ঢাকা ১২ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আলুখেতে কম সার প্রয়োগে খরচ কমবে ২৫০ কোটি টাকা
মুন্সীগঞ্জের একটি খেতে আলু তুলছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

মুন্সীগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জমিতে কৃষকরা আলু তুলছেন। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যেই এসেছে স্বস্তির খবর—কম সার ব্যবহার করেও আলুর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি মৌসুমে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য ওঠে এসেছে।

কম সারে সাশ্রয়

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ টন। পরীক্ষামূলকভাবে ৩০০ কৃষকের জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫০ কৃষকের জমিতে তৈরি করা হয় প্রদর্শনী প্লট। এতে শতাংশপ্রতি মাত্র তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচ কেজি করে সার প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, জেলার অন্য কৃষকরা সাধারণত শতাংশপ্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি সার ব্যবহার করেন।

ফলনে তেমন পার্থক্য নেই

পরীক্ষামূলক ফলাফলে দেখা গেছে, কম সার ব্যবহারে আলুর উৎপাদন প্রায় একই রকম হয়েছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে কম সার ব্যবহার করা জমিতে ভালো মানের আলু পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার সুখবাসরপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম ৮০ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়। তিনি জানান, ‘কম সার ব্যবহৃত জমিতে শতাংশপ্রতি সাড়ে তিন মণ আলু পেয়েছি। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি মাত্র সোয়া তিন মণ।’

একই উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহিদা ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তিনি জানান, ‘কম সার দেওয়া জমিতে শতাংশপ্রতি পেয়েছি পৌনে তিন মণ আলু। অন্যদিকে, বেশি সার ব্যবহৃত জমিতে পেয়েছি প্রায় তিন মণ।’
বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুরুতে যখন কম সার ব্যবহার করি, তখন অন্য কৃষকরা হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় এখন তারাই আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছে।’

খরচ কমিয়ে লাভের সম্ভাবনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে আসছেন। এতে উৎপাদন খরচ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যায়। প্রতি বছর সারের দাম বাড়ায় চাষে খরচও বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। শতাংশপ্রতি তিন থেকে ছয় কেজি সার ব্যবহার করেও ভালো আলু উৎপাদন সম্ভব। যেখানে সাধারণ কৃষকরা ব্যবহার করেছেন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ফলাফলে দেখা গেছে, বেশি সার দিলেও ফলনে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কৃষকরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তাহলে এক মৌসুমেই অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকদের লাভও বাড়বে।’

পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ

কম সার ব্যবহার শুধু খরচই কমাবে না, এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী হবে। অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এতে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়। তাই কম সারে ভালো ফলন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে, বেশি সার দিলেই ভালো ফলন হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলেই ভালো উৎপাদন সম্ভব। এবার পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় আগামীতে আরও কৃষক কম সার ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকতে পারেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মুন্সীগঞ্জের এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আলু চাষিদের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

উচ্চফলনশীল তামাকপাতা চাষ করে বিপাকে লামার কৃষকরা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
উচ্চফলনশীল তামাকপাতা চাষ করে বিপাকে লামার কৃষকরা
ছবি: সংগৃহীত

বেশি ফলন হলেও খুশি নন লামার তামাক চাষিরা। এবারের মৌসুম তামাক চাষের জন্য অনুকূল ছিল। উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যের চেয়েও বেশি। কিন্তু ফলন বেশি হওয়ায় এখন বিপদে পড়েছেন কৃষকরা। সাধারণত এ সময়ে পাতা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। এ বছর বাজারে তেমন গতি নেই। এখনো খেতে দোল খাচ্ছে হালকা হলুদ রঙের তামাকপাতা। যদি বৃষ্টি নামে, পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। চাষিরা পড়বেন বড় ক্ষতির মুখে।

জানা গেছে, অধিক ফলনে উৎসাহ দিলেও এখন কোম্পানিগুলো আগ্রহ হারিয়েছে। ঋণের টাকা আর কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ পাতা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। এ তামাকের জন্য তারা হারিয়েছেন স্বাস্থ্য, জমির উর্বরতা, পানি, বন ও বিশুদ্ধ বাতাস।

