েছে উৎপাদন খরচ
খেতে ধান কাটছেন কৃষকরা।ছবি: খবরের কাগজ

নড়াইলে রোপা আমন ধান চাষে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শ্রমিক, সার ও ওষুধসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভের আশা কমেছে। অতিবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে ধান উৎপাদনও কমেছে। সব ধান বিক্রি করার পরও খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি, বর্তমান বাজার দর ভালো এবং উৎপাদন কম হবে না। এদিকে কৃষকরা সরকারের সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

উজিরপুর গ্রামের কৃষক দীপংকর বিশ্বাস বলেন, ‘ধান চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক খরচ। চারা লাগানো, আগাছা পরিষ্কার, ধান কেটে বাড়ি আনা ও হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া- সব কাজেই খরচ বাড়ছে। অথচ যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তাতে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।’ তিনি জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে তার জমির এক তৃতীয়াংশ ধান নষ্ট হয়েছে। ফলে, এই মৌসুমে উৎপাদন খরচ পুরোপুরি ওঠানোর কোনো সুযোগ নেই।
নড়াইলের কৃষকরা জানান, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে লাভের কোনো আশা নেই। শ্রমিকের খরচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম অতটা বাড়েনি। 

কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ধান চাষ যদি বাণিজ্যিকভাবে করা হয়। তাতে কোনো লাভ নেই। আমরা মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য ধান চাষ করি। উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে, তাতে ধান চাষ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সার, বীজ, শ্রমিকের খরচ সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করলে নায্য দাম পাওয়া যায় না।’ তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, কৃষকদের সাহায্য করার জন্য।

গোলাম হোসেন নামক এক কৃষকও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সার ও ওষুধের খরচ বেড়েছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে ধান নষ্ট হয়েছে এবং পোকার আক্রমণে ফলনও কমেছে। সব মিলিয়ে খরচ বেশি হলেও ফলন কমেছে।’

লিটন মিয়া জানান, ‘ধান উৎপাদনের যে খরচ আর যে দাম পাচ্ছি, তাতে আমাদের খরচ উঠছে না। যদি প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা হয়, তবে কিছুটা লাভ হয়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোপা আমন ধানের আবাদে লক্ষ্য ছিল ৪২ হাজার ৮৫০ হেক্টর। কিন্তু এ বছর ৪৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৮৪ হেক্টর বেশি। এই বছরের ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৭ টন নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন কম হবে না। বর্তমানে ধানের বাজার দরও ভালো রয়েছে। মোটা ধান প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।’

 

 

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষা চাষ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষা চাষ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ
খবরের কাগজ ফাইল

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কৃষকরা কম খরচে, স্বল্প পরিশ্রমে লাভবান হচ্ছেন। রবি মৌসুমে সরিষার আবাদ ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। শীতে জমিতে হলুদ রঙের সরিষা দেখা যায়। এক বিঘা জমিতে চাষে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। লাভ হচ্ছে ৯-১০ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে। সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। কম খরচে দ্রুত ফলন পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশে তেল উৎপাদন বাড়বে, আমদানি নির্ভরতা কমবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে শীতে সরিষার হলুদ রঙের ঢেউ দেখা যায়। কৃষকরা ধান কাটার সরিষা চাষ করেন। অল্প সময়েই ভালো লাভ পাচ্ছেন। রানীশংকৈল উপজেলার কৃষক আব্দুর মজিদ বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ কম, সার, সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়, তাই প্রতি বছর চাষ করি।’

নারগুন গ্রামের কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন সরিষা চাষ করি। মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল উঠানো যায়। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বিক্রি থেকে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়।’
গত পাঁচ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমে সরিষার আবাদ ছিল ১২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৩৩৩ টন। ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৩৬ হেক্টরে, উৎপাদন ছিল ১৯ হাজার ৬৯৮ টন। ২০২১-২২ মৌসুমে আবাদ হয় ১৩ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ২১ হাজার ১৭২ টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদ বেড়ে ১৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর, উৎপাদন ২৪ হাজার ২০৩ টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৬৭৪ টন। ২০২৪-২৫ মৌসুমে আবাদ ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টরে পৌঁছেছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৬৭৬ টন।

