
ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কৃষকরা কম খরচে, স্বল্প পরিশ্রমে লাভবান হচ্ছেন। রবি মৌসুমে সরিষার আবাদ ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। শীতে জমিতে হলুদ রঙের সরিষা দেখা যায়। এক বিঘা জমিতে চাষে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। লাভ হচ্ছে ৯-১০ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে। সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। কম খরচে দ্রুত ফলন পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। এতে দেশে তেল উৎপাদন বাড়বে, আমদানি নির্ভরতা কমবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে শীতে সরিষার হলুদ রঙের ঢেউ দেখা যায়। কৃষকরা ধান কাটার সরিষা চাষ করেন। অল্প সময়েই ভালো লাভ পাচ্ছেন। রানীশংকৈল উপজেলার কৃষক আব্দুর মজিদ বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ কম, সার, সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়, তাই প্রতি বছর চাষ করি।’
নারগুন গ্রামের কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন সরিষা চাষ করি। মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল উঠানো যায়। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বিক্রি থেকে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়।’
গত পাঁচ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার চাষ ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমে সরিষার আবাদ ছিল ১২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৩৩৩ টন। ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৩৬ হেক্টরে, উৎপাদন ছিল ১৯ হাজার ৬৯৮ টন। ২০২১-২২ মৌসুমে আবাদ হয় ১৩ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ২১ হাজার ১৭২ টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে আবাদ বেড়ে ১৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর, উৎপাদন ২৪ হাজার ২০৩ টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৬৭৪ টন। ২০২৪-২৫ মৌসুমে আবাদ ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টরে পৌঁছেছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৬৭৬ টন।
কৃষকরা জানান, সরিষা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কম খরচ ও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও সার কম লাগায় খরচ কম হয়। এ ছাড়া সরিষার পরে অন্যান্য ফসলও ফলানো সম্ভব। কৃষক নির্মল কুমার বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর জমি পড়ে থাকে, তাই প্রতি বছর সরিষা চাষ করি। গাছের অবস্থা ভালো, ফলনও ভালো হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করছে। মাঠে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষকদের সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।’