প্রতিটি তামাকপাতা যেন কৃষকের রক্ত-ঘামের ফসল। গুঞ্জন রয়েছে, একটি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের নিবন্ধিত চাষিদের এক ধরনের ‘ভ্যারাইটি’ বীজ সরবরাহ করেছিল। এর ফলে এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে।

তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি নজরদারি নেই। ফলে বসতবাড়ি, পানির উৎস ও পাহাড় বাদে সর্বত্রই তামাক চাষ হয়েছে। এই পাতাগুলো কিউরিং করতে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে পাহাড়ি সবুজ বন। বন ধ্বংসের পরিমাণ উদ্বেগজনক।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি, মাতামুহুরী নদীর পাড়ে পলিমাটিসমৃদ্ধ লামায় প্রথম তামাক চাষ শুরু করে ‘ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ’। স্থানীয় কৃষকদের ‘ব্যবসায়িক অংশীদার’ বানিয়ে তারা নানা সুবিধার কথা বলে চাষে উৎসাহ দেয়। তখন সরকারিভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়নি। বরং প্রভাবশালীরা করপোরেট স্বার্থে রাষ্ট্রকেও এই ব্যবসায় যুক্ত করেছে। এরপর কোম্পানির নাম হয় ‘ব্রিটিশ আমেরিকান বাংলাদেশ টোব্যাকো’। ’৯০-এর দশক থেকে তামাক চাষ দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে স্থানীয় পুঁজিপতিরাও এতে যুক্ত হন। একসময়কার সবুজ বনভূমি আজ তামাক চাষের করাল গ্রাসে।

কোম্পানিগুলো বাজার নিশ্চয়তা, আগাম বিনিয়োগ, সার্বক্ষণিক নজরদারি, বনায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার নাম করে তামাক চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহিত করে। এমনকি কৃষকের সন্তানদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থাও করে। এসব উদ্যোগ সরকার ঘোষিত তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির বিপরীত। তবুও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নীরব।

হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। এমন দৃশ্য দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। যদিও প্রতি বছর চাষ কমানোর কথা বলা হয়, বাস্তবে তা বাড়ছেই। নিবন্ধিত কয়েকজন চাষি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তামাকপাতা কেনার ক্ষেত্রে কোম্পানির আগ্রহ কম। তারা আমাদের নতুন ‘ভ্যারাইটি’ বীজ দিয়েছিল। খেতে ফসল দেখে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কিউরিং করার পর পাতার রং কালো হয়ে গেছে। এই পাতাগুলো নিম্ন গ্রেডের হয়, দামও কম। এমনকি কোম্পানি কিনবে কি না, তাও বলা যাচ্ছে না।’

এ অবস্থায় নিবন্ধিত চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। ‘ব্রিটিশ আমেরিকান বাংলাদেশ টোব্যাকো’ কোম্পানির লামা লাইনঝিরি ডিপো ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাওরপারে চলছে ধান তোলার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
হাওরপারে চলছে ধান তোলার প্রস্তুতি
মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাদিপুর এলাকার একটি ধান মাড়াইয়ের খলায় বোরো ধান সেদ্ধ করছেন কিষানি। খবরের কাগজ

শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত বোরো ধান এখন গোলায় তোলার প্রস্তুতি চলছে। হাওরের বুক জুড়ে এই ব্যস্ততা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানির অবসরের সময় নেই। কেউ ধান কাটছেন। কেউ ওই ধান কাঁধে বা মাথায় বয়ে আনছেন। অন্যদিকে চলছে ধান মাড়াই। সঙ্গে ধান সেদ্ধ ও শুকানোর কাজ। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামে।  

গত রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে কাউয়াদীঘি হাওরের বানেশ্রী, রায়পুর, জুমাপুর ও কাদিপুর এলাকায় দেখা যায়, ফসল তোলার মহোৎসব। সেদ্ধ ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে।  

