ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

শ্যামনগরে কম্পোস্ট সার তৈরি নিয়ে কিষানি সভা

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
শ্যামনগরে কম্পোস্ট সার তৈরি নিয়ে কিষানি সভা
ছবি: খবরের কাগজ

সবজি চাষে কম্পোস্ট ব্যবহারে সফলতা তুলে ধরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোলিনীতে স্থানীয় কিষানিদের নিয়ে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রবিবার শ্যামনগর উপজেলায় দাতিনাখালী গ্রামে বিল্ডিং এজেন্সি অব ইয়ুথ ইন ক্লাইমেট অ্যাকশন প্রকল্পের আওতায় যুব সংগঠন বনজীবী ইয়ুথ টিম এ কর্মসূচি আয়োজন করে। এতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিপরীতে কম্পোস্ট সার তৈরিতে আগ্রহী ২৬ জন প্রান্তিক কিষানি অংশ নেন। সভায় কম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেন শ্যামনগর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ জামাল হোসেন।

সভায় বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিনিয়ত শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার কৃষি জমির লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে কৃষি জমি কমছে। এই সঙ্গে রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জৈব সার ব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা না করলে আগামী ফসলহানির শঙ্কা রয়েছে। এজন্য কম্পোস্ট সার ব্যবহারে সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উর্বর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা। এতে মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা ও বায়ু চলাচলের সুযোগ বাড়ে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ। তাই মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ালে মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা বাড়বে। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার মাটিকে নরম করে এবং পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অণুজীবের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ক্রমেই ভূমির উর্বরতা কমে যেতে থাকে। ফলে এখন থেকেই মাটিতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার বাড়াতে হবে।

ধান কাটায় বাড়তি খরচ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ধান কাটায় বাড়তি খরচ
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় একটি খেতে শ্রমিকরা ধান কাটছেন। খবরের কাগজ

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে হারভেস্টার মেশিন কম থাকায় অনেককে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে মেশিন মালিকরা। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় উপজেলার কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ বলছে, নির্ধারিত দামের বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠে আরও মেশিন দরকার।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলায় মোট ১০৮টি হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি মেশিন ইতোমধ্যে বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সচল রয়েছে ৩৮টি মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়।
জানা গেছে, একটি মেশিনের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সরকার ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে এসব মেশিন সরবরাহ করেছে। বাকি ৫০ ভাগ টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। 

কৃষকরা জানাচ্ছেন, মাঠে গিয়ে তারা মেশিন পাচ্ছেন না। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে হারভেস্টার মেশিনগুলো হাওর অঞ্চলে কাজ করছে। এতে পূর্বধলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে বেশি খরচে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

নারান্দিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ১০ কাঠা জমির ধান কাটতে প্রতিজন শ্রমিককে ৭০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়েছে। পরে আবার ২০ মণ ধান মাড়াই করাতে হয়েছে। এতে খরচ অনেক বেড়েছে। মাঠে আরও মেশিন সরবরাহ করা জরুরি।’

গত বোরো মৌসুমে ধান কাটার জন্য কৃষি অফিস থেকে নির্ধারিত ছিল বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা। ওই হিসেবে ৮ শতক জমির ধান কাটার খরচ ৫০০ টাকার কম পড়ার কথা। 

কৃষকদের অভিযোগ, কিছু হারভেস্টার মালিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। তারা বলছেন, এসব মালিককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকিতে মেশিন দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি নজরদারি না থাকায় কিছু মানুষ অতিরিক্ত দামে ধান কেটে লাভ করছেন। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় অন্যান্য এলাকার কৃষকরা সমস্যায় পড়ছেন।’

হারভেস্টার মালিক মেঘশিমুল গ্রামের আনারুল সরকার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মেশিনগুলো আবার উপজেলায় ফেরত আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন জাতের ধানের কারণে একেক জায়গায় একটু একটু করে ধান কাটতে হয়। এতে পোষায় না। আবার কখনো ধান বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়। এজন্য মাঝে-মধ্যে একটু বেশি টাকা নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে একটি মেশিন নিয়েছিলাম। কিন্তু এক সিজন কাটার পরই মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েকবার মেশিন মালিকদের নিয়ে সভা করেছি। সভায় প্রতি এক একর জমির ধান কাটার জন্য ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার  টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ এর অতিরিক্ত নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা থাকায় সেখানকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য
নিজের চিয়া সিড খেতে ফসল দেখছেন ও তুলছেন উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। খবরের কাগজ

