ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

জয়পুরহাটে ১০ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদনের আশা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
জয়পুরহাটে ১০ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদনের আশা
জয়পুরহাটের ভুট্টা খেতে শিষ ধরেছে। খবরের কাগজ

অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় জয়পুরহাটে এবার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ভুট্টা চাষ। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা ঝুঁকেছেন এই চাষে। ভুট্টায় রোগবালাই যেমন কম, তেমনি অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১০ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে এই চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, পোল্ট্রি, মৎস্য ও বেকারির জন্য বর্তমান বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জয়পুরহাটে এবার লাভের আশায় ব্যাপক পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর জেলায় ৮৬০ হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০০ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে হয়েছে ৯৩৫ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৯ টন। ভুট্টা চাষে কীটনাশকের ব্যবহার যেমন কম, তেমনি রোগবালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে ভুট্টা গাছ ও ছোবড়া বিক্রি করে কৃষকরা বাড়তি আয় করেন। বর্তমানে গাছে গাছে ভুট্টার ফুল ও দানা আসতে শুরু করেছে। 

কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এক বিঘাতে ৩০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে বাজারে ভালো দাম পাওয়া গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হওয়ার আশা করছেন তারা।

সদরের তেঘর কালুপাড়ার কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে গেলে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ফলন ভালো হলে সর্বোচ্চ ৪০ মণ পর্যন্ত হয় বিঘাতে। আর বিক্রিও হয় ৪০ হাজার টাকার মতো। আশা করছি এবার ভালো দাম পাব।’

জামালগঞ্জের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধান ও আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। আমাদের জয়পুরহাটে কয়েক হাজার মুরগির খামার রয়েছে। যাদের খাদ্যের জন্য ভুট্টার অনেক চাহিদা। ভুট্টা বিক্রি করে তো লাভ হয়ই। এ ছাড়া ভুট্টা গাছ ও ছোবড়া কেউ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। কেউ আবার বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করে।’

আউশগাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘লাভ বেশি হওয়ায় আমাদের এলাকায় গত বছরের চেয়ে ভুট্টার চাষ বেড়েছে। বর্তমানে গাছে ভুট্টার দানা আসতে শুরু করেছে। ঝড় না হলে আশা করছি এবার ভালো ফলন হবে।’

তেঘর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ভুট্টা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই। বর্তমানে সেচসহ জমিতে কীটনাশক দিচ্ছি। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কেউ আমাদের কাছে আসেন না। মাঝে মাঝে রোগবালাই দেখা দিলে দোকানদাররা যেসব ওষুধ দেয়। আমরা তাই ব্যবহার করি। আমরা তো সব বুঝি না। কৃষি অফিস যদি এসব বিষয়ে সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হত।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টা উচ্চমূল্যের লাভজনক ফসল। জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পে উন্নত। এ শিল্পে বর্তমানে ভুট্টার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া মাছের খাদ্য ও বেকারিতেও ভুট্টা ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আটা তৈরি করে খাওয়ার উপযোগীও এটি। চলতি মৌসুমে জেলায় ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় বেশি। চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এবার ৩০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ ও কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের কারিগরি পরামর্শসহ বিভিন্ন সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।’

পিজিআর ব্যবহারে লিচু নষ্টের অভিযোগ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৭ এএম
পিজিআর ব্যবহারে লিচু নষ্টের অভিযোগ
ক্ষতিগ্রস্ত লিচুগাছের পাশে বাগান মালিক শিহাব উদ্দিন/ খবরের কাগজ

গ্লোবাল এগ্রোভেট লিমিটেড কোম্পানির পিজিআর (ফল বৃদ্ধি হরমোন) ব্যবহার করে পথে বসেছেন বাগান কেনা এক লিচু চাষি। তার অভিযোগ, সাড়ে চার বিঘা জমির লিচু ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে ওই পিজিআর ব্যবহার করে। কৃষি কর্মকর্তা অসময়ে (হার্ভেস্টের আগ দিয়ে) পিজিআর ব্যবহারের কারণে লিচু ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে বললেও ওই কোম্পানির মার্কেটিং কর্মকর্তা দায় নিচ্ছেন না। 

