
লক্ষ্মীপুরে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মো. শাহজাহান নামের এক যুবক। তার উদ্যোগ জেলার কৃষি খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শাহজাহানের উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহার করে এখন বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করছেন এলাকার কৃষকরা। তার উদ্যোগ কৃষি ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হয়েছে। বিশেষ করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে সাহায্য করছে।
শাহজাহান সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ছিল নজিব উল্লাহ। একসময় শাহজাহান ব্রিকফিল্ডে মাঝির কাজ করতেন। কিন্তু জীবনে কিছু ভিন্ন করতে চাইলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে দুটি রিং ব্যবহার করে শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উৎপাদিত সারের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এর ফলে কৃষকরা তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বাজারে চাহিদা বাড়লে শাহজাহান ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট ট্রেডার্স’ নামে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেন। এ খামারে তিনি ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের ১১টি পৃথক হাউজ তৈরি করেন। প্রতিটি হাউজে ১২-১৪ কেজি গোবর ও ৫ কেজি কেঁচো দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১ টন কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। সব মিলিয়ে তার খামার থেকে মাসে ১২ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হয়। যেটা তিনি প্রতি কেজি ১৫ টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করেন।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেঁচো সার ব্যবহার করে সবজি খেতের উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়। কেঁচো সার সবজির জন্য বেশ উপকারী। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে পারার কারণে খরচও কমে গেছে। এতে ফলনও ভালো হচ্ছে।’ কৃষক ওসমানও বলেন, ‘কেঁচো সার ব্যবহার করে খেতের ফলন ভালো হয়েছে। এটি মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।’
শাহজাহান বলেন, ‘কৃষকরা যাতে নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারেন, ওই লক্ষ্যেই কাজ করছি। প্রতি মাসে আমার খামারে উৎপাদিত দেড় লাখ টাকার কেঁচো সার বিক্রি করি। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো নিট আয় হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে প্রায় ২০০ কেজি কেঁচো রয়েছে। যেটা আমি বিক্রি করছি। বর্তমানে বেশ কয়েকজন নতুন উদ্যোক্তা আমার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছেন। ২৫ জন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, ‘নিয়মিত শাহজাহানের ভার্মি কম্পোস্ট খামার পরিদর্শন করি। কৃষকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিই। কেঁচো সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে জমিতে কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আমরা কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে কেঁচো সারের চাহিদা বেড়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা এই খাতে আসছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এটি ঝুঁকি ও পরিশ্রম কমিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে পারে।’