শেরপুরে প্রথমবার চিয়া সিড চাষ করে সফল হয়েছেন শিমুল মিয়া। তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচে এই ফসল আবাদ করেন। তিন মাসে ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চিয়া সিড চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি কম খরচে লাভজনক ও পুষ্টিকর। কৃষি বিভাগের মতে, চিয়া সিড চাষে পানি কম লাগে এবং দ্রুত ফলন দেয়। শিমুলের সফলতা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে।

শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী উত্তরপাড়া এলাকার মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে শিমুল মিয়া। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি করতে করতে ইউটিউবে কৃষি চাষাবাদ নিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে কৃষিতে আগ্রহ বাড়ে। চাকরি ছেড়ে ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে চিয়া সিডের বীজ সংগ্রহ করেন। জেলায় প্রথমবারের মতো তিনি এই ফসল রোপণ করেন।

শিমুল জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম চিয়া সিড চাষ শুরু করেন। তার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তিন মাসের মধ্যে ফলন পরিপক্ব হয়। বর্তমানে প্রায় ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ১ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চিয়া সিড চাষে খরচ কম। রোগবালাইও কম হয়। বাজার মূল্য বেশি থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চিয়া সিড চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এক বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের সুপার শপ এবং অনলাইন বাজারে চিয়া সিডের কেজি দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রিসহ নানা পুষ্টিগুণ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া এটি বাড়তি ওজন কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। চিয়া সিড পৃথিবীর নানা দেশে চাষ হয়।

শিমুলের খেত দেখতে প্রতিদিন কৃষকরা আসছেন। তারা অল্প খরচে লাভজনক চাষাবাদ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণত ধান চাষ করি। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয় না। তবে নতুন ফসল দেখে অনেক ফলন হচ্ছে, দামও বেশি। যদি লাভ বেশি হয়, আমরাও চিয়া সিড চাষ করব।’

কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের দেশে নতুন। আগে জানতাম না। তবে এখন দেখছি, অন্য ফসলের চেয়ে চিয়া সিডের ফলন বেশি। দামও ভালো, আর অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চাষ করা দরকার।’

কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা গম, ভুট্টা, আলু চাষ করতাম, তবে লাভ কম। চিয়া সিডের লাভ বেশি। আশা করছি, আগামী বছর ১-২ একর জমিতে চাষ করব।’ কৃষক 

বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘শিমুল যখন জমি ভাড়া নিল, তখন আমি বললাম, কিছু না লাগাইলে না। কিন্তু শিমুল চিয়া সিড লাগাল। এখন দেখি তার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছে।’

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বর্তমানে এটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। শিমুল ভালো ফলন পেয়েছে। এটি স্বল্প মেয়াদি ফসল, পানির প্রয়োজন কম। সেচের ঘাটতি আছে এমন এলাকায় এটি চাষ করা যেতে পারে। কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’

দিনাজপুরে নদীতীরে জমে উঠেছে টমেটোর বাজার

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
দিনাজপুরে নদীতীরে জমে উঠেছে টমেটোর বাজার
টমেটো বিক্রির জন্য প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুর শহরের খুব কাছেই গর্বেশ্বরী নদীর তীরে গাবুরা টমেটো বাজার জমে উঠেছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর মৌসুম চলছে। প্রতিদিন ফজরের পর থেকেই আশপাশের উপজেলা থেকে কৃষকরা টমেটো নিয়ে এই বাজারে আসছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, বিরলসহ কয়েকটি উপজেলা থেকে ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিকশা, বাইসাইকেল ও ট্রাক্টরে টমেটোর ক্যারেট আসে এই বাজারে। বাজারে ভ্যান কিংবা রিকশার ওপর দাঁড়িয়ে টমেটো বেচাকেনা চলছে। পাইকাররা বাজারদর অনুযায়ী টমেটো কিনছেন।

ভোর হতেই সব টমেটো বিক্রি হয়ে যায়। এর পর পাইকাররা নির্ধারিত ঘরে টমেটো নিয়ে যান। সেখানে বাছাই করে ক্যারেট ভর্তি করা হয়। একেকটি ক্যারেটে ২৪ থেকে ২৫ কেজি টমেটো রাখা যায়। ১০টার পর থেকে এসব ক্যারেট ট্রাকে তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। টসটসে পাকা টমেটো দূর-দূরান্তে যাচ্ছে।