স্থানীয়রা জানান, হাওরের বুকে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ধান মাড়াইয়ের খলা। চাষিরা ধান কেটে নিয়ে আসেন নিজ নিজ খলায়। এখানেই মাড়াই, সেদ্ধ, শুকানো ও চাল তৈরির কাজ চলে। পরে ওই চাল নিয়ে যান বাড়িতে।  

কাদিপুরের এক খলায় দেখা গেল কিষানি সুমতী দাশ ধান সেদ্ধ করছেন। বয়স চল্লিশের মতো। তিনটি বড় পাতিলে ধান রেখেছেন। পানি মেপে ঢালছেন। একটু পর ওই ধান সেদ্ধ হবে। সুমতী দাশ বলেন, ‘আগে মা-দাদিরা মাটির হাঁড়িতে ধান সেদ্ধ করতেন। এখন আমরা সিলভার পাতিলে সেদ্ধ করি। লোহার দণ্ড দিয়ে তৈরি চুলায় আগুন জ্বালি। জ্বালানি হিসেবে খড় ব্যবহার করি।’ তিনি জানান, এক একটি পাতিলে ৪০ থেকে ৪২ কেজি ধান সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ করতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।  সুমতী আরও বলেন, ‘সেদ্ধ ধান শুকানো হয় ত্রিপলের ওপর বা মাটির খলায়। রোদ থাকলে শুকাতে দুই থেকে তিন দিন লাগে। কিন্তু বৃষ্টি হলে সমস্যা হয়।’  

আরেক কিষানি বিনতা রানি সরকার বলেন, ‘সারা দিন কাজ করতে হয়। পুরুষরা ভোরে মাঠে যান। আমরা দুপুরে ঘরের কাজ শেষে ধান সেদ্ধ, শুকানো ও খড় শুকানোর কাজ করি। শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সেদ্ধ ধান থেকে চাল হলে আমাদের কষ্টের আনন্দ হয়। পরদিন আবার নতুন দিনের কাজ শুরু করি।’ 

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত থাকলেও তাদের মুখে নেই কোনো ক্লান্তি। এই ব্যস্ততাই তাদের স্বপ্ন। ফসল ভালো হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। আর ফসল ঘরে তুলতে পারলে তবেই কষ্ট সার্থক হয়।

যশোরে মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম
যশোরে মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ
যশোরের চৌগাছা উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের মাচায় ঝুলছে এক বোঁটায় ৩০ লাউ। খবরের কাগজ

সাধারণত থোকায় থোকায় আম কিংবা লিচু চোখে মেলে। কিন্তু বাঙালির খাবারের তালিকায় থাকা জনপ্রিয় সবজি লাউ এরকম থোকায় ধরা খুব একটা দেখা যায় না। মাচায় লাউ ঝুলবে সারি সারি এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এক থোকায় ৩০টি লাউ ধরা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম ওসমান আলীর বাড়িতে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য তার লাউগাছের একটি থোকায় (গাছের শাখার সংযোগস্থল) ৩০টি লাউ ধরেছে। এ ঘটনা এলাকায় আলোড়োন সৃষ্টি করেছে। ফলে এলাকার উৎসুক মানুষ ওই লাউগুলো দেখতে ভিড় করছেন। এর সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খুঁজছে কৃষি বিভাগও। 

ওসমান আলীর বাড়িতে গেলে দেখা যাচ্ছে, বড় লাউ মাচায় একটি থোকায় ৩০টির মতো লাউ ঝুলে আছে। এরমধ্যে একটি লাউয়ের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। আর অন্যগুলো ১০০ গ্রামের মতো ওজন হবে। তবে ছোটগুলো যে নষ্ট হয়ে যাবে তা মনে হচ্ছে না। এগুলো বড় হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

