ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

সিলেটে তরমুজের দাম আকাশছোঁয়া

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
সিলেটে তরমুজের দাম আকাশছোঁয়া
খেত থেকে নিয়ে আসা তরমুজ, গাড়ি থেকে নামিয়ে দোকানে রাখছে শিশুরা। ছবিটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি ফলের আড়তের সামনে থেকে তুলেছেন মামুন হোসেন

এবার রোজার প্রথম দিন থেকেই সিলেটে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। তাই ইফতারে তরমুজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারেও রয়েছে প্রচুর তরমুজ। কিন্তু চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের তরমুজ কেনা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদীনামার্কেট, আখালিয়া, টুকেরবাজার, রিকাবিবাজার, উপশহর, মেন্দিবাগ পয়েন্ট, শিবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার সয়লাব তরমুজে। এসব এলাকায় আগে যারা সবজি বিক্রি করতেন তারাই এখন তরমুজ বিক্রি করছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তরমুজের জোগান থাকলেও চড়া দাম হাঁকান বিক্রেতারা। তাই কেউ কেউ দরদাম করে তরমুজ কিনছেন, আবার অনেকে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।

সিলেটের কদমতলী এলাকায় ফলের আড়তে গিয়েও দেখা যায় প্রচুর তরমুজ আছে। বেশ কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি সাইজের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। বড় সাইজের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকায়। ওই হিসাবে মাঝারি সাইজের প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। বড় সাইজের এক পিস তরমুজের দাম পড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে ক্রেতাদের একটি ছোট সাইজের তরমুজ কিনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের তরমুজের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বড় সাইজের তরমুজের দাম রাখা হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

গরমের কারণে সবাই ইফতারে এক টুকরো তরমুজ রাখতে চান। তাই সুযোগ বুঝে খুচরা বিক্রেতারা তরমুজের চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার তানভীর আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘রমজানের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সিলেট নগরীতে তরমুজের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এখন তরমুজের সিজন শুরু হয়েছে। তাই তুলনামূলক দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু এখন ছোট সাইজের একটি তরমুজ কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকায়। তাই এ ব্যাপারে খুচরা বাজারে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা দরকার।’ 

সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আফজল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সারা শহরে যেদিকে তাকাই শুধু তরমুজ আর তরমুজ। কোনো জিনিস বাজারে বেশি থাকলে তার দাম কম থাকার কথা। কিন্তু এই রমজানে সিলেটে তরমুজের বাজারে হয়েছে উল্টো। বাজারে তরমুজ যেমন বেশি দামও তেমন বেশি। একটি বড় সাইজের তরমুজ দাম চাচ্ছে ৮০০ টাকা। আবার ছোট তরমুজ নিলে আমার হবে না কারণ আমার পরিবারে সদস্য বেশি। তাই আর তরমুজ কিনিনি।’

এদিকে তরমুজের চাহিদা অনুযায়ী জোগান থাকার পরও কেন তরমুজ চড়া দামে বিক্রি করছেন এ প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা। বেশ কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ‘দাম কেন বেশি বলা যাবে না। এই দামে তরমুজ নিতে পারলে আসেন।’

সিলেট বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরিফ মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রথম রমজান থেকে সয়াবিন তেল নিয়ে বাজার মনিটরিংয়ে ছিলাম। এরপর লেবু নিয়ে কাজ করেছি। তরমুজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। তবে এখন যেহেতু জেনেছি। এ বিষয়ে আমরা বাজার মনিটরিং করব।’

হাওরপারে চলছে ধান তোলার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
হাওরপারে চলছে ধান তোলার প্রস্তুতি
মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাদিপুর এলাকার একটি ধান মাড়াইয়ের খলায় বোরো ধান সেদ্ধ করছেন কিষানি। খবরের কাগজ

শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত বোরো ধান এখন গোলায় তোলার প্রস্তুতি চলছে। হাওরের বুক জুড়ে এই ব্যস্ততা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানির অবসরের সময় নেই। কেউ ধান কাটছেন। কেউ ওই ধান কাঁধে বা মাথায় বয়ে আনছেন। অন্যদিকে চলছে ধান মাড়াই। সঙ্গে ধান সেদ্ধ ও শুকানোর কাজ। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামে।  

