ঢাকা ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১

টমেটো চাষে লাভবান শরীফ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩ এএম
টমেটো চাষে লাভবান শরীফ
টমেটো খেত পরিচর্যা করছেন শরীফ। খবরের কাগজ

দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই নশিপুর গ্রামের চাষি মো. শরীফ বিউটিফুল টু হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। ৫০ দিন আগে তিনি ২০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ শুরু করেন। টমেটো গাছের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট হলেও প্রতিটি গাছের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। গাছের পাতার চেয়ে টমেটো বেশি হওয়ার কারণে বাঁশ, খুঁটি ও রশি দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়েছে। এক একটি গাছে তিন থেকে চার কেজি পর্যন্ত টমেটো ধরেছে। বর্তমানে শরীফ টমেটো বাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে দাম একটু কমলেও তিনি লাভের আশা করছেন।  

শরীফ জানান, গত ২০ দিনে তিনি ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। ২০ শতক জমিতে তিনি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তারা আরও জানান, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। শীতের টমেটোর উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। এই কারণে দাম কমে গেছে। তবে তিনি আশাবাদী, দাম কিছুটা বাড়লে তার লাভ আরও বেশি হবে। তিনি মনে করেন, যদি বাইরের ক্রেতারা সরাসরি মাঠ থেকে টমেটো কিনে নেন, তার লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে। 

শরীফ জানান, অন্য চাষিরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তারা লাভবান হতে পারবেন। একই গ্রামের আরেক চাষি একলেছুর রহমান বলেন, ‘কর্ণাই নশিপুর এলাকায় তারা একযোগে কৃষিপণ্য উৎপাদন করছেন। বিশেষ করে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলুসহ অন্যান্য সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে টমেটোর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তাদের দাবি, যদি তারা এই টমেটো অন্য জেলায় পাঠাতে পারেন, আরও বেশি লাভ হতে পারে। 

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এ অঞ্চলে ১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করছেন। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে জমিতে ঘাস কম হয়। পানির খরচ কমে। এ ছাড়া রাসায়নিক ও জৈব সার সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এতে ফলন ভালো হয়। জমিতে পোকামাকড়ের ক্ষতি রোধ করতে পোকা ফাঁদও বসানো হয়েছে। 

দিনাজপুরে শীতের সবজি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টমেটোর উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৃষক মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে চাষিদের সাহায্য করছেন। তারা চেষ্টা করছেন যাতে চাষিরা এক বছরে একাধিক ফসল বা সবজি উৎপাদন করতে পারেন। আসাদুজ্জামান আরও জানান, সদর উপজেলার কৃষি বিভাগ চাষিদের সুবিধা দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় চাষিরা খেতে ভালো ফলন পাচ্ছেন। 

এ ছাড়া চাষিদের জন্য সঠিক সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে লাভের পরিমাণ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে যাতে চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। তাদের উৎপাদিত সবজি নিরাপদভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে। 

দিনাজপুরের কৃষকদের জন্য এটি একটি সফল উদ্যোগ। তাদের প্রাপ্ত ফলন ও লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে, এমন আশাবাদী তারা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছেন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।

দিনাজপুরে লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
দিনাজপুরে লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা
খবরের কাগজের ফাইল ছবি

দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সদর, বিরল, চিরির বন্দরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিক লিচু চাষ করা হয়েছে। বেদনা, চায়না-টু, চায়না-থ্রি, কাঁঠালি, মাদ্রাজি সোনালি লিচুর বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। গত বছর দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হলেও এবার ভালো ফলন হতে পারে। এ ছাড়া বিদেশে লিচুর চাহিদাও রয়েছে।

সদর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের লিচু চাষি গোলজার হোসেন বলেন, সদর উপজেলার মাছিমপুর, আউলিয়াপুর, উলিপুর, খানপুর, মহাব্বতপুর চেরাডাঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু বাগান মুকুলে ভরপুর। আগাম লিচুর বাগানের ফল মালিকরা তা বিক্রি করে দিয়েছে। এ ছাড়া অনেকে বাম্পার ফলনের আশায় লিচুগাছ পরিচর্যা করছেন। গত দুই বছর লিচুর ফলের ক্ষতি হওয়ায় এবার ফল ভালো পাওয়ার আশায়। বৈশাখের মাঝামাঝি আগাম জাতের লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। 