ওসমান আলী বলেন, ‘বাড়িতে থাকা বীজ দিয়ে লাউয়ের চারা তৈরি করি। প্রথম থেকে গাছে ভালোই বড় বড় লাউ ধরে। ইতোমধ্যে কিছু লাউ খাওয়াও হয়েছে। এবং কিছু লাউ প্রতিবেশীদের দেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে হঠাৎ একই থোকায় কয়েকটি লাউ দেখতে পাই। এক থোকায় অনেক লাউ দেখে কিছুটা হতবাক হই। কিছু দিন যেতে না যেতে দেখি ওই একই বোটার (গাছের শাখার সংযোগ স্থল) ফেটে অসংখ্য লাউ ধরছে। এর মধ্যে ৩০টির মতো লাউ একই স্থানে ধরেছে। সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বড়ও হচ্ছে। দেখে মনে হয় একটি থোকায় সব লাউ ঝুলে আছে। এ খবর এলাকায় চাউর হয়ে গেলে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এ অস্বাভাবিক লাউ ধরা দেখতে আসছেন।’

ওসমান আলীর ভাই লোকমান হোসেন বলেন, ‘জীবনে প্রথম দেখলাম এমন লাউ ধরার ঘটনা। একটি বোটায় একসঙ্গে ৩০টি লাউ ধরা আমার কাছে আশ্চর্য ঘটনা মনে হয়েছে। এ ঘটনা শুনে আশপাশের আত্মীয়স্বজনও বাড়িতে আসছেন দেখার জন্য।’

চৌগাছা বাজার থেকে লাউ দেখতে যান মাসুদ হাসান টিপু। তিনি বলেন, খবর শুনে আমি লাউ দেখতে গেছিলাম। আমি দেখে তো অবাক হয়ে গেছি। লাউয়ের একটি থোকায় ৩০টি লাউ ধরা- আমার কাছে অলৌকিক মনে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এমন ঘটনা আমার চাকরি জীবনে প্রথম দেখলাম। হতে পারে এক বোটা থেকে অনেকগুলো ফুল হয়েছে এবং সেগুলো সঠিক পরাগায়ণ হওয়ায় লাউগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খোঁজার জন্য গবেষণা করা হবে।’

ধান কাটায় বাড়তি খরচ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ধান কাটায় বাড়তি খরচ
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় একটি খেতে শ্রমিকরা ধান কাটছেন। খবরের কাগজ

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে হারভেস্টার মেশিন কম থাকায় অনেককে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে মেশিন মালিকরা। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় উপজেলার কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ বলছে, নির্ধারিত দামের বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠে আরও মেশিন দরকার।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলায় মোট ১০৮টি হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি মেশিন ইতোমধ্যে বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সচল রয়েছে ৩৮টি মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়।
জানা গেছে, একটি মেশিনের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সরকার ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে এসব মেশিন সরবরাহ করেছে। বাকি ৫০ ভাগ টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। 

কৃষকরা জানাচ্ছেন, মাঠে গিয়ে তারা মেশিন পাচ্ছেন না। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে হারভেস্টার মেশিনগুলো হাওর অঞ্চলে কাজ করছে। এতে পূর্বধলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে বেশি খরচে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

নারান্দিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ১০ কাঠা জমির ধান কাটতে প্রতিজন শ্রমিককে ৭০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়েছে। পরে আবার ২০ মণ ধান মাড়াই করাতে হয়েছে। এতে খরচ অনেক বেড়েছে। মাঠে আরও মেশিন সরবরাহ করা জরুরি।’

গত বোরো মৌসুমে ধান কাটার জন্য কৃষি অফিস থেকে নির্ধারিত ছিল বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা। ওই হিসেবে ৮ শতক জমির ধান কাটার খরচ ৫০০ টাকার কম পড়ার কথা। 

কৃষকদের অভিযোগ, কিছু হারভেস্টার মালিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। তারা বলছেন, এসব মালিককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকিতে মেশিন দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি নজরদারি না থাকায় কিছু মানুষ অতিরিক্ত দামে ধান কেটে লাভ করছেন। হাওরে বেশি মেশিন পাঠানোয় অন্যান্য এলাকার কৃষকরা সমস্যায় পড়ছেন।’