গত রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে কাউয়াদীঘি হাওরের বানেশ্রী, রায়পুর, জুমাপুর ও কাদিপুর এলাকায় দেখা যায়, ফসল তোলার মহোৎসব। সেদ্ধ ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে।  

স্থানীয়রা জানান, হাওরের বুকে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ধান মাড়াইয়ের খলা। চাষিরা ধান কেটে নিয়ে আসেন নিজ নিজ খলায়। এখানেই মাড়াই, সেদ্ধ, শুকানো ও চাল তৈরির কাজ চলে। পরে ওই চাল নিয়ে যান বাড়িতে।  

কাদিপুরের এক খলায় দেখা গেল কিষানি সুমতী দাশ ধান সেদ্ধ করছেন। বয়স চল্লিশের মতো। তিনটি বড় পাতিলে ধান রেখেছেন। পানি মেপে ঢালছেন। একটু পর ওই ধান সেদ্ধ হবে। সুমতী দাশ বলেন, ‘আগে মা-দাদিরা মাটির হাঁড়িতে ধান সেদ্ধ করতেন। এখন আমরা সিলভার পাতিলে সেদ্ধ করি। লোহার দণ্ড দিয়ে তৈরি চুলায় আগুন জ্বালি। জ্বালানি হিসেবে খড় ব্যবহার করি।’ তিনি জানান, এক একটি পাতিলে ৪০ থেকে ৪২ কেজি ধান সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ করতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।  সুমতী আরও বলেন, ‘সেদ্ধ ধান শুকানো হয় ত্রিপলের ওপর বা মাটির খলায়। রোদ থাকলে শুকাতে দুই থেকে তিন দিন লাগে। কিন্তু বৃষ্টি হলে সমস্যা হয়।’  

আরেক কিষানি বিনতা রানি সরকার বলেন, ‘সারা দিন কাজ করতে হয়। পুরুষরা ভোরে মাঠে যান। আমরা দুপুরে ঘরের কাজ শেষে ধান সেদ্ধ, শুকানো ও খড় শুকানোর কাজ করি। শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সেদ্ধ ধান থেকে চাল হলে আমাদের কষ্টের আনন্দ হয়। পরদিন আবার নতুন দিনের কাজ শুরু করি।’ 

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত থাকলেও তাদের মুখে নেই কোনো ক্লান্তি। এই ব্যস্ততাই তাদের স্বপ্ন। ফসল ভালো হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। আর ফসল ঘরে তুলতে পারলে তবেই কষ্ট সার্থক হয়।

যশোরে মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
যশোরে মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ
যশোরের চৌগাছা উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ। খবরের কাগজ

সাধারণত থোকায় থোকায় আম কিংবা লিচু চোখে মেলে। কিন্তু বাঙালির খাবারের তালিকায় থাকা জনপ্রিয় সবজি লাউ এরকম থোকায় ধরা খুব একটা দেখা যায় না। মাচায় লাউ ঝুলবে সারি সারি এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এক থোকায় ৩০টি লাউ ধরা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম ওসমান আলীর বাড়িতে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য তার লাউগাছের একটি থোকায় (গাছের শাখার সংযোগস্থল) ৩০টি লাউ ধরেছে। এ ঘটনা এলাকায় আলোড়োন সৃষ্টি করেছে। ফলে এলাকার উৎসুক মানুষ ওই লাউগুলো দেখতে ভিড় করছেন। এর সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খুঁজছে কৃষি বিভাগও। 

ওসমান আলীর বাড়িতে গেলে দেখা যাচ্ছে, বড় লাউ মাচায় একটি থোকায় ৩০টির মতো লাউ ঝুলে আছে। এরমধ্যে একটি লাউয়ের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। আর অন্যগুলো ১০০ গ্রামের মতো ওজন হবে। তবে ছোটগুলো যে নষ্ট হয়ে যাবে তা মনে হচ্ছে না। এগুলো বড় হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

