
যশোরে আলু বীজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। দাম একটু কম হলেও ভালো ফলন পাওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যশোর অফিসের সঙ্গে তিন শতাধিক কৃষক আলু বীজ উৎপাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ আছেন। এসব কৃষক চলতি বছর ১ হাজার টন বীজ আলু উৎপাদন করেছেন। বিএডিসির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কৃষকরাও বীজ আলু সংরক্ষণ করছেন। যেটা আগামী বছর বীজের ঘাটতি পূরণ করবে। স্থানীয় বাজারের পাইকারি দর থেকে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম পান চুক্তিবদ্ধ আলুচাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বিঘাপ্রতি আলুর উৎপাদন বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ মণ। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কমলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।
কৃষকরা জানান, সদর উপজেলার নোঙরপুর ও কোদালিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৯০ জন চাষি বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে আলু বীজ উৎপাদন করেন। প্রথমে এলাকায় আলুগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে বীজ উপযোগী আলু আলাদা করা হয়। পরে তা বস্তায় ভরে বিএডিসির ট্রাকে করে আলু বীজ সংরক্ষণ গুদামে পাঠানো হয়। নোঙরপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে আমরা এলাকায় ৯০ জন চাষি এবার আলু চাষ করেছি। আমি এই ব্লকের ব্যবস্থাপনা করি। বিএডিসির বীজ ওই কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করেছি। আমি নিজেও এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমার নিজের উৎপাদিত ৫০ কেজি ওজনের ২০০ বস্তা আলু বীজ ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছি। আরও ২০ বস্তা দিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর বিএডিসি থেকে আলু বীজ মানভেদে ৩৪ ও ৩৬ টাকা দাম পেয়েছি। এ বছর তুলনায় একটু কম। কিন্তু উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। আর খাওয়ার আলুর দাম আশা করছি, গত বছরের মতোই ভালো দাম পাব।’
কোদালিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছি। ৩৩ শতকের বিঘাতে এ বছর ১০০ মণ করে আলু উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ বেশি উৎপাদন হয়েছে। যে কারণে বাজারে আলু দাম এবার একটু কম। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করেছি। এবার তা ১৯ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় খরচ পুষিয়ে যাচ্ছে।’
কৃষকরা জানান, এ বছর বীজ, সার-বালাইনাশক, চাষ, সেচ, শ্রম ও জমির ইজারামূল্য সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি গড়ে ৮৫ মণ উৎপাদন ও ১৮ টাকা কেজি দর অনুযায়ী বিঘাপ্রতি কৃষকের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকছে। আলু বীজের দাম কেজিপ্রতি বাজার ছাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি পান কৃষক। সে হিসাবে আলু বীজ উৎপাদন করে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভবান হবেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক সমরেন বিশ্বাস বলেন, এ বছর যশোর জেলার আটটি উপজেলায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৩৭৭ টন। যেখানে গত বছর আবাদ ছিল দেড় হাজার হেক্টরে। উৎপাদন ছিল ৩৫ হাজার টনের মতো। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরে আলু চাষ ও উৎপাদন উভয় বেড়েছে।’
বিএডিসি যশোরের উপপরিচালক (বীজ) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বছর যশোর জেলা থেকে ৭৩৯ টন বীজ আলু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫০ টন সংগ্রহ শেষ হয়েছে। জেলার ১৭টি ব্লকে তিন শতাধিক চুক্তিবদ্ধ কৃষকের মাধ্যমে ১৪৩ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংগ্রহ শেষে বাজার দর পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কমিটি কৃষকের বীজ আলুর দাম নির্ধারিত করবে। এরপর কৃষকের পাওনা টাকা মেটানো হবে।’