ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

কমলা চাষে শহিদের সাফল্য

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
কমলা চাষে শহিদের সাফল্য
কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন শহিদ আহমেদ। খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আখালিয়া গ্রামের শহিদ আহমেদ তার চায়না কমলা বাগান থেকে ৮-৯ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন। তিনি ৩ একর জমিতে ৩০০টি চায়না কমলা, ১০০টি দার্জিলিং কমলা ও ৪৫০টি মাল্টা গাছ রোপণ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছেন শহিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভালুকা কমলা চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা।’

ভালুকায় শহিদ আহমেদের চায়না কমলা বাগানটি সাফল্যের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। হলুদ রঙের বিদেশি কমলা থোকায় থোকায় ঝুলছে।

শহিদ আহমেদ ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শাকসবজি, ফল চাষ ও পোলট্রি খামারের কাজ করতেন। পেঁপে ও কলা চাষে লোকসান দেখে তিনি সাউথ আফ্রিকায় চলে যান এবং সেখানে সাত বছর দোকানে চাকরি করেন। ইউটিউব দেখে দেশে ফিরে এসে চায়না কমলা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২২ সালে তিনি ৩ একর জমি ১২ বছরের জন্য ১০ লাখ টাকায় ভাড়া নেন। সেখানে চায়না কমলা, দার্জিলিং কমলা ও মাল্টার চারা রোপণ করেন।

তার বাগানে বর্তমানে ৩০০টি চায়না কমলা, ১০০টি দার্জিলিং কমলা ও ৪৫০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। প্রথমবারের মতো এই মৌসুমে শহিদ আহমেদ ৮-৯ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, কমলা বাগানে বছরে কয়েকবার পানি সেচ, সার প্রয়োগ ও কৃত্রিম উপায়ে সার ব্যবহার করা হয়।

শহিদ আহমেদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল। বিদেশে থাকাবস্থায় ইউটিউব দেখে স্বপ্ন ছিল দেশে এসে কমলা বাগান করার। আজ তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বাগানে খরচ হওয়া টাকা ইতোমধ্যেই বিক্রি করে লাভ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই ভালুকায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ। আমি চাই আমার বাগান থেকে দেশের সব জায়গায় কমলার চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। তাই আমি স্বল্প দামে কমলার চারা বিক্রি করি।’

বাগানে কাজ করা শ্রমিক রাসেল বলেন, ‘শহিদ ভাই অনেক ভালো মানুষ। প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা কাজ করি। এখান থেকে যে বেতন পাই তাই দিয়ে আমার সংসার চলে।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, ‘অনেক বাগানের কমলা টক হলেও শহিদের বাগানের কমলা খেতে মিষ্টি। এই কমলা বাচ্চাদেরও অনেক পছন্দ।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভালুকা এলাকা কমলা চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা। যদি কেউ কমলা বাগান করতে চান, তবে আমাদের অফিস থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ইরি চাষে বাড়ছে খরচ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০১ এএম
ইরি চাষে বাড়ছে খরচ
দাউদকান্দিতে একটি ইরি ধানখেত। খবরের কাগজ

দাউদকান্দিতে এবারের মৌসুমে প্রধান ফসল ইরি ধানের আবাদে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে জমিতে সেচ বাবদ ব্যয়ই সর্বোচ্চ। উপজেলার প্রায় সব এলাকাই কৃষিনির্ভর। কয়েক দশক আগে শুরু হওয়া ইরি ধানের চাষ এখন প্রায় সব এলাকাতেই কমবেশি হচ্ছে। এখানকার কৃষকরা জমির উপযোগিতা বুঝে বিআর-থ্রি, বিআর-২৮, বিআর-২৯-সহ বিভিন্ন জাতের ইরি ধান আবাদ করে থাকেন।

ইরি ধান মূলত সেচনির্ভর ফসল। আবাদের শুরু থেকে পাকা পর্যন্ত জমিতে গাছের গোড়ায় পানি ধরে রাখতে হয়। কৃষকরা অগভীর ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচ দেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, দাউদকান্দিতে যত সেচ স্কিম চালু রয়েছে তার বেশির ভাগই শ্যালো মেশিননির্ভর। সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বিঘা জমি নিয়ে একটি স্কিম গঠন করা হয় এবং সেই স্কিমে শ্যালো মেশিনে সেচ দেওয়া হয়।

শ্যালো মালিকরা এসব স্কিমে অন্যের জমিতে সেচের বিনিময়ে উৎপাদিত ফসলের সিকি থেকে পাঁচ আনা পর্যন্ত অংশ নিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি নগদ অর্থের বিনিময়ে পানি সরবরাহ করেন।

বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি বা দীর্ঘ খরার প্রভাবে শ্যালো মেশিন চালাতে বেশি বা কম পরিমাণে ডিজেল প্রয়োজন হয়। গত মৌসুমে আবহাওয়া ছিল তুলনামূলক স্বাভাবিক। কোথাও ঘন ঘন বৃষ্টি বা দীর্ঘ খরা দেখা যায়নি। তবে এবার ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি সেচ খাতে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা খরচ পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ইরি ধানের আবাদ শুরুতেই জমিতে একবারে সব ধরনের রাসায়নিক সার দিতে হয়। কৃষকরা নিয়ম অনুযায়ী সার প্রয়োগ করে আবাদ শুরু করেছেন। তবে অনেক এলাকায় বেশি দাম দিয়ে ফসফেট, পটাশ ও জিপসাম সার কিনতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ কৃষক নিজের জমির উৎপাদিত ধান থেকে বীজ রাখলেও নিম্নমানের বীজ ব্যবহারে ফলন কমে গেছে।

হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক মনু মিয়া বেপারী বলেন, ‘প্রচণ্ড খরা যাচ্ছে, ইরি ধান রোপণের পর থেকে পুরো মাস সেচ দিয়ে রাখতে হয়েছে। তাই আগের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।’

শ্রীরায়ের চর গ্রামের কৃষক রহমত উল্লাহ বলেন, ‘জমিতে ইরি চারা লাগানোর পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের মাধ্যমে পানি দিয়ে রাখতে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে। তবে সার, সেচ ও বদলি মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেশি হবে।’

দাউদকান্দি কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ইরি ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ৩৭০ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়েই জমিতে পানি সরবরাহ করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। তবে ঝড়-বৃষ্টি না হলে ইরি ধানে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ঈশ্বরদীতে বিনামূল্যে উফশী আউশ ধানের বীজ বিতরণ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫০ এএম
ঈশ্বরদীতে বিনামূল্যে উফশী আউশ ধানের বীজ বিতরণ
উপকারভোগী এক কৃষকের হাতে প্রণোদনার বীজ-সার তুলে দিচ্ছেন প্রধান অতিথি শাহাদত হোসেন খান। খবরের কাগজ

২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ৩৫০ জন প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে উফশী আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক কৃষক পাচ্ছেন ৫ কেজি বীজ এবং ২০ কেজি সার। এ প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার।  

সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। 

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন খান। তিনি বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিতা সরকার। তিনি স্বাগত বক্তব্য দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রল্লদ কুমার কুণ্ডু, তানভীর স্বাক্ষর এবং উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান। এতে উপকারভোগী কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।  

কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ৩৫০ জন কৃষক এ সহায়তা পাচ্ছেন।’  

বিতরণভিত্তিক কৃষকের সংখ্যা- মুলাডুলিতে ১০০, সাড়ায় ৩০, পাকশীতে ৩০, দাশুড়িয়ায় ৫০, সলিমপুরে ৩০, লক্ষ্মীকুণ্ডায় ৫০, সাহাপুর ইউনিয়নে ১০ এবং পৌর এলাকায় ৫০ জন। প্রত্যেক কৃষক ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন।

হাওরে বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের ফলন কম

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
হাওরে বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের ফলন কম
নেত্রকোনার হাওরে বোরো ধান কাটছেন কৃষিশ্রমিকরা। খবরের কাগজ

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিছু কৃষক কাস্তে দিয়ে ধান কাটছেন। আবার কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৃষ্টি কম হওয়ায় আগাম ধানের ফলন কম হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে তেমন হাসি নেই। তবে কিছু জাতের ধানে ভালো ফলন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে। হাওরের কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। সরকারি সহায়তায় মেশিন দিয়ে ধান কাটার কাজ চলছে। হাওরজুড়ে এখন ধান কাটার আমেজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওর অঞ্চলে পাকা ও আধাপাকা ধানে ভর্তি খেত। যেদিকে চোখ যায়, শুধু ধান আর ধানের শীষের সমারোহ। বাতাসে ধানের শীষের দোলায় মন ভরে ওঠে। দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত ধানের ভাণ্ডার। কোথাও কোথাও দু-একজন কৃষক কাস্তে হাতে ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। এ অঞ্চলের মানুষের সারা বছরের খাদ্য সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

বেশি বোরো ধান চাষ হয়েছে মোহনগঞ্জ, মদন, আটপাড়া ও খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও বিল এলাকায়। এর মধ্যে অনেক কৃষক কাস্তে হাতে ধান কাটা শুরু করেছেন। পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতায় হারভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটা শুরু হয়েছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর পাড়ের খুরশিমূল গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ শীল জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরাপুরি ধান কাটা শুরু হবে। অনেকেই ধান কাটছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় আগাম ধানের ফলন এ বছর কম হয়েছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে আনন্দ নেই। আগ্রহ নেই ধান কাটার। ৩ কাঠা জমিতে ১২ মণ ধান হয়েছে। অন্য বছর ফলন হতো ২০ মণের বেশি।’

মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী হাওরের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, মদনের বিভিন্ন হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে কৃষকদের মধ্যে শান্তি নেই। ধান কাটার পর যে আনন্দ থাকার কথা। কিন্তু এ বছর নেই। আগাম জাতের বোরো ধান একেবারেই কম হয়েছে। ধান কেটে সার, বীজ ও ডিজেলের দাম শোধ করার পর লাভ থাকবে না। বন্যার আশঙ্কায় এ বছর ২৮ জাতের পরিবর্তে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৮৮ জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর জেলার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। ২৮ জাতের পরিবর্তে ৮৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় আগাম ধানের ফলন কম হয়েছে। তবে অন্যান্য জাতের ধানের ফলন ভালো হবে। ধান কাটার ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতায় ৭ শতাধিক হারভেস্টার মেশিন কাজ করবে।

ঝরছে আমের গুটি, ফলন কমার শঙ্কা

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
ঝরছে আমের গুটি, ফলন কমার শঙ্কা
তাপপ্রবাহে রাজশাহীতে আমের গুটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফাইল ছবি

চলতি বছরে রাজশাহী একাধিকবার তাপপ্রবাহের কবলে পড়লেও তিন সপ্তাহ ধরে টানা চলছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এই অব্যাহত তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরা ও পোকার উপদ্রবে রাজশাহীতে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। অথচ গত বছর ‘অফইয়ার’ থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমের ফলন ভালো হয়নি। ফলে ‘অনইয়ার’ বিবেচনায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের আমবাগানগুলো ব্যাপকভাবে মুকুলিত ও আমের গুটি দৃশ্যমান হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন চাষি ও বাগানিরা। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বাগানগুলোর গাছে গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে দুলছে আমের গুটিও। তবে যত্ন করেও আমের গুটি ঝরে পড়ার খুব একটা সমাধান না পেয়ে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় এ অঞ্চলের চাষিরা।

জানা গেছে, এরই মধ্যে তাপপ্রবাহে বেশির ভাগ আমগাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে। এই অবস্থা আর ১০ দিন টানা চললে রাজশাহীর আমের মুকুল অনুযায়ী এবার ফলন অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন বাগান মালিকরা। তবে কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষকরা বলছেন, কিছু গুটি আম ঝরে গেলেও বাকিগুলো টিকিয়ে রাখলে সংকট হবে না। মাঝে তিন দিনে মাত্র ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও হয়নি। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই তাপপ্রবাহ ও খরায় আমের গুটি ঝরে পড়া রোধে গাছের গোড়ায় রাতে অথবা খুব ভোরে পানির সেচ দিতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ৫০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। আম রক্ষায় অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ ছিটাতে হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ- এই তিন জেলায় ৯৮ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এ ছাড়া নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় আরও ৫ হাজার ৪৭৮ হেক্টর জমি আম চাষের আওতায় আছে। সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ৬০৮ হেক্টর আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। রাজশাহী অঞ্চলের এই পরিমাণ বাগান থেকে চলতি মৌসুমে সাড়ে ১১ লাখ টন আম উৎপন্ন হবে বলে কৃষি বিভাগের আশা। এই পরিমাণ আমের বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি বছর শুধু রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন ধরা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনকহারে আমের গুটি ঝরে পড়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা আমচাষিদের।

রাজশাহীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘অনইয়ার’ বিবেচনায় চলতি মৌসুমে বাগানে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। সেই মুকুল থাকলে অনেক আম হতো। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ও তাপপ্রবাহে অনেক বাগানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ রাত ২টা থেকে পরের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ৪ মার্চ ১ মিলিমিটার এবং পরদিন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এরপর আর বৃষ্টিপাত হয়নি। এর মধ্যে রোদের তীব্রতা বেড়েছে। ফলে আমের গুটি পুড়ে বা ডগা মরে তা ঝরে যাচ্ছে। ফলে আমগাছে পানি ও কীটনাশক দিয়েও গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিবছরই আমের কিছু গুটি ঝরে যায়। কিন্তু চলতি মৌসুমে তাপপ্রবাহে অনেক বাগানে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কা জেগেছে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিহারিপাড়া গ্রামের আসিফ ইকবালের ৩০ বিঘার বাগানে দেশি-বিদেশি ৭২ জাতের আমগাছ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হপার পোকা ও আচা পোকা বাগানে আমের ক্ষতি করেছে। এ ছাড়া, আম ছিদ্রকারী পোকা উড়ে এসে হুল ফুটিয়ে চলে যাচ্ছে। সে জন্য কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত খরার কারণে গাছে থাকা অবস্থাতেও আমের বোঁটা শুকিয়ে কুঁচকে যাচ্ছে। যারা পরিমিত সেচ ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন তাদের গাছে আম এখনো ভালোই আছে। কিন্তু যারা করতে পারছেন না তাদের আম খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বাঘা উপজেলার আমচাষি সাজেদুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আম শুকিয়ে কালো রং ধারণ করছে। এ ছাড়া পোকা ছিদ্র করায় আম শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। এতে আমের ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, ২২ মার্চ থেকে রাজশাহী অঞ্চলে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। রাজশাহী অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ২৮-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। একইভাবে ৩৮-৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০-৪২ ডিগ্রিকে তীব্র তাপদাহ এবং ৪২-এর ওপরে গেলে সেটাকে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বলে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ। এর আগে, গত ২৮ মার্চ রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ১ এপ্রিল রাজশাহী অঞ্চলে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। 
কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হবে। সে ক্ষেত্রে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করতে পারে। এতে প্রকৃতি ও জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে তাপপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টিও নেই। এ কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় আমগাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে গুটি ঝরা কিছুটা হলেও রোধ হবে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বলেন, ‘রাজশাহীতে বৃষ্টির অভাবে ও প্রচণ্ড খরার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ছে। খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় খুবই সতর্কতার সঙ্গে গাছ পরিচর্যা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় অল্প পরিমাণ পানি ও পরবর্তী সময়ে ইউরিয়া ও পটাশ সার দিতে হবে। এ ছাড়া আমের গুটি রক্ষায় বরিক অ্যাসিডও স্প্রে করতে হবে। আমের মৌসুমে গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে তা শতভাগ থাকবে না এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে এই বছর মুকুল কিছুটা কম এসেছে। তবুও এখন পর্যন্ত গাছে যে পরিমাণ মুকুল বা গুটি আছে সেগুলো বড় হলে আমের সংকট হবে না।’

ঈশ্বরদীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গম চাষ

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৮ এএম
ঈশ্বরদীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গম চাষ
ঈশ্বরদীর শৈলপাড়া এলাকার মাঠে হারভেস্ট কম্বাইন্ড মেশিন দিয়ে গম কাটা হচ্ছে। খবরের কাগজ

নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকের মাঝে সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করেছেন। পাশাপাশি আবহাওয়া ছিল অনুকূল। সব মিলিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। 

গমচাষিরা জানান, মাঠে সোনালি রঙের গম দেখে তারা খুব খুশি। খরচ কম, পরিশ্রম কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে বারী-৩২ ও বারী-৩৩ জাতের গমের আবাদ করা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, এ বছর গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৫ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টরে ৪ টন হারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টন।

ঈশ্বরদীর সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় গমের আবাদ হয়। এর মধ্যে সলিমপুর, সাহাপুর ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়।

কৃষকরা জানান, আবহাওয়া ভালো ছিল। পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই ছিল না। তাই ফলন ভালো হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন, এবার কৃষকরা ভালো লাভ করবেন। মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা 

সুজন কুমার রায় বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল ছিল। পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই ছিল না। তাই গমের আবাদ ভালো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গমের দানা বের হওয়ার সময় এক পশলা বৃষ্টির দরকার ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের বেশি সেচ দিতে হয়েছে। বৃষ্টি হলে ফলন আরও ভালো হতো।’

তিনি জানান, বৃষ্টির অভাবে কিছু জমির আবাদ কম হয়েছে। এবার অনেক কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে গম কেটেছেন।

সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের চাষি তানজিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে বারী-৩৩ জাতের গমের চাষ করেছি। নির্দিষ্ট সময়ে আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। জমি থেকে গম কাটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে। পেয়েছি ৪৭ মণ গম।’ তিনি বলেন, ‘এই আবাদে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। প্রতিমণ ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে গম বিক্রি করে পাব ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। লাভ হবে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। লাভ বেশি। সময়মতো পানি ও সার দেওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।’

একই ইউনিয়নের চরমিরকামারী গ্রামের চাষি আইনুল হক বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে বারী-৩৩ ও বারী-৩২ জাতের গমের আবাদ করেছি। পেয়েছি ৩৬ মণ গম।’ তিনি বলেন, ‘বারী-৩৩ জাতের দুই বিঘায় পেয়েছি ২০ মণ। বারী-৩২ জাতের দুই বিঘায় পেয়েছি ১৬ মণ। বারী-৩২ জাতের ফলন কিছুটা কম হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছয় বিঘা জমির আবাদে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ৩৬ মণ গম বিক্রি করে পাব ৫৪ হাজার টাকা। লাভ হবে ২৪ হাজার টাকা।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ‘এ বছর ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৪২০ টন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো ছিল। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা তদারকি করেছেন। এতে গমের আবাদ ভালো হয়েছে।’

তিনি জানান, কৃষকদের মাঝে নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।