ঢাকা ১৪ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১

কুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
কুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি
ছবি: সংগৃহীত

ধামরাইয়ের সূতিপাড়া ইউনিয়নের সিন্ধুলিয়া গ্রামে আবুল হোসেন কুল চাষ করে সফল হয়েছেন। ৬০ শতক জমিতে কুল চাষ করে তিনি অল্প খরচে ভালো লাভ পাচ্ছেন। প্রতি কেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। আবুল হোসেনকে অনুসরণ করে অনেক যুবক কুল চাষ শুরু করেছেন। কুল চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। স্থানীয় বাজারে কুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধামরাইয়ে কুল চাষ লাভজনক।  

আবুল হোসেন বলেন, ‘যখন কুল চাষ শুরু করি, তখন চিন্তা ছিল, ফলন কেমন হবে? তবে এখন বুঝতে পারছি, এটি খুবই লাভজনক।’ তিনি কুলের আপেল জাত ও কাশ্মীরি জাতের গাছ লাগিয়েছেন। তবে বেশির ভাগই আপেল কুল গাছ। প্রতিটি গাছে প্রচুর কুল ধরেছে। তা দেখে তিনি অনেক খুশি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কিছু কুল বাজারে বিক্রি করছি, দামও ভালো পাচ্ছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইউটিউব দেখে কুল চাষের অনেক কিছু শিখেছি। ৬০ শতক জমিতে কুল চাষ করতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হবে।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অনেক শিক্ষিত যুবক কুল চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। তারাও কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’

কুল ব্যবসায়ী কালু মিয়া বলেন, ‘একটি কুল বাগান কিনে বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করা যায়। আবুল হোসেনের বাগান দেখে অন্যান্য গ্রামের অনেকেই কুল চাষ শুরু করেছেন। কুল চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি।’ 

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কুল লাভজনক ফল। কুল চাষে খরচ কম এবং ফলন ভালো। এটি শীতের ফল হিসেবে বাজারে চাহিদা অনেক। ধামরাইর কৃষকরা সহজেই কুল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠাতে পারেন।’

পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা
ছবি: খবরের কাগজ

একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পান চাষ ছিল লাভজনক ও জনপ্রিয়। কৃষকরা এতে সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনার অভাবে পান চাষ কমে যাচ্ছে।

একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে সরকারি সহায়তার অভাবে চাষিরা পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নে বহু পরিবার প্রাচীনকাল থেকে পান চাষ করত। এখানকার পান স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় এবং চাহিদাও ছিল বেশি। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে এই চাষ আবারও লাভজনক হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। 

একসময় উপজেলার শ্রীঘর, শাহবাজপুর ও শ্যামগ্রামে ৪০-৪৫টি বরজ থাকলেও বর্তমানে তা কমে মাত্র সাত থেকে আটটিতে নেমে এসেছে। যারা পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখেছেন, তারাও আগ্রহ হারাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, একসময় এ অঞ্চলে পান চাষে ব্যাপক আগ্রহ ছিল, কিন্তু এখন মাত্র সাত থেকে আট বিঘা জমিতে কিছু চাষি পান চাষ করছেন। তারা মনে করেন, সরকার সহায়তা দিলে পান চাষ আবারও বিস্তৃত হতে পারে।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখলেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পানের বরজ তৈরি করে ভালো ফলন পেলেও কীটনাশক ও সার ব্যবহারে রোগ ঠেকাতে পারছেন না। সমস্যা দেখা দিলে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও ঔষধ বিক্রেতাদের পরামর্শে ব্যবস্থা নিতে হয়। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। ফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে তারা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।

স্থানীয় পান চাষি মিলন দত্ত বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও পান চাষিরা কিছুই পান না। কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে চাষিরা আগ্রহ হারাত না। ঝড়-বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্য ফসলের ক্ষতি হলে সরকার সহায়তা দেয়, কিন্তু পান বরজ নষ্ট হলে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। এভাবে চললে ভবিষ্যতে কেউ পান চাষ করবে না।’

ধর্মীয় উৎসব ও বিয়ে-শাদিতে পানের ব্যবহার প্রচলিত। যুগের পরিবর্তনে অনেক কিছুর চাহিদা কমলেও পান এখনো জনপ্রিয়। তাই পানচাষিদের টিকিয়ে রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—এটাই সবার প্রত্যাশা।

নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকা ছাড়া পানচাষের ওপর কৃষি বিভাগের কার্যক্রম নেই। তবে চাষিরা পরামর্শ চাইলে সহায়তা দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সহায়তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’

