
নাটোরের লালপুর উপজেলায় বিস্তীর্ণ পদ্মার চরে শুরু হয়েছে ঢেমশির চাষ। সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগে এটিই প্রথম ঢেমশি চাষ। যেটি কৃষকদের মধ্যে নতুন এক আশা তৈরি করেছে। নব্বইয়ের দশকে এ অঞ্চলে ঢেমশির চাষ হতো। তবে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো এর চাষ হচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢেমশি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। পাশাপাশি এর ব্যাপক পুষ্টিগুণ রয়েছে। স্থানীয় কৃষক মুনতাজ আলী জানান, তিনি চলতি মৌসুমে পদ্মা নদীর চরে ৩৩ শতাংশ জমিতে ঢেমশি চাষ করেছেন। তার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা হলেও, বাজারে প্রতি মণ ঢেমশির দাম ৬-৮ হাজার টাকা। এতে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভের প্রত্যাশা করছেন।
ঢেমশি একটি বহুমাত্রিক দানাদার খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এর বীজ ত্রিকোণাকার এবং ইংরেজি নাম ‘বাকহুইট’। ঢেমশি থেকে গমের মতো আটা পাওয়া যায়। ঢেমশি ফুল থেকে উন্নত মধুও সংগ্রহ করা সম্ভব। ফুল আসার আগে ঢেমশির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। যেটি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
ঢেমশি চাষে কম পরিমাণে সার বা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। এতে খরচ কম ও ফসলটি উচ্চপুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। প্রতিবছর কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ঢেমশির বীজ বুনে ৯০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।
ঢেমশিতে শর্করা, আমিষ, ফ্যাট, ডায়েটারি ফাইবার ও নানা খনিজ উপাদান রয়েছে। এতে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬, বি১২ ও সেলেনিয়ামও রয়েছে, যেটি শরীরের নানা উপকারে আসে। এর পুষ্টিগুণ ভাতের চেয়ে অনেক বেশি। ঢেমশি রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ঢেমশিতে বেশি পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, জিংক রয়েছে, যা শিশুর স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুর মায়ের জন্যও উপকারী। ঢেমশির আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। এটি হৃদরোগী ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাদ্য।
এ ছাড়া ঢেমশি ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। হাড় ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। বয়সভেদে সব ধরনের মানুষের জন্য এটি উপকারী। শর্করা কম থাকা এবং ফাইবার বেশি থাকার কারণে, এটি রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
সদর উপজেলার কৃষক দুলাল ও অলোক সান্যাল জানান, নব্বইয়ের দশকে তারা ঢেমশি ও কাউন চাষ করতেন। তাদের মতে, ঢেমশি শাক ও বীজের আটা নানা খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। তারা মনে করেন, একবার বীজ পেলে তারা আবারও ঢেমশি চাষ করবেন।
লালপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢেমশি চাষের ৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসে। ফুল আসার আগে ঢেমশি পুষ্টিকর শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এটি একটু টকস্বাদযুক্ত। ফুল আসার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফসল পরিপক্ব হলে কাটা যায়। সাধারণত ভাত বা চালের মতো ভেজেও খাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢেমশির ফুল থেকে পৃথিবীর সেরা মধু উৎপন্ন হয়। ভবিষ্যতে ঢেমশি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’