কৃষকরা জানান, সরিষা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কম খরচ ও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও সার কম লাগায় খরচ কম হয়। এ ছাড়া সরিষার পরে অন্যান্য ফসলও ফলানো সম্ভব। কৃষক নির্মল কুমার বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি পড়ে থাকে, তাই প্রতি বছর সরিষা চাষ করি। গাছের অবস্থা ভালো, ফলনও ভালো হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। মাঠে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষকদের সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।’

দিনাজপুরে চরে চাষাবাদে পূরণ হচ্ছে পরিবারের চাহিদা

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫ এএম
দিনাজপুরে চরে চাষাবাদে পূরণ হচ্ছে পরিবারের চাহিদা
দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীচরে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষি শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীচরের বালুর মধ্যে বোরো ধানের চারা রোপণ চলছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া তলদেশে ধান, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল চাষ করছেন চাষিরা। এক সময় কান্তজি গ্রামে নদীভাঙনে জমি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এখন নদীর বুকজুড়ে চলছে কৃষিকাজ। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ চাষাবাদ জাতীয় উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চাষিরা বলেন, ফসল বিক্রি করে তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কান্তজি মন্দির-সংলগ্ন কান্তজি গ্রামে পানি শুকিয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর পাশ দিয়ে চাষিরা কাজ করছেন। কেউ জমিতে জৈব সার দিচ্ছে, কেউ বালু সমান করছেন। নারী শ্রমিকরা দল বেঁধে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। নদীতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। বেশির ভাগ অংশে ধান রোপণ হচ্ছে। কিছু অংশে পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও গম চাষ করা হয়েছে। চাষিরা জানান, এসব ফসল দ্রুত তোলা যাবে।

এক সময় নদী তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে নদীর পানি কমে গেলে চাষিরা বিভিন্ন ফসল চাষ শুরু করেন। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়। এপ্রিলের দিকে ধান কেটে ঘরে তোলা হয়।

ওসমান গনি নামে এক চাষি বলেন, ‘নদীতেই আমাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। বালুর মধ্যে চারা রোপণ করছি। বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হবে।’ হযরত আলী বলেন, ‘আমাদের অনেক জমি ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে তা বিলীন হয়েছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে নদীর চরে ফসল চাষ করছি।’ ইয়াসিন আলী বলেন, ‘চরে জমির চারদিক উঁচু করে আইল তৈরি করেছি। ধান রোপণ করছি। একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ ধান হয়। জমির পানি সেচের প্রয়োজন হয় না, তাই লাভ বেশি হয়।’

আরেক চাষি সোহেল রানা বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। ফসল বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।’ নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ চাষিদের নতুন উপায় সৃষ্টি করেছে। ভূমিহীন চাষিরা ফসল উৎপাদন করে সংসার চালাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছেন, ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষিরা জানান, এক মৌসুমে এখানে ফসল চাষ করে সারা বছরের চাহিদা পূর্ণ হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নদীর পানি কমে যায়। এ সময়ে পুনর্ভবা নদীসহ বিভিন্ন চরে ফসল চাষ করেন চাষিরা। আমরা তাদের চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা অনাবাদি জমি ব্যবহার করতে পারেন। এটি দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

সেচ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুশ্চিন্তায় নেত্রকোনার কৃষক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২১ এএম
সেচ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুশ্চিন্তায় নেত্রকোনার কৃষক
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। সেচকলের মালিক রফিকুল ইসলাম মুকুল ও সেচগ্রাহক কৃষকদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ দ্বন্দ্বের ফলে ৪৫ একর জমির ধান উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