এই বাজারে স্থানীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কাজ করছেন। তারা টমেটো বাছাই ও ক্যারেট ভর্তি করে পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন। বাজারজুড়ে শত শত টমেটো পাইকার রয়েছেন। বাজারের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে টমেটো রাখা হয়। সেখান থেকেই প্রতিদিন ক্যারেটে ভরে ট্রাকে লোড দেওয়া হয়।

এই বাজারে এখন আশপাশের কোনো পুরুষ মানুষ বেকার নেই। সবাই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত আছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছেন। 

হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বাজারটি জুন মাস পর্যন্ত চলবে। গাবুরা টমেটো বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়।’ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাজারের আশপাশের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা ভোর থেকেই টমেটো নিয়ে বাজারে আসেন। বাজারদর অনুযায়ী টমেটো বিক্রি করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের পাইকারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাটে ২০ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা সার্বিক তদারকি করছেন।’

হাট ইজারা বাবদ প্রতি মণ টমেটোর জন্য ১৫ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। এ কারণে হাটের পরিসর দিন দিন বাড়ছে। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, ‘প্রতিবছর এই বাজারে আসি। পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচটি ট্রাক টমেটো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ট্রাক ভাড়া বেশি। তাই লাভ কম হচ্ছে। তবে এখানে প্রচুর টমেটো পাওয়া যাচ্ছে।’

এই বাজারে এখন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন ব্যবসায়ী অবস্থান করছেন। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ ট্রাক টমেটো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস ধরে আছি।’ প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক টমেটো কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘টমেটো বাছাই ও ক্যারেট ভর্তির কাজে এখন ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।’

হোসেনপুরের চাষি ইমতিয়াজ বলেন, ‘এ বছর টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে।’ বাজার কাছে হওয়ায় প্রতিদিনই টমেটো বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো অনেক লাভজনক। অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’ চাষি মনসুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। ১০ দিন ধরে বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২৫ মণ টমেটো বিক্রি করছি।’ তিনি বলেন, ‘এই টমেটো চাষ থেকে লাভবান হয়েছি। জমিও কিনেছি। বাজার কাছে হওয়ায় আমরা আরও উৎসাহিত হচ্ছি।’

চিরিরবন্দরের মাসুদ রানা বলেন, ‘রাস্তা ভালো হওয়ায় ১০ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি।’ প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছেন, প্রতি বিঘায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ টমেটো হবে। তিনি বলেন, ‘৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করছি। সব মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা আছে।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাফর ইকবাল বলেন, ‘দিনাজপুর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ভালো হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে।’

দাউদকান্দিতে বন্ধ অধিকাংশ পোলট্রি খামার

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
দাউদকান্দিতে বন্ধ অধিকাংশ পোলট্রি খামার
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ব্রয়লার মুরগির খামার। খবরের কাগজ

খাদ্য, ওষুধ, বাচ্চা ও পোলট্রি উপকরণসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর দাম বেড়েছে। এতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায় ধস নেমেছে। উপজেলার বেশিরভাগ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। শত শত শ্রমিক ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খামারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সম্ভাবনাময় এটি ধ্বংসের পথে।

হাসানপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ও পোলট্রি প্রশিক্ষক আমানুল হক জানান, ‘বাচ্চা, খাদ্য ও উপকরণের দাম বেড়েছে। রোগবালাইও বেড়েছে। এ কারণে লাভজনক শিল্প লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’

তিনি জানান, দুই-তিন বছর আগে একটি লেয়ার বাচ্চার দাম ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। এখন তা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। একইভাবে ব্রয়লারের বাচ্চা ২০ থেকে ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির বাচ্চা ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

খাদ্যের দামও অনেক বেড়েছে। আগে বেডিফিট ছিল ২৫ টাকা কেজি। এখন ৩৫ খেকে ৪০ টাকা। ভুট্টার দাম ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। সয়াবিন ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। মিটবোন মিল ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর প্রতি বস্তা প্রোটিন মাল্টিসির দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা ২ হাজার ৫০০ টাকা। নিথুইনাইনের দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা ১২ হাজার টাকা। লাইসিন ৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার টাকা। ঝিনুক প্রতি বস্তা ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ফলে এখন প্রতি হালি ডিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

