
গাইবান্ধায় এবার বিটরুট চাষে এসেছে নতুন এক সম্ভাবনা। বিশেষ করে সদর উপজেলা ও ফুলছিড়ি উপজেলার কৃষকরা প্রথম বিটরুট চাষ শুরু করেছেন। বিটরুট একটি পুষ্টিকর সবজি। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। গাইবান্ধায় কৃষক ফারুকুজ্জামান বিটরুট চাষে সফল হয়ে বদলে দিয়েছেন তার এলাকার অর্থনীতি।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক ফারুকুজ্জামান (৫০) দীর্ঘদিন ধরে কৃষি পেশায় জড়িত। তিনি জানান, প্রথমে বিটরুট চাষের ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। তবে ইউটিউবে চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি সাহসী হন। পরে ২০ শতক জমিতে প্রায় ৭ হাজার চারা রোপণ করেন। এতে সেচ, সার, কীটনাশকসহ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে তার উৎপাদিত বিটরুটগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তিনি ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। ভবিষ্যতে আরও ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন।
বিটরুট চাষে কৃষকদের জন্য লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এক বিঘা জমিতে বিটরুট চাষের খরচ প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। তবে উৎপাদন শেষে প্রায় দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে বিটরুটের দাম প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষকরা।
ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের তুলনায় বিটরুট চাষ অনেক বেশি লাভজনক। ধান বা অন্যান্য ফসলের চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু বিটরুট চাষে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়। এতে তাকে আরও উৎসাহিত করেছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিটরুট একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও লাভজনক সবজি। এটি যদি আরও বেশি চাষ হয়, তবে এর রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কৃষকরা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবে।’
এসকেএস ফাউন্ডেশনের কৃষিবিদ হারুন অর রশিদ জানান, কৃষকরা প্রথমদিকে বিটরুট চাষে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলেন। তবে তাদের উদ্বুদ্ধ করে চাষের নিয়মকানুন শেখানো হয়েছে। বিটরুট চাষে তেমন কোনো রোগ বা পোকামাকড় আক্রমণ হয় না। এটি সহজেই উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া উৎপাদিত বিটরুট সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। এটি কৃষকদের লাভ বাড়াতে সহায়ক হবে।
বিটরুট চাষের পদ্ধতি সহজ। এতে রোগবালাই কম হওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত উৎসাহী। বিটরুট গাছ পালং শাকের মতো দেখতে হলেও এর রং এবং গাছের গোড়া মুলার মতো হয়। বিটরুট বীজ রোপণের ৭০-৯০ দিনের মধ্যে মাটির নিচে ফলন হয়। এক একটি বিটরুট গড়ে ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের হয়। এক একর জমি থেকে প্রায় এক টন বিটরুট উৎপাদন হতে পারে।
গাইবান্ধার স্থানীয় বাজারে বিটরুটের চাহিদা বাড়ছে। বহু লোক বিভিন্ন এলাকা থেকে বিটরুট কিনতে আসছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিটরুট বিক্রি করতে পারছেন। এতে তাদের মুনাফা বাড়ছে।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ফাউন্ডেশন কৃষকদের বিটরুট চাষে সাহায্য করছে। এতে কৃষকরা দ্রুত উৎপাদন করে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে বিটরুটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি লাভজনক হয়ে উঠেছে।’
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিটরুট চাষের উদ্যোগটি সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা নতুন ধরনের ফসল চাষ করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এটি তাদের আয় বাড়াবে।