
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকৈলাশ গ্রামের বেলাল উদ্দিন ও খলিলুর রহমান নতুন করে কুল চাষ শুরু করেছেন। তারা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২ একর জমিতে ১ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। এখন তারা বছরে ২০ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের কুল চাষে স্থানীয় কৃষকরাও সফলতা পেয়েছেন। কুল সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় হওয়ায় বাজারে চাহিদা বাড়ছে। কৃষি অফিস কৃষকদের এই উদ্যোগে সহায়তা করছে।
বেলাল ও খলিলুরের বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের কুল- বল সুন্দরী, আপেল কুল, থাই, বাউ, কাশ্মীরি কুল, নারকেলসহ অন্য জাতের সুস্বাদু কুল। তাদের বাগানটি সড়কসংলগ্ন হওয়ায় হাতিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই তা দেখতে আসছেন।
শুরুতে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে চাষ শুরু করলেও, এখন কুল থেকে বছরে ২০ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
বেলাল ও খলিল গত বছর পরীক্ষামূলক বল সুন্দরী কুল চাষ করে সফলতা পান। পরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। প্রথম বছরে খরচ বেশি হলেও, ভবিষ্যতে লাভ দ্বিগুণ হবে বলে তারা আশা করছেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার কুল চাষে হাত দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর ১ হাজার ২০০টি চারা রোপণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘দুই একর জমিতে ফলন আসার আগে পর্যন্ত ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে ২০ কেজি কুল পেলে, মোট ২০ হাজার কেজি কুল পাওয়া যাবে।’ ইতোমধ্যে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে। শুরুতে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও, বর্তমানে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খলিল আরও বলেন, ‘এই বাগান থেকে আমরা ২০ লাখ টাকা আয় করার আশা করছি। আমার বাগানের কুল শতভাগ কীটনাশকমুক্ত। খেতেও খুব সুস্বাদু। ক্রেতারা খুব আনন্দের সঙ্গে কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
ওছখালীর ফল বিক্রেতা সাহানাজ হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি কুল কিনি। এই কুলগুলো দেখতে খুব আকর্ষণীয়। সুস্বাদু হওয়ায়, চাহিদাও অনেক বেশি।’
কৃষক খানসাব বলেন, ‘বল সুন্দরী কুল চাষে হাতিয়াতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত বছর অনেকে এই কুল চাষ শুরু করেন। এ বছর শতাধিক কৃষক ছোট-বড় পরিসরে কুল চাষ শুরু করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জমিতে ধানের ফলন কম হয়। তবে কুল ফলে ভালো। এতে কৃষকরা কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
চরঈশ্বর ইউনিয়নের গামছাখালী গ্রামের সফল কৃষক আফছার উদ্দিন বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে থেকে কুল চাষ শুরু করি। প্রথমে নিজের জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। পরে কুল চাষে সফল হয়ে এবার দেড় একর জমিতে কুল চাষ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে এক লাখ টাকা পুঁজি খাটালেও এখন বছরে কুল চাষ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করতে পারি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ বলেন, ‘বল সুন্দরী কুল উপকূলীয় অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। পরিত্যক্ত জমিতে এই কুল চাষ করা যায়। কৃষকরা প্রথম বছর কিছু বেশি খরচ করলেও পরবর্তী বছরগুলোর মধ্যে খরচ কমে যাবে। এতে লাভ অনেক বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাতিয়ায় শতাধিক কৃষক এখন কুল চাষ করছেন। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।’