ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী অসিত বসু

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী অসিত বসু
খামারে মাশরুমের পরিচর্যা করছেন উদ্যোক্তা অসিত বসু/ খবরের কাগজ

নড়াইলের শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের যুবক অসিত বসু প্রথমবারের মতো মাশরুম চাষ করে নজর কেড়েছেন সবার। নিজ উদ্যোগে চাষ শুরু করে এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার খামারে এখন চাষ হচ্ছে তিন প্রজাতির মাশরুম। যেটা বিক্রি হচ্ছে অনলাইন ও অফলাইনে। 

অসিতের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার এলাকায় আরও অন্তত ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হন। শুরুটা হয়েছিল একেবারেই ছোট পরিসরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ঘরের এক কোণে ৫০টি স্পন দিয়ে তিনি এই চাষ শুরু করেন। এখন তার খামারে স্পনের সংখ্যা ২ হাজার। খড়কুটা, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, ক্যালসিয়াম চুন ও পানি মিশিয়ে তিনি তৈরি করেন চাষের উপযোগী বেড। জীবাণুমুক্ত করে ২৮ দিন ল্যাবে রেখে তৈরি করেন মাদার টিস্যু। এরপর নির্ধারিত তাপমাত্রা ও আলো-আঁধারির পরিবেশে পলিথিন মোড়ানো প্যাকেটে চাষ করেন মাশরুম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধাপাকা টিনশেড ঘরের ভেতরে ঝুলন্ত প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এসেছে সাদা রঙের মাশরুম। পরিচর্যায় তখন ব্যস্ত সময় পার করছিলেন অসিত।

অসিত বসু বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ঢাকায় ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিই। পরে অফিস থেকে চাষের উপকরণ, এমনকি মাশরুম দিয়ে চপ তৈরি করে তা বাজারে বিক্রির জন্য ভ্যান গাড়িও দেওয়া হয়।’ তিনি জানান, গতবার তারুণ্যের মেলায় মাশরুম চপ বিক্রি করে তিনি আয় করেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে মাসিক আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

স্থানীয় যুবকরাও এই খামারকে দেখছেন শিক্ষার জায়গা হিসেবে। আলোকদিয়ার যুবক আরাফাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন তার খামারে গিয়ে কাজ করি। শিখেছি অনেক কিছু। অল্প সময়ের মধ্যেই আমিও চাষ শুরু করব।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জমান বলেন, ‘মাশরুম চাষ সম্পর্কে যে মৌলিক ধারণা অসিত পেয়েছেন, সেটিকে কাজে লাগিয়ে চাষ শুরু করেছেন। তার সঙ্গে আরও ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যুক্ত হচ্ছেন। একসঙ্গে কাজ করলে এলাকাটি মাশরুম পল্লি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এখন আগ্রহ নিয়ে মাশরুম কিনছে। অসিত নিজেই তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। অনলাইনেও চাহিদা বাড়ছে। আমি মনে করি, তার দেখাদেখি আরও শিক্ষিত বেকার যুবক এই চাষে এগিয়ে এলে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

নারীদের কর্মসংস্থানে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর, সেটিও তুলে ধরেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। নড়াইলে ইতোমধ্যে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু বাজার তৈরি হয়েছে, দ্রুতই মাশরুম চাষ সম্প্রসারিত হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই চাষের মাধ্যমে ঘরে বসেই আয় করতে পারবে। তাদের একত্রিত করে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনাও প্রবল।’

অসিত বসুর সাহসী উদ্যোগ এখন শুধু তার নিজের সাফল্যের গল্প নয়, বরং তার এলাকার জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দিক। এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হলে নড়াইল হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র।

বস্তায় আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৪ এএম
বস্তায় আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা
ছবি: খবরের কাগজ

রাজশাহীর তানোরে বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় ও ফাঁকা জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। কৃষি বিভাগের সহায়তায় শুরু হওয়া এ পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের দুই যুবক ২ হাজারের বেশি বস্তায় আদার চাষ করেছেন। উপজেলায় এখন প্রায় ৩৬ হাজার বস্তায় আদার চাষ হচ্ছে। খরচ কম, লাভ বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদ্ধতি কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে।

