
বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি রঙের পাকা ধান। তাজা রোদে যেন কৃষকের স্বপ্ন হাসছে। মাঠজুড়ে এই পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষানিরা। কেউ কেউ ধান কেটে ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। এসব আঁটি দিয়ে তৈরি হবে বিচালি। এই আঁটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে মেশিনে মাড়াই করা হবে। রোদে শুকানো হবে ধান। এর পর শুকনো ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করা হবে। পরে তা সংরক্ষণ করা হবে নিজের গোলায়। তাই কৃষক পরিবারের সবাই এখন ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক খুশি।
বুধবার (১৬ মার্চ) সকালে মাঠে ধান কাটছিলেন কয়েকজন নারী ও পুরুষ। ঝলমলে রোদ আর মৃদু হাওয়ায় তারা কাজ করছিলেন।
কৃষক মোস্তাফিজুর মোল্যা বলেন, ‘সারা বছরের খরচ ধান থেকে ওঠে। ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারা বছর খাওয়ার চিন্তা থাকে। মেঘ-বৃষ্টি আসার আগেই ধান ঘরে তুলতে হবে।’
তিনি জানান, বনগ্রাম মাঠে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন।
বনগ্রামের বর্গাচাষি অজিত বিশ্বাস বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি। এর এক-তৃতীয়াংশ দিতে হবে জমির মালিককে। দুই ভাগ থাকবে আমার। এবার ফলন ভালো হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি না থাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ধানের খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আমার এক বিঘায় ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। প্রতি মণের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা।’
অজিত বিশ্বাস বলেন, ‘বর্গাচাষে লাভ হয় না। বাড়িতে চারটি গরু আছে। গরুগুলো খড় খায়। তাই লোকসান হলেও ধানের চাষ করি।’ কৃষানি অনিতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে আনার সামর্থ্য নেই। তাই স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজের জমির ধান কাটছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ধান ঘরে তুলতে হবে। যেকোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তাহলে সমস্যায় পড়ব।’
কৃষক দুলাল বলেন, ‘এই মৌসুমে সেচ সংকট হয়নি। আবহাওয়াও ভালো ছিল। আর ১৫ দিন সময় পেলে ধান কাটা শেষ হবে। বৈশাখে রোদ যত বেশি হবে, তত ভালো হবে।’ কৃষক ইশারত শেখ বলেন, ‘এ বছর সময়মতো সার-কীটনাশক পেয়েছি। ধানে রোগবালাই হয়নি বললেই চলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে সার, কীটনাশক, প্রকল্প প্রণোদনা আর পরামর্শ পেয়েছি। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।’ এই লাভে তিনি নতুন আশা দেখছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৪২ হাজার টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি। চাষ হয়েছে আরও ১০ হেক্টর বেশি জমিতে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর। চাষ সহজ করতে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়।’