ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষা চাষ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষা চাষ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ
খবরের কাগজ ফাইল

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কৃষকরা কম খরচে, স্বল্প পরিশ্রমে লাভবান হচ্ছেন। রবি মৌসুমে সরিষার আবাদ ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। শীতে জমিতে হলুদ রঙের সরিষা দেখা যায়। এক বিঘা জমিতে চাষে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। লাভ হচ্ছে ৯-১০ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে। সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। কম খরচে দ্রুত ফলন পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশে তেল উৎপাদন বাড়বে, আমদানি নির্ভরতা কমবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে শীতে সরিষার হলুদ রঙের ঢেউ দেখা যায়। কৃষকরা ধান কাটার সরিষা চাষ করেন। অল্প সময়েই ভালো লাভ পাচ্ছেন। রানীশংকৈল উপজেলার কৃষক আব্দুর মজিদ বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ কম, সার, সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়, তাই প্রতি বছর চাষ করি।’

নারগুন গ্রামের কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন সরিষা চাষ করি। মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল উঠানো যায়। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বিক্রি থেকে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়।’
গত পাঁচ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমে সরিষার আবাদ ছিল ১২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৩৩৩ টন। ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৩৬ হেক্টরে, উৎপাদন ছিল ১৯ হাজার ৬৯৮ টন। ২০২১-২২ মৌসুমে আবাদ হয় ১৩ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ২১ হাজার ১৭২ টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদ বেড়ে ১৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর, উৎপাদন ২৪ হাজার ২০৩ টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৬৭৪ টন। ২০২৪-২৫ মৌসুমে আবাদ ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টরে পৌঁছেছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৬৭৬ টন।

কৃষকরা জানান, সরিষা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কম খরচ ও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও সার কম লাগায় খরচ কম হয়। এ ছাড়া সরিষার পরে অন্যান্য ফসলও ফলানো সম্ভব। কৃষক নির্মল কুমার বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি পড়ে থাকে, তাই প্রতি বছর সরিষা চাষ করি। গাছের অবস্থা ভালো, ফলনও ভালো হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। মাঠে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষকদের সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।’

নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০ এএম
নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ
ছবি: মেহেদী হাসান, খবরের কাগজ

নড়াইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা এতে ঝুঁকছেন। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎস হিসেবে এর চাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। দিগন্তজোড়া সূর্যমুখী খেতে প্রতিদিন বিকেলে তরুণ-তরুণীরা সেলফি তুলতে ভিড় করছেন।

কৃষক রসময় বিশ্বাস জানান, তিনি ৭০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। সরিষার তুলনায় তিন গুণ লাভ হয়। স্থানীয় বাজারেই তেল ভাঙানোর ব্যবস্থা থাকায় নিজ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত তেল বিক্রি করতে পারছেন।

চাঁচড়ার কৃষক বিল্লাল মোল্যা বলেন, ‘৩৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। শুরুতে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তা ঠিক হয়েছে। সার, কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করায় ভালো ফলনের আশা করছি।’

মিতনা গ্রামের কৃষক গৌতম বিশ্বাস জানান, গত বছর ২৫ শতক জমিতে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর ৪০ শতকে চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ১৩ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো উৎপাদন হবে। প্রতি মণ বীজ ৩ হাজার ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর নড়াইলে ১১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫৬ টন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, ‘কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এর চাষ দিন দিন বাড়ছে।’

আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা
মুন্সীগঞ্জের একটি খেতে আলু তুলছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

মুন্সীগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জমিতে কৃষকরা আলু তুলছেন। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যেই এসেছে স্বস্তির খবর—কম সার ব্যবহার করেও আলুর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি মৌসুমে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য ওঠে এসেছে।

কম সারে সাশ্রয়

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ টন। পরীক্ষামূলকভাবে ৩০০ কৃষকের জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫০ কৃষকের জমিতে তৈরি করা হয় প্রদর্শনী প্লট। এতে শতাংশপ্রতি মাত্র তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচ কেজি করে সার প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, জেলার অন্য কৃষকরা সাধারণত শতাংশপ্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি সার ব্যবহার করেন।

ফলনে তেমন পার্থক্য নেই

পরীক্ষামূলক ফলাফলে দেখা গেছে, কম সার ব্যবহারে আলুর উৎপাদন প্রায় একই রকম হয়েছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে কম সার ব্যবহার করা জমিতে ভালো মানের আলু পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার সুখবাসরপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম ৮০ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়। তিনি জানান, ‘কম সার ব্যবহৃত জমিতে শতাংশপ্রতি সাড়ে তিন মণ আলু পেয়েছি। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি মাত্র সোয়া তিন মণ।’

