ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

বিটরুট চাষে কৃষকের সাফল্য

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
বিটরুট চাষে কৃষকের সাফল্য
বিটরুট খেত পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। খবরের কাগজ

গাইবান্ধায় এবার বিটরুট চাষে এসেছে নতুন এক সম্ভাবনা। বিশেষ করে সদর উপজেলা ও ফুলছিড়ি উপজেলার কৃষকরা প্রথম বিটরুট চাষ শুরু করেছেন। বিটরুট একটি পুষ্টিকর সবজি। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। গাইবান্ধায় কৃষক ফারুকুজ্জামান বিটরুট চাষে সফল হয়ে বদলে দিয়েছেন তার এলাকার অর্থনীতি।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক ফারুকুজ্জামান (৫০) দীর্ঘদিন ধরে কৃষি পেশায় জড়িত। তিনি জানান, প্রথমে বিটরুট চাষের ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। তবে ইউটিউবে চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি সাহসী হন। পরে ২০ শতক জমিতে প্রায় ৭ হাজার চারা রোপণ করেন। এতে সেচ, সার, কীটনাশকসহ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে তার উৎপাদিত বিটরুটগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তিনি ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। ভবিষ্যতে আরও ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন।

বিটরুট চাষে কৃষকদের জন্য লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এক বিঘা জমিতে বিটরুট চাষের খরচ প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। তবে উৎপাদন শেষে প্রায় দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে বিটরুটের দাম প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষকরা।

ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের তুলনায় বিটরুট চাষ অনেক বেশি লাভজনক। ধান বা অন্যান্য ফসলের চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু বিটরুট চাষে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়। এতে তাকে আরও উৎসাহিত করেছে।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিটরুট একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও লাভজনক সবজি। এটি যদি আরও বেশি চাষ হয়, তবে এর রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কৃষকরা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবে।’

এসকেএস ফাউন্ডেশনের কৃষিবিদ হারুন অর রশিদ জানান, কৃষকরা প্রথমদিকে বিটরুট চাষে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলেন। তবে তাদের উদ্বুদ্ধ করে চাষের নিয়মকানুন শেখানো হয়েছে। বিটরুট চাষে তেমন কোনো রোগ বা পোকামাকড় আক্রমণ হয় না। এটি সহজেই উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া উৎপাদিত বিটরুট সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। এটি কৃষকদের লাভ বাড়াতে সহায়ক হবে।

বিটরুট চাষের পদ্ধতি সহজ। এতে রোগবালাই কম হওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত উৎসাহী। বিটরুট গাছ পালং শাকের মতো দেখতে হলেও এর রং এবং গাছের গোড়া মুলার মতো হয়। বিটরুট বীজ রোপণের ৭০-৯০ দিনের মধ্যে মাটির নিচে ফলন হয়। এক একটি বিটরুট গড়ে ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের হয়। এক একর জমি থেকে প্রায় এক টন বিটরুট উৎপাদন হতে পারে।

গাইবান্ধার স্থানীয় বাজারে বিটরুটের চাহিদা বাড়ছে। বহু লোক বিভিন্ন এলাকা থেকে বিটরুট কিনতে আসছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিটরুট বিক্রি করতে পারছেন। এতে তাদের মুনাফা বাড়ছে।

এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ফাউন্ডেশন কৃষকদের বিটরুট চাষে সাহায্য করছে। এতে কৃষকরা দ্রুত উৎপাদন করে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে বিটরুটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি লাভজনক হয়ে উঠেছে।’

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিটরুট চাষের উদ্যোগটি সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা নতুন ধরনের ফসল চাষ করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এটি তাদের আয় বাড়াবে।

বগুড়ায় কমছে মরিচের চাষ

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
বগুড়ায় কমছে মরিচের চাষ
রোদে মরিচ শুকানোর কাজ করছেন এক শ্রমিক। খবরের কাগজ

বগুড়ায় মরিচ চাষের পরিমাণ কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, কম দামে মরিচ বিক্রি হওয়ায় অনেকেই মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আগামী মৌসুমে আরও কম জমিতে মরিচ চাষ করা হতে পারে। তবে এবার কম জমিতে চাষ হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা রয়েছে। এবার শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ।

বগুড়ার বিখ্যাত লাল মরিচ দেশের ১৭টি বড় ও মাঝারি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে থাকে। এসব মরিচ মূলত সারিয়াকান্দি থেকে আসে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরাঞ্চলের অনেক জায়গায় মরিচের জমিতে এখন ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ হচ্ছে। সারিয়াকান্দিতে কিছু এলাকায় মরিচ চাষ ৫ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বিঘায় ৬ থেকে ৭ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। জমিতে এখনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মরিচ রয়েছে। তিনি জানান, এবার বগুড়ায় শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ। 
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বগুড়ায় ৪৮ হাজার ৫৫৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৬ বিঘায়। প্রায় ৩ হাজার ৩৯৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ করা হয়েছে। যার কারণে শুকনা মরিচ উৎপাদন কমে গেছে ২৮ হাজার মণ। এ বছর ৪২ হাজার ৪৬২ বিঘায় মরিচ চাষ হয়েছে, যা প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।