সদর, চিরিরবন্দর, বিরলসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাসা-বাড়ি ছাড়াও অনেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তাদের লিচু গাছগুলোতে ফুটেছে মুকুল। এখানে দেশীয় জাতের কাঁঠালি, মাদ্রাজি সোনালি ও বোম্বাই লিচুর ফলন অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব গাছের লিচু মৌসুমের শুরুতে বাজারে তুলা যায়।

গত দুই বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চায়না ভ্যারাইটি লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। চায়না ভ্যারাইটির গাছে লিচুর মুকুল দেখা দিয়েছে। চাষিরা ব্যাপক পরিচর্যা করছেন এবং ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিনাজপুরে ফল নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান সৈকত জানান, দিনাজপুরের লিচু গাছগুলোয় গত বছরের তুলনায় এবার আশানুরূপ মুকুল ধরেছে। এসব মুকুল থেকে বেশি পরিমাণ ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গাছগুলোতে ওষুধ প্রয়োগসহ নানামুখী পরিচর্যা করছেন বাগানিরা। এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমি জেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ও ফাঁকা জায়গায় লিচুর গাছ রয়েছে।
 
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানায়, গত বছরে কয়েক দফায় বেদনা ও চায়না থ্রি লিচু রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্স আমেরিকা ও ব্রিটেনে লিচুগুলো পৌঁছানো হয়েছে। এবারও ওই সব দেশসহ আরও কয়েকটি দেশে লিচুর চাহিদা রয়েছে। ওই অনুযায়ী লিচু সরবরাহ করা হবে। সূত্র: বাসস

মেহেরপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, আমদানি বন্ধের দাবি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
মেহেরপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, আমদানি বন্ধের দাবি
পেঁয়াজ খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন এক কৃষিশ্রমিক/ খবরের কাগজ

মেহেরপুরে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম আরও কমে যাবে। এতে তাদের বড় ক্ষতি হবে। সার, তেল ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও, ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। কৃষি বিভাগ সংরক্ষণ ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করছে। কৃষি বিপণন বিভাগ আমদানি বন্ধের সুপারিশ করছে। 

চলতি মৌসুমে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছেন কৃষকরা। কয়েকদিন পর জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করবেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানির খবরে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তারা জানান, ন্যায্য মূল্য না পেলে তাদের পথে বসতে হবে। সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি না করার। সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা। এতে অংশ নেওয়া কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজ আবাদে খরচ বেশি। আমরা ঋণ করে চাষ করেছি। অনেকে পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে গরু কিংবা ছাগল বিক্রি করেছেন। পেঁয়াজের ভালো দাম না পেলে আমাদের পথে বসতে হবে।’ এ ছাড়া পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার তৈরির পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি করেন তিনি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু দাম নিয়ে হতাশ তারা। মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান গানা বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। প্রতি বিঘা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পেঁয়াজের দাম ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ টাকা না পেলে লোকসানে পড়তে হবে।’ একই গ্রামের আমজাদ গাইন এবার ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তার প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি, সার ও কীটনাশকসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু এবার পেঁয়াজের দাম কমছে। এভাবে চলতে থাকলে আবাদ করা কঠিন হয়ে যাবে।
 
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৯ টাকা। বিঘাপ্রতি খরচ দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কৃষি বিপণন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি না করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ সময় পেঁয়াজ আমদানি না করতে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। 

কৃষি বিভাগ জানায়, মেহেরপুরে কয়েক ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয়। তার মধ্যে তাহের পুরি, নাসিক-৯৫ ও সুখ সাগর যাতে পেঁয়াজের চাষ বেশি হয়ে থাকে। চাষে খরচ বেশি হলেও এ জাতগুলো উচ্চফলনশীল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে একসঙ্গে পেঁয়াজ উত্তোলন না করে, ধাপে ধাপে উত্তোলন করার পরামর্শ দেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৫ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এখানে ১ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। 

ঝিনাইদহে পেয়ারা চাষে শামসুজ্জামানের সাফল্য

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম
ঝিনাইদহে পেয়ারা চাষে শামসুজ্জামানের সাফল্য
পেয়ারা বাগান পরিচর্যা করছেন মো. শামসুজ্জামান। খবরের কাগজ

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. শামসুজ্জামান পেয়ারা চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন। তার সাত বিঘা জমিতে রয়েছে ১ হাজার ২০০ পেয়ারাগাছ। কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। এ কাজের মাধ্যমে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কৃষির মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবন মান উন্নত করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। 

