
বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার পর নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরিষা চাষ করেছেন। এ বছর সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে হয়েছে। উপজেলায় সরিষার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৫ হেক্টর জমি। কিন্তু কৃষকরা চাষ করেছেন প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে।
এবার সরিষার ফলন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অতিরিক্ত যত্ন, সার প্রয়োগ, উন্নত বীজ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন। সরিষা চাষের খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিগন্তজুড়ে সরিষার খেত দেখা যাচ্ছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, সরিষা চাষে খরচ অনেক কম। এই চাষে বেশি সেচ বা সার প্রয়োজন হয় না। বাউসী ইউনিয়নের কৃষক সুনীল সাহা বলেন, ‘গত বন্যায় ধান তলিয়ে গিয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এবার ধানের জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এতে খরচ কম, লাভ বেশি।’
সদর ইউনিয়নের কৃষক চন্দন সরকার জানান, এ বছর সরিষার উৎপাদন বেশি হয়েছে। যারা সরিষা চাষ করেছেন, তারা ভালো লাভবান হয়েছেন। এর ফলে, স্থানীয় ক্রেতারা সরিষার তেল সয়াবিন তেলের তুলনায় কম দামে কিনতে পারবেন। তিনি আরও জানান, এতে ভেজাল তেল কম বিক্রি হবে। বদহজম, পেটের সমস্যাও কমবে।
সিংধা ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরিষার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সয়াবিন তেলের ব্যবহার কমবে। সরিষা থেকে পাওয়া খৈল গরু ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এতে লাভের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে এ বছর ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে, বিনা-৪, বারি-১৪, বারি-১৭ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই শ কৃষককে সরিষার উন্নত বীজ, ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার দেওয়া হয়েছে।
এ সব সুবিধার কারণে এ বছর অনেক বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকরা এখন নিজের পরিবারের তেলের চাহিদা পূরণ করে, বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, ‘এ বছর ৬৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু কৃষকরা ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। ফলে, প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খরচ কম ও পরিশ্রমও কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহযোগিতা দিচ্ছে। এ বছর ভালো ফলনের আশা করছি।’