বগুড়ায় কমছে মরিচের চাষ

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
বগুড়ায় কমছে মরিচের চাষ
রোদে মরিচ শুকানোর কাজ করছেন এক শ্রমিক। খবরের কাগজ

বগুড়ায় মরিচ চাষের পরিমাণ কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, কম দামে মরিচ বিক্রি হওয়ায় অনেকেই মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আগামী মৌসুমে আরও কম জমিতে মরিচ চাষ করা হতে পারে। তবে এবার কম জমিতে চাষ হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা রয়েছে। এবার শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ।

বগুড়ার বিখ্যাত লাল মরিচ দেশের ১৭টি বড় ও মাঝারি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে থাকে। এসব মরিচ মূলত সারিয়াকান্দি থেকে আসে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরাঞ্চলের অনেক জায়গায় মরিচের জমিতে এখন ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ হচ্ছে। সারিয়াকান্দিতে কিছু এলাকায় মরিচ চাষ ৫ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বিঘায় ৬ থেকে ৭ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। জমিতে এখনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মরিচ রয়েছে। তিনি জানান, এবার বগুড়ায় শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ। 
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বগুড়ায় ৪৮ হাজার ৫৫৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৬ বিঘায়। প্রায় ৩ হাজার ৩৯৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ করা হয়েছে। যার কারণে শুকনা মরিচ উৎপাদন কমে গেছে ২৮ হাজার মণ। এ বছর ৪২ হাজার ৪৬২ বিঘায় মরিচ চাষ হয়েছে, যা প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।

চাষি মো. শফিউল ইসলাম বুদু (৬২) সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ী এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা ভালোমানের শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। দেশে উৎপাদিত মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে।’ এই কারণে মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া থেকে মরিচ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে এসব প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মরিচ কিনত। এখন তা অনেক কমেছে।

চাষি মো. বিস্কুট বলেন, ‘আগে ধান, পাট, মরিচ ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে মরিচের জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেছি। এ বছর ২৫ শতাংশ জমিতে মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করেছি।’

মো. আবু সাহেদ প্রামাণিক জানান, তার জমির পরিমাণ প্রায় ৪৮ বিঘা। তিনি বলেন, ‘সব খরচ বাদে এক মণ কাঁচা মরিচ বিক্রির পর হাতে থাকে ২৫০-২৬০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না।’ 

এদিকে চরবাটিয়া গ্রামের সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, ‘মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই আমি গত বছরের মতো এবারও কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।’ মরিচ চাষে লাভ কম। তাই কৃষক এখন অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। মরিচের বাজার দর কমে যাওয়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন ভালো থাকায় লক্ষ্য পূরণে সমস্যা হবে না।

নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০ এএম
নড়াইলে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুল চাষ
ছবি: মেহেদী হাসান, খবরের কাগজ

নড়াইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা এতে ঝুঁকছেন। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎস হিসেবে এর চাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। দিগন্তজোড়া সূর্যমুখী খেতে প্রতিদিন বিকেলে তরুণ-তরুণীরা সেলফি তুলতে ভিড় করছেন।

কৃষক রসময় বিশ্বাস জানান, তিনি ৭০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। সরিষার তুলনায় তিন গুণ লাভ হয়। স্থানীয় বাজারেই তেল ভাঙানোর ব্যবস্থা থাকায় নিজ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত তেল বিক্রি করতে পারছেন।

চাঁচড়ার কৃষক বিল্লাল মোল্যা বলেন, ‘৩৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। শুরুতে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তা ঠিক হয়েছে। সার, কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করায় ভালো ফলনের আশা করছি।’

মিতনা গ্রামের কৃষক গৌতম বিশ্বাস জানান, গত বছর ২৫ শতক জমিতে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর ৪০ শতকে চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ১৩ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো উৎপাদন হবে। প্রতি মণ বীজ ৩ হাজার ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর নড়াইলে ১১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫৬ টন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, ‘কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এর চাষ দিন দিন বাড়ছে।’

আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা
মুন্সীগঞ্জের একটি খেতে আলু তুলছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

মুন্সীগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জমিতে কৃষকরা আলু তুলছেন। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যেই এসেছে স্বস্তির খবর—কম সার ব্যবহার করেও আলুর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি মৌসুমে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য ওঠে এসেছে।

কম সারে সাশ্রয়

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ টন। পরীক্ষামূলকভাবে ৩০০ কৃষকের জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫০ কৃষকের জমিতে তৈরি করা হয় প্রদর্শনী প্লট। এতে শতাংশপ্রতি মাত্র তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচ কেজি করে সার প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, জেলার অন্য কৃষকরা সাধারণত শতাংশপ্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি সার ব্যবহার করেন।

