
রংপুরে ফাগুনের আগে আমের মুকুল আসছে। মুকুলের গন্ধে মৌমাছিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। শীতপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে কৃষকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারা মুকুলের ক্ষতি হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন। মুকুল রক্ষায় কৃষক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া ও অন্যান্য যত্ন নিচ্ছেন তারা।
গত বছর আমের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা এবারের ফলনের জন্য আশাবাদী। তারা জানান, গত বছর শীত বেশি থাকার কারণে মুকুল ঠিকমতো বের হয়নি। এবার শীত কম ছিল। শেষ সময়ে এসে শীত বেড়ে যাওয়ায় মুকুলের ক্ষতি হতে পারে। মুকুল টিকে থাকলে ভালো ফলন হবে এবং আগাম আমের দামও পাওয়া যাবে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কিছু গাছে মুকুল আগাম এসেছে, যেমন হাঁড়িভাঙা। কুয়াশা বেশি ক্ষতি না করলেও, রোদ এলে মুকুল আটকে যেতে পারে। এই সমস্যা কাটাতে ছত্রাকনাশক স্প্রের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৬ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৮৭৪ টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবারে ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। হাঁড়িভাঙা আমের উৎপত্তিস্থল রংপুরে এবার আরও বেশি জমিতে হাঁড়িভাঙা চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, শ্যামপুর, পীরগঞ্জ এলাকায় আমের মুকুল দেখা গেছে। বেশির ভাগ গাছেই মুকুল রয়েছে। কিছু গাছে মুকুলের কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। কিছু গাছের মুকুল না এলেও বেশির ভাগ গাছে মুকুল রয়েছে।
কৃষকরা জানান, হাঁড়িভাঙা আমের একটি নিয়ম আছে। এক বছর পর পর ফলন কম হয়। ব্যবসায়ীরা দাম কম পাওয়ায় তারা আগাম বাগান বিক্রি করে দেন। কৃষকরা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ বা সহায়তা তারা পান না। সরকারি প্রণোদনা সঠিকভাবে বিতরণ হলে কৃষকরা আরও উপকার পেতেন।
বদরগঞ্জ কুতুবপুর ইউনিয়নের আম চাষি লাভলু মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই এমন কুয়াশা পড়ে, এবার মুকুল বের হওয়ার সময় পড়েছে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ মিঠাপুকুরের সুজন আহমেদ জানান, গত বছর বাগান কিনে ক্ষতি হয়েছে। এবার কুয়াশার কারণে চিন্তিত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আগাম বাগান নিয়ে রেখেছি, লাভের আশা ছিল, কুয়াশার কারণে সন্দিহান।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা উৎপাদনে চিন্তার কিছু নেই, বাড়তি যত্ন নিলে আমের ভালো ফলন হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কুয়াশার পরে রোদ হলে আমের মুকুলের গোড়া শক্ত হয়। দীর্ঘদিন কুয়াশা থাকলে ক্ষতি হতে পারে। কৃষককে বাড়তি যত্ন নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন করবেন।’