রফিকুল ইসলাম মুকুল প্রথমে সেচ লাইনের অনুমোদন নিয়ে জমিতে পানি সরবরাহ শুরু করেন। তবে পরবর্তী সময় অভিযোগ উঠেছে, যাদের জমির পরিমাণ বেশি, তাদের সেচে পানি ঠিকভাবে সরবরাহ করছেন না। এ ছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন বলে জানান সেচগ্রাহকরা।

এতে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সেচের পানি সরবরাহ নিয়ে সমস্যা শুরু হয়। কৃষকরা জানান, রফিকুল ইসলাম মুকুলের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে তাদের জমিতে পানি দিতে না পারলে ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে। তারা আরও অভিযোগ করেন, সেচ লাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করতে চান মুকুল। 

সেচগ্রাহকরা স্থানীয় কৃষক বাবুল মিয়ার নামে নতুন সেচ লাইনের অনুমোদন নিয়ে সেটি চালু করেন। তবে রফিকুল ইসলাম মুকুল অভিযোগ করেন, বাবুল মিয়ার সেচ লাইনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। পরে কৃষকরা ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করতে থাকেন। কিন্তু এখন মুকুল ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে সেচের পানি দিতে বাধা সৃষ্টি করছেন।

এলাকাবাসী দাবি করছেন, রফিকুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। কৃষক এখলাস উদ্দিন জানান, মুকুল তার ক্ষমতা ব্যবহার করে সেচ লাইনের সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের ৩৫ একর জমি রয়েছে। মুকুলের ৪ শতক জমি ছাড়া অন্য কোনো জমি নেই। আমাদের জমিতে পানি সরবরাহ না হলে বোরো ধানের চাষ ব্যাহত হবে।’

এই সমস্যা মীমাংসা না হলে কৃষকদের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। রফিকুল ইসলাম মুকুল দাবি করেছেন, বাবুল মিয়ার সেচ লাইনের অনুমোদন না হওয়া সত্ত্বেও তার লাইনের পাশেই লাইনের স্থাপনা করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাটি অবগত আছি। উভয় পক্ষকে ডেকে এনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’

কুয়াশায় বাড়ছে আম চাষির চিন্তা

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
কুয়াশায় বাড়ছে আম চাষির চিন্তা
একজন চাষি আমবাগান পরিচর্যা করছেন। ফাইল ছবি

রংপুরে ফাগুনের আগে আমের মুকুল আসছে। মুকুলের গন্ধে মৌমাছিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। শীতপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে কৃষকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারা মুকুলের ক্ষতি হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন। মুকুল রক্ষায় কৃষক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া ও অন্যান্য যত্ন নিচ্ছেন তারা।

গত বছর আমের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা এবারের ফলনের জন্য আশাবাদী। তারা জানান, গত বছর শীত বেশি থাকার কারণে মুকুল ঠিকমতো বের হয়নি। এবার শীত কম ছিল। শেষ সময়ে এসে শীত বেড়ে যাওয়ায় মুকুলের ক্ষতি হতে পারে। মুকুল টিকে থাকলে ভালো ফলন হবে এবং আগাম আমের দামও পাওয়া যাবে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কিছু গাছে মুকুল আগাম এসেছে, যেমন হাঁড়িভাঙা। কুয়াশা বেশি ক্ষতি না করলেও, রোদ এলে মুকুল আটকে যেতে পারে। এই সমস্যা কাটাতে ছত্রাকনাশক স্প্রের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৬ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৮৭৪ টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবারে ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। হাঁড়িভাঙা আমের উৎপত্তিস্থল রংপুরে এবার আরও বেশি জমিতে হাঁড়িভাঙা চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, শ্যামপুর, পীরগঞ্জ এলাকায় আমের মুকুল দেখা গেছে। বেশির ভাগ গাছেই মুকুল রয়েছে। কিছু গাছে মুকুলের কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। কিছু গাছের মুকুল না এলেও বেশির ভাগ গাছে মুকুল রয়েছে।

