
নড়াইলে রোপা আমন ধান চাষে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শ্রমিক, সার ও ওষুধসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভের আশা কমেছে। অতিবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে ধান উৎপাদনও কমেছে। সব ধান বিক্রি করার পরও খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি, বর্তমান বাজার দর ভালো এবং উৎপাদন কম হবে না। এদিকে কৃষকরা সরকারের সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
উজিরপুর গ্রামের কৃষক দীপংকর বিশ্বাস বলেন, ‘ধান চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক খরচ। চারা লাগানো, আগাছা পরিষ্কার, ধান কেটে বাড়ি আনা ও হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া- সব কাজেই খরচ বাড়ছে। অথচ যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তাতে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।’ তিনি জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে তার জমির এক তৃতীয়াংশ ধান নষ্ট হয়েছে। ফলে, এই মৌসুমে উৎপাদন খরচ পুরোপুরি ওঠানোর কোনো সুযোগ নেই।
নড়াইলের কৃষকরা জানান, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে লাভের কোনো আশা নেই। শ্রমিকের খরচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম অতটা বাড়েনি।
কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ধান চাষ যদি বাণিজ্যিকভাবে করা হয়। তাতে কোনো লাভ নেই। আমরা মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য ধান চাষ করি। উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে, তাতে ধান চাষ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সার, বীজ, শ্রমিকের খরচ সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করলে নায্য দাম পাওয়া যায় না।’ তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, কৃষকদের সাহায্য করার জন্য।
গোলাম হোসেন নামক এক কৃষকও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সার ও ওষুধের খরচ বেড়েছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে ধান নষ্ট হয়েছে এবং পোকার আক্রমণে ফলনও কমেছে। সব মিলিয়ে খরচ বেশি হলেও ফলন কমেছে।’
লিটন মিয়া জানান, ‘ধান উৎপাদনের যে খরচ আর যে দাম পাচ্ছি, তাতে আমাদের খরচ উঠছে না। যদি প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা হয়, তবে কিছুটা লাভ হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোপা আমন ধানের আবাদে লক্ষ্য ছিল ৪২ হাজার ৮৫০ হেক্টর। কিন্তু এ বছর ৪৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৮৪ হেক্টর বেশি। এই বছরের ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৭ টন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন কম হবে না। বর্তমানে ধানের বাজার দরও ভালো রয়েছে। মোটা ধান প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।’