ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

নড়াইলে ধান কাটা শুরু: ভালো ফলন, খুশি কৃষক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
নড়াইলে ধান কাটা শুরু: ভালো ফলন, খুশি কৃষক
খেতে ধান কাটছেন কৃষিশ্রমিকরা। খবরের কাগজ

বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি রঙের পাকা ধান। তাজা রোদে যেন কৃষকের স্বপ্ন হাসছে। মাঠজুড়ে এই পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষানিরা। কেউ কেউ ধান কেটে ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। এসব আঁটি দিয়ে তৈরি হবে বিচালি। এই আঁটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে মেশিনে মাড়াই করা হবে। রোদে শুকানো হবে ধান। এর পর শুকনো ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করা হবে। পরে তা সংরক্ষণ করা হবে নিজের গোলায়। তাই কৃষক পরিবারের সবাই এখন ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক খুশি।

বুধবার (১৬ মার্চ) সকালে মাঠে ধান কাটছিলেন কয়েকজন নারী ও পুরুষ। ঝলমলে রোদ আর মৃদু হাওয়ায় তারা কাজ করছিলেন।
কৃষক মোস্তাফিজুর মোল্যা বলেন, ‘সারা বছরের খরচ ধান থেকে ওঠে। ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারা বছর খাওয়ার চিন্তা থাকে। মেঘ-বৃষ্টি আসার আগেই ধান ঘরে তুলতে হবে।’

তিনি জানান, বনগ্রাম মাঠে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন।

বনগ্রামের বর্গাচাষি অজিত বিশ্বাস বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি। এর এক-তৃতীয়াংশ দিতে হবে জমির মালিককে। দুই ভাগ থাকবে আমার। এবার ফলন ভালো হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি না থাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ধানের খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আমার এক বিঘায় ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। প্রতি মণের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা।’ 
অজিত বিশ্বাস বলেন, ‘বর্গাচাষে লাভ হয় না। বাড়িতে চারটি গরু আছে। গরুগুলো খড় খায়। তাই লোকসান হলেও ধানের চাষ করি।’ কৃষানি অনিতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে আনার সামর্থ্য নেই। তাই স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজের জমির ধান কাটছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ধান ঘরে তুলতে হবে। যেকোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তাহলে সমস্যায় পড়ব।’

কৃষক দুলাল বলেন, ‘এই মৌসুমে সেচ সংকট হয়নি। আবহাওয়াও ভালো ছিল। আর ১৫ দিন সময় পেলে ধান কাটা শেষ হবে। বৈশাখে রোদ যত বেশি হবে, তত ভালো হবে।’ কৃষক ইশারত শেখ বলেন, ‘এ বছর সময়মতো সার-কীটনাশক পেয়েছি। ধানে রোগবালাই হয়নি বললেই চলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে সার, কীটনাশক, প্রকল্প প্রণোদনা আর পরামর্শ পেয়েছি। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।’ এই লাভে তিনি নতুন আশা দেখছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৪২ হাজার টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি। চাষ হয়েছে আরও ১০ হেক্টর বেশি জমিতে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর। চাষ সহজ করতে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়।’

ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৭ এএম
ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়
ঈশ্বরদীতে একটি বাগানের গাছগুলো লিচু শূন্য। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দিন-রাতের তাপমাত্রার তারতম্য, অসময়ে বৃষ্টি ও খরার কারণে গাছে মুকুল কম এসেছে। অধিকাংশ গাছে নতুন পাতা এসেছে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গত বছর লিচুর বিক্রি হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকার। এবার উৎপাদন অনেক কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন কম হলেও দাম বাড়তে পারে। এতে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা আছে।

ঈশ্বরদীতে প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু ও বিখ্যাত বোম্বে লিচু উৎপাদিত হয়। এ লিচুর সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। তবে এবার অধিকাংশ লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা এসেছে। উপজেলার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে এ অবস্থা দেখা গেছে। এতে চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