হারভেস্টার মালিক মেঘশিমুল গ্রামের আনারুল সরকার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মেশিনগুলো আবার উপজেলায় ফেরত আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন জাতের ধানের কারণে একেক জায়গায় একটু একটু করে ধান কাটতে হয়। এতে পোষায় না। আবার কখনো ধান বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়। এজন্য মাঝে-মধ্যে একটু বেশি টাকা নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে একটি মেশিন নিয়েছিলাম। কিন্তু এক সিজন কাটার পরই মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েকবার মেশিন মালিকদের নিয়ে সভা করেছি। সভায় প্রতি এক একর জমির ধান কাটার জন্য ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার  টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ এর অতিরিক্ত নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা থাকায় সেখানকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
চিয়া সিড চাষে শিমুলের সাফল্য
নিজের চিয়া সিড খেতে ফসল দেখছেন ও তুলছেন উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। খবরের কাগজ

শেরপুরে প্রথমবার চিয়া সিড চাষ করে সফল হয়েছেন শিমুল মিয়া। তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচে এই ফসল আবাদ করেন। তিন মাসে ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চিয়া সিড চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি কম খরচে লাভজনক ও পুষ্টিকর। কৃষি বিভাগের মতে, চিয়া সিড চাষে পানি কম লাগে এবং দ্রুত ফলন দেয়। শিমুলের সফলতা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে।

শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী উত্তরপাড়া এলাকার মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে শিমুল মিয়া। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি করতে করতে ইউটিউবে কৃষি চাষাবাদ নিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে কৃষিতে আগ্রহ বাড়ে। চাকরি ছেড়ে ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে চিয়া সিডের বীজ সংগ্রহ করেন। জেলায় প্রথমবারের মতো তিনি এই ফসল রোপণ করেন।

শিমুল জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম চিয়া সিড চাষ শুরু করেন। তার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তিন মাসের মধ্যে ফলন পরিপক্ব হয়। বর্তমানে প্রায় ২০০ কেজি ফলন হয়েছে। ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ১ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চিয়া সিড চাষে খরচ কম। রোগবালাইও কম হয়। বাজার মূল্য বেশি থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চিয়া সিড চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এক বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের সুপার শপ এবং অনলাইন বাজারে চিয়া সিডের কেজি দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রিসহ নানা পুষ্টিগুণ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া এটি বাড়তি ওজন কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। চিয়া সিড পৃথিবীর নানা দেশে চাষ হয়।

শিমুলের খেত দেখতে প্রতিদিন কৃষকরা আসছেন। তারা অল্প খরচে লাভজনক চাষাবাদ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণত ধান চাষ করি। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয় না। তবে নতুন ফসল দেখে অনেক ফলন হচ্ছে, দামও বেশি। যদি লাভ বেশি হয়, আমরাও চিয়া সিড চাষ করব।’

কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের দেশে নতুন। আগে জানতাম না। তবে এখন দেখছি, অন্য ফসলের চেয়ে চিয়া সিডের ফলন বেশি। দামও ভালো, আর অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চাষ করা দরকার।’

কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা গম, ভুট্টা, আলু চাষ করতাম, তবে লাভ কম। চিয়া সিডের লাভ বেশি। আশা করছি, আগামী বছর ১-২ একর জমিতে চাষ করব।’ কৃষক 

বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘শিমুল যখন জমি ভাড়া নিল, তখন আমি বললাম, কিছু না লাগাইলে না। কিন্তু শিমুল চিয়া সিড লাগাল। এখন দেখি তার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছে।’

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বর্তমানে এটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। শিমুল ভালো ফলন পেয়েছে। এটি স্বল্প মেয়াদি ফসল, পানির প্রয়োজন কম। সেচের ঘাটতি আছে এমন এলাকায় এটি চাষ করা যেতে পারে। কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’