
সুনামগঞ্জে দেশি হাঁসের খামার করে দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তরুণরা। একসময় যাদের পরিবার কৃষিকাজ করে কোনোরকমে জীবন কাটাত। তারা এখন মাস শেষে লাখ টাকা উপার্জন করছেন। এই খামারে তাদের দিন বদল হয়েছে। খবর বাসসের।
সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন (৪২) প্রথম সফল হন হাঁসের খামার শুরু করে। তার দেখাদেখি এখন অনেক তরুণ হাঁসের খামারি হয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
মনোয়ারের পরিবারের ১৩ বিঘা কৃষিজমি ছিল। তাতে কোনোরকমে সংসার চলত। তিনি কৃষিকাজে বাবাকে সহায়তা করতেন, তবে বেকার ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ৩৩ হাজার টাকা দিয়ে ১২৫টি হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেন। পাঁচ মাস পর প্রথম ১০৯টি হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মনোয়ারকে।
বর্তমানে তার খামারে এক হাজার হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৭০০ হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১১ হাজার ২৫০ টাকা আয় হয়। মাসে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। খামারের খরচ, খাবার, ওষুধসহ মোট মাসিক খরচ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি চার কর্মীকে মাসিক বেতন দেন।
এই আয় থেকে তিনি কৃষিজমি কিনেছেন। তার বাবার ১৩ বিঘা জমির পাশাপাশি এখন তার কাছে ২৪ বিঘা জমি রয়েছে। ছোট ভাইয়েরাও এখন স্বাবলম্বী। এক ভাই গরু পালন করেন, অন্য ভাই কৃষিকাজে সম্পৃক্ত। মনোয়ারের পরিশ্রম এবং সফলতার ফলে তার পরিবার সুখী।
তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে, মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে। হাঁসের খামারের আয়ে তিনি পরিবারের চিকিৎসা, খরচ ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা খরচ পূরণ করছেন।
মনোয়ার বলেন, ‘এ বছরের এপ্রিলের শেষে হাঁসগুলো বিক্রি করব। তারপর মে মাসে নতুন বাচ্চা কিনব। পাঁচ-ছয় মাস পর তারা ডিম দেবে’। এভাবে হাঁসের খামারের আয় থেকে চলবেন। তিনি জানালেন, চট্টগ্রামের দুই-তিনটি কোম্পানি এপ্রিলের শেষের দিকে তার হাঁস কিনে নেবে।
মনোয়ারের খামার দেখে তার চাচাতো ভাই ফয়সল আহমদও হাঁসের খামার শুরু করেন ২০১৫ সালে। প্রথমে তেমন লাভ না হলেও, মনোয়ারের পরামর্শে ফয়সল এখন সফল খামারি। তার খামারে সাড়ে ৪০০ হাঁস রয়েছে। ওই হাঁসগুলো ডিম দেয়।
ফয়সল বলেন, ‘আমার বাবা পাওয়ার টিলার মেকানিক। এখন হাঁসের খামারের মাধ্যমে আমরা স্বাবলম্বী। বাবাকে আর কাজ করতে হয় না।’
হাওর অঞ্চলে হাঁসের খামার স্থাপন করা হয়েছে। মনোয়ার ও ফয়সল তাদের হাঁস হাওর থেকে নিয়ে খামারে
এনে রাখেন। হাওরের মাছ ধরা শেষ হলে হাঁসের খামার সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মনোয়ার হোসেন সফল ও অভিজ্ঞ হাঁসের খামারি। জেলায় প্রায় ২ হাজার ৮০০ হাঁসের খামার রয়েছে। যেখান থেকে বছরে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ডিম উৎপাদিত হয়।’