
মৌলভীবাজারে সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ধানখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং বিলম্বিত হয় ধান চাষ। তবে এতে দমে যাননি কৃষকরা। তারা জমি পরিচর্যা অব্যাহত রাখেন। ফলে ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলার রায়েশ্রী, কদমহাটা, মাতারকাপন, শিমুলতলাসহ বিভিন্ন ফসলি মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, ফলনের ভারে ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। অনেক জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। কিছু জায়গায় ধান কাটা চলছে, আবার কোথাও ধান কাটার কাজ এখনো শুরু হয়নি। যেসব জায়গায় ধান কাটা হয়ে গেছে, সেখানে মাড়াই শেষে জমিতে শুকানোর কাজ চলছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদীর ভাঙনে এবং পাহাড়ি ঢলে পুরো জেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। এতে পাকা ও আধা পাকা আউশ ধান, রোপা আমন এবং আমনের বীজতলা তলিয়ে যায়। বন্যার সময় আমন ধানের চারা রোপণের শেষ পর্যায় ছিল। অনেক কৃষক তখনো ধান রোপণ করেননি। বন্যার ক্ষতির পর তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন, বিলম্বিত চাষে ফসল কেমন হবে। তবে কৃষি বিভাগের আশ্বাসে তারা আবারও আস্থা ফিরে পান।
এ বছর জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার হেক্টরে। বন্যার কারণে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিলম্বিত আমন চাষ হয়েছে। এই জমি সবচেয়ে বেশি সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায় ছিল। বিলম্বে রোপণ করা ধানগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-৪৯ ও ৮৭ জাতের ভালো ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ধানের ৮০ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে।
কদমহাটা এলাকার কৃষক জামান আলী বলেন, ‘৪ কিয়া জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছি। দুবার বন্যার পানি জমি ডুবিয়েছিল, তবে পানি তাড়াতাড়ি নেমে গেছে। কিছু ক্ষতি হলেও ফসল খারাপ হয়নি। প্রায় ২৪ মণ ধান পাব।’ কৃষক সমিরণ পাল বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতি হলেও শেষ পর্যন্ত ভালো ফলন হয়েছে। তাতে খুব খুশি। এখন আবহাওয়া ভালো থাকলে আমাদের জন্য আরও লাভ হবে।’
রায়েশ্রী গ্রামের কৃষক ললিনী পাল জানান, ‘আমি প্রায় ১২ কিয়া জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছি। শ্রমিকসহ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো পাব।’
শিমুলতলা এলাকার কৃষক জমসেদ মিয়া বলেন, ‘মনু ও ধলাই নদীর ভাঙনে আমার সব ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পানি সরে যাওয়ার পর নতুন করে ৬ কিয়ার জমিতে ধানের চারা রোপণ করি। শ্রমিক ছাড়া নিজেই চারা রোপণ করেছি। এতে অতিরিক্ত ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন ধান পাকার পথে। কয়েক দিনের মধ্যে কেটে ফেলব।’
মাতারকাপন এলাকার কৃষক রুবেল মিয়া জানান, ‘বন্যায় জমির ধান নষ্ট হয়েছিল। তবে মনু ও ধলাই নদের পানির সঙ্গে পলি আসায় ফসলের উপকার হয়েছে। এখন যে ধান পাচ্ছি, তাতে খুশি। বন্যার ক্ষতি নিয়ে আর ভাবছি না। বিলম্বে রোপণ না করলে এত ভালো ফসল পেতাম না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিলম্বে রোপণ করা ধানের ফলন কিছুটা কম হলেও তাতে কৃষকরা খুশি। তারা মোটেও হতাশ নন।’