ফলনে তেমন পার্থক্য নেই

পরীক্ষামূলক ফলাফলে দেখা গেছে, কম সার ব্যবহারে আলুর উৎপাদন প্রায় একই রকম হয়েছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে কম সার ব্যবহার করা জমিতে ভালো মানের আলু পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার সুখবাসরপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম ৮০ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়। তিনি জানান, ‘কম সার ব্যবহৃত জমিতে শতাংশপ্রতি সাড়ে তিন মণ আলু পেয়েছি। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি মাত্র সোয়া তিন মণ।’

একই উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহিদা ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তিনি জানান, ‘কম সার দেওয়া জমিতে শতাংশপ্রতি পেয়েছি পৌনে তিন মণ আলু। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি প্রায় তিন মণ।’
বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুরুতে যখন কম সার ব্যবহার করি, তখন অন্য কৃষকরা হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় এখন তারাই আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছে।’

খরচ কমিয়ে লাভের সম্ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে আসছেন। এতে উৎপাদন খরচ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যায়। প্রতি বছর সারের দাম বাড়ায় চাষে খরচও বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। শতাংশপ্রতি তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করেও ভালো আলু উৎপাদন সম্ভব। যেখানে সাধারণ কৃষকরা ব্যবহার করেছেন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ফলাফলে দেখা গেছে, বেশি সার দিলেও ফলনে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কৃষকরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তাহলে এক মৌসুমেই অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকদের লাভও বাড়বে।’

পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ

কম সার ব্যবহার শুধু খরচই কমাবে না, এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী হবে। অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এতে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়। তাই কম সারে ভালো ফলন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে, বেশি সার দিলেই ভালো ফলন হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলেই ভালো উৎপাদন সম্ভব। এবার পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় আগামীতে আরও কৃষক কম সার ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকতে পারেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মুন্সীগঞ্জের এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আলু চাষিদের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দাম কমে যাওয়ায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো। খবরের কাগজ

কিছুদিন আগেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গাছে ঝুলছিল লাল টসটসে টমেটো। চাষিদের মনে ছিল আনন্দ, ভালো ফলনে আসবে সচ্ছলতা। কিন্তু এখন সেই টমেটো তুলতে চাইছেন না তারা। বাজারে দরপতন হওয়ায় ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে দিশেহারা চাষিরা।

হিমাগার নেই, ক্ষতির মুখে কৃষক

কমলগঞ্জ কৃষিনির্ভর এলাকা। কিন্তু এখানে নেই কোনো হিমাগার। ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে পানির দরে ফসল বিক্রি করছেন। নাহলে পচে যাবে কষ্টের ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকদের উৎসাহ কমছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। কেউ কেউ গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সারা বছর টমেটো চাষ করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হতাশ।

বাজারে দাম কম, জমিতেই নষ্ট ফসল

চাষিরা বলছেন, জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বাজারে দর এত কম যে, তা তুলতে গেলে খরচই বেশি পড়ে। শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠছে না। তাই অনেকেই জমিতেই ফেলে রাখছেন ফসল।

মাধবপুর এলাকার চাষি সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ‘টমেটো তুলে, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে তিন থেকে চার টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি পড়ে, লাভ নেই। তাই তুলছি না, জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।’

আগে পাইকাররা মাঠ থেকেই টমেটো কিনতেন। এখন তারা আসছেন না। চাষি কামাল মিয়া বলেন, ‘বিক্রি করে যা পাব, খরচ তার চেয়ে বেশি। তাই তুলছি না। জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

হিমাগারের দাবিতে কৃষকরা

কমলগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাইমুন নামে এক কৃষক বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাপারীরা স্বল্প দামে কিনে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। হিমাগার থাকলে আমরাও সংরক্ষণ করতে পারতাম।’

দাম কমার কারণ কী?

স্থানীয় আড়তদার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস আগেও টমেটো ৮-১০ টাকা কেজি ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকায়। এত কম দামে চাষিরা ক্ষতির মুখে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘যারা আগাম চাষ করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে অন্যান্য সবজি থাকায় দাম কমেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পরের ফসলের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত হিমাগার স্থাপন সম্ভব হবে।’ চাষিরা এখন হিমাগারের আশায় দিন গুনছেন। তারা চান, যেন তাদের কষ্টের ফসল ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। নয়তো তারা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।