ওসমান আলী বলেন, ‘বাড়িতে থাকা বীজ দিয়ে লাউয়ের চারা তৈরি করি। প্রথম থেকে গাছে ভালোই বড় বড় লাউ ধরে। ইতোমধ্যে কিছু লাউ খাওয়াও হয়েছে। এবং কিছু লাউ প্রতিবেশীদের দেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে হঠাৎ একই থোকায় কয়েকটি লাউ দেখতে পাই। এক থোকায় অনেক লাউ দেখে কিছুটা হতবাক হই। কিছু দিন যেতে না যেতে দেখি ওই একই বোটার (গাছের শাখার সংযোগ স্থল) ফেটে অসংখ্য লাউ ধরছে। এর মধ্যে ৩০টির মতো লাউ একই স্থানে ধরেছে। সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বড়ও হচ্ছে। দেখে মনে হয় একটি থোকায় সব লাউ ঝুলে আছে। এ খবর এলাকায় চাউর হয়ে গেলে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এ অস্বাভাবিক লাউ ধরা দেখতে আসছেন।’

ওসমান আলীর ভাই লোকমান হোসেন বলেন, ‘জীবনে প্রথম দেখলাম এমন লাউ ধরার ঘটনা। একটি বোটায় একসঙ্গে ৩০টি লাউ ধরা আমার কাছে আশ্চর্য ঘটনা মনে হয়েছে। এ ঘটনা শুনে আশপাশের আত্মীয়স্বজনও বাড়িতে আসছেন দেখার জন্য।’

চৌগাছা বাজার থেকে লাউ দেখতে যান মাসুদ হাসান টিপু। তিনি বলেন, খবর শুনে আমি লাউ দেখতে গেছিলাম। আমি দেখে তো অবাক হয়ে গেছি। লাউয়ের একটি থোকায় ৩০টি লাউ ধরা- আমার কাছে অলৌকিক মনে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এমন ঘটনা আমার চাকরি জীবনে প্রথম দেখলাম। হতে পারে এক বোটা থেকে অনেকগুলো ফুল হয়েছে এবং সেগুলো সঠিক পরাগায়ণ হওয়ায় লাউগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খোঁজার জন্য গবেষণা করা হবে।’

ধান কাটায় বাড়তি খরচ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ধান কাটায় বাড়তি খরচ
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় একটি খেতে শ্রমিকরা ধান কাটছেন। খবরের কাগজ

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে হারভেস্টার মেশিন কম থাকায় অনেককে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে মেশিন মালিকরা। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় উপজেলার কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ বলছে, নির্ধারিত দামের বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠে আরও মেশিন দরকার।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলায় মোট ১০৮টি হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি মেশিন ইতোমধ্যে বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সচল রয়েছে ৩৮টি মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়।
জানা গেছে, একটি মেশিনের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সরকার ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে এসব মেশিন সরবরাহ করেছে। বাকি ৫০ ভাগ টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। 

কৃষকরা জানাচ্ছেন, মাঠে গিয়ে তারা মেশিন পাচ্ছেন না। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে হারভেস্টার মেশিনগুলো হাওর অঞ্চলে কাজ করছে। এতে পূর্বধলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে বেশি খরচে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

নারান্দিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ১০ কাঠা জমির ধান কাটতে প্রতিজন শ্রমিককে ৭০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়েছে। পরে আবার ২০ মণ ধান মাড়াই করাতে হয়েছে। এতে খরচ অনেক বেড়েছে। মাঠে আরও মেশিন সরবরাহ করা জরুরি।’

গত বোরো মৌসুমে ধান কাটার জন্য কৃষি অফিস থেকে নির্ধারিত ছিল বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা। ওই হিসেবে ৮ শতক জমির ধান কাটার খরচ ৫০০ টাকার কম পড়ার কথা। 

