
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাজশাহী অঞ্চলে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া ও সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। খেত থেকে উৎপাদিত এক কেজি আলু প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৮ টাকায়। কিন্তু কৃষকরা জানান, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ছাড়িয়েছে ২৪ টাকা। ফলে দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীজ আলু প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে কিনে রোপণ করায় গত বছরের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। তার ওপরে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোল্ড স্টোরেজের (হিমাগার) বাড়তি ভাড়া। গত বছর এক কেজি আলু সংরক্ষণে ভাড়া ছিল চার টাকা। কিন্তু এ বছর তা বাড়িয়ে আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা কৃষকের ওপর বাড়তি চাপ বলে জানান তারা।
রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় পবা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী উপজেলায়। এসব উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে আলু উত্তোলন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তারা কেউ কেউ ঋণের দায়ে খেত থেকেই ফড়িয়াদের (আলু ব্যবসায়ী) কাছে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারা জানান, কীটনাশকের দোকান থেকে বাকিতে সার-বিষ কেনা হয়েছিল। তা পরিশোধ করার জন্যই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
পবা উপজেলার বাগধানী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘা আলু করতে আমাদের খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। এখন আলু বিক্রি করে আমরা পাচ্ছি ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি আমাদের লোকসান ২০ হাজার টাকা। এত টাকা দিয়ে আলু করে যদি লোকসানের মুখে পড়ি তাহলে কী করে আমরা আবাদ-ফসল করব?’
তানোর উপজেলার মন্ডুমালা বাথান বিলের কৃষক রহিস উদ্দিন কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘প্রথমে এত টাকা দিয়ে বীজ কিনে আলু লাগিয়ে করেছি এক ভুল। এখন আলু লাগানোর পরে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া শুনে মনে হচ্ছে আরেক ভুল করতে যাচ্ছি। এত টাকা লোকসান দিয়ে আলু লাগিয়ে আবার বাড়তি ভাড়া দিয়ে কোল্ড স্টোরেজে রাখতে আমাদের চাষিদের গলা কাটা যাচ্ছে। এক বিঘা আলু লাগাতে আমাদের ৭০-৮০ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা আলু বিক্রি করে পাচ্ছি ৬০ হাজার টাকা। এত লোকসান করে আলুর আবাদ করে কীভাবে সামলাব? আমাদের কৃষকদের পক্ষ থেকে একটাই দাবি কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া কমাতে হবে।’
মোহনপুর উপজেলার মোগাছি ইউনিয়নের বিদিরপুর এলাকার আলু চাষি বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর ফলন এ বছর ভালোই হয়েছে। কিন্তু আলুর যে দাম তাতে লোকসান ছাড়া আর কিছুই নেই। সবকিছুর যে দাম, আবাদ মনে হয় ছেড়েই দিতে হবে। এর ওপর হিমাগার মালিকরা আলু রাখার জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কোনদিকে যাব, ভেবে পাচ্ছি না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ‘রাজশাহীতে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আলুর লক্ষ্যমাত্রা এই বছর আমাদের ছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি হয়েছে। আলুর হারভেস্ট এ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ হয়েছে। মাঠে এখন আলু উঠছে। এ সময় আলুর দাম একটু কমই থাকে। তবে কয়েকদিন পর থেকে কৃষক আলু দাম পাবে।’