তিনি বলছেন, অন্য কারণে লিচুতে ছত্রাক আক্রান্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ওই কোম্পানিকে দোষারোপ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদহ গ্রামের তুহিন মণ্ডলের কাছ থেকে সাড়ে চার বিঘা লিচু বাগান কিনে নেন পৌরসভার ইছাপুর গ্রামের শিহাব উদ্দিন। তিনি বাগান কিনে হার্ভেস্ট করে খুচরা বিক্রি করেন প্রতি মৌসুমে। বাগান কেনার পর চৌগাছা বাজারের বরকত স্টোর থেকে গ্লোবাল এগ্রোভেট লিমিটেড কোম্পানির পিজিআর কিনে লিচুতে প্রয়োগ করেন। যাতে লিচু আরেকটু ভালো হয়।

শিহাব উদ্দিন জানান, পিজিআর কিনে গত ২১ এপ্রিল সকালে লিচুতে স্প্রে করেন। গত  বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিনি দেখতে পান লিচু ঝরে যাচ্ছে। পরে তিনি কোম্পানির প্রতিনিধি, দোকানি এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরের শরণাপন্ন হন। বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কৃষি অফিসের একটি দল লিচু বাগান পরিদর্শন করেন। এ সময় কোম্পানির প্রতিনিধি ও দোকানি উপস্থিত ছিলেন। 

কোম্পানির প্রতিনিধি তখন বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে লিচু ঝরে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলেন, অসময় ওষুধ ব্যবহারের কারণে লিচু ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। পরে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তারা।

চৌগাছার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, পিজিআর লিচুর বাড়ন্ত সময়ে অর্থাৎ মিষ্টতা আসার আগে প্রয়োগ করতে হয় এবং সেটি গাছের গোড়াতে। এতে লিচু ভালো হয়। অথচ কৃষক প্রয়োগ করেছেন হার্ভেস্টের এক সপ্তাহ আগে। তাও আবার স্প্রে করেছেন লিচুতে। এজন্য বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফলের চামড়াগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। এ কারণে লিচু ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, যেগুলো ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে সেগুলোর কিছু করার নেই। তবে যে লিচুগুলো এখনো ছত্রাকে আক্রান্ত হয়নি সেগুলো যেন আর আক্রান্ত না হয় এজন্য ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে গ্লোবাল এগ্রোভেট লিমিটেড কোম্পানির আঞ্চলিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, আমাদের এটি ব্যবহারের জন্যই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা অন্য খেতে প্রয়োগ করে দেখা হবে। তিনি বলেন, হয়তো অন্য কোনো ওষুধও এর সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে। এজন্যই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি ওষুধটি পাকার মুখেও ব্যবহার ও স্প্রে করলে কোনো অসুবিধা হয় না বলে জানান। 

গোপালগঞ্জ বিনাধান-২৫ সম্প্রসারণে মাঠ দিবস

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩ এএম
গোপালগঞ্জ বিনাধান-২৫ সম্প্রসারণে মাঠ দিবস
গোপালগঞ্জ

বিনা উদ্ভাবিত ধানের উন্নত জাত ‘বিনাধান-২৫’-এর সঙ্গে বিনাধান-২৪, ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-৫৮ প্রয়োগিক পরীক্ষণ মূল্যায়ন ও চাষাবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

গতকাল সোমবার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামে বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে এ কর্মসূচি হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিনার মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ। তিনি ভার্চুয়ালি যোগ দেন। গোপালগঞ্জ বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. হারুন অর রশিদ সভাপতিত্ব করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন কৃষি কর্মকর্তারা ও কৃষক-কৃষানিরা।

বক্তারা জানান, ‘বিনাধান-২৫’ জাতের ধান ১৪০ দিনের স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন হওয়ায় আগাম পাকে। কৃষকরা দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারেন, ফলে ঘন বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। গাছ লম্বা হওয়ায় বাড়তি গো-খাদ্যের চাহিদা মিটছে। এই জাতের ধানে অন্যান্য ধানের তুলনায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। এতে ফলন বাড়ে এবং সেচ ও সার কম ব্যবহৃত হওয়ায় কৃষকরা অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।