চাষিরা জানান, আগেও মুকুল কম আসার ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের মতো ফলন বিপর্যয় কখনো হয়নি। ফেব্রুয়ারির শুরুতে মুকুল আসার সময় হঠাৎ অসময়ে বৃষ্টি হয়। এরপর মুকুলের পরিবর্তে গাছে নতুন পাতা আসতে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ রয়েছে। বাগানের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৬০টি। গাছ রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজারটি। প্রতিটি পরিপূর্ণ গাছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার লিচু ধরে।

এ ছাড়া বাড়ির ভিটা জমিতে ২ থেকে ৪টি করে লিচু গাছ রয়েছে। উপজেলার ছলিমপুর, সাহাপুর, পাকশী, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় শত শত লিচুর বাগান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে ছলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নে। এখানে মোজাফফর ও বোম্বে জাতের লিচুর আবাদ বেশি হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৭০-৭৫ শতাংশ বাগানের গাছে এবার মুকুল নেই। কিছু কিছু বাগানে নামমাত্র মুকুল এসেছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।

চাষিরা জানান, সাধারণত জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে মুকুল আসে। এবার মুকুল আসার ঠিক আগে বৃষ্টির কারণে কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসেনি। বরং গাছে নতুন পাতা এসেছে।

কৃষি অফিস জানায়, গত বছর ঈশ্বরদীতে লিচুর বিক্রয়মূল্য ছিল ৪০০ কোটি টাকা। এর আগের বছর ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এবার মুকুল কম আসায় ১৯ হাজার ৪৫০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১০ হাজার ৬৫০ টন কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন আরও কমতে পারে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, ঈশ্বরদীতে প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। 

ছলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের ইমরান মণ্ডলের ২৮টি লিচুর গাছ রয়েছে। তিনি জানান, এবার তার গাছগুলো থেকে ২ হাজার ৮০০টি লিচু পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, ‘মুকুল আসার আগেই বৃষ্টি হয়। এরপর নতুন পাতা আসে। পরে আর মুকুল আসেনি।’
সাহাপুর ও ছলিমপুর ইউনিয়নে সাতটি বাগান কিনেছিলেন লিচু ব্যবসায়ী আবুল বাশার প্রামাণিক। তিনি জানান, তিন শতাধিক গাছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মুকুল এসেছে। এখন গুটি ধরলেও প্রচণ্ড গরমে তা ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আগের বছর লাভ হয়েছিল। এবার ৫-৬ লাখ টাকা লোকসান হবে।’

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না বলেন, ‘আবহাওয়ার তারতম্যে এবার অধিকাংশ গাছে কম মুকুল এসেছে। বিশেষ করে মুকুল আসার আগ মুহূর্তে বৃষ্টির কারণে এ সমস্যা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফলন কম হলেও দাম বেশি হবে। এতে চাষিরা কিছুটা হলেও লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।’

ফলি মাছ চাষে টিটুর সাফল্য

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ফলি মাছ চাষে টিটুর সাফল্য
মৎস্যচাষি টিটু খানের পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

সাধারণত ফলি মাছের দেখা মেলে হাওর, বাঁওড় ও বিলে। একসময় প্রায়ই জেলেদের জালে ধরা পড়ত ফলি মাছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দেশীয় মাছের মতো ফলিও হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশের অধিকাংশ উন্মুক্ত জলাশয়ে এখন আর ফলির দেখা মেলে না।

হারিয়ে যাওয়া এই মাছটি এবার পুকুরে চাষ করছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসফেরত মৎস্যচাষি টিটু খান। দুই বছর ধরে তিনি কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে ফলি মাছ চাষ করছেন। এতে সফলতাও পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরও অনেকে এখন পুকুরে ফলি মাছ চাষ শুরু করেছেন।

মাছ চাষের আগে টিটু খান দুবাইয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দেশে ফিরে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এরপর পিকেএসএফের অর্থায়নে এবং এসডিএসের সহযোগিতায় দুই শতক জমির পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে ফলি মাছ চাষ শুরু করেন।

