ঢাকা ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
English
রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ফসল বাঁচাতে কৃষকের মৃত্যুফাঁদ, মারা যাচ্ছে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১০:২৩ এএম
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
ফসল বাঁচাতে কৃষকের মৃত্যুফাঁদ, মারা যাচ্ছে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী
ইঁদুর নিধনের জন্য গুনা তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করা হচ্ছে। ইনসেটে ফাঁদ (বায়ে) ও ফাঁদে আটকে মারা যাওয়া প্রাণী (ডানে)। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ধানখালী এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা/ খবরের কাগজ

সপ্তাহ খানেক আগের কথা। দিনটি ছিল শুক্রবার। ওই দিন বিকেলে নিজের ধান খেতের আইলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টানটান করে গুনা তার (লোহার তার) বাঁধছিলেন কৃষক প্রিয়জিত মণ্ডল। এই তারে পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। তখন এটি একটি ফাঁদে পরিণত হবে। মূলত ইঁদুর মারার জন্য ফাঁদটি তৈরি করা হচ্ছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ধানখালী এলাকার এই কৃষক জানেন, এভাবে বিদ্যুৎ ফাঁদ তৈরি করা যায় না। কাজটি অবৈধ। কিন্তু ইঁদুর মারতে বিকল্প সব পদ্ধতি অনুসরণ করেও দিন শেষে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এলাকার অন্য কৃষকদের মতো তিনিও শেষ পর্যন্ত ইঁদুর মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন।

শুধু ইঁদুর মারার জন্য নয়, বৈদ্যুতিক এমন ফাঁদ ওই এলাকার অন্যান্য ফসল ও সম্পদ রক্ষার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। শিয়ালের হাত থেকে পোলট্রি ফার্মের মুরগি রক্ষা, ঘেরের মাছ চুরি ঠেকানো, ঘেরের আইলের ফসল রক্ষাসহ নানা কাজে অবৈধ ফাঁদটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ইঁদুরভোজী প্রাণী যেমন পেঁচা, শিয়াল, বেজি, সাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাচ্ছে। এমনকি এই ফাঁদে পড়ে মানুষও মারা গেছে। তারপরও এগুলো বন্ধে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। 

উপজেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আগাম বৃষ্টি হওয়ায় ধানের খেতগুলো সবুজে ছেয়ে গেছে। এতে কৃষক ভালো ফলনের স্বপ্ন বুনছেন। কিন্তু হঠাৎ ইঁদুরের উপদ্রবে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দলবেঁধে ইঁদুর আক্রমণ করে ধানগাছগুলো কেটে সাবাড় করছে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও ইঁদুর মারতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ফাঁদের ওপর ভরসা করছেন।

অবৈধ হওয়ার পরও কেন এই ফাঁদ তৈরি করছেন জানতে চাইলে কৃষক প্রিয়জিত মণ্ডল বলেন, ‘বিষটোপ, ইঁদুর নিধন ট্যাবলেট, পলিথিনের নিশানা আর কলাগাছ পুঁতেও কোনো কাজ হয়নি। কূলকিনারা না পেয়ে এখন ফাঁদ পাতছি।’ ধানের আবাদ করতে তার প্রতিবিঘায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘একদিকে পানির সংকট, অন্যদিকে সার-কীটনাশকের দাম বেশি। এর ওপর আবার ইঁদুরের উৎপাত। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ জেনেও কাজটি করেছি।’

স্থানীয়রা জানান, ফাঁদটি মাটির খুব কাছাকাছি দেওয়া হয়, যেন কোনো ইঁদুর খেতে ঢুকতে গেলে মারা যায়। আরেকটি তার ঝোলানো হয় কিছুটা ওপরে। সাধারণত বৈদ্যুতিক ফাঁদে কাউকে পাহারায় রাখতে হয়। কিংবা এমন কোনো চিহ্ন দিতে হয়, যা দেখে মানুষ বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাহারা বা চিহ্ন কোনো কিছুই থাকছে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। গতবছর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর কদমতলায় শোকর আলী গাজী নামে এক কৃষক ইঁদুর মারার ফাঁদে প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও একাধিক মৃত্যুর খবর এলাকায় আলোচিত আছে।

