
অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় জয়পুরহাটে এবার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ভুট্টা চাষ। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা ঝুঁকেছেন এই চাষে। ভুট্টায় রোগবালাই যেমন কম, তেমনি অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১০ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে এই চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, পোল্ট্রি, মৎস্য ও বেকারির জন্য বর্তমান বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জয়পুরহাটে এবার লাভের আশায় ব্যাপক পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর জেলায় ৮৬০ হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০০ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে হয়েছে ৯৩৫ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৯ টন। ভুট্টা চাষে কীটনাশকের ব্যবহার যেমন কম, তেমনি রোগবালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে ভুট্টা গাছ ও ছোবড়া বিক্রি করে কৃষকরা বাড়তি আয় করেন। বর্তমানে গাছে গাছে ভুট্টার ফুল ও দানা আসতে শুরু করেছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এক বিঘাতে ৩০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে বাজারে ভালো দাম পাওয়া গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হওয়ার আশা করছেন তারা।
সদরের তেঘর কালুপাড়ার কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে গেলে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ফলন ভালো হলে সর্বোচ্চ ৪০ মণ পর্যন্ত হয় বিঘাতে। আর বিক্রিও হয় ৪০ হাজার টাকার মতো। আশা করছি এবার ভালো দাম পাব।’
জামালগঞ্জের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধান ও আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। আমাদের জয়পুরহাটে কয়েক হাজার মুরগির খামার রয়েছে। যাদের খাদ্যের জন্য ভুট্টার অনেক চাহিদা। ভুট্টা বিক্রি করে তো লাভ হয়ই। এ ছাড়া ভুট্টা গাছ ও ছোবড়া কেউ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। কেউ আবার বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করে।’
আউশগাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘লাভ বেশি হওয়ায় আমাদের এলাকায় গত বছরের চেয়ে ভুট্টার চাষ বেড়েছে। বর্তমানে গাছে ভুট্টার দানা আসতে শুরু করেছে। ঝড় না হলে আশা করছি এবার ভালো ফলন হবে।’
তেঘর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ভুট্টা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই। বর্তমানে সেচসহ জমিতে কীটনাশক দিচ্ছি। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কেউ আমাদের কাছে আসেন না। মাঝে মাঝে রোগবালাই দেখা দিলে দোকানদাররা যেসব ওষুধ দেয়। আমরা তাই ব্যবহার করি। আমরা তো সব বুঝি না। কৃষি অফিস যদি এসব বিষয়ে সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হত।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টা উচ্চমূল্যের লাভজনক ফসল। জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পে উন্নত। এ শিল্পে বর্তমানে ভুট্টার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া মাছের খাদ্য ও বেকারিতেও ভুট্টা ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আটা তৈরি করে খাওয়ার উপযোগীও এটি। চলতি মৌসুমে জেলায় ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় বেশি। চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এবার ৩০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ ও কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের কারিগরি পরামর্শসহ বিভিন্ন সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।’