
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. শামসুজ্জামান পেয়ারা চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন। তার সাত বিঘা জমিতে রয়েছে ১ হাজার ২০০ পেয়ারাগাছ। কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। এ কাজের মাধ্যমে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কৃষির মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবন মান উন্নত করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
শামসুজ্জামানের বাবা মো. ইউসুফ আলী বিশ্বাস চাষাবাদে অভিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর চাষাবাদ করেছি। তবে শামসুজ্জামান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে পেয়ারা চাষ শুরু করে, তখন কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে যখন তার বাগান দেখিয়ে সফলতার গল্প বলল, তখন ভীষণ ভালো লাগল।’
শামসুজ্জামান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার একটি পেয়ারা ও ড্রাগন বাগান দেখে মুগ্ধ হন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজে চাষাবাদ শুরু করবেন। প্রথমে পরিত্যক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক পেয়ারা চাষ শুরু করেন। পরে সেটি বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে তার সাত বিঘা জমিতে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ পেয়ারাগাছ। সঙ্গে আরও ৭০০ লেবুগাছ রয়েছে, যদিও এখনো সেগুলোতে ফল ধরেনি।
শামসুজ্জামান তার বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করার পর আরও কয়েকটি প্রজাতির ফল চাষ করেন; যেমন মাল্টা, হলুদ কমলা ও বাতাবি লেবু। তার বাগানে এমন কিছু ফল রয়েছে, যা কৃষি বাজারে বেশ চাহিদাসম্পন্ন। চাষাবাদে সফলতা এসেছে, যার ফলে অনেক তরুণের জীবনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, পরিচর্যা, মজুরি ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। উৎপাদন বাড়াতে তিনি নিজের হাতে কম্পোস্ট সার তৈরি করেন। শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজেই কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি শিখেছি, তা প্রয়োগ করি। ২০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করা কম্পোস্ট সার সাত বিঘা জমিতে প্রয়োগ করা যায়। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমে যায়।’ কম্পোস্ট সারের ব্যবহার ফলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলের পুষ্টিগুণও ঠিক থাকে।
প্রতিদিন বাগানে চারজন শ্রমিক কাজ করেন। তবে ফল সংগ্রহ ও প্রুনিং করার সময় শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়ে। গড়ে প্রতি মাসে ১২০ জন শ্রমিক কর্মসংস্থানে নিয়োজিত থাকেন। এই কাজের মাধ্যমে এলাকার অনেক বেকার যুবকও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা, সেচ দেওয়া ও প্রুনিংয়ের কাজ করে সাকিব, শাহিন ও সুমন মিয়া। তারা বলেন, ‘এখানে কাজ করে ভালো আয় হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাশোনা করি।’
শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমি জমি বর্গা দিয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে পারতাম। কিন্তু আমি কাজ শুরু করেছি এবং অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি, এটাই আমার সাফল্য।’
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী শামসুজ্জামানকে নিয়ে বলেন, ‘শামসুজ্জামান একজন উদ্যমী উদ্যোক্তা। সাত-আট বছর ধরে পেয়ারা চাষ করছেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দিয়েছি। তাকে কম্পোস্ট সার উৎপাদন, চারার পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শামসুজ্জামানের মতো বেশ কয়েকজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফসল উৎপাদন করছেন।’
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘কৃষকদের উৎপাদিত ফল বিক্রির জন্য এখন কোটচাঁদপুর উপজেলায় একটি বড় পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা এখান থেকে পেয়ারা, ড্রাগন, মাল্টাসহ অন্যান্য ফল কেনেন।’