তানোর উপজেলার শিলিমপুর গ্রামের দুই তরুণ— একরামুল হক ও আব্দুল মালেক তাদের পুকুরপাড়ের পতিত জমিতে ২ হাজারেরও বেশি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিজুর রহমানের পরামর্শে তারা এ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হওয়ায় তারা এখন বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মোট প্রায় ৩৬ হাজার ২৫০ বস্তায় আদার চাষ হচ্ছে। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নে ৭ হাজার ৫০০, কলমায় ৪ হাজার ৮০০, তালন্দে ৫ হাজার ৫০০, বাঁধাইড়ে ২ হাজার ৫০০, কামারগাঁয় ৪ হাজার ১৩০, পাঁচন্দরে ২ হাজার ৯৫০ এবং সরনজাই ইউনিয়নে ৪ হাজার ২৫০ বস্তায় আদা চাষ চলছে। এ ছাড়া তানোর পৌরসভায় ২ হাজার ৫০ এবং মুন্ডুমালা পৌরসভায় ২ হাজার ৫৭০ বস্তায় চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একটি বস্তায় আদা চাষে গড়ে ৫০ টাকা খরচ হয়। পরিচর্যা ভালো হলে একেকটি বস্তা থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ওঠে। বাজারদরে প্রতি কেজি আদা বিক্রি করে চাষিরা প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহম্মদ বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও জায়গা-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। পুকুরপাড়, ছাদ কিংবা বাড়ির যে কোনো ফাঁকা জায়গায় সহজেই এটি করা যায়। পরিচর্যার ঝামেলা কম এবং আগাছাও হয় না।’ কৃষি উদ্যোক্তা সুমন কুমার মজুমদার বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে চাষ করা খুব সহজ। জায়গা কম লাগে, খরচও কম। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে।’ 

সম্প্রতি এই চাষ পদ্ধতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান, জেলা উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা এবং তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মদ। তারা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন এবং চাষ পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তারা বলেন, ‘বস্তায় আদার চাষ— তানোরের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। স্বল্প খরচে, কম পরিচর্যায় এবং অপ্রচলিত জায়গায় এই চাষ সম্ভব। উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই প্রযুক্তি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।’

নেত্রকোনায় পাট চাষে আগ্রহ ফিরছে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
নেত্রকোনায় পাট চাষে আগ্রহ ফিরছে
নেত্রকোনায় একটি খেতে পাটগাছ কেটে রাখা হয়েছে/ খবরের কাগজ

নেত্রকোনায় পাট চাষে ফিরছে আগ্রহ। দো-আঁশ মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। এক সময় এ জেলার পাট যেত নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। কৃত্রিম তন্তু ও প্লাস্টিকের কারণে চাষ কমে যায়। এখন আবার দর বাড়ায় উৎসাহ পেয়েছেন কৃষকরা। পাট পরিবেশবান্ধব ও অর্থকরী ফসল। সরকার ও কৃষি বিভাগ চাষ বাড়াতে কাজ করছে। সেমিনার, কর্মশালায় কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হচ্ছেন সবাই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৪৫৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে চাষ। কৃষকদের সচেতন করতে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করছে কৃষি বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাট চাষের সম্প্রসারণ হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। পরিবেশ সুরক্ষা ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে পাট আবারও হতে পারে পরিবর্তনের বাহক। এ জন্য দরকার সরকারি সহায়তা, সচেতনতা এবং বাজারে স্থিতিশীলতা।

বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের কৃষক রমজান মিয়া বলেন, ‘এক সময় এই গ্রামে অনেক জমিতে পাট হতো। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে মানুষ পাট চাষ ছেড়ে দেয়। সরকার যদি মূল্য নিশ্চিত করে, তা হলে আবারও জমি ভরে উঠবে পাটগাছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চটের ব্যাগ, রশি, বস্তাসহ পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।’

মোহনগঞ্জ উপজেলার খুরশিমূল গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ শীল জানান, ‘আগে ধান চাষের পাশাপাশি পাট চাষ হতো অনেক জমিতে। এখন শুধু দুই কাঠা জমিতে পাট চাষ করি। বর্ষাকালে পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। পাটের শাক সুস্বাদু ; আবার পাটের ব্যাগ, রশিও খুব কাজে লাগে। সরকার যেন পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুল রহমান বলেন, ‘পাট পরিবেশবান্ধব ফসল। পাট চাষের মাধ্যমে যেমন গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরে আসবে, তেমনি পরিবেশ রক্ষা এবং বেকারত্ব হ্রাসেও বড় ভূমিকা রাখবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য মাটির সঙ্গে মেশে না। এটি মাটি দূষণ করে। তাই পাটের ব্যাগ ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও পিছিয়ে নেই। পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ে পরামর্শ ও প্রচার চালাচ্ছে তারা। জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকরা এখন আর শুধু ধান চাষেই সীমাবদ্ধ নন। শাকসবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, মাছ চাষ, এমনকি বাড়ি নির্মাণের জন্য অনেক জমির ব্যবহার বদলে গেছে। এতে চাষযোগ্য জমি কমেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবু পাট চাষ বাড়াতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে আবারও নেত্রকোনার মাঠ ভরে উঠবে পাটে।’

উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে মরুভূমির খেজুরের স্বপ্ন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে মরুভূমির খেজুরের স্বপ্ন
বাগানে খেজুরগাছ পরিচর্যা করছেন শোকর আলী। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নইরহরকাটি গ্রামের শোকর আলী একসময় ছিলেন বাহরাইনের একটি খেজুর বাগানের শ্রমিক। সেখানেই খেজুর চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। বাস্তব জ্ঞান আর সাহসিকতা নিয়ে দেশে ফিরে এবার গড়েছেন উন্নত জাতের খেজুর নার্সারি। তার দাবি, ‘উপকূলীয় মাটিতে চাষ করা এই খেজুরের গুণগত মান মরুভূমির খেজুরকেও হার মানাবে।’

২০১৮ সালে জীবিকার তাগিদে বাহরাইন যান শোকর আলী। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, খেজুর একটি দীর্ঘমেয়াদি ও কম পরিচর্যায় উৎপাদনক্ষম ফসল। এই ভাবনাই বদলে দেয় তার ভবিষ্যতের দিক। ২০২১ সালে দেশে ফেরার সময় সঙ্গে আনেন উন্নত জাতের ৫০টি খেজুর বীজ। ওই বীজ নিজের আঙিনায় রোপণ করে শুরু করেন চারা উৎপাদন। পরবর্তী সময় বাহরাইন ও সৌদি আরবে থেকে আরও উন্নত জাতের খেজুর সংগ্রহে করেন। ওই বীজ দিয়ে নার্সারিকে পরিপূর্ণ করেন। এখন তার নার্সারিতে রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার খেজুর চারা। এর মধ্যে বেশ কিছু গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।

শোকর আলী বলেন, ‘২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাহরাইনে ছিলাম। তখন কিছুই করতে পারিনি। তবে সেখানকার খেজুর বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন আমার জীবনের সম্পদ হয়ে উঠেছে।’

তিনি জানান, মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ দেশি গাছের মতোই পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১২০টি গাছ রোপণ সম্ভব। প্রথম দুই বছরে গাছে ফল এলে কেটে ফেলতে হয়, নাহলে গাছ বড় হয় না। ফল আসার তিন মাসের মধ্যেই তা পেকে যায়। বর্তমানে তার একটি গাছে ফল এসেছে, আর ২০ দিনের মধ্যেই তা পাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে আশাবাদী শোকর আলী বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি, সাফল্য আসবেই।’

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তার নার্সারির কয়েকটি গাছে ইতোমধ্যে খেজুর ধরেছে। উপকূলীয় জলবায়ুতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ সফল হলে বড় পরিসরে সম্প্রসারণ সম্ভব। তার এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছে। একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের শফিউল্লাহ তার চিংড়িঘেরের বাঁধে সৌদি খেজুরের চাষ করে সফল হয়েছেন।

সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও খেজুর একটি খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ছোট পরিসরে চাষ করে উপযোগিতা যাচাই করা যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর রমজানে ও অন্যান্য সময় হাজার হাজার টন খেজুর আমদানি করতে হয়। অথচ দেশে উন্নত জাতের খেজুর উৎপাদন সম্ভব হলে আমদানিনির্ভরতা কমবে, কৃষকের আয়ও বাড়বে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে খেজুরের মতো সহনশীল ফসল নতুন এক দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

নরসিংদীতে লটকনের ফলন কম, দ্বিগুণ দাম

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:২০ এএম
নরসিংদীতে লটকনের ফলন কম, দ্বিগুণ দাম
ছবি: খবরের কাগজ

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া নরসিংদীর লটকনের চাষ এ বছর বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গাছে লটকন ধরলেও ঝরে পড়েছে প্রচুর। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ ফলন কমেছে। ফলন কম হলেও বাজারে দাম দ্বিগুণ। প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। এ কারণে চাষিরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, ‘এ বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় বেশি।’

তিনি জানান, গত ৬০ বছরে মাত্র তিনবার লটকনের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এবার ওই বিরল ঘটনাই ঘটেছে। বিষয়টি সরকারি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নরসিংদীর লটকনের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মান অনন্য। এখানকার লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর, ওয়ারী, বটেশ্বর ও দক্ষিণ বটেশ্বর, শিবপুর উপজেলার জয়নগর, যোশর ও বাঘাব, আর রায়পুরার মরজাল এলাকায় লটকনের ভালো ফলন হয়। তবে এবার আবহাওয়ার কারণে এসব এলাকার গাছগুলোতেও ফল কমেছে। লাখপুর গ্রামের লটকন চাষি বাছেদ মাস্টার বলেন, ‘পুরোনো গাছে লটকন কম হয়েছে। তবে নতুন চারাগুলোতে ফলন ভালো হয়েছে। আর বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে না।’