কৃষকদের অভিযোগ, কিছু হারভেস্টার মালিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। তারা বলছেন, এসব মালিককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকিতে মেশিন দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি নজরদারি না থাকায় কিছু মানুষ অতিরিক্ত দামে ধান কেটে লাভ করছেন। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় অন্যান্য এলাকার কৃষকরা সমস্যায় পড়ছেন।’

হারভেস্টার মালিক মেঘশিমুল গ্রামের আনারুল সরকার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মেশিনগুলো আবার উপজেলায় ফেরত আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন জাতের ধানের কারণে একেক জায়গায় একটু একটু করে ধান কাটতে হয়। এতে পোষায় না। আবার কখনো ধান বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়। এজন্য মাঝে-মধ্যে একটু বেশি টাকা নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে একটি মেশিন নিয়েছিলাম। কিন্তু এক সিজন কাটার পরই মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েকবার মেশিন মালিকদের নিয়ে সভা করেছি। সভায় প্রতি এক একর জমির ধান কাটার জন্য ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার  টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ এর অতিরিক্ত নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা থাকায় সেখানকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য
নিজের চিয়া সিড খেতে ফসল দেখছেন ও তুলছেন উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। খবরের কাগজ

শেরপুরে প্রথমবার চিয়া সিড চাষ করে সফল হয়েছেন শিমুল মিয়া। তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচে এই ফসল আবাদ করেন। তিন মাসে ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চিয়া সিড চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি কম খরচে লাভজনক ও পুষ্টিকর। কৃষি বিভাগের মতে, চিয়া সিড চাষে পানি কম লাগে এবং দ্রুত ফলন দেয়। শিমুলের সফলতা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে।

শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী উত্তরপাড়া এলাকার মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে শিমুল মিয়া। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি করতে করতে ইউটিউবে কৃষি চাষাবাদ নিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে কৃষিতে আগ্রহ বাড়ে। চাকরি ছেড়ে ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে চিয়া সিডের বীজ সংগ্রহ করেন। জেলায় প্রথমবারের মতো তিনি এই ফসল রোপণ করেন।

শিমুল জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম চিয়া সিড চাষ শুরু করেন। তার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তিন মাসের মধ্যে ফলন পরিপক্ব হয়। বর্তমানে প্রায় ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ১ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চিয়া সিড চাষে খরচ কম। রোগবালাইও কম হয়। বাজার মূল্য বেশি থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চিয়া সিড চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এক বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের সুপার শপ এবং অনলাইন বাজারে চিয়া সিডের কেজি দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রিসহ নানা পুষ্টিগুণ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া এটি বাড়তি ওজন কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। চিয়া সিড পৃথিবীর নানা দেশে চাষ হয়।

শিমুলের খেত দেখতে প্রতিদিন কৃষকরা আসছেন। তারা অল্প খরচে লাভজনক চাষাবাদ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণত ধান চাষ করি। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয় না। তবে নতুন ফসল দেখে অনেক ফলন হচ্ছে, দামও বেশি। যদি লাভ বেশি হয়, আমরাও চিয়া সিড চাষ করব।’

কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের দেশে নতুন। আগে জানতাম না। তবে এখন দেখছি, অন্য ফসলের চেয়ে চিয়া সিডের ফলন বেশি। দামও ভালো, আর অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চাষ করা দরকার।’

কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা গম, ভুট্টা, আলু চাষ করতাম, তবে লাভ কম। চিয়া সিডের লাভ বেশি। আশা করছি, আগামী বছর ১-২ একর জমিতে চাষ করব।’ কৃষক 

বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘শিমুল যখন জমি ভাড়া নিল, তখন আমি বললাম, কিছু না লাগাইলে না। কিন্তু শিমুল চিয়া সিড লাগাল। এখন দেখি তার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছে।’

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বর্তমানে এটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। শিমুল ভালো ফলন পেয়েছে। এটি স্বল্প মেয়াদি ফসল, পানির প্রয়োজন কম। সেচের ঘাটতি আছে এমন এলাকায় এটি চাষ করা যেতে পারে। কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’

