
দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীচরের বালুর মধ্যে বোরো ধানের চারা রোপণ চলছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া তলদেশে ধান, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল চাষ করছেন চাষিরা। এক সময় কান্তজি গ্রামে নদীভাঙনে জমি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এখন নদীর বুকজুড়ে চলছে কৃষিকাজ। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ চাষাবাদ জাতীয় উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চাষিরা বলেন, ফসল বিক্রি করে তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কান্তজি মন্দির-সংলগ্ন কান্তজি গ্রামে পানি শুকিয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর পাশ দিয়ে চাষিরা কাজ করছেন। কেউ জমিতে জৈব সার দিচ্ছে, কেউ বালু সমান করছেন। নারী শ্রমিকরা দল বেঁধে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। নদীতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। বেশির ভাগ অংশে ধান রোপণ হচ্ছে। কিছু অংশে পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও গম চাষ করা হয়েছে। চাষিরা জানান, এসব ফসল দ্রুত তোলা যাবে।
এক সময় নদী তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে নদীর পানি কমে গেলে চাষিরা বিভিন্ন ফসল চাষ শুরু করেন। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়। এপ্রিলের দিকে ধান কেটে ঘরে তোলা হয়।
ওসমান গনি নামে এক চাষি বলেন, ‘নদীতেই আমাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। বালুর মধ্যে চারা রোপণ করছি। বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হবে।’ হযরত আলী বলেন, ‘আমাদের অনেক জমি ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে তা বিলীন হয়েছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে নদীর চরে ফসল চাষ করছি।’ ইয়াসিন আলী বলেন, ‘চরে জমির চারদিক উঁচু করে আইল তৈরি করেছি। ধান রোপণ করছি। একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ ধান হয়। জমির পানি সেচের প্রয়োজন হয় না, তাই লাভ বেশি হয়।’
আরেক চাষি সোহেল রানা বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। ফসল বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।’ নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ চাষিদের নতুন উপায় সৃষ্টি করেছে। ভূমিহীন চাষিরা ফসল উৎপাদন করে সংসার চালাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছেন, ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষিরা জানান, এক মৌসুমে এখানে ফসল চাষ করে সারা বছরের চাহিদা পূর্ণ হয়।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নদীর পানি কমে যায়। এ সময়ে পুনর্ভবা নদীসহ বিভিন্ন চরে ফসল চাষ করেন চাষিরা। আমরা তাদের চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা অনাবাদি জমি ব্যবহার করতে পারেন। এটি দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’