
সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য যেমন মানুষের মন আকৃষ্ট করে, তেমনি তার বীজ থেকে উৎপন্ন তেলও অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষ করে খাবার তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে চাষিরা সাফল্য পাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামে দুই ভাইবোন মনির সরকার ও ঝর্না বেগম। দুই বছর ধরে এই ফুলের চাষ করছেন তারা। তাদের এই সফল উদ্যোগে এলাকার অন্য কৃষকদের মধ্যে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
মনির সরকার বলেন, ‘আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্রিপ) প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছি। বাগানে ফুল আসায় এখন অনেক দর্শনার্থী আসেন ছবি তোলার জন্য। আমাদের বাগানের বীজ তেল হিসেবে বাজারজাত হবে। আগামী বছর আরও জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।’
চাষি মনির ও ঝর্নার সফলতার পর উপজেলায় এখন সূর্যমুখী ফুলের চাষে উৎসাহ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নবীনগর উপজেলায় ৫০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বীজের সংকট থাকলে ১০০ বিঘা জমিতে চাষ হতে পারত। কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর উপজেলায় ৬ থেকে ৮ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হতে পারে।
এ ছাড়া লাউর ফতেহপুর ছাড়াও শিবপুর, শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ২৭৫ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায়, ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় চাষিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে সার, বীজ ও নগদ অর্থ। এক বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল ছাড়াও খৈল উৎপাদিত হবে। যেটা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অবশিষ্ট গাছগুলো জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। চাষিরা জানান, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়। তবে তারা আশা করছেন, ধান চাষের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, সূর্যমুখী সাধারণত সব ধরনের মাটিতেই জন্মায়। তবে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। ৯০-১১০ দিনের মধ্যে এ ফসল তোলা যায়। সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড রয়েছে। যেটা হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।’
সূর্যমুখী চাষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক ও নগদ অর্থ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে আগামীতে উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। যেটা স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।