ইঁদুরের উপদ্রব এড়াতে ফসলের মাঠে বৈদ্যুতিক ফাঁদ দেওয়া কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয় জানিয়ে শ্যামনগর সরকারি মহসিন ডিগ্রি কলেজের কৃষি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. শেখ আফসার উদ্দিন বলেন, ‘ইঁদুরের ফাঁদ নিমিষেই মানুষের ফাঁদে পরিণত হতে পারে। তাই ইঁদুরের উপদ্রব এড়াতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া ফসলের মাঠে বৈদ্যুতিক ফাঁদ দেওয়ার ব্যাপারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।’

বৈদ্যুতিক ফাঁদকে অবৈধ উল্লেখ করে শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘কৃষকের এই ফাঁদ ব্যবহারের অনুমতি নেই। এরপরও নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এই ফাঁদটি তৈরি করছেন। এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি জমি বোরো-ইরি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব খেত পরিদর্শন করে ইঁদুর নিধনের বিষয়ে কৌশল জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘গুনা তার ঝুলিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া রীতিমতো আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আছে।’ এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করবেন বলে জানেন তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এ ধরনের মরণ ফাঁদ তৈরি খুবই বিপজ্জনক। ইঁদুর নিধনের জন্য আরও কার্যকরী ও নিরাপদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

ফলি মাছ চাষে টিটুর সাফল্য

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ফলি মাছ চাষে টিটুর সাফল্য
মৎস্যচাষি টিটু খানের পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

সাধারণত ফলি মাছের দেখা মেলে হাওর, বাঁওড় ও বিলে। একসময় প্রায়ই জেলেদের জালে ধরা পড়ত ফলি মাছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দেশীয় মাছের মতো ফলিও হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশের অধিকাংশ উন্মুক্ত জলাশয়ে এখন আর ফলির দেখা মেলে না।

হারিয়ে যাওয়া এই মাছটি এবার পুকুরে চাষ করছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসফেরত মৎস্যচাষি টিটু খান। দুই বছর ধরে তিনি কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে ফলি মাছ চাষ করছেন। এতে সফলতাও পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরও অনেকে এখন পুকুরে ফলি মাছ চাষ শুরু করেছেন।

মাছ চাষের আগে টিটু খান দুবাইয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দেশে ফিরে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এরপর পিকেএসএফের অর্থায়নে এবং এসডিএসের সহযোগিতায় দুই শতক জমির পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে ফলি মাছ চাষ শুরু করেন।

টিটু খান বলেন, ‘দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনতে এসডিএস উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ফলি মাছ খুব কম দেখা যায়। আমি রুই-কাতল মাছের সঙ্গে ফলি মাছের চাষ শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে ৫০০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছ পুকুরে ছাড়া হয়। পরে ফলির পোনা ছাড়া হয়। ফলি মাছ পুকুরের ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এ জন্য আলাদা কোনো খাবার লাগে না। এই মাছ চাষ করে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। বাজারে ফলি মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে।’

এসডিএসের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ফলি মাছও এই তালিকায় পড়ে। ফলির সঙ্গে কার্পজাতীয় মাছের চাষ চাষিদের জন্য সহজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিকেএসএফের অর্থায়নে এসডিএসের মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তর সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং নানা পরামর্শ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে টিটু খান নামে একজন সফল উদ্যোক্তাকে পেয়েছি, যিনি ফলি মাছ চাষ করে দারুণ সফল হয়েছেন।’

লিচুতে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাগানমালিকরা

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
লিচুতে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাগানমালিকরা
বাগানের লিচুগাছে ওষুধ স্প্রে করছেন এক শ্রমিক। খবরের কাগজ

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুগাছে প্রচুর গুটি ধরেছে। গাছ ভর্তি থোকা থোকা ছোট লিচু দেখে বাগানমালিকরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন। এখন চলছে পরিচর্যার ব্যস্ততা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ বেশি হয়। সুস্বাদু হওয়ায় এসব জাতের লিচুর চাহিদা দেশজুড়ে।

গোবিন্দনগর মুন্সীরহাট এলাকার বাগানমালিক মামুন বলেন, ‘এ বছর লিচুগাছে প্রচুর গুটি এসেছে। এমন দৃশ্য গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনের আশা করছি।’ একই এলাকার আরেক বাগানমালিক আবুল হোসেন বলেন, ‘লিচুর গুটি দেখে আমরা অনেক আশাবাদী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাই না লাগলে এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। দাম ভালো থাকলে লাভবানও হব।’

