ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ভুয়া

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম
ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ভুয়া

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বলে প্রচার করা একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া, ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে রবিবার (১১ আগস্ট) দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছে। এটিও ভাইরাল। প্রকৃতপক্ষে এই দুটি খবরই ছিল ভুয়া।

এই বিষয় দুটি সামনে আসার পর বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের টিম এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কোনো খোলা চিঠি দেননি বরং ফেসবুক থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভুয়া এই চিঠির তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিঠিটির উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে মো. রাকিব আকন নামে এক ব্যক্তি এর সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করেছেন। পরবর্তীতে ভারতের আগরতলা ভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ এর প্রিন্ট সংস্করণেও এটি চিঠি আকারে তারিখ উল্লেখসহ প্রকাশের পর এর প্রিন্ট সংস্করণের স্ক্রিনশট ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 

‘আমি পদত্যাগ করেছি, শুধু মাত্র লাশের মিছিল জেনো না দেখতে হয়। তোমাদের (ছাত্রদের) লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলো ওরা, আমি হতে দেয়নি, ক্ষমতা দিয়ে এসেছি। ক্ষমতায় আমি থাকতে পারতাম যদি সেন্টমার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। অনুরোধ রইলো তোমরা ব্যাবহার হয়ো না।

আমি বলে এসেছি আমার সোনার সন্তানদের যারা লাশ করে ঘরে ফিরিয়েছে তাদের জেনো বিচার করা হয়।

হয়তো আজ আমি দেশে থাকলে আরো প্রাণ ঝড়তো, আরো সম্পদ ধ্বংস হতো। আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি,
তোমাদের জয় দিয়ে এসেছি, তোমরা ছিলে আমার শক্তি, তোমরা আমাকে চাওনি, আমি নিজেই তখন চলে এসেছি, পদত্যাগ করেছি।

আমার কর্মিরা যারা আছেন, কেউ মনবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বার বার উঠে দাড়িয়েছে। আপনারই দাড় করিয়েছেন। আশাহত হবেন না। আমি শিঘ্রয় ফিরবো ইনশাআল্লাহ।  পরাজয় আমার হয়েছে কিন্তু জয়টা আমার বাংলাদেশের মানুষের হয়েছে। যে মানুষের জন্য আমার বাবা আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। খবর পেয়েছি ইতিমধ্যে অনেক নেতা কর্মিকে হত্যা ও বাড়ি ঘরে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে।

আল্লাহ অবশ্যই আপনাদের সহায় হবেন।

আমি আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনই তোমাদের রাজাকার বলিনি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে। ঐদিনের সম্পূর্ণ ভিডিও তোমাদের দেখার অনুরোধ রইলো।

তোমাদের বিপদগ্রস্ত করে একদল তার সুবিধা নিয়েছে। তোমরা ঠিকই তা একদিন অনুধাবন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। 

ভালো থেকো আমার দেশের মানুষ, ভালো রেখো আমার সোনার বাংলাকে,

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু,
শেখ হাসিনা...’

যদিও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারের কাছে এটি তাদের পত্রিকায় ছাপা হয়নি বলে অস্বীকার করেছে। তবে পারিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এটি ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে। 

তবে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই চিঠি নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।

অন্যদিকে, রবিবার (১১ আগস্ট) ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা তার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেটি শেখ হাসিনার চিঠির বক্তব্য বলে জানানো হয়। পরে এসব গণমাধ্যমের সূত্রে খবরটি বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমই প্রচার করা হয়।

অধিকাংশ গণমাধ্যমই সূত্র হিসেবে ভারতের দ্য প্রিন্ট এবং ইকোনমিক টাইমসের সূত্র দিয়েছে৷ তবে এই দুই গণমাধ্যমসহ ভারতের কোনো গণমাধ্যমই কথিত চিঠিটির মূল উৎস সম্পর্কে জানাতে পারেনি।

দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, শনিবার (১০ আগস্ট) এই চিঠি বা বার্তাটি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। অথচ এর পাঁচদিন আগে থেকেই কথিত এই বার্তাটি ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া যাচ্ছিল। 

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ইকোনমিক টাইমস এবং দ্য প্রিন্টের সংশ্লিষ্ট দুই সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই চিঠির উৎস প্রসঙ্গে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। 

একই সময়ে শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও বিষয়টি অবহিত করে সত্যতা জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার।

পরবর্তীতে জয় নিশ্চিত করেছেন, কথিত এই চিঠিটি তার মায়ের লেখা নয়। জয় বলছেন, “আমার মায়ের পদত্যাগের বিবৃতি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বক্তব্য দেননি।”

সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন, এটি ডাহা মিথ্যা।

অমিয়/

নাম বিভ্রাট, একটু ভুল আর সমালোচনার পাহাড়!

