
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার যুবক মিলন ইসলাম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে হয়ে উঠেছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইউটিউব চ্যানেল ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা মিলন ইসলাম দিনাজপুর কেবিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়েই তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার বীজ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
মিলন ইসলামের প্রচেষ্টায় তার গ্রামে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। একসময় যারা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না, এখন তার কাছ থেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকায় তিনি ‘পেঁয়াজ মিলন’ নামে পরিচিত হয়েছেন।
এ বছর মিলন ইসলাম ১২৫ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। তার প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার শতাধিক কেজি বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি এক একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ পেঁয়াজও উৎপাদিত হবে।
মিলন বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। এখন প্রতিদিন ফুলে হাত বুলিয়ে পরাগায়ন ঘটাতে হয়। মাঝে মাঝে পানি দিতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বীজ হারভেস্ট করা যাবে।’ বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিলের পরেই বীজ বিক্রি করলে প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে।’
এই ১২৫ শতক জমিতে তার খরচ হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে তিনি আশা করছেন, এতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হবে। পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করে পরে উৎপাদন করাও সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক কুমার রায় জানান, ‘মিলন ইসলামের সফলতা দেখে আমিও আগামীতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছি। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
মিলন ইসলাম নিজেই উৎপাদিত বীজ প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করছেন। সিড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বীজ ব্যবস্থাপনা ও বিপণনে তিনি ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘বিরল উপজেলার মাটি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। মিলন কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শতভাগ প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করছেন। বীজ সংরক্ষণকারী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই তার বীজ কিনে নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই পেঁয়াজের বীজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়লে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না।’