বাগানগুলোতে ইতোমধ্যে পরিচর্যার কাজ শুরু হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেক মানুষের। মুন্সীরহাট কলোনির বাসিন্দা জুলেখা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লিচুগাছ পরিচর্যার কাজ করি। এতে প্রতিদিন ৪০০ টাকা আয় হয়।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই এখানে চাষ বাড়ছে। এ বছর ২৮১ হেক্টর জমিতে ৬৪১টি লিচু বাগান রয়েছে। কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গুটি ঠিকমতো বড় হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর জেলায় প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।’

গাইবান্ধায় দাম ভালো পাওয়ায় বাড়ছে বাঙ্গি চাষ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
গাইবান্ধায় দাম ভালো পাওয়ায় বাড়ছে বাঙ্গি চাষ
খেত থেকে বাঙ্গি তুলে কাঁধে বাঁশের বোয়ালে নিয়ে যাচ্ছেন এক কৃষক। খবরের কাগজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের তরফকাল, দুর্গাপুর, ভাটপাড়া বালুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এবার ব্যাপক হারে বাঙ্গির চাষ করেছেন। গত বছর বাঙ্গির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধানের পরিবর্তে বাঙ্গির চাষে ঝুঁকেছেন। তারা জানান, বাঙ্গি চাষে খরচ কম, আয় বেশি। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বীজ রোপণ করা হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ফলন ঘরে তোলা যায়। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাঙ্গি কিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী চাষিরা বাঙ্গি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় ক্রমেই বাড়ছে বাঙ্গি চাষ।

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ক্রমেই জেলায় বাঙ্গির চাষ বাড়ছে। এ বছর ৩ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। গত বছর ১ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন চাষি জমিতে বাঙ্গি পরিচর্যা করছেন। কেউ বাঙ্গি সংগ্রহ করছেন। বাঙ্গি তুলে জমির এক কোনায় রাখা হচ্ছে। সেগুলো ভারে করে বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাথায় করে বাঙ্গি বহন করছেন। অনেক ব্যবসায়ী জমিতে এসে বাঙ্গি দেখে দাম ঠিক করছেন।

তরফকাল গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মজিবর রহমান (৪৫) বলেন, ‘ধানের বদলে বাঙ্গি চাষ করে প্রথমবারেই বাজিমাত করেছি।’ তিনি জানান, মাত্র ২৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করে ৪০ হাজার টাকা আয় করেছেন। বাঙ্গি শেষ হলে পাট, পটোল, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করবেন। একটির পর একটি ফসল থেকে তার আয় হবে। মজিবর রহমান বলেন, ‘পৈতৃক সূত্রে ৩ বিঘা জমি পেয়েছি। প্রতিবছর বোরো ধানের চাষ করতাম। তবে গত বছর থেকে ২৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করছি।’ তিনি হিসাব দিয়ে জানান, ২৫ শতকে বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হতো ৯ হাজার টাকা। এই জমিতে ১৪ মণ ধান হতো। প্রতি মণ ৮০০ টাকা দরে ধানের দাম হতো ১১ হাজার ২০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে লাভ হতো ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একই জমিতে বাঙ্গি চাষ করে আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

একই গ্রামের বাঙ্গিচাষি আফজল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিনই খেত থেকে বাঙ্গি তুলতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাপারীরা খেত থেকেই বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। আবার আমরা ভ্যানে করে শহরেও বিক্রি করি।’ প্রতিটি বাঙ্গি আকারভেদে ১০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আগে অল্প চাষ হতো তাই পাহারা দিতে হতো। এখন প্রায় সবাই বাঙ্গি চাষ করছেন, তাই পাহারার তেমন প্রয়োজন হয় না।’ আফজল উদ্দিন জানান, তিনি এ বছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন।

গাইবান্ধার সাত উপজেলার মধ্যে সদরেই সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির চাষ হয়েছে। তবে বাঙ্গিচাষিরা অভিযোগ করেছেন, বাঙ্গি চাষের জন্য নির্ধারিত কোনো কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায় না। তারা অনুমান ভিত্তিতে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেন। মাঠপর্যায়ে কৃষি অফিসাররা যান না। ফলে কৃষকরা সঠিক পরামর্শ পান না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘বাঙ্গি চাষ করে এবার উপজেলার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাঙ্গি ছাড়াও অন্য ফসল করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।’