কৃষকরা জানান, হাঁড়িভাঙা আমের একটি নিয়ম আছে। এক বছর পর পর ফলন কম হয়। ব্যবসায়ীরা দাম কম পাওয়ায় তারা আগাম বাগান বিক্রি করে দেন। কৃষকরা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ বা সহায়তা তারা পান না। সরকারি প্রণোদনা সঠিকভাবে বিতরণ হলে কৃষকরা আরও উপকার পেতেন।

বদরগঞ্জ কুতুবপুর ইউনিয়নের আম চাষি লাভলু মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই এমন কুয়াশা পড়ে, এবার মুকুল বের হওয়ার সময় পড়েছে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ মিঠাপুকুরের সুজন আহমেদ জানান, গত বছর বাগান কিনে ক্ষতি হয়েছে। এবার কুয়াশার কারণে চিন্তিত। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আগাম বাগান নিয়ে রেখেছি, লাভের আশা ছিল, কুয়াশার কারণে সন্দিহান।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা উৎপাদনে চিন্তার কিছু নেই, বাড়তি যত্ন নিলে আমের ভালো ফলন হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কুয়াশার পরে রোদ হলে আমের মুকুলের গোড়া শক্ত হয়। দীর্ঘদিন কুয়াশা থাকলে ক্ষতি হতে পারে। কৃষককে বাড়তি যত্ন নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন করবেন।’

কেঁচো সারে স্বপ্ন বুনছেন জাসমা

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫০ এএম
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৪ এএম
কেঁচো সারে স্বপ্ন বুনছেন জাসমা
কেঁচো সার উৎপাদন করছেন জাসমা আক্তার। খবরের কাগজ

রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট)। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমছে। কৃষকরা কম খরচে ভালো ফলন পাচ্ছেন। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে অনেক কৃষক ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। 

এক সময় কৃষকের ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের ধারণা ছিল নেতিবাচক। কিন্তু বর্তমানে ভার্মি কম্পোস্ট অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ব্যবহারের সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। 

কৃষি বিভাগের উদ্যোগে অনেক নারী ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম গৃহবধূ জাসমা আক্তার। তিনি ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। তার উৎপাদিত সার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। 

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দিন পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জাসমা আক্তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে তিনটি হাউস গড়ে তুলেছেন। এখানেই তিনি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। এক সময়ের অভাব আর কষ্ট কাটিয়ে এখন তিনি স্বাবলম্বী। তার খামারের সাফল্য দেখে স্থানীয় গৃহবধূরাও এই ব্যবসায় আগ্রহী হচ্ছেন।

ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে খরচের তুলনায় ফলন বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটি মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তা জানান, ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে প্রায় ৪০ দিন সময় লাগে। এটি মাটির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। 

জাসমা আক্তার বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই কিছু করার ইচ্ছা ছিল। প্রথমে বাড়িতে দুটি গরু পালতাম। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১০টি রিং দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি শুরু করি। এখন দুটি শেডে সার উৎপাদন হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় আমার সারের চাহিদা বেড়েছে। কৃষি অফিস থেকে খামারের উন্নয়নে কিছু অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে আরও সহায়তা পেলে খামার পরিচালনা আরও সহজ হবে।’

তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্টের দাম রাসায়নিক সারের তুলনায় কম। এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। স্থানীয় চাষি শামসুল হক বলেন, ‘জৈব সারের দাম কম হওয়ায় আমরা তা ব্যবহার শুরু করেছি। এর ফলে ফলনও ভালো হচ্ছে, মাটির ক্ষতি হচ্ছে না।’

অন্য এক কৃষক হারুনার রশিদ বলেন, ‘জাসমা একটি অসাধারণ উদাহরণ। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। তার উদ্যোগ আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।’ শ্রমিক চায়না আক্তার বলেন, ‘জাসমার খামারে কাজ করে আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর। কিন্তু জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা জরুরি। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গোয়ালন্দ ২০-৩০টি ভার্মি কম্পোস্ট খামার রয়েছে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’