টিটু খান বলেন, ‘দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনতে এসডিএস উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ফলি মাছ খুব কম দেখা যায়। আমি রুই-কাতল মাছের সঙ্গে ফলি মাছের চাষ শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে ৫০০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছ পুকুরে ছাড়া হয়। পরে ফলির পোনা ছাড়া হয়। ফলি মাছ পুকুরের ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এ জন্য আলাদা কোনো খাবার লাগে না। এই মাছ চাষ করে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। বাজারে ফলি মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে।’

এসডিএসের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ফলি মাছও এই তালিকায় পড়ে। ফলির সঙ্গে কার্পজাতীয় মাছের চাষ চাষিদের জন্য সহজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিকেএসএফের অর্থায়নে এসডিএসের মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তর সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং নানা পরামর্শ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে টিটু খান নামে একজন সফল উদ্যোক্তাকে পেয়েছি, যিনি ফলি মাছ চাষ করে দারুণ সফল হয়েছেন।’

লিচুতে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাগানমালিকরা

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
লিচুতে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাগানমালিকরা
বাগানের লিচুগাছে ওষুধ স্প্রে করছেন এক শ্রমিক। খবরের কাগজ

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুগাছে প্রচুর গুটি ধরেছে। গাছ ভর্তি থোকা থোকা ছোট লিচু দেখে বাগানমালিকরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন। এখন চলছে পরিচর্যার ব্যস্ততা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ বেশি হয়। সুস্বাদু হওয়ায় এসব জাতের লিচুর চাহিদা দেশজুড়ে।

গোবিন্দনগর মুন্সীরহাট এলাকার বাগানমালিক মামুন বলেন, ‘এ বছর লিচুগাছে প্রচুর গুটি এসেছে। এমন দৃশ্য গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনের আশা করছি।’ একই এলাকার আরেক বাগানমালিক আবুল হোসেন বলেন, ‘লিচুর গুটি দেখে আমরা অনেক আশাবাদী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাই না লাগলে এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। দাম ভালো থাকলে লাভবানও হব।’

বাগানগুলোতে ইতোমধ্যে পরিচর্যার কাজ শুরু হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেক মানুষের। মুন্সীরহাট কলোনির বাসিন্দা জুলেখা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লিচুগাছ পরিচর্যার কাজ করি। এতে প্রতিদিন ৪০০ টাকা আয় হয়।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই এখানে চাষ বাড়ছে। এ বছর ২৮১ হেক্টর জমিতে ৬৪১টি লিচু বাগান রয়েছে। কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গুটি ঠিকমতো বড় হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর জেলায় প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।’

গাইবান্ধায় দাম ভালো পাওয়ায় বাড়ছে বাঙ্গি চাষ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
গাইবান্ধায় দাম ভালো পাওয়ায় বাড়ছে বাঙ্গি চাষ
খেত থেকে বাঙ্গি তুলে কাঁধে বাঁশের বোয়ালে নিয়ে যাচ্ছেন এক কৃষক। খবরের কাগজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের তরফকাল, দুর্গাপুর, ভাটপাড়া বালুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এবার ব্যাপক হারে বাঙ্গির চাষ করেছেন। গত বছর বাঙ্গির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধানের পরিবর্তে বাঙ্গির চাষে ঝুঁকেছেন। তারা জানান, বাঙ্গি চাষে খরচ কম, আয় বেশি। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বীজ রোপণ করা হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ফলন ঘরে তোলা যায়। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাঙ্গি কিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী চাষিরা বাঙ্গি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় ক্রমেই বাড়ছে বাঙ্গি চাষ।

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ক্রমেই জেলায় বাঙ্গির চাষ বাড়ছে। এ বছর ৩ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। গত বছর ১ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন চাষি জমিতে বাঙ্গি পরিচর্যা করছেন। কেউ বাঙ্গি সংগ্রহ করছেন। বাঙ্গি তুলে জমির এক কোনায় রাখা হচ্ছে। সেগুলো ভারে করে বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাথায় করে বাঙ্গি বহন করছেন। অনেক ব্যবসায়ী জমিতে এসে বাঙ্গি দেখে দাম ঠিক করছেন।