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
নাম বিভ্রাট, একটু ভুল আর সমালোচনার পাহাড়!
সরফরাজ চৌধুরী-সফর রাজ হোসেন

কথায় আছে ‘নামে নামে জমে টানে’। এ ক্ষেত্রে জমে টানেনি, কারন কোথাও একটু ভুল ছিল। এই ভুলেই বিতর্ক বা বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এমন একজন মানুষকে নিয়োজিত করা হয়েছে যার নাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল ঝড়। দেখা যায় নামের একটা অংশ অর্থাৎ ‘রাজঠিকই আছে কিন্তু যত গণ্ডগোল ‘সফরআর ‘সরফ নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর মধ্যে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ‘সরফরাজ চৌধুরী’ কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

তার ভাষণে দেওয়া এই তথ্যের পর দেশের অনেক গণমাধ্যমে সরফরাজ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে খবরটি প্রচার করা হয়। আর এই ছবি প্রকাশের পরই শুরু হয় সমালোচনা। 

যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো স্ক্রিপ্টে বা কার্যালয় সূত্রে সরফরাজ চৌধুরীর কোনো ছবি সরবরাহ করা হয়নি। গণমাধ্যমগুলোও সরফরাজ চৌধুরীর বিষয়ে বাড়তি কোনো তথ্য দেয়নি। 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এসব সংবাদমাধ্যমে ব্যবহৃত ছবিটি চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ চৌধুরীর। তিনি ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময়ে জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে তাকে এই মামলায় কারাবরণও করেন। পরে ২০২৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মনোনীত হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সমালোচনাও হয়েছে।

এর পর বিষয়টি নিয়ে সরফরাজ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার। তিনি ব্যক্তি পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবই আপনাদের দোয়া ভাই। আমি শুনেছি আমাকে এমন পদে নিয়োগ করা হয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব। আমার দুয়ার আপনাদের জন্যে সবসময় খোলা থাকবে।’ 

তাকে কোনো অফিসিয়াল বার্তা পাঠানো হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, এমন কিছু আমি এখনো পাইনি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি যে আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে।’ 

এরই মধ্যে আরেকটি গণমাধ্যমের সূত্রে রিউমর স্ক্যানার জানতে পারে, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সফর রাজ হোসেন।

খেয়াল করলে দেখা যায়, ‘সরফরাজ’ না লিখে ‘সফর রাজ’ লিখেছে ওই গণমাধ্যমটি। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বলেও তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়। 

পরে বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে যায় রিউমর স্ক্যানার। এর সত্যতাও পায়। সফর রাজ ২০০৩ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউএসএআইডির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এখন সফর রাজ ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।

রিউমর স্ক্যানার টিম এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের স্ক্রিপ্টে সম্ভবত ভুলে ভিন্ন নাম এসেছে। কারণ সাবেক একজন সিভিল সার্জনের পুলিশ সংস্কারের দায়িত্ব পাওয়ার কথা নয়। তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন সচিবের এই দায়িত্ব পাওয়া। 

বিষয়টি নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলে। তাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেন, ভুলবশত ভিন্ন নাম এসেছে। মূলত এই দায়িত্ব যিনি পাচ্ছেন তার নাম সফর রাজ হোসেন। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও এ বিষয়ে সংশোধনী পাঠানো হয়।

অর্থাৎ, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের জন্য তৈরি ভাষণের স্ক্রিপ্টে নামের বানান ভুল উল্লেখ করায় ড. ইউনূস ভুল বানানটি উচ্চারণ করেছেন। এর ফলে গণমাধ্যমেও ভুল ব্যক্তির ছবি এসেছে।

অমিয়/

উপদেষ্টা নাহিদের বোন পরিচয়ে ফাতিমা তাসনিমের চাকরির খবরটি ভুয়া

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পিএম
উপদেষ্টা নাহিদের বোন পরিচয়ে ফাতিমা তাসনিমের চাকরির খবরটি ভুয়া
ফাতিমা তাসনিম

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বয়স এক মাস হলো। এর মধ্যেই গুজবের ফাঁদে পড়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি বিডি প্যানোরোমা নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘কোটায় চাকুরি পেলেন উপদেষ্টা নাহিদের বোন ফাতেমা তাসনিম’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু এই নিউজটি যে ভুয়া তা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কথিত এই সংবাদে এক নারীর ছবি ব্যবহার করে তার নাম ফাতিমা তাসনিম উল্লেখ করে দাবি করা হয়, ‘তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বড় বোন ফাতেমা তাসনিমকে চাকুরি পেয়েছেন বিশেষ বিবেচনায়।

ফাতেমা তাসনিমকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত তাকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনে সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত মিথিলা ফারজানার স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩ বছরের মেয়াদে ফাতেমা তাসনিম এই চাকুরি পেয়েছেন। তাকে আগামী ১ অক্টোবর কানাডায় জয়েন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