একই উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহিদা ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তিনি জানান, ‘কম সার দেওয়া জমিতে শতাংশপ্রতি পেয়েছি পৌনে তিন মণ আলু। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি প্রায় তিন মণ।’
বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুরুতে যখন কম সার ব্যবহার করি, তখন অন্য কৃষকরা হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় এখন তারাই আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছে।’

খরচ কমিয়ে লাভের সম্ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে আসছেন। এতে উৎপাদন খরচ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যায়। প্রতি বছর সারের দাম বাড়ায় চাষে খরচও বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। শতাংশপ্রতি তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করেও ভালো আলু উৎপাদন সম্ভব। যেখানে সাধারণ কৃষকরা ব্যবহার করেছেন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ফলাফলে দেখা গেছে, বেশি সার দিলেও ফলনে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কৃষকরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তাহলে এক মৌসুমেই অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকদের লাভও বাড়বে।’

পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ

কম সার ব্যবহার শুধু খরচই কমাবে না, এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী হবে। অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এতে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়। তাই কম সারে ভালো ফলন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে, বেশি সার দিলেই ভালো ফলন হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলেই ভালো উৎপাদন সম্ভব। এবার পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় আগামীতে আরও কৃষক কম সার ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকতে পারেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মুন্সীগঞ্জের এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আলু চাষিদের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দাম কমে যাওয়ায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো। খবরের কাগজ

কিছুদিন আগেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গাছে ঝুলছিল লাল টসটসে টমেটো। চাষিদের মনে ছিল আনন্দ, ভালো ফলনে আসবে সচ্ছলতা। কিন্তু এখন সেই টমেটো তুলতে চাইছেন না তারা। বাজারে দরপতন হওয়ায় ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে দিশেহারা চাষিরা।

হিমাগার নেই, ক্ষতির মুখে কৃষক

কমলগঞ্জ কৃষিনির্ভর এলাকা। কিন্তু এখানে নেই কোনো হিমাগার। ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে পানির দরে ফসল বিক্রি করছেন। নাহলে পচে যাবে কষ্টের ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকদের উৎসাহ কমছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। কেউ কেউ গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সারা বছর টমেটো চাষ করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হতাশ।

বাজারে দাম কম, জমিতেই নষ্ট ফসল

চাষিরা বলছেন, জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বাজারে দর এত কম যে, তা তুলতে গেলে খরচই বেশি পড়ে। শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠছে না। তাই অনেকেই জমিতেই ফেলে রাখছেন ফসল।

মাধবপুর এলাকার চাষি সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ‘টমেটো তুলে, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে তিন থেকে চার টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি পড়ে, লাভ নেই। তাই তুলছি না, জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।’

আগে পাইকাররা মাঠ থেকেই টমেটো কিনতেন। এখন তারা আসছেন না। চাষি কামাল মিয়া বলেন, ‘বিক্রি করে যা পাব, খরচ তার চেয়ে বেশি। তাই তুলছি না। জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

হিমাগারের দাবিতে কৃষকরা

কমলগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাইমুন নামে এক কৃষক বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাপারীরা স্বল্প দামে কিনে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। হিমাগার থাকলে আমরাও সংরক্ষণ করতে পারতাম।’

দাম কমার কারণ কী?

স্থানীয় আড়তদার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস আগেও টমেটো ৮-১০ টাকা কেজি ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকায়। এত কম দামে চাষিরা ক্ষতির মুখে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘যারা আগাম চাষ করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে অন্যান্য সবজি থাকায় দাম কমেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পরের ফসলের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত হিমাগার স্থাপন সম্ভব হবে।’ চাষিরা এখন হিমাগারের আশায় দিন গুনছেন। তারা চান, যেন তাদের কষ্টের ফসল ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। নয়তো তারা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফল মিলন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফল মিলন
পেঁয়াজ বীজের খেত পরিচর্যা করছেন মিলন ইসলাম

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার যুবক মিলন ইসলাম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে হয়ে উঠেছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইউটিউব চ্যানেল ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা মিলন ইসলাম দিনাজপুর কেবিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়েই তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার বীজ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

মিলন ইসলামের প্রচেষ্টায় তার গ্রামে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। একসময় যারা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না, এখন তার কাছ থেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকায় তিনি ‘পেঁয়াজ মিলন’ নামে পরিচিত হয়েছেন।

এ বছর মিলন ইসলাম ১২৫ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। তার প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার শতাধিক কেজি বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি এক একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ পেঁয়াজও উৎপাদিত হবে।