শামসুজ্জামানের বাবা মো. ইউসুফ আলী বিশ্বাস চাষাবাদে অভিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর চাষাবাদ করেছি। তবে শামসুজ্জামান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে পেয়ারা চাষ শুরু করে, তখন কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে যখন তার বাগান দেখিয়ে সফলতার গল্প বলল, তখন ভীষণ ভালো লাগল।’ 

শামসুজ্জামান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার একটি পেয়ারা ও ড্রাগন বাগান দেখে মুগ্ধ হন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজে চাষাবাদ শুরু করবেন। প্রথমে পরিত্যক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক পেয়ারা চাষ শুরু করেন। পরে সেটি বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে তার সাত বিঘা জমিতে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ পেয়ারাগাছ। সঙ্গে আরও ৭০০ লেবুগাছ রয়েছে, যদিও এখনো সেগুলোতে ফল ধরেনি।

শামসুজ্জামান তার বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করার পর আরও কয়েকটি প্রজাতির ফল চাষ করেন; যেমন মাল্টা, হলুদ কমলা ও বাতাবি লেবু। তার বাগানে এমন কিছু ফল রয়েছে, যা কৃষি বাজারে বেশ চাহিদাসম্পন্ন। চাষাবাদে সফলতা এসেছে, যার ফলে অনেক তরুণের জীবনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি জানান, পরিচর্যা, মজুরি ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। উৎপাদন বাড়াতে তিনি নিজের হাতে কম্পোস্ট সার তৈরি করেন। শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজেই কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি শিখেছি, তা প্রয়োগ করি। ২০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করা কম্পোস্ট সার সাত বিঘা জমিতে প্রয়োগ করা যায়। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমে যায়।’ কম্পোস্ট সারের ব্যবহার ফলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলের পুষ্টিগুণও ঠিক থাকে।

প্রতিদিন বাগানে চারজন শ্রমিক কাজ করেন। তবে ফল সংগ্রহ ও প্রুনিং করার সময় শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়ে। গড়ে প্রতি মাসে ১২০ জন শ্রমিক কর্মসংস্থানে নিয়োজিত থাকেন। এই কাজের মাধ্যমে এলাকার অনেক বেকার যুবকও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা, সেচ দেওয়া ও প্রুনিংয়ের কাজ করে সাকিব, শাহিন ও সুমন মিয়া। তারা বলেন, ‘এখানে কাজ করে ভালো আয় হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাশোনা করি।’

শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমি জমি বর্গা দিয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে পারতাম। কিন্তু আমি কাজ শুরু করেছি এবং অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি, এটাই আমার সাফল্য।’ 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী শামসুজ্জামানকে নিয়ে বলেন, ‘শামসুজ্জামান একজন উদ্যমী উদ্যোক্তা। সাত-আট বছর ধরে পেয়ারা চাষ করছেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দিয়েছি। তাকে কম্পোস্ট সার উৎপাদন, চারার পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শামসুজ্জামানের মতো বেশ কয়েকজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফসল উৎপাদন করছেন।’

কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘কৃষকদের উৎপাদিত ফল বিক্রির জন্য এখন কোটচাঁদপুর উপজেলায় একটি বড় পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা এখান থেকে পেয়ারা, ড্রাগন, মাল্টাসহ অন্যান্য ফল কেনেন।’

বেড়েছে সারের দাম ও শ্রমিক খরচ

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৫ এএম
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
বেড়েছে সারের দাম ও শ্রমিক খরচ
খেতে ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষিশ্রমিকরা। খবরের কাগজ

ইরি-বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার কৃষকরা। বর্তমানে ৮০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে। কৃষকরা আশাবাদী, আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারের ফলন ভালো হবে। তবে তাদের অভিযোগ, সারের দাম ও শ্রমিকের খরচ বেড়েছে। এতে সার্বিকভাবে ধান উৎপাদনের খরচ বেড়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মৌসুমে সম্ভাব্য উৎপাদন ৫ লাখ ৯৪ হাজার ১৬১ টন ধান। গত বছর জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছিল। তবে এবার কৃষি বিভাগ ভালো ফলনের আশা করছে।

কুমারগাড়ী গ্রামের কৃষক রিমন খন্দকার বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো, আশা করছি আবাদ ভালো হবে। বাজারে ধানের দামও ভালো। আমি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে হিরা-২, ব্রি-২৮ ও কাটারি জাতের ধান রোপণ করেছি।’ তবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না, অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে।’