চাষি মো. শফিউল ইসলাম বুদু (৬২) সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ী এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা ভালোমানের শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। দেশে উৎপাদিত মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে।’ এই কারণে মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া থেকে মরিচ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে এসব প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মরিচ কিনত। এখন তা অনেক কমেছে।

চাষি মো. বিস্কুট বলেন, ‘আগে ধান, পাট, মরিচ ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে মরিচের জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেছি। এ বছর ২৫ শতাংশ জমিতে মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করেছি।’

মো. আবু সাহেদ প্রামাণিক জানান, তার জমির পরিমাণ প্রায় ৪৮ বিঘা। তিনি বলেন, ‘সব খরচ বাদে এক মণ কাঁচা মরিচ বিক্রির পর হাতে থাকে ২৫০-২৬০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না।’ 

এদিকে চরবাটিয়া গ্রামের সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, ‘মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই আমি গত বছরের মতো এবারও কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।’ মরিচ চাষে লাভ কম। তাই কৃষক এখন অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। মরিচের বাজার দর কমে যাওয়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন ভালো থাকায় লক্ষ্য পূরণে সমস্যা হবে না।

নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০ এএম
নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ
ছবি: মেহেদী হাসান, খবরের কাগজ

নড়াইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা এতে ঝুঁকছেন। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎস হিসেবে এর চাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। দিগন্তজোড়া সূর্যমুখী খেতে প্রতিদিন বিকেলে তরুণ-তরুণীরা সেলফি তুলতে ভিড় করছেন।

কৃষক রসময় বিশ্বাস জানান, তিনি ৭০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। সরিষার তুলনায় তিন গুণ লাভ হয়। স্থানীয় বাজারেই তেল ভাঙানোর ব্যবস্থা থাকায় নিজ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত তেল বিক্রি করতে পারছেন।

চাঁচড়ার কৃষক বিল্লাল মোল্যা বলেন, ‘৩৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। শুরুতে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তা ঠিক হয়েছে। সার, কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করায় ভালো ফলনের আশা করছি।’

মিতনা গ্রামের কৃষক গৌতম বিশ্বাস জানান, গত বছর ২৫ শতক জমিতে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর ৪০ শতকে চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ১৩ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো উৎপাদন হবে। প্রতি মণ বীজ ৩ হাজার ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর নড়াইলে ১১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫৬ টন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, ‘কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এর চাষ দিন দিন বাড়ছে।’

আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা
মুন্সীগঞ্জের একটি খেতে আলু তুলছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

মুন্সীগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জমিতে কৃষকরা আলু তুলছেন। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যেই এসেছে স্বস্তির খবর—কম সার ব্যবহার করেও আলুর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি মৌসুমে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য ওঠে এসেছে।

কম সারে সাশ্রয়

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ টন। পরীক্ষামূলকভাবে ৩০০ কৃষকের জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫০ কৃষকের জমিতে তৈরি করা হয় প্রদর্শনী প্লট। এতে শতাংশপ্রতি মাত্র তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচ কেজি করে সার প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, জেলার অন্য কৃষকরা সাধারণত শতাংশপ্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি সার ব্যবহার করেন।

ফলনে তেমন পার্থক্য নেই

পরীক্ষামূলক ফলাফলে দেখা গেছে, কম সার ব্যবহারে আলুর উৎপাদন প্রায় একই রকম হয়েছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে কম সার ব্যবহার করা জমিতে ভালো মানের আলু পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার সুখবাসরপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম ৮০ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়। তিনি জানান, ‘কম সার ব্যবহৃত জমিতে শতাংশপ্রতি সাড়ে তিন মণ আলু পেয়েছি। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি মাত্র সোয়া তিন মণ।’

একই উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহিদা ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তিনি জানান, ‘কম সার দেওয়া জমিতে শতাংশপ্রতি পেয়েছি পৌনে তিন মণ আলু। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি প্রায় তিন মণ।’
বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুরুতে যখন কম সার ব্যবহার করি, তখন অন্য কৃষকরা হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় এখন তারাই আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছে।’

খরচ কমিয়ে লাভের সম্ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে আসছেন। এতে উৎপাদন খরচ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যায়। প্রতি বছর সারের দাম বাড়ায় চাষে খরচও বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। শতাংশপ্রতি তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করেও ভালো আলু উৎপাদন সম্ভব। যেখানে সাধারণ কৃষকরা ব্যবহার করেছেন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ফলাফলে দেখা গেছে, বেশি সার দিলেও ফলনে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কৃষকরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তাহলে এক মৌসুমেই অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকদের লাভও বাড়বে।’

পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ

কম সার ব্যবহার শুধু খরচই কমাবে না, এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী হবে। অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এতে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়। তাই কম সারে ভালো ফলন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে, বেশি সার দিলেই ভালো ফলন হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলেই ভালো উৎপাদন সম্ভব। এবার পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় আগামীতে আরও কৃষক কম সার ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকতে পারেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মুন্সীগঞ্জের এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আলু চাষিদের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দাম কমে যাওয়ায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো। খবরের কাগজ

কিছুদিন আগেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গাছে ঝুলছিল লাল টসটসে টমেটো। চাষিদের মনে ছিল আনন্দ, ভালো ফলনে আসবে সচ্ছলতা। কিন্তু এখন সেই টমেটো তুলতে চাইছেন না তারা। বাজারে দরপতন হওয়ায় ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে দিশেহারা চাষিরা।

হিমাগার নেই, ক্ষতির মুখে কৃষক

কমলগঞ্জ কৃষিনির্ভর এলাকা। কিন্তু এখানে নেই কোনো হিমাগার। ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে পানির দরে ফসল বিক্রি করছেন। নাহলে পচে যাবে কষ্টের ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকদের উৎসাহ কমছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। কেউ কেউ গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সারা বছর টমেটো চাষ করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হতাশ।

বাজারে দাম কম, জমিতেই নষ্ট ফসল

চাষিরা বলছেন, জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বাজারে দর এত কম যে, তা তুলতে গেলে খরচই বেশি পড়ে। শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠছে না। তাই অনেকেই জমিতেই ফেলে রাখছেন ফসল।

মাধবপুর এলাকার চাষি সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ‘টমেটো তুলে, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে তিন থেকে চার টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি পড়ে, লাভ নেই। তাই তুলছি না, জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।’

আগে পাইকাররা মাঠ থেকেই টমেটো কিনতেন। এখন তারা আসছেন না। চাষি কামাল মিয়া বলেন, ‘বিক্রি করে যা পাব, খরচ তার চেয়ে বেশি। তাই তুলছি না। জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

হিমাগারের দাবিতে কৃষকরা

কমলগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাইমুন নামে এক কৃষক বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাপারীরা স্বল্প দামে কিনে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। হিমাগার থাকলে আমরাও সংরক্ষণ করতে পারতাম।’

দাম কমার কারণ কী?

স্থানীয় আড়তদার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস আগেও টমেটো ৮-১০ টাকা কেজি ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকায়। এত কম দামে চাষিরা ক্ষতির মুখে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘যারা আগাম চাষ করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে অন্যান্য সবজি থাকায় দাম কমেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পরের ফসলের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত হিমাগার স্থাপন সম্ভব হবে।’ চাষিরা এখন হিমাগারের আশায় দিন গুনছেন। তারা চান, যেন তাদের কষ্টের ফসল ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। নয়তো তারা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফল মিলন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফল মিলন
পেঁয়াজ বীজের খেত পরিচর্যা করছেন মিলন ইসলাম

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার যুবক মিলন ইসলাম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে হয়ে উঠেছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইউটিউব চ্যানেল ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা মিলন ইসলাম দিনাজপুর কেবিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়েই তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার বীজ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

মিলন ইসলামের প্রচেষ্টায় তার গ্রামে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। একসময় যারা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না, এখন তার কাছ থেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকায় তিনি ‘পেঁয়াজ মিলন’ নামে পরিচিত হয়েছেন।

এ বছর মিলন ইসলাম ১২৫ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। তার প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার শতাধিক কেজি বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি এক একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ পেঁয়াজও উৎপাদিত হবে।

মিলন বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। এখন প্রতিদিন ফুলে হাত বুলিয়ে পরাগায়ন ঘটাতে হয়। মাঝে মাঝে পানি দিতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বীজ হারভেস্ট করা যাবে।’ বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিলের পরেই বীজ বিক্রি করলে প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে।’
এই ১২৫ শতক জমিতে তার খরচ হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে তিনি আশা করছেন, এতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হবে। পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করে পরে উৎপাদন করাও সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক কুমার রায় জানান, ‘মিলন ইসলামের সফলতা দেখে আমিও আগামীতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছি। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

মিলন ইসলাম নিজেই উৎপাদিত বীজ প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করছেন। সিড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বীজ ব্যবস্থাপনা ও বিপণনে তিনি ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘বিরল উপজেলার মাটি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। মিলন কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শতভাগ প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করছেন। বীজ সংরক্ষণকারী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই তার বীজ কিনে নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই পেঁয়াজের বীজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়লে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না।’