মিলন বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। এখন প্রতিদিন ফুলে হাত বুলিয়ে পরাগায়ন ঘটাতে হয়। মাঝে মাঝে পানি দিতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বীজ হারভেস্ট করা যাবে।’ বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিলের পরেই বীজ বিক্রি করলে প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে।’
এই ১২৫ শতক জমিতে তার খরচ হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে তিনি আশা করছেন, এতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হবে। পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করে পরে উৎপাদন করাও সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক কুমার রায় জানান, ‘মিলন ইসলামের সফলতা দেখে আমিও আগামীতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছি। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

মিলন ইসলাম নিজেই উৎপাদিত বীজ প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করছেন। সিড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বীজ ব্যবস্থাপনা ও বিপণনে তিনি ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘বিরল উপজেলার মাটি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। মিলন কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শতভাগ প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করছেন। বীজ সংরক্ষণকারী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই তার বীজ কিনে নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই পেঁয়াজের বীজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়লে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না।’

আলু বীজে লাভবান কৃষক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
আলু বীজে লাভবান কৃষক
যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামে বীজ আলু বাছাই করছেন কৃষক। খবরের কাগজ

যশোরে আলু বীজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। দাম একটু কম হলেও ভালো ফলন পাওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যশোর অফিসের সঙ্গে তিন শতাধিক কৃষক আলু বীজ উৎপাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ আছেন। এসব কৃষক চলতি বছর ১ হাজার টন বীজ আলু উৎপাদন করেছেন। বিএডিসির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কৃষকরাও বীজ আলু সংরক্ষণ করছেন। যেটা আগামী বছর বীজের ঘাটতি পূরণ করবে। স্থানীয় বাজারের পাইকারি দর থেকে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম পান চুক্তিবদ্ধ আলুচাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বিঘাপ্রতি আলুর উৎপাদন বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ মণ। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কমলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।

কৃষকরা জানান, সদর উপজেলার নোঙরপুর ও কোদালিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৯০ জন চাষি বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে আলু বীজ উৎপাদন করেন। প্রথমে এলাকায় আলুগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে বীজ উপযোগী আলু আলাদা করা হয়। পরে তা বস্তায় ভরে বিএডিসির ট্রাকে করে আলু বীজ সংরক্ষণ গুদামে পাঠানো হয়। নোঙরপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে আমরা এলাকায় ৯০ জন চাষি এবার আলু চাষ করেছি। আমি এই ব্লকের ব্যবস্থাপনা করি। বিএডিসির বীজ ওই কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করেছি। আমি নিজেও এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমার নিজের উৎপাদিত ৫০ কেজি ওজনের ২০০ বস্তা আলু বীজ ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছি। আরও ২০ বস্তা দিতে পারব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর বিএডিসি থেকে আলু বীজ মানভেদে ৩৪ ও ৩৬ টাকা দাম পেয়েছি। এ বছর তুলনায় একটু কম। কিন্তু উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। আর খাওয়ার আলুর দাম আশা করছি, গত বছরের মতোই ভালো দাম পাব।’ 

কোদালিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছি। ৩৩ শতকের বিঘাতে এ বছর ১০০ মণ করে আলু উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ বেশি উৎপাদন হয়েছে। যে কারণে বাজারে আলু দাম এবার একটু কম। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করেছি। এবার তা ১৯ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় খরচ পুষিয়ে যাচ্ছে।’

কৃষকরা জানান, এ বছর বীজ, সার-বালাইনাশক, চাষ, সেচ, শ্রম ও জমির ইজারামূল্য সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি গড়ে ৮৫ মণ উৎপাদন ও ১৮ টাকা কেজি দর অনুযায়ী বিঘাপ্রতি কৃষকের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকছে। আলু বীজের দাম কেজিপ্রতি বাজার ছাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি পান কৃষক। সে হিসাবে আলু বীজ উৎপাদন করে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভবান হবেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক সমরেন বিশ্বাস বলেন, এ বছর যশোর জেলার আটটি উপজেলায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৩৭৭ টন। যেখানে গত বছর আবাদ ছিল দেড় হাজার হেক্টরে। উৎপাদন ছিল ৩৫ হাজার টনের মতো। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরে আলু চাষ ও উৎপাদন উভয় বেড়েছে।’

বিএডিসি যশোরের উপপরিচালক (বীজ) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বছর যশোর জেলা থেকে ৭৩৯ টন বীজ আলু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫০ টন সংগ্রহ শেষ হয়েছে। জেলার ১৭টি ব্লকে তিন শতাধিক চুক্তিবদ্ধ কৃষকের মাধ্যমে ১৪৩ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সংগ্রহ শেষে বাজার দর পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কমিটি কৃষকের বীজ আলুর দাম নির্ধারিত করবে। এরপর কৃষকের পাওনা টাকা মেটানো হবে।’