ফাতেমা তাসনিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স করে মগবাজারে একটি কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। এদিকে বিশেষ বিবেচনায় এই নিয়োগে ফাতেমা তাসনিম তার স্বামী আরিফ সোহেলসহ কানাডা যেতে পারবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই নিয়োগপত্রে ফাতেমা তাসনিম টরন্টোতে বাংলাদেশ মিশনের ভাড়া করা বাসা, ড্রাইভারসহ গাড়ি ছাড়াও প্রতিমাসে ৬ হাজার কানাডিয়ান ডলার বেতন পাবেন।’

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যে নারীর ছবি ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে তিনি উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন এবং তিনি কোনো সরকারি চাকরিও পাননি। আসলে তিনি গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী এবং নাহিদের রাজনৈতিক সহকর্মী। এই দুজনের মধ্যে আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই।

রিউমর স্ক্যানার বিডি প্যানোরোমা ওয়েবসাইটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে,  সাইটটিতে মাত্র চারটি নিউজ বিদ্যমান। এর ডোমেইন ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়। তবে সাইটটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় ২০১৫ সাল থেকে৷ সে সময় থেকেই নিয়মিত এই সাইটে মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। সেগুলো পরে আবার সরিয়েও নেওয়া হয়। সে বছরই একই নামে একটি ফেসবুক পেজও খোলা হয়। পেজটি বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে একজন এবং যুক্তরাজ্য থেকে দুইজন অপারেট করছেন।

প্রকাশিত ওই সংবাদে কথিত তথ্যের বিপরীতে কোনো সূত্র বা প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তবে এই সংবাদে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। উল্টো দাবি করা হচ্ছে,  ফাতিমাকে কানাডায় যোগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ওয়েবসাইট এবং এর ফেসবুক পেজের কন্টেন্ট বিশ্লেষণে রিউমর স্ক্যানারের কাছে এটিকে ভুঁইফোঁড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার পরবর্তীতে কথিত সংবাদে উল্লিখিত তথ্যগুলো যাচাই করে। ফাতেমা রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটা পুরোটাই একটা ভুয়া নিউজ। এর সঙ্গে বাস্তবে কোনো সত্যতা নেই।

পড়াশোনা প্রসঙ্গে ফাতিমা রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘আমি এই ইউনিভার্সিটি (জগন্নাথ) থেকে পড়াশোনা করিনি। সবকিছুই অসত্য ও মিথ্যা।’

তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে উপদেষ্টা নাহিদ জানিয়েছেন, ‘ফাতিমা তাসনিম নামের এই নারী আমার পরিবারের কেউ নন। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও নেই।’ 

পরবর্তী অনুসন্ধানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফাতিমার কথিত এই নিয়োগের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন দিয়েছে কিনা তা জানতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট শাখায় সম্প্রতি এমন কোনো প্রজ্ঞাপনের তথ্য মেলেনি। কানাডার অটোয়া হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার দেওয়ান হোসনে আইয়ুব রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তারাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

অর্থাৎ, বিডি প্যানোরোমার সাইটে গণপরিষদ নেত্রী ফাতিমা তাসনিমের ছবি ব্যবহার করে তাকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বোন বলে দাবি করা হলেও আদতে তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। ফাতিমা কানাডার বাংলাদেশ মিশনে চাকুরিও পাননি। এমনকি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়াশোনা করেননি। 

তবে ফাতিমা তাসনিম নামে নাহিদের একজন বড় বোন থাকার দাবি পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে হওয়া সংবাদে। গত ২৬ জুলাই বিবিসি সংস্থাটির বরাত দিয়ে জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর মজুমদারকে সাদা পোশাকে ছয়জন তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম। 

এ বিষয়ে সেসময় দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমেই সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ডয়চে ভেলে বাংলা, দ্য ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, আমার বার্তা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে ফাতিমাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই নারীই গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী ফাতিমা তাসনিম।

ফাতিমা তাসনিম এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ২১ জুলাই যখন নাহিদকে মেরে পূর্বাচলে ফেলে রেখে যাওয়া হয় তখন তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নাহিদের বড় বোনের পরিচয় দিয়ে ভর্তি করান তিনি। তবে এ সময় নাহিদের স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন।

সব কিছু বিশ্লেষন করে দেখা যায়, গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী ফাতিমা তাসনিম ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ গুজব।

অমিয়/

পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে পুরুষ! আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে পুরুষ! আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের
প্রতীকী ছবি

লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের জেনেটিক পরিবর্তনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান নিয়ে বহু দশক ধরে নিবিড়ভাবে গবেষণা করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন গবেষকরা। এই ক্রোমোজোমের পরিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে পুরুষ জাতি। কিন্তু এটা ঠিক কতদিন পর ঘটতে পারে? এর থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কী?

