
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা বর্তমানে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও, কৃষকরা সার সংকটের কারণে কিছুটা চিন্তিত। তবে কৃষকরা আশাবাদী, যদি সময়মতো সার এবং পানি পাওয়া যায় ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে তারা ভালো ফলন এবং ন্যায্য দাম পাবেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জেলায় মাঠে মাঠে এখন সোনালি আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকরা যেভাবে মাঠে কাজ করছেন, তাতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ধান কেটে শুকিয়ে মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করছেন তারা। এর পাশাপাশি, গরুর খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। চাষাবাদে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও, ফলন ভালো হওয়ায় তারা কিছুটা আশ্বস্ত।
কৃষক আবুল কালাম জানান, প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদে খরচ হয়েছে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু ভালো ফলন হওয়ায় প্রতি বিঘায় গড়ানে ধান পাওয়া যাচ্ছে ২২ থেকে ২৩ মণ। খরচ বাদ দিলে এ বছর কিছুটা লাভের আশা করছেন তিনি। তবে তিনি বলেন, সময়মতো সার না পাওয়ার কারণে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ বেড়েছে। ফলে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকার যদি সার সরবরাহ নিশ্চিত না করে, তবে আগামী মৌসুমে তাদের জন্য চাষাবাদ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
কৃষক শাহিন আলম জানান, বর্তমানে তারা আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করছেন। তবে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সময়মতো পানি এবং বিদ্যুৎ পাওয়া না গেলে তাদের কৃষিকাজে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তিনি জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে সেচের কাজে সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা তাদের ধান চাষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা কৃষকদের জন্য সেচের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।
কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, যদিও কিছুটা কারেন্ট পোকা ধানের ক্ষতি করেছে। তবু এ বছর তার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২২ মণ ধান হচ্ছে। খরচ বাদ দিলে কিছুটা লাভ হবে, তবে যদি ধানের দাম কম হয়, তাহলে লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তিনি আরও জানান, এ বছর সারের দামও অনেক বেশি, ফলে খরচ বেড়েছে।
কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ‘এ বছর ধানের চেয়ে সারের বস্তার দাম বেশি ছিল। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। অথচ সারের বস্তার দাম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।’ তিনি জানান, যদি ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া যায়, তবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি মনে করেন, চাষাবাদ করতে হলেও তাদের ধান চাষ চালিয়ে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের কাছে একান্তভাবে দাবি জানান, সারের দাম কমাতে হবে এবং ধানের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। নাহলে আগামী মৌসুমে তাদের জন্য চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, সময়মতো সার, পানি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কৃষকদের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তিনি আশ্বস্ত করেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন যদি তারা সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। তবে তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তারা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। কিন্তু এই বছর চাষাবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০১ শতাংশ বেশি। ফলে জেলা কৃষির ক্ষেত্রে একটি ভালো বার্তা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছেন, তাদের চাষাবাদ স্বাভাবিকভাবেই হবে।