বোরো ধানের কমেছে চাষ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ এএম
বোরো ধানের কমেছে চাষ
ছবি : খবরের কাগজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমি হলেও আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসংকটের কারণে বোরো আবাদ কমেছে। কৃষকরা কম সেচ লাগে এমন ফসলে ঝুঁকছেন। আমের বাগান সম্প্রসারিত হওয়ায় ধানের জমি কমেছে। বিএমডিএ আটটি ইউনিয়নে বোরো আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছে।

জেলা কৃষি বিভাগের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন কমবে না। তবে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানি জমির সংকট ঘোচাতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছর পদ্মায় কৃষকের বাড়ি উজাড় হচ্ছে। হাজার হাজার কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাড়িভাঙনের কারণে অনেক মানুষ চরাঞ্চল থেকে তুলনামূলক উঁচু জায়গায় চলে আসছেন। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমিতে বসতি গড়ে উঠছে। মিল-কারখানাও তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বোরো ধানে সেচসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বরেন্দ্র এলাকায় আমের বাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে, যেটা ধানের জমি কমাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে সবুজে ভরা ফসলের মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজের সমারোহ। বোরো ধানের শিষে দোল খাচ্ছে কৃষকের বুকভরা স্বপ্ন। ধানগাছের সবুজ পাতা এবং কাঁচা শিষ দেখে কৃষকরা আনন্দিত। কয়েক দিন পরই ধানের গাছ এবং কাঁচা শিষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানমতে, চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমি। তবে আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৮৬ হেক্টর। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ১৪৯ হেক্টর কম। উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৩৫ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩২০ হেক্টর। অন্যদিকে হাইব্রিড জাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর।

২০০৯ সালে জেলায় আম বাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর, বর্তমানে তা ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টরে পৌঁছেছে। গত ১৫ বছরে আমের বাগান বেড়েছে। তবে ধানসহ অন্যান্য ফসলের জমি ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি কমেছে। শুধু আম বাগানই নয়, মানুষের প্রয়োজনেই বসতবাড়ি, মিল-কারখানাও গড়ে উঠছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এবার আটটি ইউনিয়নে কৃষকদের পানিসংকটের কারণে অন্য ফসল চাষে উৎসাহিত করেছে। এর ফলে বোরো আবাদে কৃষকরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি তৈরি হওয়ার ফলে কৃষিজমি কমছে, আর জনসংখ্যা বাড়ছে। এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য জোগানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করছে। আধুনিক উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহার, কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পতিত জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি ফসল উৎপাদন করে একই জমি থেকে এক ফসলের জায়গায় দুই বা তিনটি ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। এর ফলে বাড়তি জনসংখ্যাকেও খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছর নতুন নতুন আমের বাগান হচ্ছে। কিছু পুরোনো বাগানে নতুন জাতের গাছ লাগানো হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সাথি ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।’

ধামরাইয়ে ৩ দিনব্যাপী কৃষিপ্রযুক্তি মেলা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৮ এএম
ধামরাইয়ে ৩ দিনব্যাপী কৃষিপ্রযুক্তি মেলা
ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে গতকাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিন দিনব্যাপী কৃষিপ্রযুক্তি মেলা শুরু হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

‘কৃষিই সমৃদ্ধি, আমাদের কৃষি আমাদের প্রাণ’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকার ধামরাইয়ে তিন দিনব্যাপী কৃষিপ্রযুক্তি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই মেলা শুরু হয়। 

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। অল্প জমিতে নানা ধরনের ফসল, বিষমুক্ত সবজি, মাছ, নার্সারি ও মাশরুম চাষের জন্য সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করাই এর উদ্দেশ্য। মেলা চলবে ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।

পতিত জমি, বাড়ির উঠান কিংবা পুকুরের আইলে সহজে সবজি চাষ করা যায়-এ কথা জানানোর জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মানুষ যাতে নিজ পরিবারের জন্য সবজি চাষে আগ্রহী হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রদর্শনী রাখা হয়েছে। 