তবে শুধু রিমনই নয়, অন্য কৃষকরাও একই অভিযোগ করছেন। কুমারগাড়ী গ্রামের বাদশা খন্দকার, বাটু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া ও মিলন মিয়ার মতো কৃষকরা জানান, ইরি চাষে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। সারের দাম বেড়েছে, শ্রমিকেরও খরচ বেড়েছে। কৃষকরা আরও বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশের দাম থাকলেও বাজারে এগুলো ৫ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, সরকার নির্ধারিত দামে ডিলাররা সারের সরবরাহ করছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চলছে। তবে সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কৃষকরা উদ্বিগ্ন। আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছি।

এবারের মৌসুমে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচে ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়। তবে কৃষকরা আশা করছেন, ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হবে। জানুয়ারি শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইরি-বোরো ধান রোপণ করা হয়।

গোলাপ চাষে লাভবান চাষিরা

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১০ এএম
গোলাপ চাষে লাভবান চাষিরা
গোলাপ ফুলের বাগান পরিচর্যা করছেন এক চাষি। খবরের কাগজ

ভালোবাসা, বসন্তবরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। এখানে গোলাপ ফুলের চাহিদা ও দাম বাড়ছে। চাষিরা প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করছেন। চাষিরা গোলাপ চাষে সফলতা পাচ্ছেন। এতে এলাকার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। 

বিরল উপজেলার ভান্ডার ঘাঘরপাড়া ও কাজী পাড়ায় ফুল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের চাষিরা গোলাপ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। ফেব্রুয়ারিতে গোলাপ ফুলের চাহিদা বাড়ে, তাই গোলাপের দামও বেড়ে যায়। সাধারণত তিন থেকে চার টাকায় বিক্রি হলেও ভালোবাসা দিবসে ১০ থেকে ১২ টাকা পিস বিক্রি হয়। 

গোলাপ ফুলের বাগানে বিশেষ নজরদারি ও পাহারা দেওয়া হয়। শীতের সময় বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, কালো গোলাপসহ ১৪ ধরনের গোলাপ ফোটে । এখানকার চাষিরা প্রতিদিন ফুল বিক্রি করে সহজেই নগদ আয় পাচ্ছেন। এই সাফল্যে তরুণরা গোলাপ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 
কাজীপাড়ায় গোলাপ ফুলের চাষ এখন এতটাই প্রসারিত। গ্রামটি গোলাপ ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানকার চাষিরা গোলাপ চাষের পাশাপাশি রজনীগন্ধা, কাঠবেলি, গাঁদা ফুলও চাষ করছেন। 

ভান্ডার ঘাঘরপাড়ার চাষি বজ্রনাথ রায় (৬০) ও পুলিন চন্দ্র রায় (৪৫) আলাদা আলাদা গোলাপ ফুলের বাগান করেছেন। বজ্রনাথ রায় ২৫ শতক জমিতে ১ হাজার ৮০০ গোলাপ গাছ লাগিয়েছেন। প্রতিদিন ২০০-৩০০ পিস গোলাপ বিক্রি করে তিনি বেশ ভালো টাকা আয় করছেন। পুলিন চন্দ্র রায়ও তার ১৮ শতক জমিতে গোলাপ গাছ লাগিয়েছেন। প্রতি বছর আড়াই লাখ টাকা আয় করছেন। 

কাজীপাড়ায় গোলাপ ফুলের ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ফুলচাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এখানকার প্রতিটি গোলাপ চার থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ফুল বিক্রি করছেন চাষিরা। 

গোলাপ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় বছর আগে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করি। এখন আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ফুল বিক্রি করি।’

ফুল চাষের দিকে ঝুঁকেছেন একাধিক শিক্ষিত যুবকও। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফুল ব্যবসা করে আর্থিকভাবে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। গোলাপ ফুলের পাশাপাশি আমরা গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেলি ফুলও চাষ করছি।’

বিরলের রবিপুর এলাকার ফুল চাষি শমশের জানান, ‘৮ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। আগামীতে এক বিঘা জমিতে ফুল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

মোকাররম নামে এক চাষি বলেন, ‘গোলাপ ফুলের দাম দিনভর ওঠানামা করে। বিশেষ দিনগুলোতে দাম বেশি হয়। গোলাপ বিক্রি করে প্রতিদিন আমি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করি।’

বিরল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘দিনাজপুরের এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য আদর্শ। এখানকার কৃষকরা গোলাপ চাষ করে প্রচুর লাভবান হচ্ছেন।’ 

বিরল উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, গোলাপ চাষের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে চাষিদের সাহায্য করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে ফুল চাষের দিকে আগ্রহ বাড়ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।