
বগুড়ায় মরিচ চাষের পরিমাণ কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, কম দামে মরিচ বিক্রি হওয়ায় অনেকেই মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আগামী মৌসুমে আরও কম জমিতে মরিচ চাষ করা হতে পারে। তবে এবার কম জমিতে চাষ হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা রয়েছে। এবার শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ।
বগুড়ার বিখ্যাত লাল মরিচ দেশের ১৭টি বড় ও মাঝারি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে থাকে। এসব মরিচ মূলত সারিয়াকান্দি থেকে আসে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরাঞ্চলের অনেক জায়গায় মরিচের জমিতে এখন ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ হচ্ছে। সারিয়াকান্দিতে কিছু এলাকায় মরিচ চাষ ৫ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বিঘায় ৬ থেকে ৭ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। জমিতে এখনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মরিচ রয়েছে। তিনি জানান, এবার বগুড়ায় শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৯৫ মণ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বগুড়ায় ৪৮ হাজার ৫৫৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৬ বিঘায়। প্রায় ৩ হাজার ৩৯৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ করা হয়েছে। যার কারণে শুকনা মরিচ উৎপাদন কমে গেছে ২৮ হাজার মণ। এ বছর ৪২ হাজার ৪৬২ বিঘায় মরিচ চাষ হয়েছে, যা প্রায় ৪ হাজার বিঘা কম। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
চাষি মো. শফিউল ইসলাম বুদু (৬২) সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ী এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা ভালোমানের শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। দেশে উৎপাদিত মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে।’ এই কারণে মসলা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া থেকে মরিচ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর আগে এসব প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মরিচ কিনত। এখন তা অনেক কমেছে।
চাষি মো. বিস্কুট বলেন, ‘আগে ধান, পাট, মরিচ ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে মরিচের জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেছি। এ বছর ২৫ শতাংশ জমিতে মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করেছি।’
মো. আবু সাহেদ প্রামাণিক জানান, তার জমির পরিমাণ প্রায় ৪৮ বিঘা। তিনি বলেন, ‘সব খরচ বাদে এক মণ কাঁচা মরিচ বিক্রির পর হাতে থাকে ২৫০-২৬০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না।’
এদিকে চরবাটিয়া গ্রামের সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, ‘মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম কম। তাই আমি গত বছরের মতো এবারও কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।’ মরিচ চাষে লাভ কম। তাই কৃষক এখন অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। মরিচের বাজার দর কমে যাওয়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন ভালো থাকায় লক্ষ্য পূরণে সমস্যা হবে না।