
ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রথমবারের মতো উচ্চফলনশীল ব্রি ধান-১০৩ চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের সহায়তায় তারা বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক পেয়েছেন। ৪০০ শতাংশ জমিতে এই ধান চাষ করেছেন। আগামী ১০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। কৃষি অফিসের সহায়তায়, এই জাতের ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। খবর বাসসের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় এই ধান চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার মোট ছয়জন কৃষক ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে কালমা ইউনিয়নের কৃষকরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটতে শুরু করবেন, আর পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কৃষকরা একটু দেরিতে আবাদ করায় ২০-২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার প্রস্তুতি নেবেন।
এবার মোট ৪০০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-১০৩ আবাদ করা হয়েছে। এসব ধান বাজারে বীজ হিসেবে বিক্রি করা হবে। কৃষকরা বাজারে প্রতি কেজি বীজ পাইকারি ৫০-৬০ টাকা এবং খুচরা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এলাকার কৃষক মো. বাবুল, মো. সেলিম এবং শেখ সাদি জানান, তারা চলতি আমনের মৌসুমে ২০০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে ধানের বীজ, সার, কীটনাশক ও বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, এই জমিতে ধানের চাষে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, যার মধ্যে জমির চাষাবাদ, শ্রমিক, বালাইনাশক এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। তবে তাদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে তারা ২০০ শতাংশ জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার ধানের বীজ বিক্রি করতে পারবেন।
এদিকে, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার কৃষক মো. নান্নু, মোস্তফা কামাল ও কাকলি রানিও ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। তাদের জমির পরিমাণও ২০০ শতাংশ। তবে অতিবৃষ্টির কারণে তাদের এলাকায় ধান আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তারা আশা করছেন, আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে তাদের ক্ষেত থেকে ধান কাটার জন্য প্রস্তুত হবে। তাদেরও আশা, এই ধান থেকে তারা বাজারে প্রায় দেড় লাখ টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন।
লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই উচ্চফলনশীল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এই কারণে ব্রি ধান-১০৩ জাতের আবাদ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চলতি বছরে এই প্রকল্পে লালমোহন উপজেলার দুটি ব্লকের মোট ৬ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক এবং বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম চাষিরা ব্রি ধান-১০৩ চাষে সফলতা পেয়েছেন এবং তারা এবার এই ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে তাদের এলাকায় আরও বেশি পরিমাণে এ ধানের আবাদ করবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশাবাদী, এ বছর ধান চাষের মাধ্যমে কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন। যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে, তাহলে অন্য চাষিরা এ বছর ভালো ফলন পাবেন। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের ক্ষতি না হতে সাহায্য করতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা যেকোনো সমস্যায় দ্রুত সমাধান পেতে পারেন।
ব্রি ধান-১০৩ জাতটি একটি উচ্চফলনশীল জাত, যা কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই ধান দ্রুত পাকে এবং এতে রোগবালাই কম হওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই জাতের ধান চাষে কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভের আশা করছেন। বিশেষ করে, কৃষকদের যেহেতু কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার এবং কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে, তাই তাদের ব্যয় কম হচ্ছে এবং লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।