
কিছুদিন আগেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গাছে ঝুলছিল লাল টসটসে টমেটো। চাষিদের মনে ছিল আনন্দ, ভালো ফলনে আসবে সচ্ছলতা। কিন্তু এখন সেই টমেটো তুলতে চাইছেন না তারা। বাজারে দরপতন হওয়ায় ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে দিশেহারা চাষিরা।
হিমাগার নেই, ক্ষতির মুখে কৃষক
কমলগঞ্জ কৃষিনির্ভর এলাকা। কিন্তু এখানে নেই কোনো হিমাগার। ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে পানির দরে ফসল বিক্রি করছেন। নাহলে পচে যাবে কষ্টের ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকদের উৎসাহ কমছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। কেউ কেউ গ্রাফটিং পদ্ধতিতে সারা বছর টমেটো চাষ করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হতাশ।
বাজারে দাম কম, জমিতেই নষ্ট ফসল
চাষিরা বলছেন, জমিতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বাজারে দর এত কম যে, তা তুলতে গেলে খরচই বেশি পড়ে। শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠছে না। তাই অনেকেই জমিতেই ফেলে রাখছেন ফসল।
মাধবপুর এলাকার চাষি সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ‘টমেটো তুলে, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে তিন থেকে চার টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি পড়ে, লাভ নেই। তাই তুলছি না, জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।’
আগে পাইকাররা মাঠ থেকেই টমেটো কিনতেন। এখন তারা আসছেন না। চাষি কামাল মিয়া বলেন, ‘বিক্রি করে যা পাব, খরচ তার চেয়ে বেশি। তাই তুলছি না। জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
হিমাগারের দাবিতে কৃষকরা
কমলগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাইমুন নামে এক কৃষক বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাপারীরা স্বল্প দামে কিনে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। হিমাগার থাকলে আমরাও সংরক্ষণ করতে পারতাম।’
দাম কমার কারণ কী?
স্থানীয় আড়তদার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস আগেও টমেটো ৮-১০ টাকা কেজি ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকায়। এত কম দামে চাষিরা ক্ষতির মুখে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘যারা আগাম চাষ করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে অন্যান্য সবজি থাকায় দাম কমেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পরের ফসলের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’
প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত হিমাগার স্থাপন সম্ভব হবে।’ চাষিরা এখন হিমাগারের আশায় দিন গুনছেন। তারা চান, যেন তাদের কষ্টের ফসল ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। নয়তো তারা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।