ক্ষুদ্র খামারি আবুল হোসেন জানান, ‘সরকারি কোনো স্থানীয় নীতিমালা নেই। ভারতীয় ডিম, বাচ্চা ও ওষুধ বাজার দখল করে রেখেছে। এতে দেশের খামারিরা টিকতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসান সামলাতে পারছে না কেউ।’ ভুক্তভোগীরা এই শিল্প রক্ষায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

জাতীয় কৃষি পদপ্রাপ্ত অধ্যাপক মতিন সৈকত জানান, ‘উপজেলার ৭০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৩০ ভাগও টিকে থাকার লড়াইয়ে মরিয়া।’ তিনি বলেন, ‘বেকার যুবকরা ঋণ নিয়ে খামার করেছেন। হঠাৎ খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার চালাতে পারছেন না।’ তিনি আরও জানান, ‘এই উপজেলায় চিকিৎসার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি নেই। কোনো সার্জনও নেই। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’ তিনি মনে করেন, ‘এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ দরকার।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, ‘খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানে পড়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে খামার বন্ধ করতে চাইছেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে খামারিদের সহযোগিতা করছেন।’

নড়াইলে ব্যাহত হচ্ছে ৫৪০ একর জমির চাষ

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২২ এএম
নড়াইলে ব্যাহত হচ্ছে ৫৪০ একর জমির চাষ
নড়াইল সদরে কমলাপুর এলাকার চিত্রা নদীতে অবস্থিত বিকল হয়ে থাকা সেচপাম্প। খবরের কাগজ

কৃষকদের বোরো ধান আবাদে সহযোগিতার জন্য দুটি সেচপাম্প স্থাপন করা হয়। সেচপাম্পের মাধ্যমে নদী থেকে পানি তুলে জমিতে সরবরাহ করা হতো। এতে কৃষকরা স্বল্পমূল্যে ধান আবাদ করতে পারতেন। তবে নড়াইল সদর উপজেলার কমলাপুরের সেচপাম্পটি ১০ বছর এবং গন্ধব্যখালী সেচপাম্পটি ৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। চাষিদের দাবি, দ্রুত সেচপাম্পগুলো চালু করতে হবে।

জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পানিসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় চেঞ্চুরী বিল সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে। শেষ হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে।

কমলাপুর ও গন্ধব্যখালীতে দুটি করে মোট চারটি সেচপাম্প স্থাপন করা হয়। প্রতিটি পাম্পের পানি ধারণক্ষমতা ২১ দশমিক ২০ কিউসেক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর (৫৪০ একর) জমি সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল।

কমলাপুর পাম্প এলাকায় ৮ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং গন্ধব্যখালীতে ৯ দশমিক ০১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়। সেচ সুবিধার মাধ্যমে স্বল্প খরচে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। এতে আনুমানিক ২ হাজার ২০০ টন ধান ও ৬০০ টন অন্যান্য ফসল উৎপাদন হতো।
প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে দারিদ্র্য হ্রাস ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন। এ ছাড়া পানির ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি সংগঠন গঠনের পরিকল্পনাও ছিল।

স্থানীয়রা জানান, শুরুতে কৃষকদের বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করা হতো। পরে বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতে প্রতি শতকে এক কেজি ধান নেওয়া শুরু হয়। বিনিময়ে কৃষকরা প্রয়োজনীয় পানি পেতেন। এভাবেই ধান চাষ হতো। পরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি সেচপাম্পই বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৯ সালে পাম্প সংস্কারে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৯ হাজার টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।

কমলাপুর গ্রামের কৃষক সঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, ‘সেচপাম্প চালু থাকলে নামমাত্র মূল্যে পানি পেয়ে আমরা ফসল ফলাতে পারতাম। এখন বেশি খরচে পানি দিয়ে চাষ করতে হয়।’

কৃষক প্রণব রায় বলেন, ‘সেচপাম্পটি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। পাম্প চালু থাকলে স্বল্প খরচে ফসল ফলানো যেত। এখন ডিজেলে শ্যালোমেশিন চালিয়ে সেচ দিতে হয়। খরচ বেশি হয়, লাভ কমে যায়।’

গন্ধব্যখালী সেচপাম্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সাল পর্যন্ত সেচপাম্প চালু ছিল। এর পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আবার চালু হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।’

পাম্প অপারেটর ইয়ামিন দফাদার বলেন, ‘আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করছি। এ সময়ের মধ্যে সেচপাম্পগুলো বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন।’

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‘এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে এডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া মেরামতের জন্য বাজেট চাহিদাপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। বাজেট পেলেই কাজ করা হবে।’