তরফকাল গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মজিবর রহমান (৪৫) বলেন, ‘ধানের বদলে বাঙ্গি চাষ করে প্রথমবারেই বাজিমাত করেছি।’ তিনি জানান, মাত্র ২৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করে ৪০ হাজার টাকা আয় করেছেন। বাঙ্গি শেষ হলে পাট, পটোল, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করবেন। একটির পর একটি ফসল থেকে তার আয় হবে। মজিবর রহমান বলেন, ‘পৈতৃক সূত্রে ৩ বিঘা জমি পেয়েছি। প্রতিবছর বোরো ধানের চাষ করতাম। তবে গত বছর থেকে ২৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করছি।’ তিনি হিসাব দিয়ে জানান, ২৫ শতকে বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হতো ৯ হাজার টাকা। এই জমিতে ১৪ মণ ধান হতো। প্রতি মণ ৮০০ টাকা দরে ধানের দাম হতো ১১ হাজার ২০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে লাভ হতো ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একই জমিতে বাঙ্গি চাষ করে আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

একই গ্রামের বাঙ্গিচাষি আফজল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিনই খেত থেকে বাঙ্গি তুলতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাপারীরা খেত থেকেই বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। আবার আমরা ভ্যানে করে শহরেও বিক্রি করি।’ প্রতিটি বাঙ্গি আকারভেদে ১০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আগে অল্প চাষ হতো তাই পাহারা দিতে হতো। এখন প্রায় সবাই বাঙ্গি চাষ করছেন, তাই পাহারার তেমন প্রয়োজন হয় না।’ আফজল উদ্দিন জানান, তিনি এ বছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন।

গাইবান্ধার সাত উপজেলার মধ্যে সদরেই সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির চাষ হয়েছে। তবে বাঙ্গিচাষিরা অভিযোগ করেছেন, বাঙ্গি চাষের জন্য নির্ধারিত কোনো কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায় না। তারা অনুমান ভিত্তিতে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেন। মাঠপর্যায়ে কৃষি অফিসাররা যান না। ফলে কৃষকরা সঠিক পরামর্শ পান না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘বাঙ্গি চাষ করে এবার উপজেলার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাঙ্গি ছাড়াও অন্য ফসল করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।’

দাউদকান্দিতে ধানের ফলনে কৃষক খুশি

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
দাউদকান্দিতে ধানের ফলনে কৃষক খুশি
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় চলছে ইরি ধান কাটার উৎসব। কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই ও খড়ের গাদা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সার ও সেচে কিছুটা বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

জিংলাতলী ইউনিয়নের কল্যাণপুর বিলে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত। এই অঞ্চলের সব মাঠে চলছে ধান কাটা। বিআর-২৮, বিআর-১৬, বিআর-২৯, বিআর-৪৬ ও বিআর-৯২ জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষক। 

মোহাম্মদপুর, বিটেশ্বর, মারুকা, দৌলতপুর, পাঁচগাছিয়া ও মালিগাঁও ইউনিয়নের মাঠগুলো সোনালি ধানে ছেয়ে গেছে। সম্প্রতি বিটেশ্বর ইউনিয়নের মাঠে এই চিত্র দেখা গেছে। ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকরা ধান মাড়াই ও খড়ের গাদা দেওয়ার কাজ করছেন। অনেক শ্রমিক তাদের সহযোগিতা করছেন।

ইলিয়টগঞ্জ গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমি ১২০ শতক জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছি। সামান্য খরচে বাম্পার ফলন পেয়েছি।’ একই গ্রামের কৃষক মাহাতি বলেন, ‘আমি ৯০ শতক জমিতে ইরি-বোরো আমনের (ভৈরল) আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। আশা করছি ১৫ মনের বেশি ধান পাব। প্রতি মণের দাম ১ হাজার টাকা। পাশাপাশি গরুর খাবার হিসেবে খড়, আর রান্নার জন্য নাড়াও পাব।’
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় মোট আবাদি জমি ১৫ হাজার ৪৬৫ হেক্টর। চলতি বছর ১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ৩১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।