দিনাজপুরে নদীতীরে জমে উঠেছে টমেটোর বাজার

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
দিনাজপুরে নদীতীরে জমে উঠেছে টমেটোর বাজার
টমেটো বিক্রির জন্য প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুর শহরের খুব কাছেই গর্বেশ্বরী নদীর তীরে গাবুরা টমেটো বাজার জমে উঠেছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর মৌসুম চলছে। প্রতিদিন ফজরের পর থেকেই আশপাশের উপজেলা থেকে কৃষকরা টমেটো নিয়ে এই বাজারে আসছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, বিরলসহ কয়েকটি উপজেলা থেকে ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিকশা, বাইসাইকেল ও ট্রাক্টরে টমেটোর ক্যারেট আসে এই বাজারে। বাজারে ভ্যান কিংবা রিকশার ওপর দাঁড়িয়ে টমেটো বেচাকেনা চলছে। পাইকাররা বাজারদর অনুযায়ী টমেটো কিনছেন।

ভোর হতেই সব টমেটো বিক্রি হয়ে যায়। এর পর পাইকাররা নির্ধারিত ঘরে টমেটো নিয়ে যান। সেখানে বাছাই করে ক্যারেট ভর্তি করা হয়। একেকটি ক্যারেটে ২৪ থেকে ২৫ কেজি টমেটো রাখা যায়। ১০টার পর থেকে এসব ক্যারেট ট্রাকে তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। টসটসে পাকা টমেটো দূর-দূরান্তে যাচ্ছে।

এই বাজারে স্থানীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কাজ করছেন। তারা টমেটো বাছাই ও ক্যারেট ভর্তি করে পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন। বাজারজুড়ে শত শত টমেটো পাইকার রয়েছেন। বাজারের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে টমেটো রাখা হয়। সেখান থেকেই প্রতিদিন ক্যারেটে ভরে ট্রাকে লোড দেওয়া হয়।

এই বাজারে এখন আশপাশের কোনো পুরুষ মানুষ বেকার নেই। সবাই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত আছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছেন। 

হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বাজারটি জুন মাস পর্যন্ত চলবে। গাবুরা টমেটো বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়।’ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাজারের আশপাশের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা ভোর থেকেই টমেটো নিয়ে বাজারে আসেন। বাজারদর অনুযায়ী টমেটো বিক্রি করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের পাইকারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাটে ২০ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা সার্বিক তদারকি করছেন।’

হাট ইজারা বাবদ প্রতি মণ টমেটোর জন্য ১৫ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। এ কারণে হাটের পরিসর দিন দিন বাড়ছে। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, ‘প্রতিবছর এই বাজারে আসি। পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচটি ট্রাক টমেটো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ট্রাক ভাড়া বেশি। তাই লাভ কম হচ্ছে। তবে এখানে প্রচুর টমেটো পাওয়া যাচ্ছে।’

এই বাজারে এখন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন ব্যবসায়ী অবস্থান করছেন। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ ট্রাক টমেটো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস ধরে আছি।’ প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক টমেটো কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘টমেটো বাছাই ও ক্যারেট ভর্তির কাজে এখন ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।’

হোসেনপুরের চাষি ইমতিয়াজ বলেন, ‘এ বছর টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে।’ বাজার কাছে হওয়ায় প্রতিদিনই টমেটো বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো অনেক লাভজনক। অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’ চাষি মনসুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। ১০ দিন ধরে বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২৫ মণ টমেটো বিক্রি করছি।’ তিনি বলেন, ‘এই টমেটো চাষ থেকে লাভবান হয়েছি। জমিও কিনেছি। বাজার কাছে হওয়ায় আমরা আরও উৎসাহিত হচ্ছি।’

চিরিরবন্দরের মাসুদ রানা বলেন, ‘রাস্তা ভালো হওয়ায় ১০ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি।’ প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছেন, প্রতি বিঘায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ টমেটো হবে। তিনি বলেন, ‘৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করছি। সব মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা আছে।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাফর ইকবাল বলেন, ‘দিনাজপুর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ভালো হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে।’