
দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই নশিপুর গ্রামের চাষি মো. শরীফ বিউটিফুল টু হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। ৫০ দিন আগে তিনি ২০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ শুরু করেন। টমেটো গাছের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট হলেও প্রতিটি গাছের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। গাছের পাতার চেয়ে টমেটো বেশি হওয়ার কারণে বাঁশ, খুঁটি ও রশি দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়েছে। এক একটি গাছে তিন থেকে চার কেজি পর্যন্ত টমেটো ধরেছে। বর্তমানে শরীফ টমেটো বাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে দাম একটু কমলেও তিনি লাভের আশা করছেন।
শরীফ জানান, গত ২০ দিনে তিনি ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। ২০ শতক জমিতে তিনি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তারা আরও জানান, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। শীতের টমেটোর উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। এই কারণে দাম কমে গেছে। তবে তিনি আশাবাদী, দাম কিছুটা বাড়লে তার লাভ আরও বেশি হবে। তিনি মনে করেন, যদি বাইরের ক্রেতারা সরাসরি মাঠ থেকে টমেটো কিনে নেন, তার লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
শরীফ জানান, অন্য চাষিরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তারা লাভবান হতে পারবেন। একই গ্রামের আরেক চাষি একলেছুর রহমান বলেন, ‘কর্ণাই নশিপুর এলাকায় তারা একযোগে কৃষিপণ্য উৎপাদন করছেন। বিশেষ করে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলুসহ অন্যান্য সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে টমেটোর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তাদের দাবি, যদি তারা এই টমেটো অন্য জেলায় পাঠাতে পারেন, আরও বেশি লাভ হতে পারে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এ অঞ্চলে ১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করছেন। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে জমিতে ঘাস কম হয়। পানির খরচ কমে। এ ছাড়া রাসায়নিক ও জৈব সার সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এতে ফলন ভালো হয়। জমিতে পোকামাকড়ের ক্ষতি রোধ করতে পোকা ফাঁদও বসানো হয়েছে।
দিনাজপুরে শীতের সবজি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টমেটোর উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৃষক মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে চাষিদের সাহায্য করছেন। তারা চেষ্টা করছেন যাতে চাষিরা এক বছরে একাধিক ফসল বা সবজি উৎপাদন করতে পারেন। আসাদুজ্জামান আরও জানান, সদর উপজেলার কৃষি বিভাগ চাষিদের সুবিধা দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় চাষিরা খেতে ভালো ফলন পাচ্ছেন।
এ ছাড়া চাষিদের জন্য সঠিক সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে লাভের পরিমাণ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে যাতে চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। তাদের উৎপাদিত সবজি নিরাপদভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে।
দিনাজপুরের কৃষকদের জন্য এটি একটি সফল উদ্যোগ। তাদের প্রাপ্ত ফলন ও লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে, এমন আশাবাদী তারা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছেন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।