এ নিয়ে বহু বছরের গবেষণার কিছু ফলাফল প্রকাশও করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন, সত্যিই পুরুষ ক্রোমোজোমের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু পুরুষদের এ সমস্যা ঠিক কেন হয়- তা বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন।

বিবিসি এক প্রতিবেদন বলছে, গত এক শতাব্দীতে সারা বিশ্বে জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। মাত্র ৭০ বছর আগেও পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ২৫০ কোটি। কিন্তু ২০২২ সালে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮০০ কোটি।

কিছু গবেষণায় আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে প্রজনন-সংক্রান্ত সমস্যার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া, দেহে টেস্টোস্টেরন নামে হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার মতো বেশ কয়েকটি সমস্যা।

সম্প্রতি এবিপি আনন্দ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে গ্রিক পুরাণের কাহিনি থেকে নারীতান্ত্রিক সমাজের শুরুর বিষয়টিকে টেনে এনেছে।

অ্যামাজনের রাজধানী হিসেবে গ্রিক পুরাণে উল্লেখ রয়েছে থেমিস্কিরার। সেখানকার নারীরা ছিলেন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, যাদের রানি ছিলেন হিপোলিটা। পুরুষতন্ত্রের চোখে চোখ রেখে মেয়েদের জন্য নিরাপদ এবং শ্রেষ্ঠ নগরী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু ষড়যন্ত্রের শিকার হন হিপোলিটা।

গ্রিক পুরাণের এই আখ্যান পরবর্তী সময়ে সাহিত্যে নানাভাবে জায়গা করে নিয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং সমাজে পুরুষতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে বারবার এই কাহিনির কথা উঠে আসে। কিন্তু হিপোলিটা এবং থেমিস্কিরার কাহিনি কি এবার পাল্টে যাবে? পুরুষতন্ত্রের অবসান ঘটে, আবার কি মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা হবে পৃথিবীতে? একটি গবেষণাপত্র ঘিরে নতুন করে শোরগোল পড়েছে।

মানবদেহে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। যার মধ্যে ২২ জোড়া অটোজোম এবং এক জোড়া লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজম। মেয়েদের জন্য XX, ছেলেদের জন্য XY। এই Y ক্রোমোজমই লিঙ্গ নির্ধারণ করে। মায়ের পেটে শিশুর পুরুষাঙ্গ তৈরিই হয় এই Y ক্রোমোজম থেকে। কিন্তু এই Y ক্রোমোজমেই জিনের সংখ্যা লাগাতার কমছে। যত সময় যাচ্ছে সঙ্কোচন ঘটছে Y ক্রোমোজমের।

এমনিতেই X ক্রোমোজমের থেকে আকারে ছোট Y ক্রোমোজম। জিনের সংখ্যাও অনেক কম, ৫০ থেকে ২০০টি। সেই নিরিখে X ক্রোমোজমের জিনের সংখ্যা এক হাজার। তাই যেভাবে লাগাতার সঙ্কোচন ঘটছে Y ক্রোমোজমের, তাতে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা।

এক সময় পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণকারী এই Y ক্রোমোজম গায়েব হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।

এমনিতেই লাখ লাখ বছর ধরে চরিত্র বদল করে চলেছে Y ক্রোমোজম। মেয়েদের XX ক্রোমোজম যেন পরস্পরের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে জিন উৎপন্ন করতে পারে, ছেলেদের XY-এর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। বর্তমানে মাত্র ৪৫-৫৫টি জিন রয়েছে Y ক্রোমোজমে। গত ১৬ কোটি ৬০ লাখ বছরে প্রায় এক হাজার ৬০০ জিন হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ বছরে ১০টি করে জিন হারিয়েছে Y ক্রোমোজম। অর্থাৎ সঙ্কোচনের গতি অত্যন্ত শ্লথ। তাই একেবারে মিলিয়ে যেতে আরও ৪৫ লাখ বছর সময় লাগবে।

তাহলে কি Y ক্রোমোজমের বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষও বিলুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে? এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের।

কোনো মহিলা যখন গর্ভবতী হন, ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে Y ক্রোমোজম। গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহ পর থেকে মাস্টার জিনটি সক্রিয় হয় এবং ভ্রূণের শরীরে শুক্রাশয় গড়ে ওঠে, যা পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি করে। ফলে ভ্রূণটি ছেলে হিসেবে বাড়তে থাকে। এই মাস্টার জিনটি SRY অর্থাৎ Y ক্রোমোজমের লিঙ্গ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯০ সালে SRY জিনের আবিষ্কার হয়।

মানুষের মতো অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরেও X এবং Y ক্রোমোজম রয়েছে। তাদের শরীরেও দুই ক্রোমোজমের জিনের সংখ্যায় বিস্তর ফারাক। ফলে Y ক্রোমোজমটির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই আগামী দিনে পৃথিবী থেকে পুরুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে কি না, শুধুমাত্র নারীই রাজত্ব করবে কি না, থেকে যাচ্ছে এই প্রশ্ন। পুরুষ যদি না থাকে, একা নারী কীভাবে বংশবৃদ্ধি করবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।