লটকন মৌসুমে প্রতিদিন ভোরে মরজাল বাসস্ট্যান্ডে বসছে লটকনের হাট। হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও বাগানের দামে তেমন পার্থক্য নেই। ঢাকা থেকে সিলেটগামী রিবউল ইসলাম বলেন, ‘বাগানে গিয়েছিলাম, কিন্তু দাম একই। তাই হাট থেকেই বড় লটকন কিনছি ২২০ টাকা কেজি দরে।’ চাষি ও বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে লটকনের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ফলে ফলন কম হলেও লাভের মুখ দেখছেন অনেকে ।

নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রামে এখন বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ জমিতেও লটকনের চারা রোপণ করছেন স্থানীয়রা। আবাদ বাড়ছে, চাষের আগ্রহও বাড়ছে। লটকন দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন এসব বাগানে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নারী-পুরুষ এসে ফল কিনে নিচ্ছেন বাগান থেকেই।

একই সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফল স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। ক্রমেই এটি লাভজনক বাণিজ্যিক ফসলে রূপ নিচ্ছে।
নরসিংদীর লটকন এখন শুধু এলাকার গর্ব নয়, দেশের অর্থনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ফলন বাড়াতে এবং আবহাওয়াজনিত ক্ষতি ঠেকাতে গবেষণাভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ময়মনসিংহে চালের দাম বাড়তি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ১০:০৮ এএম
ময়মনসিংহে চালের দাম বাড়তি
ময়মনসিংহ নগরীর মেছুয়া বাজারের হেজবুল্লাহ রোডের এক দোকানে চাল কেনাবেচা হচ্ছে/ খবরের কাগজ

বোরো মৌসুম শেষ। নতুন চাল উঠেছে মোকামে। বাজারে সরবরাহও পর্যাপ্ত। তবুও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ ক্রেতারা।

গত শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর মেছুয়া বাজারের হেজবুল্লাহ রোডের এক চালের মোকামে ২৫ কেজি ওজনের তিন বস্তা চাল কিনতে এসে হতাশা প্রকাশ করলেন ষাটোর্ধ্ব জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘নতুন চাল উঠেছে, বাজারে চালের অভাব নেই। কিন্তু তারপরও প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে বিক্রেতারা। দামাদামি করলেও একটাকাও কমায় না। বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’ তার অভিযোগ, আগের সপ্তাহের তুলনায় এখন একই চালের বস্তা কিনতে অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। বাজারে নতুন চাল এলেও দাম না কমে বরং বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষ চাপে পড়ছে।

আসাদুল হক নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘পাইকাররা প্রতি বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। খুচরায় কেজিতে ৬ টাকা বেশি দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। আমার মনে হয়, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।’ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাটারি, নাজিরশাইল এবং ২৮ ও ২৯ প্রজাতির চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পাইকাররা বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে।

মেছুয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘চালের বড় বড় মহাজনরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে কাটারি চালের ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। এখন তা ২ হাজার টাকা। ২৮ নম্বর চালের বস্তা ১ হাজার ২৫০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪০০ টাকায় উঠেছে।’ তবে এই দাম বৃদ্ধির জন্য দায় নিচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। তাদের ভাষায়, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় তারাও নিরুপায়। গরিব এক খুচরা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সবাই এখন বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। কারণ পাইকারি পর্যায়েই দাম বেড়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’

চালকল মালিকরা জানান, কৃষকরা ধান বিক্রি করে ফেলেছেন আগেই। যারা ধান মজুত করেছিলেন, তারা এখন তা উচ্চ দামে বিক্রি করছেন। এক কুড়ি (এক মণ) মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৩০ টাকায়, আর চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৩০ টাকায়। এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। পাইকারদের দাবি, বাজারে বড় বড় মহাজনরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছেন। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা বিপাকে পড়লেও বাজারে এর প্রতিকার মিলছে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘চালের বাজারে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। যদি প্রমাণ পাই যে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নতুন মৌসুমে সরবরাহ বাড়লেও দাম বাড়ানোর প্রবণতা বাজার ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা হিসেবে উঠে এসেছে। ক্রেতারা চান প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও সুষ্ঠু বাজার নিয়ন্ত্রণ।