গতকাল মেলায় বিভিন্ন সবজি, মাছ ও মাশরুমের প্রদর্শনী হয়েছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ বিভিন্ন ধরনের ফলজ এবং সবজির গাছ ক্রয় করছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘কৃষি মেলার মাধ্যমে মানুষ কৃষি চাষে সাফল্য অর্জন করবে। কৃষক, ছাত্র ও জনতাকে সচেতন করতে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিষমুক্ত সবজি ও নানা ধরনের গাছপালা রয়েছে। সামনে বর্ষা আসছে, তাই নার্সারির দোকানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখান থেকে মানুষ সবজির চারা কিনতে পারবে। মাসরুম চাষ বাড়ির উঠানেও সম্ভব। পতিত জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সেই লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’ 

ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৭ এএম
ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়
ঈশ্বরদীতে একটি বাগানের গাছগুলো লিচু শূন্য। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দিন-রাতের তাপমাত্রার তারতম্য, অসময়ে বৃষ্টি ও খরার কারণে গাছে মুকুল কম এসেছে। অধিকাংশ গাছে নতুন পাতা এসেছে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গত বছর লিচুর বিক্রি হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকার। এবার উৎপাদন অনেক কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন কম হলেও দাম বাড়তে পারে। এতে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা আছে।

ঈশ্বরদীতে প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু ও বিখ্যাত বোম্বে লিচু উৎপাদিত হয়। এ লিচুর সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। তবে এবার অধিকাংশ লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা এসেছে। উপজেলার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে এ অবস্থা দেখা গেছে। এতে চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

চাষিরা জানান, আগেও মুকুল কম আসার ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের মতো ফলন বিপর্যয় কখনো হয়নি। ফেব্রুয়ারির শুরুতে মুকুল আসার সময় হঠাৎ অসময়ে বৃষ্টি হয়। এরপর মুকুলের পরিবর্তে গাছে নতুন পাতা আসতে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ রয়েছে। বাগানের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৬০টি। গাছ রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজারটি। প্রতিটি পরিপূর্ণ গাছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার লিচু ধরে।

এ ছাড়া বাড়ির ভিটা জমিতে ২ থেকে ৪টি করে লিচু গাছ রয়েছে। উপজেলার ছলিমপুর, সাহাপুর, পাকশী, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় শত শত লিচুর বাগান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে ছলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নে। এখানে মোজাফফর ও বোম্বে জাতের লিচুর আবাদ বেশি হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৭০-৭৫ শতাংশ বাগানের গাছে এবার মুকুল নেই। কিছু কিছু বাগানে নামমাত্র মুকুল এসেছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।

চাষিরা জানান, সাধারণত জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে মুকুল আসে। এবার মুকুল আসার ঠিক আগে বৃষ্টির কারণে কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসেনি। বরং গাছে নতুন পাতা এসেছে।

কৃষি অফিস জানায়, গত বছর ঈশ্বরদীতে লিচুর বিক্রয়মূল্য ছিল ৪০০ কোটি টাকা। এর আগের বছর ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এবার মুকুল কম আসায় ১৯ হাজার ৪৫০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১০ হাজার ৬৫০ টন কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন আরও কমতে পারে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, ঈশ্বরদীতে প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। 

ছলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের ইমরান মণ্ডলের ২৮টি লিচুর গাছ রয়েছে। তিনি জানান, এবার তার গাছগুলো থেকে ২ হাজার ৮০০টি লিচু পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, ‘মুকুল আসার আগেই বৃষ্টি হয়। এরপর নতুন পাতা আসে। পরে আর মুকুল আসেনি।’
সাহাপুর ও ছলিমপুর ইউনিয়নে সাতটি বাগান কিনেছিলেন লিচু ব্যবসায়ী আবুল বাশার প্রামাণিক। তিনি জানান, তিন শতাধিক গাছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মুকুল এসেছে। এখন গুটি ধরলেও প্রচণ্ড গরমে তা ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আগের বছর লাভ হয়েছিল। এবার ৫-৬ লাখ টাকা লোকসান হবে।’

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না বলেন, ‘আবহাওয়ার তারতম্যে এবার অধিকাংশ গাছে কম মুকুল এসেছে। বিশেষ করে মুকুল আসার আগ মুহূর্তে বৃষ্টির কারণে এ সমস্যা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফলন কম হলেও দাম বেশি হবে। এতে চাষিরা কিছুটা হলেও লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।’