কেন Y ক্রোমোজম লাগাতার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে, এখনো এর জবাব খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, Y ক্রোমোজম সম্পূর্ণ একাকী। কোনো বন্ধু নেই যে তার সঙ্গে জিন লেনদেন করবে। তাই যত সময় যাচ্ছে, তাদের সংখ্যা কমছে। তাই বলে পৃথিবী থেকে পুরুষ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এ কথা মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। 

তাদের মতে, বর্তমানে Y ক্রোমোজমটি যেভাবে আকার বদলাচ্ছে, তাতে মিলিয়ে যেতে আরও কয়েক লাখ বছর সময় লাগবে। ততদিনে বিকল্প ক্রোমোজম Y তার জায়গা দখল করবে। কারণ মানব শরীর জিনের পরিবর্তে জিন গড়ে তুলতেই অভ্যস্ত। 

সম্প্রতি এ নিয়ে আর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। যাতে জাপানের বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, ইঁদুরের শরীরে Y ক্রোমোজম সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার পরিবর্তে নতুন একটি জিন তৈরি হয়েছে।

বিবর্তনের ইতিহাসও বিকল্প ক্রোমোজম তৈরির সাক্ষী। একাধিক এমন প্রাণী রয়েছে, যাদের Y ক্রোমোজম একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে, লিঙ্গ নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে শরীরে। মানুষের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

অমিয়/

একাধিক নারীর সঙ্গে প্রচারিত আসিফ মাহমুদের ছবিগুলো এডিটেড

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
একাধিক নারীর সঙ্গে প্রচারিত আসিফ মাহমুদের ছবিগুলো এডিটেড
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে নারীদের আপত্তিকর দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে নারীদের আপত্তিকর দৃশ্য দাবিতে একাধিক ছবি প্রচার করা হয়েছে, যা এডিটেড বা বিকৃত।

বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের টিম এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, একাধিক নারীর সঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। এ ছাড়া মেসেঞ্জারে চ্যাটের কথিত স্ক্রিনশটগুলোও ভুয়া। ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ করে সম্পাদনার মাধ্যমে তার মুখ বসিয়ে এ দাবি প্রচার করা হয়েছে। 

একটি ছবিতে যে যুগলকে দেখা যাচ্ছিল তার মধ্যে পুরুষের চেহারার সঙ্গে আসিফ মাহমুদের চেহারার মিল নেই। অন্য ছবিতে দাঁড়িয়ে থাকা যুগলের মধ্যে ছেলের চেহারার সঙ্গে আসিফ মাহমুদের চেহারার মিল নেই। তবে ছবির পেছনের দেয়াল, বিছানা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়বস্তুর সঙ্গে আসিফ মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Wish নামক পিন্টারেস্টের একটি অ্যাকাউন্টে মূল ছবিটি পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ছবিটি GirlWhatsAppIndia নামক অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়।   

এ ছাড়া মেসেঞ্জারে চ্যাট করার কথিত স্ক্রিনশটগুলোতেও কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। প্রথম স্ক্রিনশটে Asif Mahmud উল্লেখ করা এবং অন্যটায় Asif Mahbub উল্লেখ করা। অর্থাৎ, একই গুজব একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশটের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

আসিফের প্রকৃত নাম আসিফ মাহমুদ এবং তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম Asif Mahmud.

ইন্টারনেট থেকে একাধিক পুরুষের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো সম্পাদনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মুখমণ্ডলের ছবি সংযুক্ত করে তা আসিফের সঙ্গে নারীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড বা বিকৃত। 

সালমান/

 

অতীতে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন যারা

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
অতীতে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন যারা
ছবি: (বাম থেকে) দালাই লামা, রাজা ত্রিভুবন শাহ, শেখ হাসিনা, মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ্, মোহামেদ নাশিদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত সরকার প্রথমে জানিয়েছিল, তিনি কোথায় থাকবেন তা চিন্তা করতে শেখ হাসিনাকে কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। তা ছাড়া, ঠিক কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন, স্পষ্ট করা হয়নি সেটাও। এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনে এর আগে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে ভারতকে হয়তো শেষ পর্যন্ত দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। আর সেটাও হতে পারে বেশ লম্বা সময়ের জন্যই। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার অবশ্য এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গত ৬ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশের পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার আগের দিন (৫ আগস্ট) ‘সাময়িকভাবে’ বা তখনকার মতো ভারতে আসার অনুমোদন চাওয়া হয়- যেটা মঞ্জুর করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ওটাই শেখ হাসিনার এ দেশে থাকার ব্যাপারে ভারত সরকারের শেষ ঘোষিত অবস্থান। শেখ হাসিনার দিল্লিতে থাকার মেয়াদ কত দীর্ঘায়িত হতে পারে, এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেরাও অন্ধকারে- স্বভাবতই তারা এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না।

শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এখন কী করা হবে তা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা থাকলেও অতীতে কিন্তু বিভিন্ন দেশের একাধিক নেতা, রাজনীতিবিদ বা তাদের পরিবারকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এমনকী শেখ হাসিনা নিজেও ১৯৭৫ সালে তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ব্যক্তিগত জীবনে যখন চরম সংকটে- তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন।

সেই যাত্রায় স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে প্রায় দীর্ঘ ছয় বছর ভারতে কাটিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যদিও নিরাপত্তার স্বার্থে দিল্লির পান্ডারা পার্কে তাদের সেই বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ভিন্ন নাম ও পরিচয়ে।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে বাঙালি কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জি তখন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতেন, সেই সুবাদে তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নিবিড় ব্যক্তিগত হৃদ্যও। যে কারণে আজীবন প্রণব মুখার্জিকে ‘কাকাবাবু’ বলেই সম্বোধন করে এসেছেন শেখ হাসিনা।

তারও কয়েক বছর আগে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমেদসহ আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা ভারতে পালিয়ে চলে এলে তাদেরও আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামদের নেতৃত্বে এরপর গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার, যার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো মূলত কলকাতা থেকেই।

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর বাংলাদেশে জীবন বিপন্ন হলে মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীও ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের একটি সরকারি ‘সেফ হাউসে’ বহু বছর কাটিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু শুধু শেখ হাসিনা বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাই নন, এদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে আরও বহু দেশের অনেক নেতা বা তাদের পরিবারও কিন্তু ভারতে আশ্রয় পেয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ বছর কয়েক পরে নিজ দেশে বা অন্যত্র ফিরে গেছেন, কাউকে আবার পাকাপাকিভাবে ভারতেই থেকে যেতে হয়েছে।

ইতিহাসের পাতা উল্টে এই প্রতিবেদনে ফিরে তাকানো হয়েছে এ রকমই কয়েকটি দৃষ্টান্তের দিকে।

দালাই লামা (১৯৫৯)
ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ তার আকরগ্রন্থ ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী’তে লিখেছেন, “১৯৫৯ সালের মার্চ মাসের শেষ দিনটিতে দালাই লামা ম্যাকমোহন লাইন অতিক্রম করে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডের প্রবেশ করেন। তার আগে বেশ কয়েক বছর ধরে তিব্বতের এই ‘ঈশ্বর-রাজা’ লাসায় তার পোটালা প্যালেসের সিংহাসনে দিন কাটাচ্ছিলেন চরম অস্বস্তির মধ্যে। কারণ তিব্বতের ওপর চীনের কব্জা ক্রমশ এঁটে বসছিল। একটি সূত্র জানাচ্ছে, তখনই অন্তত পাঁচ লাখ চীনা সৈন্য তিব্বতে মোতায়েন ছিল, পাশাপাশি আরও ছিল তার অন্তত দশগুণ হুন বসতি স্থাপনকারী।”

১০ মার্চ ১৯৫৯ তিব্বতে মোতায়েন চীনের একজন জেনারেল একটি নাচের অনুষ্ঠানে দালাই লামাকে আসার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু এটাও বলে দেওয়া হয় যে তার দেহরক্ষীরা সেখানে ঢুকতে পারবে না। অনুষ্ঠানের দিন হাজার হাজার তিব্বতি দালাই লামার প্রাসাদের সামনে জড়ো হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তিব্বতিরা বহুদিন ধরেই সন্দেহ করছিলেন যে তাদের ধর্মগুরুকে চীনারা অপহরণ করার ষড়যন্ত্র আঁটছে, এই ঘটনায় তাদের সেই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়।

এর ঠিক আগের বছরই (১৯৫৮) পূর্ব তিব্বতের খাম্পা জনজাতি এই চীনা ‘দখলদার’দের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান করেছিল। খাম্পারা শুরুতে কিছুটা সাফল্য পেলেও চীনা বাহিনী খুব শক্ত হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করে এবং এরপর দালাই লামাকে পর্যন্ত নিশানা করার ইঙ্গিত দিতে থাকে।

ইতোমধ্যে লাসায় নিযুক্ত ভারতীয় কনসালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন তিব্বতি নেতৃত্ব। ২৩ বছর বয়সী দালাই লামাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত, এই আশ্বাস মেলার পর গোপনে রাতের অন্ধকারে কয়েকজন বাছাই করা বিশ্বস্ত সঙ্গীকে নিয়ে তিনি ছদ্মবেশে লাসা ত্যাগ করেন।