দাউদকান্দিতে ধানের ফলনে কৃষক খুশি

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
দাউদকান্দিতে ধানের ফলনে কৃষক খুশি
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় চলছে ইরি ধান কাটার উৎসব। কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই ও খড়ের গাদা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সার ও সেচে কিছুটা বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

জিংলাতলী ইউনিয়নের কল্যাণপুর বিলে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত। এই অঞ্চলের সব মাঠে চলছে ধান কাটা। বিআর-২৮, বিআর-১৬, বিআর-২৯, বিআর-৪৬ ও বিআর-৯২ জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষক। 

মোহাম্মদপুর, বিটেশ্বর, মারুকা, দৌলতপুর, পাঁচগাছিয়া ও মালিগাঁও ইউনিয়নের মাঠগুলো সোনালি ধানে ছেয়ে গেছে। সম্প্রতি বিটেশ্বর ইউনিয়নের মাঠে এই চিত্র দেখা গেছে। ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকরা ধান মাড়াই ও খড়ের গাদা দেওয়ার কাজ করছেন। অনেক শ্রমিক তাদের সহযোগিতা করছেন।

ইলিয়টগঞ্জ গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমি ১২০ শতক জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছি। সামান্য খরচে বাম্পার ফলন পেয়েছি।’ একই গ্রামের কৃষক মাহাতি বলেন, ‘আমি ৯০ শতক জমিতে ইরি-বোরো আমনের (ভৈরল) আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। আশা করছি ১৫ মনের বেশি ধান পাব। প্রতি মণের দাম ১ হাজার টাকা। পাশাপাশি গরুর খাবার হিসেবে খড়, আর রান্নার জন্য নাড়াও পাব।’
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় মোট আবাদি জমি ১৫ হাজার ৪৬৫ হেক্টর। চলতি বছর ১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ৩১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।

সরকারি প্রণোদনায় বেড়েছে বোরো ধান চাষে আগ্রহ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২২ এএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
সরকারি প্রণোদনায় বেড়েছে বোরো ধান চাষে আগ্রহ
ছবি:সংগৃহীত

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় নানা প্রতিকূলতা ও তীব্র লবণাক্ততার মাঝেও বোরো ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, অনুকূল আবহাওয়া এবং সরকারি প্রণোদনা কৃষকদের চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। এতে চাষাবাদ বেড়েছে এবং উপজেলাটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১০টি ইউনিয়নে মোট ৪ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টরে এবং উফশী জাতের চাষ হয়েছে ৮৫০ হেক্টরে। এতে চাল উৎপাদন হয়েছে ২২ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমন ধানের চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের চাষ হয়েছে ৮১০ হেক্টরে, উফশী জাতের ৬ হাজার ৩১০ হেক্টরে এবং স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে। আমন ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৪০৩ টন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৪ জন (২০২৩-২৪ অর্থবছর)। এই জনসংখ্যার জন্য বছরে চালের চাহিদা ৩৬ হাজার ৮৭০ টন। অথচ বোরো ও আমন মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৭৯ টন। ফলে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার ৩৯১ টন।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর আগেও উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি ছিল অনেক বেশি। এখন তা অনেক কমে এসেছে। এর পেছনে কাজ করেছে নানা উদ্যোগ। যেমন কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, লবণ-সহিষ্ণু বীজ ও সার বিনামূল্যে সরবরাহ, মাঠপর্যায়ে পরামর্শ, রোগবালাই দমন, সময়মতো সেচ ও জমির ধরন বুঝে সঠিক জাত বাছাই করা।

আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২-১ বছরের মধ্যেই রামপাল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টায় আছি আমন ও বোরো ধান চাষে বিপ্লব ঘটাতে। কৃষকদের সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনার আওতায় এনে চাষাবাদ বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলায় এখনো অনেক পতিত জমি রয়েছে। এসব জমি আবাদের আওতায় আনতে কাজ করছি। এখানে চাষে সবচেয়ে বড় সমস্যা মিষ্টি পানির অভাব। কোথাও কোথাও জমি ফেলে রাখা হচ্ছে। সেখানে পুকুর খনন বা গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচের ব্যবস্থা করলে উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এর জন্য সচেতন মহল, নাগরিক কমিটি ও কৃষকদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। জমিতে সেচের জন্য মিষ্টি পানি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাদের আন্তরিকতায় কৃষিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমরা বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য আরও ভালো কিছু করতে চাই।’