
আসন্ন বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর গোলাপ চাষিরা স্বপ্ন বুনছেন। ইতোমধ্যে গোলাপ ফুলের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে বলে চাষিরা আশা করছেন। মাত্র তিন দিন আগেও যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকায়। ওই গোলাপ এখন ৭-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গদখালীর ফুলের মোকামে আসা হাঁড়িয়া গ্রামের কৃষক সোবাহান মোল্লা বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। আগে ফুলের তেমন দাম পাইনি। ৩ থেকে ৪ টাকায় প্রতি পিস ফুল বিক্রি করতে হয়েছে। এখন একটু দাম বেড়েছে। বাজারে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পিস ফুল এনেছি। ৮ টাকা পিস ধরে গোলাপ বিক্রি করেছি। এবার অতিবৃষ্টির কারণে খুব বেশি লাভ হবে না। তবে সামনে দুই-এক দিন আরও দাম বাড়বে।’
আরেক চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যে গোলাপ ৩ থেকে ৫ পাঁচ টাকা দরে গত চার দিন আগে বিক্রি করেছি; ওই গোলাপ এখন ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফুলেরও দাম বেড়েছে। এখন জারবেরা প্রতি পিস বিক্রি করছি ১০ থেকে ১৫ টাকায় ও চন্দ্রমল্লিকা ৩ টাকায়। আশা করছি, আগামী চার দিন আরও ভালো দাম পাব।’
আকবর হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘গোলাপের দাম মূলত সাইজ, রং ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে। প্রথম দিকে গোলাপের দাম বেশ কম পাচ্ছিলাম। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ছে। খেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামীতে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে গদখালীর টাওরা গ্রামের ফুলচাষি কামাল সরকার বলেন, ‘আমার কাছে যে চায়না গোলাপ রয়েছে, তার দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা। দেখতে সুন্দর ও বেশ কয়েক দিন রাখা যায় বলেই এর দাম বেশি। ২৫ কাঠা জমিতে রয়েছে চায়না গোলাপ। আশা করছি, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই গোলাপের দাম ৩০ টাকার বেশি পাব।’
উৎসবের বাজার ধরতে গোলাপের কলিতে ক্যাপ
বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। ফুল চাষিরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলাপ ফুল বিক্রি করে বাড়তি টাকা রোজগার করেন। তবে মাঘেও শীত নেই। অনুভূত হচ্ছে গরম। এই গরমে ফুল সময়ের আগেই ফুটে যাচ্ছে। তাই দ্রুত ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুলচাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে ফুল চাষিরা তাদের ফুল সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন ক্যাপ। যাতে আগাম ফুল ঝরে না পড়ে সেজন্য ফুলের কলি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ফুল কাটা হবে। কিছু ফুল কাটা হবে বসন্তের দিন সকালে। আগাম ফুল কেটে রাখলে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এর চাহিদা যেমন থাকে না, তেমনি দামও পাওয়া যায় না। এজন্য যেন কলি না ফোটে এবং পাতা ঝরে না পড়ে সেজন্য তারা কলিতে ক্যাপ পরিয়ে দেন।
পানিসারা এলাকার নীলকণ্ঠ নগরের ফুলচাষি ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। ফুল ফুটেছে অনেক। তবে এখন ফুল কাটলে দাম বেশি পাব না। তাই ফুলের কলিতে ক্যাপ পরিয়ে রাখছি।
তিনি আরও বলেন, আগে আমরা রাবার দিয়ে কলি বেঁধে রাখতাম। এতে করে ফুলের পাতা নষ্ট হয়ে যেত। এ কারণে ক্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছি। বিক্রি করার আগ পর্যন্ত কলিতে ক্যাপ পরানো থাকে। এতে ফুলের পাতা যেমন ঝরে পড়ে না, তেমনি ফুল নষ্টও হয় না। কয়েক বছর বছর ধরে তিনি ও এ এলাকার চাষিরা এভাবে ফুলের কলিতে ক্যাপ পরিয়ে রাখছেন বলে জানান।’
ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, চলতি মৌসুমে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসন্ন বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয় এবং এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। আসন্ন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্যাপক ফুল বিক্রি হলে চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।