রামচন্দ্র গুহ আরও লিখছেন. “ভারতের মাটিতে দালাই লামা তার প্রথম রাতটি কাটান তাওয়াং-এর একটি বৌদ্ধ মনাস্টারিতে। তারপর তিনি ক্রমশ পাহাড় থেকে নেমে আসেন সমতলে, পৌঁছান আসামের শহর তেজপুরে। সেখানে ভারতের কর্মকর্তারা লম্বা সময় ধরে তাকে ‘ডিব্রিফ’ করেন। ঠিক তিন সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে।”

৩ এপ্রিলই প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পার্লামেন্টে ঘোষণা করেছিলেন, তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা- যাকে তার অনুগামীরা ভগবান বুদ্ধের জীবন্ত অবতার বলে মনে করেন- তিনি ভারতে চলে এসেছেন এবং ভারত সরকার তাকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিয়েছে।

পরদিন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, একমাত্র কমিউনিস্ট বা বামপন্থিরা ছাড়া ভারতের সব দল ও মতের মানুষজন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল।

সেই থেকে আজ ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দালাই লামা ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়েই রয়েছেন। হিমাচল প্রদেশের জোড়া শৈলশহর ধরমশালা ও ম্যাকলিয়ডগঞ্জে হাজার হাজার তিব্বতি সেই তখন থেকে আজও বসবাস করেন, তিব্বতের ‘প্রবাসী সরকার’ও (গভর্নমেন্ট ইন এক্সাইল) সেখান থেকেই পরিচালিত হয়।

তিব্বত গবেষক টিম লি-র কথায়, “ভারতে দালাই লামার উপস্থিতি বিগত বহু দশক ধরে ভারত ও চীনের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এসেছে, কিন্তু ভারতের কোনো সরকারই তিব্বতিদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া নিয়ে কখনো দ্বিতীয়বার ভাবেনি।”

টিম লি জানান, “এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে ১৯৫৪ সালে, যখন ভারত চীনের সঙ্গে ‘পঞ্চশীল চুক্তি’তে স্বাক্ষর করে এবং তিব্বতকে ‘চীনের একটি অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।” কিন্তু এরপর যখন থেকে হাজার হাজার তিব্বতি চীনের নিপীড়নে ভারতে পালিয়ে আসতে শুরু করেন এবং চীনও জানিয়ে দেয় দুদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা বলে স্বীকৃত ‘ম্যাকমোহন লাইন’কে তারা মানে না- তিব্বত নিয়ে ভারত তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়।

এরই পরিণতিতে জওহরলাল নেহরুর সরকার দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়- যেটা ছিল স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কোনো বিদেশি ধর্মীয় নেতাকে এভাবে আতিথেয়তা দেওয়ার প্রথম ঘটনা।

মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ্ (১৯৯২)
আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ আহমদজাই, যিনি শুধু ‘নাজিবুল্লাহ’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে সোভিয়েতের সমর্থনে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। প্রায় ছয় বছর প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পর ইসলামি মুজাহিদিনরা যখন ১৯৯২ সালের এপ্রিলে কাবুল দখল করে, তখন প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে নাজিবুল্লাহ ভারতের কাছে আশ্রয় চান, আর তা মঞ্জুরও হয় সঙ্গে সঙ্গেই। ভারতে আসার চেষ্টায় এয়ারপোর্টে আসার পথেই আফগান নিরাপত্তারক্ষীরা নাজিবুল্লাহ্কে আটকে দেন। ফলে তার আর দিল্লির বিমানে চাপা সম্ভব হয়নি।

জীবন বাঁচাতে নাজিবুল্লাহ্ এরপর আশ্রয় নেন কাবুলে জাতিসংঘের কার্যালয়ে। যেখানে মুজাহদিনরা চট করে ঢুকতে পারবে না বলে তিনি ধারণা করেছিলেন। 

এই ঘটনার কয়েক মাস আগেই বিপদ আঁচ করে প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহ্ তার স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তানকে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তথ্য তখন প্রকাশ করা হয়নি।

অনেক পরে ভারত সরকার জানিয়েছিল, নাজিবুল্লাহর পরিবারকে মধ্য দিল্লির ল্যুটিয়েন্স জোনে একটি বাড়িতে সরকারি আতিথেয়তায় রাখা হয়েছে। তাদের খরচ নির্বাহের জন্য ভারত সরকার মাসে এক লাখ রুপির ভাতা দিচ্ছে, ব্যবস্থা করা হয়েছে নিরাপত্তারও।

১৯৯৬ সালে ভারতের তদানীন্তন যুক্তফ্রন্ট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরাল দেশের পার্লামেন্টে জানান, “প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহর পরিবার ১৯৯২ থেকেই ভারতে রয়েছেন।

নাজিবুল্লাহর স্ত্রী ও সাবেক আফগান ফার্স্ট লেডি ফাতানা নাজিব ও তার তিন কিশোরী কন্যা- হিলা, মোসকা ও ওনাই - এরপর বহু বছর দিল্লিতেই পড়াশোনা করেছেন, কাটিয়েছেন ভারতের রাজধানীতেই।

১৯৯২ সালে কাবুল ছেড়ে দিল্লি চলে আসার পর ফাতানা নাজিব বা তার মেয়েদের সাথে নাজিবুল্লাহর আর জীবনে কখনো দেখা হয়নি। ১৯৯৬ সালে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের হাত থেকে তালেবান যখন কাবুল দখল করে নেয়, অ্যালায়েন্সের নেতা আহমেদ শাহ মাসুদ নাজিবুল্লাহকেও শহর থেকে পালানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নাজিবুল্লাহর ধারণা ছিল, তিনি নিজে যেহেতু একজন পাশতুন এবং তালেবানের মধ্যে পাশতুনদেরই প্রাধান্য বেশি, তাই তাকে অন্তত তালেবান কিছু করবে না। 

তার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে জাতিসংঘের কম্পাউন্ডে ঢুকে সাবেক প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহকে টেনে বের করে আনে। এরপর প্রকাশ্যে তাকে নির্যাতন ও গুলি করে মারা হয়। তারপর কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ঠিক বাইরে একটি ল্যাম্পপোস্টে তার দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

কাবুলের রাজপথে নাজিবুল্লাহর সেই ঝুলন্ত দেহের ছবি তালেবানের নির্মমতার নিদর্শন হিসেবে পরে বহু জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছে।

মোহামেদ নাশিদ (২০১৩)
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট তথা রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট মোহামেদ নাশিদকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল এক বিচিত্র পরিস্থিতিতে। মোহামেদ নাশিদ এর আগে ২০০৮ সালে মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গায়ুমের একটানা ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০১২ সালে সে দেশে এক রাজনৈতিক সংকটের জেরে অবশ্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়।

অপসারিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সে দেশের আদালত একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার আগেই চলে যান রাজধানী মালের ভারতীয় হাইকমিশনে।

দিল্লির সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত আলোচনা করেন তদানীন্তন ভারতীয় হাইকমিশনার। এরপর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদকে রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করে মনমোহন সিং সরকার।

তবে এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কয়েক দিন পর অভ্যন্তরীণ সমঝোতার ভিত্তিতে নাশিদ গ্রেপ্তারি থেকে অব্যাহতি পান। পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সে বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।

রাজা ত্রিভুবন শাহ (১৯৫০)
১৯৫০ সালের নভেম্বরে নেপালের তখনকার মহারাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ তার ছেলে মহেন্দ্র, সবচেয়ে বড় নাতি বীরেন্দ্র ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নেন। নেপালের রাজবংশের সঙ্গে রানাদের (যাদের হাতে ছিল দেশের শাসনক্ষমতা) বহুদিন ধরে চলা সংঘাতের জেরেই একটা পর্যায়ে রাজা ত্রিভুবন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

রাজা ত্রিভুবন শাহ ভারতের কাছে আশ্রয় চাওয়ায় চটে লাল হয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোহন শামসের জং বাহাদুর রানা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিংহ দরবারে জরুরি ক্যাবিনেট বৈঠক ডেকে প্রধানমন্ত্রী রানা সিদ্ধান্ত নেন, ত্রিভুবন শাহ্-র চার বছর বয়সী বাচ্চা নাতি জ্ঞানেন্দ্র - যিনি পিতামহর সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসে যেতে পারেননি - তাকেই নেপালের নতুন রাজা ঘোষণা করা হবে।

এর তিনদিন পর (১০ নভেম্বর ১৯৫০) নেপালের কাঠমান্ডুতে গোওচর বিমানবন্দরে দুটি ভারতীয় এয়ারক্র্যাফট এসে নামে, যাতে করে ত্রিভুবন শাহ ও পরিবারের অন্যরা (শিশু রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেলেই) দিল্লিতে রওনা হয়ে যান। ঘটনাচক্রে ওই এয়ারপোর্টের এখন নামকরণ করা হয়েছে রাজা ত্রিভুবন শাহ-র নামেই।

দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও অন্য সরকারি কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। রাজা ত্রিভুবন শাহ ও পরিবারের বাকি সবাইকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়।

তবে রাজা ত্রিভুবন শাহ্-কে মাস তিনেকের বেশি ভারতে থাকতে হয়নি। রাজার দেশত্যাগে নেপাল জুড়ে রানাদের বিরুদ্ধে যে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তাতে সরকার ত্রিভুবন শাহর সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয় - যে আলোচনায় ভারতও মধ্যস্থতা করেছিল।

১৯৫১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নেপালের ‘মনার্ক’ বা মহারাজা হিসেবে ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

ঘটনাচক্রে সেই ঘটনার প্রায় ৫৭ বছর পর নেপাল থেকে যখন রাজতন্ত্রের বিলোপ ঘটছে, সে সময়কার ‘শিশু রাজা’ জ্ঞানেন্দ্র শাহ তখন দেশের সিংহাসনে! সূত্র: বিবিসি বাংলা

অমিয়/